![](http://www.old.deshdorshon.com/wp-content/themes/deshdorshon/images/featured_image_large.jpg)
সদকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব?
ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদেকের সময় যার নিকট জাকাত ফরজ হওয়া পরিমাণ অর্থ-সম্পদ থাকে শুধু তার উপরই সাদকাতুল ফিতর ওয়াজিব।
অর্থাৎ যার নিকট ঋণ ও প্রয়োজনীয় আসবাবের অতিরিক্ত সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ কিংবা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা সমমূল্য নগদ টাকা, ব্যবসার মাল অথবা অন্য কোনো সম্পদের মালিক হলে তার উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব।
(শামী- ২/৫০-৬০)
ফিতরা নির্ধারণের রহস্যঃ
ইসলাম মানবতার ধর্ম। সম্প্রীতি ও সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়। ধনী গরীব সকলে যেন সমানভাবে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারে সেজন্যই ফিতরা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ফিতরা মূলত রোজার যাকাত। যাকাত যেমন মালকে পবিত্র করে, ঠিক তেমনি ফিতরাও রোজাকে পবিত্র করে।
এ প্রসঙ্গে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) সদকায়ে ফিতর নির্ধারণ করেছেন রোজাকে অনর্থক কথা ও অশ্লীল ব্যবহার হতে পবিত্র করার এবং গরিবের মুখে অন্ন দেওয়ার জন্য।
(সুনানে আবু দাউদ হাদিস নং ১৬০৯)
ওয়াকি ইবনুল জাররাহরা বলেন, সিজদায়ে সাহু যেমন নামাজের ক্ষতিপূরণ, তেমনি সাদাকাতুল ফিতর রোজার ক্ষতিপূরণ।
সদকাতুল ফিতরের পরিমাণঃ
খেজুর, জব কিংবা কিসমিস দিয়ে আদায় করলে প্রায় সাড়ে তিন কেজি দিতে হবে অথবা মধ্যম পর্যায়ের সাড়ে তিন কেজির মূল্য দিতে হবে।
গম দিয়ে দিলে পৌনে দুই কেজি অথবা মধ্যম পর্যায়ের পৌনে দুই কেজির মূল্য দিতে হবে।
(শামী – ২/৩৬৪, হিন্দিয়াহ ১/১৯১)
রোযা না রাখলে বা রাখতে না পারলেও তার উপর সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব কি না?
রোযা ও ফিতরা দুটি পৃথক পৃথক ইবাদত। রোযা না রাখলেও ফিতরা দিতে হয়।এমন নয় যে, রোযা না রাখলে ফিতরাও দিতে হয়না।
(ফাতাওয়া হিন্দিয়াহ -১.১৯২)
সদকায়ে ফিতর কার কার পক্ষ থেকে আদায় করা ওয়াজিব?
সদকায়ে ফিতর নিজের পক্ষ থেকে এবং পিতা হলে নাবালেগ সন্তানদের পক্ষ থেকে দেয়া ওয়াজিব। বালেগ সন্তান, স্ত্রী, স্বামী, চাকর-চাকরাণী, মাতা-পিতা, প্রমুখের পক্ষ থেকে দেওয়া ওয়াজিব নয়। তবে যৌথ পরিবার হলে বালেগ সন্তান মাতা-পিতার পক্ষ থেকে স্ত্রীর পক্ষ থেকে ফিতরা দেয়া মুস্তাহাব।
( শামী- ২/৩৬৩)
ফিতরা কখন আদায় করবে?
ঈদগাহে যাওয়ার আগেই ফিতরা দিয়ে দেয়া উত্তম। অবশ্য নামাজের পূর্বে দিতে না পারলে পরে দিলেও চলবে। এছাড়া যদি কেহ রমজানের মধ্যেই আদায় করে দেয় তাও জায়েয আছে।
(ফাতাওয়া শামী -২/৩৬৭)
সদকাতুল ফিতর কখন ওয়াজিব হয়?
সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার সময় হল ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিক হওয়ার পর। সুবহে সাদিকের পূর্বে কেউ মারা গেলে তার উপর ফিতরা ওয়াজিব হবে না। সুবহে সাদিকের পর কোনো সন্তান জন্ম গ্রহণ করলে কিংবা কেউ মুসলমান হলে তার উপর ফিতরা ওয়াজিব।
(ফাতাওয়া শামী -২.৩৬৭, হেদায়া – ১/২১১, বাদায়ে’ ২/২০৬)
কারো পক্ষ থেকে সদকায়ে ফিতর আদায় করার জন্য অনুমতির প্রয়োজন আছে কী?
কারো পক্ষ থেকে সদকায়ে ফিতর আদায় করতে হলে অনুমতি প্রয়োজন,তবে তার স্ত্রী ও সন্তানের ক্ষেত্রে অনুমতি ছাড়া আদায় করলেও আদায় হয়ে যাবে। তেমনিভাবে পূর্ব থেকে কারো পক্ষ থেকে আদায় করার নিয়ম থাকে তাহলে ও অনুমতি ছাড়া আদায় হয়ে যাবে।
(রদ্দুল মুহতার – ২/৩৬৩)
সদকায়ে ফিতর আদায় করার ক্ষেত্রে কোন স্থানের মূল্য ধর্তব্য?
যে স্থানে সদকায়ে ফিতর আদায় করা হয় ঐ স্থানের মূল্যই ধর্তব্য। যার সদকায়ে ফিতর আদায় করা হচ্ছে সে যে স্থানেই থাকুক না কেন এবং যখন আদায় করবে তখনকার মূল্যই ধর্তব্য হবে।
মাহমুদিয়া- ৯/৬২৩
যাদেরকে সদকাতুল ফিতর দেওয়া জায়েজ নয়ঃ
মাতা-পিতা,দাদা-দাদি,নানা-নানী, ছেলে- মেয়ে, নাতি-নাতনী ও স্বামী স্ত্রী একে অপরকে এবং সায়্যিদ বংশধর ও ধনী ব্যক্তিকে ফিতরা দেওয়া জায়েজ নয়। এছাড়া অন্যান্য নিকটাত্মীয়দেরকে দেওয়া উত্তম। বরং দ্বিগুণ ছাওয়াব হবে।
(হেদায়া -১/২০৭)
সদকাতুল ফিতর কাকে দেয়া যাবে?
যে ব্যক্তি নেসাবের মালিক নয় তাকে দেওয়া যাবে। (অর্থাৎ যার উপর কোরবানি করা ও সদকাতুল ফিতর দেয়া ওয়াজিব নয়)
শামী -২ /৩৩৯
লেখক ; মুফতী আব্দুল্লাহ ইদরীস
জামিয়া দারুল উলুম মুহিউস সুন্নাহ, আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
Some text
ক্যাটাগরি: মতামত
[sharethis-inline-buttons]