বৃহস্পতিবার রাত ৪:৫১, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

আটাশ দফা: আমাদের মুক্তি ও উন্নতির কর্মসূচি

৫৩১ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

২৮ দফার সংক্ষিপ্তসার: চিন্তাবিদ আবুল কাসেম ফজলুল হকের বিগত ষাট-সত্তর বছরের একাগ্র চিন্তা ও সাধনার ফসল এই “আটাশ দফা: আমাদের মুক্তি ও উন্নতির কর্মসূচি”। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলোপের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কতৃত্বে ও নেতৃত্বে তথাকথিত উদার গণতন্ত্রের নামে বিশ্বায়ন কার্যক্রম চালানো হয় বিশ্বব্যাঙ্ক, আইএমএফ প্রভৃতি সংস্থার মাধ্যমে। ঢাকা থেকে ওয়াশিংটন পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয় এই কার্যক্রম। এই অবস্থার চাপে পড়ে দুর্বল জাতিগুলো মাথা তুলতে পারছে না। তাদের আত্মবিকাশের সকল পথ রুদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। ফলে কেবল বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের সকল জাতি এবং মানবজাতি উন্নতি ও প্রগতির পথে মহাসংকটের মুখে পড়েছে।

প্রগতির চাকা পিছনমুখী হয়ে পুরনো সকল সংস্কার-বিশ্বাস পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠছে। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ-এসব আদর্শকে আকর্ষণহীন করে ফেলা হয়েছে। উন্নত নতুন প্রযুক্তির বিস্তার ও সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলোপের পর যে বাস্তবতা তৈরি হয়েছে তাতে মার্কসবাদও আর আগের মতো আবেদনশীল নেই। এরূপ আদর্শিক শূন্যতার মধ্যে মানবজাতি সভ্যতা, সংস্কৃতি, প্রগতির পথ হারিয়ে ক্রমশঃ আত্মহননের পথে ধাবিত হচ্ছে। অনামানবিক হয়ে পড়ছে মানুষ। মানবজাতির সামনে উন্নতি ও প্রগতির লক্ষাভিমুখি কোনো কর্মসূচি নেই।

সামগ্রিক এই নেতিবাচক বাস্তবতায় চিন্তাবিদ-দার্শনিক আবুল কাসেম ফজলুল হক বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল জাতি এবং মানবজাতির সর্বাঙ্গীন কল্যাণ, উন্নতি ও প্রগতির লক্ষ্যকে সামনে রেখে আটাশ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করেছেন। বাংলাদেশ জাগরণী শান্তিসঙ্ঘের মাধ্যমে এই কর্মসূচিকে অবলম্বন করে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বাস্তব কাজের পাশাপাশি আমরা প্রচার আন্দোলনও চালিয়ে যাচ্ছি। চলমান করোনা-কোভিড ১৯ এর বিশ্ব মহামারিকালে আমরা অনলাইনেও কর্মসূচিটি ‘দফাভিত্তিক’ প্রচার করে যাচ্ছি।

কী আছে আটাশ দফায়? আটাশ দফার মূল লক্ষ্য হলো- জাতির আত্মগঠন, আত্মনির্ভর-স্বাধীন বিকাশশীল জাতিরাষ্ট গঠন করা এবং বাংলাদেশকে বাংলাদেশের জনগণের রাষ্ট্ররূপে গড়ে তোলা। জাতিরাষ্ট্র গঠনের এই জাতীয়তাবাদী ধারার সম্পূরক আন্তর্জাতিকতাবাদী ধারায় বিশ্বব্যবস্থার পুনর্গঠন ও বিশ্বসরকার গঠন করা। জাতিরাষ্ট্রের হাতে কোনো সেনাবাহিনী থাকবে না। বিশ্বসরকারের হাতে একটি সেনাবাহিনী ন্যস্ত থাকবে। রাষ্ট্রসমূহের মধ্যেকার বিবাদ-বিরোধ মীমাংসা এবং বিশ্বশান্তি বজায় রাখা হবে বিশ্বসরকারের প্রধান কাজ। রাষ্ট্রের আদর্শ হবে সর্বজনীন গণতন্ত্র। এই গণতন্ত্র শতভাগ মানুষের গণতন্ত্র।

এই ব্যবস্থায় নির্বাচন হবে দলভিত্তিক, দেশভিত্তিক নয়। প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দল প্রাপ্য সংসদীয় আসন এবং সরকার গঠনে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্র-উপমন্ত্রী পাবে। সরকারি অর্থে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী প্রচার কাজ চালাবে। প্রার্থীরা কোনো অর্থ ব্যয় করতে পারবে না। বিদ্যমান ধারায় হতাশাগ্রস্ত-ঘুমন্ত জাতিকে জাগিয়ে তুলতে জাতির মনের ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষ্যে একটি সাংস্কৃতিক নবজাগরণ গড়ে তোলা হবে এবং এই জাগরণের ভিতর দিয়ে গড়ে তোলা হবে নতুন রাজনৈতিক দল।

দল গঠিত হবে জনগণের ভিতর থেকে, জনগণের জন্য এবং জনগণের দ্বারা। নিচ থেকে উপর পর্যন্ত নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে। ক্ষমতায় গিয়ে দল একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবে। দ্বৈত নাগরিকেরা যাতে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগ দিতে বা থাকতে না পারেন, তার জন্য সংবিধানে সুস্পষ্ট বিধান রাখা হবে। একটি ‘জাতীয় পরিকল্পনা সংস্থা গঠন করা হবে। মোট সদস্য সংখ্যা হবে পঞ্চাশ জন এবং তারা হবেন সংসদের বাইরে থেকে এবং জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্যরা নির্বাচন করবেন এই সংস্থা। সরকারি দল ও বিরোধী দল বলে কিছু থাকবে না।

আরো পড়ুন- সাক্ষাৎকার: রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলাই আমাদের কেন্দ্রীয় কাজ

এই রাষ্ট্র-ব্য্যবস্থায় জাতীয় সংসদ, রাজনীতি ও সরকার সমগ্র জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ ও লালন করবে। শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে আত্মনির্ভর জাতি গঠনের উপযোগী মানুষ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রশাসনব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থাসহ পুরাতন সকল ব্যবস্থাদি ঢেলে সাজিয়ে সকলকিছুকে গণমুখি করার লক্ষ্যে ক্রমান্বয়ে আইন-কানুন, বিধি-বিধান যুগোপযোগী করে তোলা হবে। ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীগুলোর ব্যাপারে সবিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের জাতীয় নীতির আওতায় যাতে করে তারা জাতির মূলধারায় আত্মবিকাশের সুযোগ পায় সেই পথ তৈরি করতে হবে।জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং জাতির জীবনে সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাদি নিশ্চিত করা হবে। জাতির জীবনে এমন এক প্রগতিশীল আবহ তৈরি করা হবে যাতে জনমনে চিন্তা ও কর্মের দুর্বার আগ্রহ সঞ্চারিত হয় এবং উন্নত-সমৃদ্ধিমান ভবিষ্যত বাংলাদেশ সৃষ্টির স্বপ্ন দেখে মানুষ। সংক্ষেপে এই হলো আটাশ দফা কর্মসূচির মূল বক্তব্য।

দেশবাসীর প্রতি আমাদের আহ্বান: আসুন, প্রগতির ধারায় জাতির হাজার বছরের সংগ্রামের- বিশেষ করে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ের অভিজ্ঞতার মধ্য থেকে উৎসারিত আবুল কাসেম ফজলুল হকের আটাশ দফা অবলম্বন করে বাংলাদেশে দেশপ্রেমিক, মুক্তিকামী, উৎপাদনশীল, সৃষ্টিশীল, প্রগতিপ্রয়াসী সংগ্রামী জনগণের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে শক্তিশালী ঐক্য গড়ে তুলি এবং নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করি। আসুন, পৃথিবীর সকল ভূভাগে সর্বজনীন-গণতান্ত্রিক জাতিরাষ্ট্র গড়ে তোলার আন্দোলন সৃষ্টি করি, এবং সকল রাষ্ট্রের প্রগতিশীল শক্তি মিলে জাতীয়তাবাদ ও তার আন্তর্জাতিকতাবাদের ভিত্তিতে নতুন বিশ্বব্যবস্থা ও বিশ্বসরকার প্রতিষ্ঠা করি।

মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম

আহবায়ক, বাংলাদেশ জাগরণী শান্তিসঙ্ঘ

Some text

ক্যাটাগরি: চিন্তা, নাগরিক সাংবাদিকতা, সমকালীন ভাবনা

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি