শনিবার সকাল ৭:৩০, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

যৌক্তিক আন্দোলনে অযৌক্তিক স্লোগান কেন?

৫৬১ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

ধর্ষণ হত্যার চাইতেও গুরুতর অপরাধ। কারণ হত্যা একজন মানুষকে চিরতরে শেষ করে দেয়। কিন্তু “ধর্ষণ একটি নারীকে সারা জীবনের জন্য জীবন্ত লাশে পরিণত করে দেয়। সামাজিক অমর্যদা ও নানায় সমস্যায় কাটায় নির্যাতিতা ও তার পরিবার। তাই যে দেশে হত্যার মতো অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি “ফাঁসি-র বিধান রয়েছে, সেদেশে ধর্ষণের সাজায় ফাঁসির বিধান কেন থাকবে না।

আমাদের দাবি (ক) প্রথমেই ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি “মৃত্যুদণ্ড” তা আইনে পরিণত করা। (খ) এই সংক্রান্ত মামলা দ্রুততম সময়ে শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় ট্রাইবুনাল ও আইন তৈরী করা। (গ) এ পর্যন্ত দেশে যতগুলি ধর্ষণের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সবগুলোর অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা। (ঘ) যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের দ্রুততম সময়ে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা। (ঙ) ধর্ষণ করার পেছনে যতগুলি কারণ রয়েছে তা খুজে বের করে সবগুলিকে সমাধান করা।

ধর্ষণবিরোধী যৌক্তিক এই দাবিগুলি শুধুমাত্র সরকারি বা বিরোধীদলের নয়, কোন বিশেষ দলের, ধর্মের, বর্ণের, শ্রেণীর নয়। এটি সব মানুষের দাবি। এমনকি যে ধর্ষক তার নিজেরও দাবি। কারণ কোন ধর্ষকই চাইবে না তার মা, বোন, স্ত্রী-কন্যাকে অন্য কেউ ধর্ষণ করুক। কাজেই বর্তমান আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে যৌক্তিক দাবির পক্ষে এখনই গণজাগরণ সৃষ্টি করা এবং সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করার সুবর্ণ সুযোগ।

বর্তমান ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনে লক্ষ্য করছি, দেশের আপামর জনগণের যৌক্তিক দাবি এবং আন্দোলনকে উপলক্ষ করে একটি কুচক্রী মহল ঘোলা পানিতে শিকার করায় ব্যস্ত। আমার মনে হয় দু/চারজনের মিটিং-মিছিল দেখলেই একদল লোকের ক্ষমতায় যাওয়ার লুকায়াতি স্বপ্ন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।

তাদের উদ্দেশ্য করে বলছি। নিজের ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখুন সেখানে আপনার মা-বোন, স্ত্রী ও কন্যা আছে। তাদের জন্য হলেও ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনকে সফল হতে দিন। ধর্ষণ বিরোধী আনন্দোলনকে রাজনীতি করণ করা হলে, আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়ে যাবে। তখন আন্দোলনের বিষয় আর সফলতার মুখ দেখবে না।

ধর্ষণবিরোধী এ আন্দোলনে কিছু লোককে দেখলাম সরাসরি সরকার প্রধান ও সরকারি দলকে কটাক্ষ করে নানান প্রচারণা চালাচ্ছেন। গণতান্ত্রিক দেশে সরকারের সমালোচনা হতেই পারে। সরকারের সফলতা নিয়ে সরকারি দল যেমন আলোচনা করার অধিকার রাখে। তেমনি সরকারের নানান ব্যর্থতা বা পদক্ষেপ নিয়ে বিরোধী দলগুলো সমালোচনা করবে। এটি গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তার মাধ্যমেই একটি দেশ চলমান সমস্যার সমাধান বের করে আনে। ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনে যদি সরকার সহযোগিতা না করে বা জনগণের দাবি মেনে না নেয়, তখন আপনারা সরকারের সমালোচনার সুযোগ পাবেন।

কিন্তু লক্ষ করা যাচ্ছে যেখানে ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধের অপরাধীদের বিরুদ্ধে সরকার নিজেই কঠোর অবস্থানে রয়েছেন এবং দ্রুততম সময়ে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া অপরাধীদের গ্রেপ্তার করেছেন। এমনকি নিজ দলের কর্মীরাও ছাড় পাচ্ছে না। অর্থাৎ সকারের ধর্ষণ বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট। সে ক্ষেত্রে অপরাধীরা যেন নিজেদের রাজনৈতিক প্রভাব, অর্থবিত্তের প্রভাব, সামাজিক প্রভাব খাটিয়ে, আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে পার না পেয়ে যায়। সেই জন্য জনমত গঠন ও আইন প্রণয়ন করা করার দাবি যুক্তিযুক্ত।

তাই সরকার পতনের দাবি করে, সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে, আমার মনে হয় না আমাদের এই যৌক্তিক দাবি আলোর মুখ দেখবে। বরং সরকার নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে যে পদক্ষেপ নিবে, তাতে আন্দোলনের সফলতা আসবে না। কাজেই “ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চাই” এবং সকল অপরাধীদের দ্রুততম সময়ে গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত চাই। এর বাইরে অন্য কোন স্লোগান বা অন্য কিছু যে বা যারা বলবে ভেবে নিতে হবে তারা প্রকৃতপক্ষে ধর্ষণ বিরোধী নয়। তারা সরকারবিরোধী। আন্দোলনকারীদের স্পষ্ট বক্তব্য হওয়া উচিৎ “আমরা সরকার বিরোধী নই। আমরা ধর্ষণ বিরোধী। আন্দোলনের মাধ্যমে অতিতে অনেক দাবিই আইনে পরিণত হয়েছে। এবারও হবে ইংশাআল্লাহ।

অতীতের বেশ কয়েকটি সফল আন্দোলনের মত এবারের আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছে আমাদের তরুণ সমাজ, ছাত্র-ছাত্রীরা। আমরা তাদেরকে অনুরোধ করবো নিজেদের যৌক্তিক আন্দোলনকে রাজনৈতিক প্রভাবে প্রভাবিত না করার জন্য। নিজেদের আন্দোলন পরিসীমায় স্বার্থন্বেষী মহল ও সুবিধাবাদীদের প্রবেশ করার সুযোগ না দেওয়ার জন্য। তাই আসুন ধর্ষণের বিরুদ্ধে সকলে সম্মিলিত ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। সরকারের কাছে আইন বাস্তবায়নের জোরালো দাবি জানাই এবং আগামীর প্রজন্মর জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।

লেখক: মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ
০৭ অক্টোবর ২০২০

Some text

ক্যাটাগরি: সমকালীন ভাবনা

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি