শনিবার দুপুর ১:০০, ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ৫ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং

ঠিক-বেঠিক

৫১১ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

মিথ্যাকে যখন সবাই মিলে প্রশ্রয় দেয় তখন সেটি এক সময় সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। রূপান্তরিত এই সত্যের ক্ষতিকর প্রভাব সমাজে দীর্ঘদিন থেকে যায়। অনেক ক্ষতিকর বিষয় আমাদের দেশে এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। মাজার সংস্কৃতি তার অন্যতম উদাহরণ। আগেকার সময় সত্যিকারের পীর আউলিয়াগণের মাজার প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমানে অনেক সাধারণ মানুষের মাজার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এসব মাজারে কতটুকু ধর্মীয় কর্মকাণ্ড বাস্তবায়িত হয় তা আমরা সবাই জানি।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রথমে এসব মাজারের জনপ্রিয়তা না থাকলেও তাকে মাজারকে ঘিরে নানা মিথ্যা অলৌকিক কথা প্রচার হতে থাকে। ফলে ধীরে ধীরে সে মাজারের জনপ্রিয়তা বাড়ে। এতে এক শ্রেণীর মানুষের আয় রুজির পথ সৃষ্টি হয়। সঙ্গে মাদকসেবীদের আড্ডাখানা। ভন্ড পীরদের  মাজারের ভিড়ে এখন সত্যিকারের পীরের মাজার খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। অথচ এদেশে শান্তির ধর্ম ইসলাম প্রচার এবং প্রসারে প্রকৃত পীরের অনস্বীকার্য। হযরত শাহজালাল (রঃ) যার অন্যতম উদাহরণ।

সোশ্যাল মিডিয়ার উপকারী দিক যেমন আছে তেমনি এর ক্ষতিকর দিকও আছে। মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করার একটি অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়া।  যার একজন সদস্য আপনি এবং আমি।

উদাহরণ দিচ্ছি।  গত ২৭ সেপ্টেম্বর সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক এর পোস্ট হতে থাকে জাতীয় কন্যা শিশু দিবস হিসাবে। সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কবি,সাহিত্যিক সাংবাদিক, সাধারণ জনগণ সবাই নিজ নিজ কন্যাদের ছবি দিয়ে কন্যাশিশুদের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানাতে থাকেন।

ঐদিন কন্যা শিশু দিবস নয়, বিষয়টি আমার আগেই জানা ছিল। তারপরেও আমি কারো কোন পোস্টে এর বিপক্ষে বলিনি।  কারণ এটি কোন ক্ষতিকর কোন বিষয় ছিল না। তাছাড়া কোন বিশেষ দিনে যদি ফেসবুক আমাদের মাতা-পিতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, পুত্র বা কন্যাদের ছবি দিয়ে ভরে ওঠে তাতে  মন্দ কি। ফেসবুকে সারা বছরই তো অনেক আপত্তিকর ছবি ভিডিও ছড়িয়ে থাকে। তার জায়গায় পারিবারিক ছবি স্থান করে নিলে মন্দ নয়।

কিন্তু আমার আপত্তির জায়গা  বা ভাবনার জায়গা আরেকটি।  আর তা হলো এই যে আমরা ভাইরাল কোন বিষয় বা আলোচিত কোন বিষয় নিয়ে তার পক্ষে-বিপক্ষে নিজের মতামত প্রকাশ করি। তা অনেক সময় সমাজের ভালো না হয় ক্ষতি হতে পারে।

কেননা আমরা যদি সবসময় এরকম কোন বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে তা প্রচার করতে থাকি তাহলে সেটি একসময় প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে।

আমাদের এই অসতর্কতায় ভালো জিনিসের সাথে সাথে মিথ্যাও ছড়িয়ে পড়বে। আর মিথ্যার আড়ালে সত্য ধামাচাপা পড়ে যাবে । তাছাড়া অনেক সুযোগ-সন্ধানী ব্যক্তি/ গোষ্ঠী আছে, যারা নানান মাধ্যমে নানান ভাবে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলতে চায়। তারা আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ার  এই দুর্বলতাকে কাজে লাগাতে প্রায়ই চেষ্টা করে।

এভাবেই বাংলাদেশে এক এক সময় এক একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে। কিছুদিন আগেও পদ্মা সেতুর জন্য মানুষ বলি দেবে এই গুজুবে দেশে কয়টি হত্যা হয়েছে। শিশু তুবার মা হত্যার বিষয়টি আমরা সবাই জানি। তারপরও কেন আমরা ভাইরাল বিষয় নিয়ে মন্তব্য করার আগে যাচাই বাছাই করি না, তা আমার বোধগম্য নয়।

আমার বেশি অবাক লাগে এই ভেবে যে একটি ফেসবুক আইডি অনেক সাধারণ, অশিক্ষিত লোকের যেমন আছে। তেমনি শিক্ষিত ব্যক্তিদেরও আছে। সাধারণ লোকেরা যাচাই বাছাই না করেই হয়তো একটি মন্তব্য করে বসেন। একটি পোস্ট শেয়ার দিয়ে বসেন। একই কাজ শিক্ষিত লোকেরা কিভাবে করেন! তাহলে তাদের অর্জিত শিক্ষা, বিবেকবোধ বা রাষ্ট্রের ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ কোথায় হারিয়ে গেল।

তাই সবার কাছে অনুরোধ থাকবে আগামীতে কোনো বিষয় শেয়ার দেয়ার আগে বা সেই বিষয়ে মন্তব্য করার আগে সেটি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিবেন আর আপনি নির্ভর করবেন বিশ্বস্ত কোন নিউজ মিডিয়া অথবা ব্যক্তির আইডি।

যাই হোক আগামীকাল ৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় কন্যা শিশু দিবস এবছর কন্যা শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় “আমরা সবাই সোচ্চার-বিশ্ব হবে সমতার।” জাতীয় কন্যা শিশু দিবস উপলক্ষে আগামীকাল আপনাদের ফেসবুক আইডি কন্যাশিশুদের ছবি আর শুভকামনায় ভরে উঠবে এ প্রত্যাশায় আজকে এখানে বিদায় নিচ্ছি।

আর যারা ইতিপূর্বে ফেসবুকে পোস্ট কন্যা শিশু দিবস নিয়ে পোস্ট করেছেন। আপনারা পোস্টের লেখাটি একটু সংশোধন করে নিবেন। নয়তো কয়েক বছর পর যখন ছবিটি আবার ফেসবুকে ফিরে আসবে তখন সেখানে কেউ আবার তারিখ বিভ্রান্তিতে পড়তে পারেন।

আরেকটি কথা, শিশু সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি দিবস আমাদের দেশে প্রচলিত আছে। এগুলো নিয়ে একটি লেখা আগামীকাল পোস্ট করব। সেটি পড়ার আমন্ত্রণ রইল।

লেখক: মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

Some text

ক্যাটাগরি: সমকালীন ভাবনা

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি