শুক্রবার রাত ১০:০৪, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

বিজয়ের মাসে শহীদদের নামের তালিকা স্থাপিত

৩৯৫ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

তিমির বনিক: ১৯৭১ সাল গ্রেনেড ও বোমার স্ট্রাগল। স্বাধীনতা মাস। দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের লাল সবুজের পতাকা। ১৯৭১ সাল মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৪৮ বছর পর বিজয় হাজরার সহযোগিতাতে ভাড়াউড়া চা বাগানের প্রবেশমুখে অবস্থিত চা শ্রমিকদের গণহত্যার স্মৃতিস্তম্ভটি স্থাপিতের পাশে সেখানে শহীদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য নামের তালিকা স্থাপিত করেন।

সেই পতাকাটি উড়াতে সেদিন মুক্তির মাঠে ওরাও ছিল। বীর বাঙালির সাথে চা শ্রমিকরা একইসাথে মুক্তিযোদ্ধে অংশগ্রহন করেন। সেই গণহত্যার দৃশ্য মনে হলেই এখনও আঁতকে উঠি। এভাবেই সেদিনের কথা বর্ণনা করছিলেন বিজয় হাজরা ও ভানু হাজরা।
১৯৭১ সালে ভানু হাজরার বয়স ছিল প্রায় ২০ বছর। ভাড়াউড়া গণহত্যার মাত্র দুই দিন আগে তার বাবা ফাগু হাজরা মারা যান পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে।
ফাগু হাজরা ভারতীয় সেনাসদস্যদের পথ দেখিয়ে মৌলভীবাজারের শেরপুরের দিকে নিয়ে যান। সেখানে দুই পক্ষের গুলিবিনিময়ের সময় পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে মারা যান তিনি। তাকে ঘরের পাশেই সেদিন মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল।

ভানু হাজরা বলেন, ’৭১ সালের ১ মে সাত-আট জনের পাকিস্তানি হানাদের একটি দল দক্ষিণ দিক থেকে এসে চা-বাগানে ঢোকে। প্রথমে চা-বাগানের খালের কিনারে থাকা একজনকে গুলি করে মারে তারা। এরপর গ্রাম পুলিশকে ঘরে ঘরে থাকা পুরুষদেরকে ডেকে আনতে বলে। যারা আসতে চায়নি তাদেরকে বালুচ সেনারা জোড় করে ধরে নিয়ে আসে। এরপর পুলের কাছে (বর্তমান বধ্যভূমির স্থান) সবাইকে নিয়ে গেল। পরে সবাইকে ড্রেনে (খালে) নামিয়ে দুই পাশ থেকে গুলিবর্ষণ করে মারা হলো। আমরা বাগান থেকে গুলির শব্দ শুনছিলাম। সকাল ১০-১১টার দিকে ঘটনাটা ঘটে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে চলে যাওয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি খালের মধ্যে লাশের স্তুপ। সেদিন ৪৭ জন চা-শ্রমিক মারা গিয়েছিল। কারও মতে এই সংখ্যা ৫৩। পরে মা ও ভাইকে নিয়ে ভারতে চলে যাই। সেখানে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের কৈইলা শহরের কমলপুরে পাকিস্তানি বাহিনীর কামানের গোলায় বিদ্ধ হয়ে মা সঞ্চরি হাজরা ও ভাই মনা হাজরা মারা যান।’

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী চা-বাগানের দক্ষিণ লাইনের লালচান হাজরা (৭৩) বলেন, ‘আমি সেদিন বাগানেই ছিলাম। দূরে লেবার লাইনে আগুন জ্বলতে দেখি। এর মাঝে দেখলাম দুজনকে গুলি করছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা। আমি চারাবাড়ির একটি বটগাছের নিচে লুকিয়ে দেখছিলাম। দেখলাম লোকজনকে একত্র করে রাখা হয়েছে। এরপরগুলির শব্দ শুনি। সেদিন আমার অনেক আত্মীয়স্বজন মারা যায়। এ ঘটনা দেখার পর বাগান ছেড়ে চলে যাই।’

ভাড়াউড়া চা-বাগানের বধ্যভূমিতে গিয়ে দেখা যায়, ‘শ্রীমঙ্গল-ভাড়াউড়া সড়কের পাশে হালকা নীল রঙের একটি স্মৃতিস্তম্ভ দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় তিন ফুট উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা আর পাশে শহীদের নামের তালিকা।
শ্রীমঙ্গল কালীঘাট ইউনিয়নের সাবেক

চেয়ারম্যান পরাগ বারৈ জানান, ‘১৯৯৬ সালে কালীঘাট ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে স্তম্ভটি বানানো শুরু হয়েছিল। অর্থাভাবে উন্নয়ন করা যায়নি। প্রতি বছর জাতীয় দিবসে এখানে চা-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে শহীদদের ফুল দিয়ে স্মরণ করা হয়।

কাজল হাজরা

Some text

ক্যাটাগরি: নাগরিক সাংবাদিকতা

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি