রবিবার দুপুর ১২:৩০, ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ৫ই মে, ২০২৪ ইং

আমার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ভ্রমণবিষয়ক রচনাবলী

১১৮৪ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি
সম্প্রীতির সেতুবন্ধন কসবার অদের খাল: ছবি- এস এম শাহনূর

বর্ষায় তিতাস, সালদা, বিজনা, সিনাই, সাঙ্গুর,কালিয়াড়া,বুড়ি,ফটিকছড়ি,বেহার খাল,রাজার খাল,সমনের খাল,সেনের খাল,খড়ধর(মান্দার পুর)বড় খাল,অদের খাল সহ অসংখ্য নদী ও খালের জলে স্নাত হয় যে ঐতিহাসিক জনপদ তার নাম কসবা।উপরোক্ত নদী ও খাল গুলো ছাড়া আরো অনেক জলধারা একে বেকে কসবার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে।যুগযুগ ধরে সমগ্র নূরনগর এবং বরদাখাত পরগনার মানুষজনকে যে খাল এক বিনাসুতার মালায় আবদ্ধ করে রেখেছে তার নাম অদের খাল।

নবীনগর উপজেলার সর্ব দক্ষিণের শেষ সীমানা এবং কসবা উপজেলার উত্তরের শেষ সীমানার(বল্লভপুর ও শিমরাইল গ্রামের) মধ্য দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে কূলকূল করে বয়ে যাওয়া স্রোতধারার নাম অদের খাল।

নামকরণঃ প্রকৃতির কূলে বেড়ে উঠা আজকের সভ্য দুনিয়ার মানুষ এক সময় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে আড়া,ঝোপঝাড় ও খালের উপর তৈয়ারী বাঁশের সাকো বেছে নিতেন।জনশ্রুতি আছে যে,অদনা বা নিচ কুলের লোকজন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে মলত্যাগের জন্য খাদ>খাল বা গর্ত খুঁজে নিতেন।অদনারা যে খাদ বা খালের তলদেশে মলত্যাগ করে সেই খালের নাম হয় অদের খাল।
[অদনা শব্দটি বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলে ব্যবহৃত একটি বিশেষণ পদ।যার আভিধানিক অর্থ – নিকৃষ্ট, অধম, জঘন্য, নীচ।]

অন্য একটি তথ্যমতে,
“ফেলে দেওয়া বদনা
নিয়া আইল অদনা।”
এই উক্তির রেশধরে তথ্য সংগ্রহ কালে জানা যায়,
কোন এক কুলিন হিন্দুর শৌচাগারের বদনাটি অসাবধানতা বশত খাদে/খালে পড়ে গেলে পরে এক অদনা সেই মূল্যবান বদনাটি নিয়ে যায়।সেই থেকে খালের নাম হয় অদের খাল। বদনা বা লোটা বাংলাদেশ এবং ভারতের কিছু অঞ্চলে ব্যবহৃত হয়। বদনা মূলত মল ত্যাগের সময় লজ্জাদেশ পরিষ্কার রাখতে ব্যবহৃত হয়।ভারত উপমহাদেশের লোকজন শৌচকার্যে পানির পাত্র হিসেবেও বদনা ব্যবহার করে থাকেন।প্রাচীণকালে মাটির তৈরি বদনার প্রচলন ছিলো, যা আজো মাঝে মধ্যে দেখা যায়।পিতল, কাঁসা, অ্যালুমিনিয়ামের তৈয়ারি এবং অধুনা প্লাস্টিকের তৈরি বদনা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

একসময় এ খালে জোয়ারভাটা হত।বর্ষাকালে হাজারো পাল তোলা,দাঁড়টানা আর লগি-বৈঠা বাওয়া নৌকার প্রধান রাস্তা ছিল এটি।আমার জানা মতে এটি তিনলাখপীর ব্রীজের পাদদেশ থেকে উৎপত্তি লাভ করে পশ্চিম দিকে চলে আসে।তিনলাখপীর টু বল্লভপুর সড়কটিকে ঐতিহাসিক ভাবে পোড়া রাজার জাঙ্গাল বলা হয়।পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বি এ উচু সড়কটিতে একসময় উত্তর-দক্ষিণের গ্রামগুলোতে বাস করা মৃত মানুষদের সমাহিত/কবর দেওয়া হত বলেই এমন নামকরণের হেতু বলে প্রতীয়মান হয়।পোড়া রাজার জাঙ্গালকে দক্ষিণ তীর ধরে তীর অদূরবর্তী বাদৈর,হাতুড়া বাড়ি,মান্দারপুর গ্রামের উত্তরে এবং শামবাড়ি,নিমবাড়ি,রাইতলা,নিবড়া গ্রামকে উত্তরে রেখে আপন মনে প্রবাহিত হয় অদের খাল। অতপরঃ চারগাছ বাজারের(পূর্বে)ঈদগাহ থেকে চারগাছ গ্রামকে উত্তরে রেখে পশ্চিম দিকে চলে আসে। অতঃপর জয়পুর(উত্তরে) -শেরপুর গ্রামের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে উত্তরে গোয়ালী,দক্ষিণে সূর্যদীঘল গ্রাম বল্লভপুর কে রেখে মিলিত হয় বড়ভাঙা ব্রীজের(আনন্দ ভুবন)নিচে রাজার খালের সাথে। এরপর এর মূল গতিধারা উত্তর পশ্চিমে বেকে বুড়ি নদীর জোয়ার ভাটার সাথে মিলিত হয়।

আবার এটি গুচ্ছ গ্রামের পূর্বপাশে প্রবাহিত তিতাস নদের শাখা বুড়ি নদী হতে উৎপত্তি লাভ করে(গুচ্ছ গ্রামের দক্ষিণ পাড়া ঘেষে)নবীনগর উপজেলার লাউর ফতেহপুর ইউনিয়নের শেষাংশে টানচারা গ্রাম, মুরাদনগর উপজেলার আন্দিকুট ইউনিয়নের শেষাংশে (গাঙ্গেরকুট) কালীগঞ্জ বাজারের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে দুই উপজেলাকে বিভক্ত রেখে বাঙ্গরা-ফরদাবাদ অদের খালের সাথে গিয়ে মিশেছে। এই প্রবাহকালে দক্ষিণে গাঙ্গের কুট,জাড্ডা,গাজীপুর,জাঙ্গাল ও গাজীরহাট,উত্তরে টানচারা,আহাম্মদপুর,পাক হাজীপুর ও বাঙ্গরা গ্রামের তীরবর্তী মানুষের কৃষি জমিতে সেচ ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিরামহীন ভুমিকা রেখে চলেছে।

দক্ষিণে রাজাবাড়ী,উত্তরে বৈলঘর।দুই গ্রামের পাশঘেষে মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে সরু এক নদী।দুই পাড়ের লোকজন এই নদীকে বলে অদের খাল।খালটি এখানেও তার স্বরূপে কুমিল্লা জেলা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে বিভাজন করে বয়ে চলেছে।

গাজীরহাট – বাঙ্গরা৷ সংযোগ ব্রিজ থেকে দক্ষিণে
-বৈলঘর, হাটখোলা, সাহগোদা, চন্দনাইল গ্রাম এবং উত্তরে
–রাজাবাড়ী, ইসাপুরা, সাতমোড়া, বাউচাইল,শাহপুর গ্রাম রেখে ঠিক পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে পিপিরা বাজার নৌকা ঘাটে তিতাস নদীর সাথে মিলিত হয়েছে।

এক সময় এই খালের পানিতে ভেসে যেত নানান প্রজাতির মাছ।গায়ের আবাল,বৃদ্ধ, বনিতা অদের খাল থেকে দেশি প্রজাতির শিং,পুটি,টাকি,মাগুর, কৈ,ভেদা,কাইক্কা,চিংড়ী, শৌল ইত্যাদি মাছ ধরত।।অদের খালে দেখা যেত খরজাল,কনিজাল,ময়াজাল ও পেলুন।বর্ষা শেষে কখনো কখনো ঘোলাপানিতে পলো দিয়ে মাছ মারারও ধূমপড়ে যেত।বর্ষাকালে জোয়ার ভাটার পানিতে ভেসে যেত কচুরিপানা,বাঁশের ভেলা,কলা গাছের ভেলা।দুই পাড়ের ছেলে মেয়েরা সাঁতার কেটে এপার থেকে ওপারে যেত। ভেসে বেড়াত কলা গাছের ভেলায়। বর্ষাকাল জুড়ে নানা রকম পণ্যবাহী নৌকা আসা-যাওয়া করত এই পথ ধরে। বরদাখাত এবং নুরনগর পরগনার মানুষজনের নৌপথে আসা যাওয়া এবং পণ্য পরিবহনের জন্য এটিই ছিল প্রধান জলপথ। দাড় বাওয়া, গুণ টানা,বৈঠা বাওয়া, ডিঙ্গা,কুষাসহ হরেক রকমের নৌকা রাত দিন আসা যাওয়া করত। নৌকা বাইচ, দূর পথে পাড়ি জমানো গয়না, নতুন বর কনের সাঁজোয়া নৌকা, নাইওরির ছয়া ওয়ালা নৌকার মাঝি মাল্লাদের হাঁকডাক আর বেসুরো গানও শোনা যেত। আখাউড়া উপজেলার খড়মপুরের কল্লা সৈয়দ গেছুদারাজ (রঃ)শাহের মাজারে বরদাখাত পরগনার ভক্তগণ নেচে গেয়ে ঢোল বাদ্য বাজিয়ে এই পথ ধরে নৌকাযোগে আসা যাওয়া করত।হাসের পালের মত একটির পিছনে একটি করে আসতো বেদে নৌকার বহর।

অবৈধ দখলের কারণে খালের প্রশস্ততা কমে নৌ চলাচলে বিঘ্নতা সৃষ্টি হচ্ছে।
স্থানীয় প্রভাবশালীরা খাল দখল করে দোকান ঘর,অবৈধ স্থাপনা নির্মান করায় খালটির সৌন্দর্য দিন দিন বিনষ্ট হচ্ছে।

আমার শৈশব এবং কৈশোরে অদের খালের উত্তর পাড়ধরে কালীগঞ্জের বাজার থেকে উত্তর বাঙ্গরা যাওয়া আসা করতাম।খালপাড়ে সুন্দর মেঠোপথ ছিল।আজ সেই অদের খাল আছে।কিন্তু সেই অদের খাল আগের মতো থাকলেও,পাড় এবং পাড়ের উপর দিয়ে সেই পথের কোনই অস্তিত্ব নেই!আর তা অনেক ব্যথিত করে আমায়!

“মুগ্ধতায় ভরা শৈশবের স্নান পাত্র অদের খাল;
কৈশোরে বিছায়েছ এ কী ভাবনার অন্তর্জাল!
সরোবরের স্ফটিক জলের সাথে ছিল আড়ি
মোহাবিষ্ট ঘোলা জলের প্রেমে খাল পাড়ের বাড়ি।।
এ পথে নাইওরী কন্যা-নব বধূর কান্নার সুর লহরী
কত পারাপার,সওদা ভরি যায় মহাজনের তরী।।
বেদেনী বায় নাও,বেদে পিছনে বসে হাল ধরে থাকে
মৎস্য শিকারে কৈবর্ত-জেলে খালের বাঁকে বাঁকে।।

“সম্প্রীতির বন্ধনে তব জলে চলে কত নাও
বিনি সুতায় বাঁধিয়াছ দুই পাড়ের কত গাঁও!!
বর্ষা জুড়িয়া থাকে ঝাকে মিঠা পানির মাছ
শীত বসন্তে কৃষক কুল করে থাকে ধান চাষ।।
তব কাদাজলে খেলব বলে সখা সখিরা মিলে
মায়ের শাসন-বকুনি ফেলে ছুটে গেছি কত ছলে।।
অর্ধেক পৃথিবীর লোনাজল,কাকচক্ষু জল,নীল পানি;
স্বচোঁখে দেখেছি,অন্তরে তোমার ঘোলাজলের হাতছানি।।

কত হাবুডুবু খেয়েছি জলে,কেড়ে না নিলে শেষ নিঃশ্বাস;
পাড়ে দিলে ঠেলে,তাই তব জলে আমার এত বিশ্বাস।।
শহুরে জীবনে যখন ফর্সা আকাশ ডেকে বৃষ্টি নামে,
আমি ভাবি তোমার বুকে চিপাখাল,পাবদা বিলের পানি নামে।।
ভেসে যায় খেরপাড়া,ডুবে যায় কচুক্ষেত,ভাসছে পাতি হাস,
পেশাগত জীবনেও কী তাই,জলের কাছাকাছি করি বসবাস?”

কোন কারণে এ খাল স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেলে হাজার হাজার কৃষক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বন্ধ হয়ে যাবে দেশের একটি অঞ্চলের খাদ্যশস্য উৎপাদন।

★ছবিটি ২০০৬ সালে অদের খালের মাঝে,বল্লভপুর আইডিয়াল স্কুল বরাবর নকিয়া-৩৩১০ সেট থেকে তোলা।

💻Copyright@এস এম শাহনূর
smshahnoor82@gmail.com
(তথ্য সংগ্রাহক,লেখক ও গবেষক)

তথ্যসুত্রঃ
★মরহুম শাহাদাৎ হোসেন চাঁন মিয়া
★মরহুম আবুল বাশার ভূঁইয়া।
★ডা.মাসুদুর রহমান (সাতমোড়া-মুন্সীবাড়ী)।
★অদের খাল কবিতা
★গুগল ম্যাপ।
★মাঠ পর্যায়ে ব্যক্তিগত সংগ্রশালা।

বুড়িনদীর আদি ও ইতি: এস এম শাহনূর

| ১০ জুলাই ২০১৯ | ১১:৩৫ অপরাহ্ণ

বুড়িনদীর আদি ও ইতি: এস এম শাহনূর

ছোটবেলায় বুড়িনদীকে তীব্র স্রোত সম্পন্ন একটি নদী হিসাবেই দেখেছি।বর্ষাকালীন সময়ে নদীটি কানায় কানায় পূর্ণ থাকে এবং স্রোতও হয় দ্রুতগতি সম্পন্ন। কিন্তু শীত মৌসুমে এর গতিধারা সংকীর্ণ হয়ে আসে এবং অধিকাংশ স্থানে হেঁটেই নদী পার হওয়া যায়। স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের বছরে নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়।একসময় বুড়ি নদীর বুক ভেদ করে চলতো জাহাজ ও সওদাগরদের বড় বড় নৌকা।এক সময় এ নদীকে ঘিরে এতদ্ অঞ্চলের কৃষক,জেলে ও মাঝিমাল্লাদের মাঝে উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজিত ছিল।আজ উৎসববিহীন মলিনিমা মলিনতায় মলিনবিধুর।
হাজার হাজার বিঘা কৃষি জমির ইরি ধান চাষে শুকনা মৌসুমে পানির অভাবে ধানের ফলন মারাত্মকভাবে ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।নদীটি সংস্কারের গুরুত্ব আজ জরুরিভাবে অপরিসীম,অপরিহার্য ও অত্যাবশ্যক।

বুড়িনদী আজ আমাদের কাছে শুধুই নদী নামে বেঁচে আছে, নদীর দৃশ্যমান সুরুত হারিয়ে অদৃশ্যপ্রায় অবস্থায় আবর্তমান। ইতিহাস ও প্রাচীন মানচিত্রে বিলুপ্ত বুড়ি নদীর স্পষ্ট অবস্থান থাকলেও প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মানুষের সর্বগ্রাসী ক্ষুধার কাছে নদীটির অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছে। এক সময়কার বিশাল নদীটি পরিণত হয়েছে খাল, ডোবা, বসতভিটা ও কৃষি জমিতে।বুড়ি নদী কাল পরিক্রমায় ভরাট হয়ে হারিয়েছে তার ঐতিহ্য।শতাধিক বছর আগে বুড়ি নদীটি নবীনগর উপজেলা থেকে কসবা উপজেলার কুটি হয়ে ধরখার পর্যন্ত প্রবাহমান ছিল।নদীর প্রায় ১৯ কি.মি. ভরাট হয়ে গেছে। এখন শুধু জোয়ারের সময় সেচ পাম্প চালু করা সম্ভব।

বাংলাদেশের বুকে জটাজালের মতো অসংখ্য নদী। শুভ্র জলের নদী, ঘোলাটে জলের নদী। কাকচক্ষু জলের নদী, তামাটে জলের নদী। কুলুকুলু ঢেউ-খেলানো নদী, ফুঁসে-ওঠা সাপের ফণার মতো উদ্ধত ঢেউয়ের নদী। কোনো নদী খ্যাপা দুর্বাসার মতো ভয়ংকর অভিশাপপ্রবণ আবার কোনো নদী বাল্মীকির মতো শান্ত ও শুভাশিসদাতা। কোনো নদীরই রূপের মহিমা এক নয়, চরিত্র অভিন্ন নয় – স্বতন্ত্র।বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” বাংলাদেশের নদীগুলোকে সংখ্যাবদ্ধ করেছে এবং প্রতিটি নদীর একটি পরিচিতি নম্বর দিয়েছে। এর ফলে তাদের হিসাব অনুযায়ি বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা এখন ৪০৫টি। পাউবো কর্তৃক নির্ধারিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী (১০২টি) , উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী (১১৫টি), উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী (৮৭টি),
উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নদী (৬১টি), পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী (১৬টি) এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী (২৪টি)।

বুড়ি নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লা ও
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একটি নদী।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক বুড়ি নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ১৪।
ছেলেবেলায় পান্তাবুড়ি-কুঁজোবুড়ি-উকুনেবুড়ির গল্প শুনে হাসতে হাসতে পেটে খিল লাগত। । এখনও শিশু-কিশোররা পান্তাবুড়ির গল্প মন দিয়ে শোনে।প্রায় দেড়শ বছর আগে লেখা উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর এসব শিশুতোষ সাহিত্য সময়কে অতিক্রম করে আজও দাপটের সঙ্গে বইয়ের দোকান এবং পাঠাগারে শোভা পাচ্ছে। পাঠক আছে তাই বিক্রিও প্রচুর।কিন্তু বুড়িনদীর নাম কি করে বুড়িনদী হল
উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী হয়তো তা জানতেই পারেননি।তাই লেখা হয়নি যৌবনা বুড়ি নদীর বুড়ি হওয়ার গল্প।

নামকরণের ইতিহাস: এক সময় এ নদীর বুক চিরে বহু পণ্যবাহী নৌকা আসা যাওয়া করত। জনশ্রুতি রয়েছে যে কোন এক পূর্ণিমারাতে এই নদীতে পালতোলা নৌকার মাঝি টলটলে পানিতে চাদের বুড়ির ছবি দেখতে পায় এবং পরদিন অনেক চড়া দামে তাদের পণ্যসামগ্রী হাটে বিক্রি হয়।চাদের বুড়ির দর্শন তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে সহায়ক হয় বলে সেই থেকে নদীর নাম হয় বুড়িনদী।

ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নূরনগর ও বরদাখাত পরগনার মাঝখান দিয়ে বিল-ঝিলের উপর দিয়ে সর্পিলাকারে বয়ে চলা মুরাদনগর- কসবা- নবীনগরের সম্মিলন পয়েন্ট এই বুড়িনদী।লাউরফতেহপুর ইউনিয়নের আশ্রয়ন- গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প অবস্থানে মোহনা সৃষ্টিকৌশলে বুড়ী নদীটি নবীনগরে লঞ্জঘাট সংলগ্ন তিতাসের সাথে মিলেমিশে একাকার।

নদীটির দৈর্ঘ্য ২৬ কিলোমিটার(১৬ মাইল), গড় প্রস্থ ৫৪ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।

উৎস: সালদা নদী–সালদা নদী বাংলাদেশ- ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী ।নদীটির দৈর্ঘ্য ২৩ কিলোমিটার,গড় প্রস্থ ৩৭ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক সালদা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর ২১।সালদা নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপত্তি লাভ করে কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারপর এটি কিছুদুর প্রবাহিত হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার বুড়ি নদীতে পতিত হয়েছে।

মোহনা: তিতাস নদী–‘তিতাস একটি নদীর নাম। তার কূলজোড়া জল, বুকভরা ঢেউ, প্রাণভরা উচ্ছ্বাস। স্বপ্নের ছন্দে সে বহিয়া যায়। ভোরের হাওয়ায় তার তন্দ্রা ভাঙে, দিনের সূর্য তাকে তাতায়, রাতে চাঁদ ও তারারা তাকে নিয়া ঘুম পাড়াইতে বসে, কিন্তু পারে না।’(‘তিতাস একটি নদীর নাম’/ অদ্বৈত মল্লবর্মণ)
তিতাস বাংলাদেশ-ভারতের আন্তঃসীমানা সংশ্লিষ্ট নদী হিসেবে পরিচিত।এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে প্রবাহমান নদীবিশেষ। । নদীটির উৎপত্তি হয়েছে ভারতের অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরায়। সেখানে বাংলা ভাষায় হাওড়া নদী এবং স্থানীয়
কোকবোরোক ভাষায় সাঈদ্রা নদী নামে তিতাস নদীর নামকরণ করা হয়েছে।এটি ভারতীয় অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার কাছাকাছি প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলা দিয়ে নদীটি প্রবেশ করে শাহবাজপুর টাউন অঞ্চলের সীমানা ঘেঁষে এটি আরো দক্ষিণদিকে অগ্রসর হয়ে ভৈরব-আশুগঞ্জের সীমানা ঘেঁষে বহমান অন্যতম বৃহৎ নদী মেঘনার সাথে একীভূত হয়ে যায় তিতাস নদীটি। তিতাসের গড় দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৮
কিলোমিটার

গোমতীর গুরুত্বপূর্ণ উপনদীসমূহের একটি ডাকাতিয়া এবং এর শাখা নদীর নাম বুড়িনদী।
চলবে….

👍Copyright @এস এম শাহনূর
smshahnoor@gmail.com
(তথ্য সংগ্রাহক,লেখক ও গবেষক)

সুন্দরবনের যে পুকুরে বাঘ ও হরিণ পানি খায়: এস এম শাহনূর

| ১৯ অক্টোবর ২০১৯ | ৮:৪১ অপরাহ্ণ

সুন্দরবনের যে পুকুরে বাঘ ও হরিণ পানি খায়: এস এম শাহনূর

যে পুকুরে বাঘ-হরিণ পানি খায়
কুমির ভাসে,শিকারে মাছরাঙায়।

শিপ থেকে বোটে করে ১০ মিনিটে কোকিলমণি।এখানে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের একটি দু’তলা বিশিষ্ট স্থায়ী কন্টিনজেন্ট ক্যাম্প,জাহাজ ভিড়ানো জন্য একটি মাঝারী ধরনের পন্টুনও আছে।আরো আছে সুন্দর বনের শরনখোলা রেঞ্জের একটি দৃষ্টিনন্দন টহল ফাঁড়ি।যাওয়ার পথে কোস্টগার্ড কন্টিনজেন্ট ও ফরেস্ট অফিসের মাঝামাঝি নদীর ধারে হরিণের বিচরণ দেখতে পাই।আমরা কোকিলমণি ফরেস্ট বিভাগের শানবাধাঁনো পুকুর ঘাটে গোসল করি।যে পুকুরের পানি পান করে বাঘ,হরিণ এবং বিভিন্ন বন্য প্রাণী তাদের তৃষ্ণা নিবারণ করে।মিঠা পানির এ পুকুরপাড়ে দেখেছি উৎসুক চোঁখে চেয়ে থাকা বন্যহরিণের পাল।দেখেছি স্বচ্ছ পানিতে ফুটে থাকা শাপলা নিকর।দেখেছি শুকর,গুই সাপ।শুনেছি পাখির কিচির মিচির মিষ্টি শব্দ।উপভোগ করেছি গাছের উচু ডালে লুকিয়ে থাকা লাজুক কোকিলের কুহুকুহু গান।হয়তো এ কারণেই এ অভয়ারণ্যের নাম হয়েছে কোকিলমণি।

পৃথিবীর মানচিত্রে এর অবস্থান ২১ডিগ্রীঃ৫৬ পয়েন্ট উত্তর এবং ৮৯ডিগ্রীঃ৩৫পয়েন্ট দক্ষিণ।শুনেছি এ পুকুরের জলেও কুমির থাকার সম্ভাবনা শতভাগ।
মজা করে তুলেছি সেলফি,তুলেছি ছবি,
জাহাজে ফিরেছি যখন ডুবে গেছে রবি।

💻এস এম শাহনূর

(উইকিপিডিয়ান, কবি ও গবেষক)

ঈদের আনন্দে নেমেছে হাজারো মানুষের ঢলঃ এস এম শাহনূর

| ০৬ জুন ২০১৯ | ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ

ঈদের আনন্দে নেমেছে হাজারো মানুষের ঢলঃ এস এম শাহনূর

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মিনি পর্যটন
কেড়েছে সবার মন
বল্লভপুর -শিমরাইলের মহামিলন
নাম তার আনন্দ ভুবন।

আনন্দ ভূবনের অবস্থানঃ
কসবা উপজেলার মেহারী ইউনিয়ন এর পশ্চিম উওরে বল্লভপুর ও শিমরাইল নামক গ্রামের মধ্যবর্তী রাজার খালের উপর নির্মিত এক দীর্ঘ সেতুকে কেন্দ্র করেই এলাকার সৌন্দর্য পিপাসু মানুষের ঢল। বর্ষাকালে দক্ষিণে কসবার কুটি বাজারের পশ্চিম পাশের হাওড়ের উদাস করা বাতাসের সুরভী আর ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে বল্লভপুর -শিমরাইলের সংযোগ স্থাপনকারী এই ব্রীজে/আনন্দ ভূবনে।আর কোন বাধা না থাকায় এই প্রাণজুড়ানো বাতাস ছোট ছোট ঢেউয়ের তালে তালে নবীনগরের পাশে মেঘনাতে গিয়ে মিশে যায়। বর্ষাকালে বিশেষঃ ঈদের উৎসব মুখর সময়টুুুকুতে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার দর্শনভিলাষী মানুষ এখানে এসে প্রকৃতির নান্দনিক সৌন্দর্য ও আনন্দ উপভোগ করে।

নবীনগর,কসবা,আখাউড়া,মুরাদনগর,আশুগঞ্জ থেকেও এখানে শিক্ষা সফর ও পিকনিক পার্টি এসেছে।আনন্দ উপভোগ করছে প্রতিনিয়ত।
বর্ষাকালে এখানে পর্যটকদের জন্য মাঝির পালের নৌকা/বৈঠার নৌকা ছাড়াও স্বল্প মূল্যে হাই স্পীড বোটে বেড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়।শিশুদের খেলনা সামগ্রী, হালকা খাবারের ভাসমান দোকান,প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারের মাধ্যমে ছবি তোলার ব্যবস্থা, সাঁতারের জন্য শর্টস,সুইমিং কাষ্ট,সাঁতার কাটার জন্য লাইফ বয়া এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এখানে আপনি তার সবই পাবেন।

বল্লভপুর-শিমরাইল মিনি পর্যটন নিয়ে লিখা ভাইরাল হওয়া কবিতা’আনন্দ ভুবন’।

“ও ভাই!ব্যস্ততম জীবনে যদি এতটুকু সুখ চাও,
কসবা থানার পশ্চিম-উত্তরে আনন্দ ব্রীজে যাও।
ব্রীজতো নয় লোকের মেলা বর্ষাকাল জুড়ে
বড় ভাঙ্গার সেই বাশের সাঁকো মনে কিরে পড়ে?
এই খানেই জন্ম আমার মানুষ বড়ই ভালো,
নেইকো মনে হিংসা-বিভেদ,নেই সাদাকালো।
বড় ভাঙ্গার ব্রীজ দেখতে ‘রাজার খালের’ উপর
হাজার মানুষ আসছে ছুটে ছেড়ে আপন ঘর।

কৃষক-শহুরে আসে,আসে ছেলে মেয়ের দল;
দুচোঁখ ভরে দেখছে সবাই ঝিঁকিমিঁকি জল।
এ যৌবনা বর্ষায় রাস্তার দুধারে পানি করে থৈথৈ
এমন সুন্দর বিকেল ফেলে কেমনে ঘরে রই?

ব্রীজের পশ্চিমেতে শিমরাইল,পূর্বতীরে বল্লভপুর,
সকাল বিকাল দু’বেলাই লোকে ভরপুর।
প্রাণ জুড়ানো এই পরিবেশ হেসেই কাটে বেলা;
মন মাতানো রাজার ব্রীজে বসেছে রূপের মেলা।

প্রতিদিনই আসছে হেথা দশ গ্রামের লোকজন,
তাইতো কবি তার নাম দিয়েছি আনন্দ ভূবন।”

আনন্দ ভুবনে কিভাবে যাবেন?
—————————————
প্রকৃতি প্রেমিক আর ভ্রমন পিপাপু মানুষজন বছরের যেকোনো ঋতুতেই আনন্দ ভুবনে যেতে পারেন। মূলতঃ বর্ষাকালীন সময়টুকুতে আনন্দ ভুবনের আনন্দ উপচে পড়ে।

★সড়ক পথঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের কাউতলী বাসস্ট্যান্ট থেকে প্রতিদিন ১০ মিনিট পরপর কাইতলা-বিটঘরের উদ্দেশ্যে সিএনজি যাওয়া আসা করে।পথিমধ্যে জনপ্রতি মাত্র ৮০ টাকা ভাড়া নিয়ে নেমে পড়ুন সূর্যদীঘল গ্রাম বল্লভপুর।আর শায়খুল বাঙালের জন্মভূমি রত্নগর্ভা গ্রাম বল্লভপুরের পশ্চিমেই আনন্দ ভুবন।

★কসবা থেকে সরাসরি সিএনজিতে চারগাছ হয়ে আসতে পারেন বল্লভপুর-আনন্দ ভুবন।

★কুমিল্লা থেকে আসা দর্শনার্থীগণ চৌমুহনী বাসস্টপেজ থেকে সরাসরি সিএনজি নিয়ে অথবা কুটি বাজার থেকে অটোরিকশা করে শিমরাই গ্রামের ভিতরের দৃশ্য দেখতে দেখতে ৩০ মিনিটে পৌঁছে যাবেন আনন্দ ভুবনে।জনপ্রতি ভাড়া মাত্র ৫০ টাকা।

★কুটি বাজার থেকে মেহারী হয়েও সহজে পৌঁছতে পারেন আনন্দ ভুবনে।জনপ্রতি ভাড়া মাত্র ৪০ টাকা।

★নদীপথেঃ বর্ষাকালে বাঙ্গরা বাজার,সিদ্বিগঞ্জ কিংবা কালিগঞ্জ বাজার থেকে প্রতিনিয়ত নৌকা আসা যাওয়া করে। নবীনগর থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় আসতে পারেন আনন্দ ভুবনে।

👍আপনাদের ভ্রমন নিরাপদ ও আনন্দদায়ক হোক।আমিন।

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান,লেখক ও গবেষক)

ভিসা,পাসপোর্ট ছাড়া ভারত ভ্রমনের সুযোগঃ এস এম শাহনূর

| ২৭ জুন ২০১৯ | ১০:০৮ পূর্বাহ্ণ

ভিসা,পাসপোর্ট ছাড়া ভারত ভ্রমনের সুযোগঃ এস এম শাহনূর

★সীমান্ত হাটঃ
কমলা সাগর দিঘির উত্তর-পূর্ব কোণায় উঁচু উঁচু কাঁটাতারে ঘেরা বর্ডার হাট। ২০১৫ সালের ১১ জুন প্রথম সীমান্ত হাট বসতে শুরু করে এখানে। শুরুর দিকে প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে হাট বসলেও এখন বসে রোববার করে। সকাল ১০টা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা অবধি বিকিকিনি চলে হাটে।২০৩৯ নম্বর সীমান্ত পিলার লাগোয়া এ বর্ডার হাট গড়া হয়েছে উভয় দেশের ১৪০ শতক জমির উপর।

★কেন যাবেন সীমান্ত হাটে?
সীমান্ত হাটে ভারত বাংলাদেশের ব্যবসায়ী আর দোকানিরা তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে রাখেন।এতে করে অতি সহজে একজন ভারতীয়,পছন্দের বাংলাদশী পণ্য এবং একজন বাংলাদেশী ক্রেতা ভারতীয় পণ্য ক্রয় করতে পারেন।তবে হাটে মূলতঃ ভারতীয় সকল ধরনের কসমেটিকস্ আইটেম, সাবান,ওয়াশিং পাউডার, বাচ্চাদের গুড়া দুধ,চকলেট, হরলিক্স, শাড়ি, থ্রী পিস,মোদীমাল,বাচ্চাদের খেলনা অার নিত্য প্রয়োজনীয় হরেক রকম জিনিস পাওয়া।

★কিভাবে যাবেন?
কসবা উপজেলা পরিষদ থেকে মাত্র ৩০|=(ত্রিশ টাকা) টাকায় একটি টিকেট সংগ্রহ করতে হবে।

টিকেট সংগ্রহ করার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবদ্ধন কার্ড প্রদর্শন বাধ্যতামূলক।
আর টিকেট বিক্রি চলে সকাল ১১ টা পর্যন্ত।
তবে এর মধ্যে পৌঁছাতে পারলে হাটের সামনে যেয়েও টিকেট পাবেন।

💻তথ্যসূত্রঃ
কসবা উপজেলার ইতিবৃত্ত:এস এম শাহনূর

চাঁদপুরের ‘রক্তধারা’ স্মৃতিস্তম্ভ কথা কয়: এস এম শাহনূর

| ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৯:৪৭ অপরাহ্ণ

চাঁদপুরের ‘রক্তধারা’ স্মৃতিস্তম্ভ কথা কয়: এস এম শাহনূর

লোককথার প্রসিদ্ধ চাঁদ সওদাগরের নাম কিংবা চাঁদ ফকিরের পুণ্য নামের স্মৃতিধন্য মেঘনার স্রোতধারায় পুষ্ট চাঁদপুর পর্যটকদের দৃষ্টির অন্তরালে রয়ে গেছে আজো।ভ্রমণ পিপাসু মানুষের মনের জানালায় চাঁদপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য পৌঁছে দিতেই আমার এই প্রয়াস।
লোককথার সওদাগরের বাণিজ্যতরী সপ্তডিঙা মধুকর একদিন এই উর্বর জনপদে ভিড়েছিলে। তাহারি সম্বৃদ্ধ নামে পরিচিত চাঁদপুর এই লোকবিশ্বাস অনেকেরই মনে দৃঢ় হয়ে গেঁথে আছে। কারো কারো মতে শহরের পুরিন্দপুর বর্তমানে কুড়ালিয়া হলার মহল্লার চাঁদ ফকিরের নাম হতে চাঁদপুর নামের উৎপত্তি। বারো ভূঁইয়াদের আমলেই ভূখণ্ড বিক্রমপুরের জমিদার চাঁদ রায়ের দখলে ছিল এই অঞ্চলে তিনি একটি শাসন কেন্দ্র স্থাপন করেন তাই ইতিহাসবিদ জেএম সেনগুপ্তের মতে চাঁদ রায়ের নামানুসারেই এই অঞ্চলের নাম হয়েছে চাঁদপুর।
পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়ার মিলনস্থল চাঁদপুর বড় স্টেশনের মোলহেডে বধ্যভূমিতে অবস্থান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ’রক্তধারা’।১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী চাঁদপুর জেলার পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনায়, চাঁদপুর পুরাণ বাজার এবং চাঁদপুর বড় স্টেশনে কয়েকটি নির্যাতন কেন্দ্র বা টর্চার শেল তৈরি করে।মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে এখানে হানাদার বাহিনী সড়ক ও রেলপথে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লার পশ্চিম অঞ্চল, নৌপথে মুন্সীগঞ্জ, শরিয়তপুর, ভোলা, বরিশাল, খুলনা অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ জনগণ ও যাত্রীদের ধরে এনে নির্মম অত্যাচার করে হত্যা করত, নারীদের ধর্ষণ করত। ধারণা করা হয়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধরে আনা প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষকে এখানে হত্যা করে মেঘনা নদী মোহনায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। চাঁদপুরের ডাকাতিয়া ও মেঘনা নদীর মিলনস্থলে ঘূর্ণির গভীরতা প্রায় নয়শত ফুট। পাথর বেঁধে মৃত দেহগুলো ফেলে দিলে তা মুহূর্তেই ২০-২৫ মাইল দূরে চলে যায়। মানুষের রক্তস্রোত মেঘনা-ডাকাতিয়ার স্রোতে মিলিত হয়ে সৃষ্টি হয় ‘রক্তধারা’।

“মোলহেডের মাটির নিচে এবং পাশে নদী
একাত্তরে কত্তো মানুষ লুকিয়ে রাখে বধি।
লাকসাম আর চাটগাঁ হতে রেলগাড়িতে চড়ে
আসতো যারা ঢাকা হতে আনতো তাদের ধরে।
সেই স্মৃতিতে “রক্তধারা” আলোয় জ্বলে রাত্রে
চার পংক্তি আছে লেখা নাম ফলকের গাত্রে।
পাক হানাদার আর রাজাকার খুন করেছে যাদের
‘রক্তধারা’ শ্রদ্ধা জানায় রক্তলেখা তাদের।
‘রক্তধারা’ চাঁদপুরে আজ একাত্তরের স্মৃতি
বীর শহীদে শ্রদ্ধা ভরে ইলিশ জানায় প্রীতি।
[ছড়াকার ডাঃপীযূষ কান্তি বড়ুয়া]

 

স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পর ২০১১ সালে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তরুণ প্রজন্মের দাবিতে প্রশাসনের উদ্যোগে নির্মিত হয় ‘রক্তধারা’।রক্তধারা’র স্থপতি চঞ্চল কর্মকার । এ স্মৃতিসৌধটি উদ্বোধন করেন তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৯ সালে ৩১ অক্টোব এর নামফলক সংস্কার করেন মাহমুদুল হাসান খান।

রক্তধারা এক স্তম্ভ বিশিষ্ট এতে ৩টি রক্তের ফোঁটার প্রতিকৃতি দিয়ে বোঝানো হয়েছে রক্তের ধারা। টেরাকোটার মুরালে আঁকা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণসহ মুক্তিযুদ্ধের কয়েকটি ঘটনাবলীর চিত্র।
এই স্মৃতিস্তম্ভে লেখা আছে-

‘নরপশুদের হিংস্র থাবায় মৃত্যুকে তুচ্ছ করেছে যারা
এখানে ইতিহাস হয়ে আছে তাঁদের রক্তধারা
এ শুধুই স্মরণ নয়
নয় ঋণ পরিশোধ
এখানে অবনত শ্রদ্ধায়
নরপশুদের জানিও ঘৃণা আর ক্রোধ।’

➤দেখে নিন ইলিশ ভাস্কর্য বা ইলিশ সেলফি জোন:

ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ ও ‘ব্র্যাডিং জেলা’ চাঁদপুরের ইলিশের ঐতিহ্য ও সুখ্যাতি অর্জন ধরে রাখতে এবং অদূর ভবিষ্যতে মোলহেডকে একটি আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণে প্রাথমিক ধাপ হিসেবে ‘ভাস্কর্য ইলিশ’ নির্মাণ করা হয়েছে ।


চাঁদপুরের বড় স্টেশন মোলহেডের পূর্ব পাশে ব্র্যান্ডিং জেলার সেলফি জোন হিসেবে ইলিশের এ ভাস্কর্য নির্মাণ করছেন চিত্রশিল্পী আজাদ হোসেন।

➤কিভাবে যাবেন:

বাস: পদ্মা এক্সক্লুসিভ (সায়েদাবাদ)। ভাড়া: ২৭০ টাকা। বাস সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রতি ৩০ মিনিট পরপর ছেড়ে যায়।

লঞ্চ: ঢাকা সদরঘাট থেকে সকাল ৭.২০ মিনিট থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রতি ঘন্টায় লঞ্চ চাঁদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

ভাড়া: ডেকঃ ১০০ টাকা, চেয়ার: ১৫০ টাকা (নন-এসি), চেয়ার: ২৫০-২৮০ টাকা (এসি), কেবিন (সিঙ্গেল): ৪০০-৫০০ টাকা।

চাঁদপুর ঘাট থেকে অটোতে ১০/১৫ টাকায় বড় স্টেশন, তিন নদীর মোহনায় মোলহেডের ‘রক্তধারা’য় যেতে পারবেন।

💻লেখক: এস এম শাহনূর
(কবি ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক)

চাঁদপুরের মোলহেড এ যেন বারমুডা ট্রায়েঙ্গেল: এস এম শাহনূর

| ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৫:১৪ অপরাহ্ণ

চাঁদপুরের মোলহেড এ যেন বারমুডা ট্রায়েঙ্গেল: এস এম শাহনূর

বাংলাদেশের বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল
আমার দেখা চাদঁপুরের মোলহেড!

প্রকৃতির নিবিড় মমতায় পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়া বিধৌত চাঁদপুর যেনো এক রূপ নগরের রাজকন্যা। যার রূপের যাদুতে মুগ্ধ হয়ে নেমে আসে আকাশের চাঁদ।
মেঘনা ডাকাতিয়ার জলজ জ্যোৎস্নার বিগলিত স্রোতধারায় পুষ্ট, ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এক নিবিড় শ্যামল জনপদের নাম চাঁদপুর।যার আয়তন প্রায় ১৭০৪.০৬ বর্গ কিলোমিটার।চাঁদপুর হচ্ছে চাঁদের নগর।এ চাঁদ আকাশের বিনিদ্র যামিনী জাগা চাঁদ নয় এ চাঁদ কোন ব্যক্তির কাল বিকীর্ণ নামের বিচ্ছুরণ।


“কথা কয়-কথা কয়-ক্লান্ত হয় নাকো
এই নদী
এক পাল মাছরাঙা নদীর বুকের রামধনু
বকের ডানার সারি শাদা পদ্ম
নিস্তব্ধ পদ্মের দ্বীপ নদীর ভিতরে
মানুষেরা সেই সব দেখে নাই।”

—জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে যে-কেউ মুগ্ধ হয়ে জীবনানন্দ দাশের এই কবিতা আওড়াতে পারেন।নদী ঘিরে দেখা যায় এমন মনোরম দৃশ্য। এমন মনোরম দৃশ্য উপভোগের জন্য সকাল-বিকেল সেখানে লোকসমাগম ঘটে। সকাল থেকে বিকেলের দিকে লোকের ভিড় থাকে আরও বেশি।

হিমেল হাওয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঘেরা জায়গাটি হচ্ছে চাঁদপুর শহরের পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়া নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত ত্রিকোণাকার, প্রবল ঘূর্ণাবর্ত অংশটি যা মোলহেড নামে পরিচিত। বড় স্টেশন মোলহেড, যেটা মোহনা নামেও পরিচিত। আবার অনেকে একে শহরের ‘ঠোডা’ হিসেবেও বলে থাকেন। ছোটবেলা থেকে আটলান্টিক মহাসাগরের বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এর কথা অনেকেই শুনেছেন।হয়তো আপনার যাওয়া হয়নি কখনও আটলান্টিক মহাসাগরে। কিন্তু দেখে আসতে পারেন ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিপাক সৌন্দর্য চাঁদপুরের মোলহেড ট্রা’য়া’ঙ্গে’ল। চারপাশ থেকে প্রবাহিত তীব্র স্রোত, মাঝে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিপাক। ভয়ংকর ওই ঘূর্ণিপাকে কিছু পড়লে তার আর হদিস মেলে না।

এমনকি বড় বড় যাত্রীবাহী লঞ্চও তলিয়ে গেছে এখানে, যেগুলোর সন্ধান কোনোদিনই আর পাওয়া যায়নি। বলছি চাঁদপুরের ত্রিনদীর সঙ্গমস্থলের কথা, যা স্থানীয়ভাবে কোরাইলার মুখ নামেও পরিচিত।নদীগুলো তিনদিক থেকে প্রবাহিত হয়ে মিশে যাওয়ায় সেখানে পানির বিশাল এক ঘূর্ণিগর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আর এই ট্রায়াঙ্গেলে পড়েই নিখোঁজ হয়েছে শত শত মানুষ, লঞ্চসহ কার্গো কিংবা ট্রলার। তিন নদীর এ সঙ্গমস্থল যেন এক মৃত্যুকূপ।মোহনাটি নদীর একেবারে তীরে অবস্থিত। সাধারণত নদীর তীর অগভীর থাকে। তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, নদীর তীরে হওয়া স্বত্বেও এই মোহনা অনেক গভীর। বর্ষাকালে এটি রূপান্তরিত হয় মৃত্যুকূপে। পানির ভয়ঙ্কর ঘূর্ণি দেখে মানুষের মনে শিহরণ জাগে। এই মোহনা নিয়ে লোকমুখে অনেক গল্প প্রচলিত রয়েছে।

জনশ্রুতি আছে, এই মোহনা এক ছেলের অভিশাপে সৃষ্টি হয়েছে। সে হয়তো হাজার বছর আগের কথা। তখন মোহনাস্থলে কোনো নদী ছিল না। ছিল ছোটখাটো বাজার, হোটেল আর দোকানপাট। নদী ছিল কয়েক কিলোমিটার দূরে। একদিন বিকেলে ছোট এক দ্ররিদ্র ছেলে একটি হোটেলে গিয়ে খাবার চায়। হোটেলের মালিক তাকে তাড়িয়ে দেয়। ছেলেটি পুনরায় খাবার চাইতে গেলে তাকে তাড়িয়ে দেয়া হয়।ছেলেটি আবারও ওই হোটেলে যায়। এবার হোটেলের লোকটি রেগেমেগে তার গায়ে গরম তেল ছুড়ে মারে। অসহ্য যন্ত্রণায় চিৎকার করে কাদঁতে কাঁদতে ছেলেটি চলে যায়। ওই রাতেই হোটেল অবধি কয়েক কিলোমিটার জায়গা নদীর অতলে হারিয়ে যায়। তৈরি হয় মোহনা। ওই ঘটনার বহু বছর পর ওই ঘূর্ণিপাকে পড়ে একটি লঞ্চ ডুবে যায়। তখন ডুবুরিরা লঞ্চের সন্ধানে নদীর তলদেশে গিয়ে দেখে একটি ছোট ছেলে চেয়ারে বসে আছে। ঘটনাগুলো আদৌ সত্যি কি-না তার কূল-কিনারা নেই।

এখানে এমভি শাহজালাল, মদিনা, দিনার ও নাসরিন-১ লঞ্চ ডুবে যায়। সবগুলো লঞ্চেই প্রচুর যাত্রী ছিল।তীব্র স্রোতের কারণে অধিকাংশ যাত্রীই বেঁচে ফিরতে পারেননি। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে এমভি নাসরিন-১,২০০৩ সালের ৮ জুলাই এমভি নাসরিন-১ লঞ্চ ডুবিতে মারা যান ১১০ জন, নিখোঁজ হন ১৯৯ জন।এখন পর্যন্ত এখানে ডুবে যাওয়া কোনো লঞ্চের সন্ধান পায়নি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ – বিআইডব্লিউটিএ।

এ স্থান হতে পশ্চিম দিগন্তে খুব স্পষ্টভাবে সূর্যাস্ত দেখা যায়। ইংরেজি শব্দ মোলহেড (Molehead) মানে বিক্ষুব্ধ তরঙ্গ অভিঘাত হতে স্থল ভূমিকে রক্ষার জন্য পাথর কংক্রিট দ্বারা নির্মিত শক্ত প্রাচীর বা বাঁধ।বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়ার মিলিত প্রবল স্রোত ও ঘূর্ণি হতে চাঁদপুর শহরকে রক্ষার জন্য বোল্ডার দ্বারা এটি নির্মিত হয়। এই মনোরম স্থানটি চাঁদপুরের শ্রেষ্ঠ নৈসর্গিক বিনোদন স্থান। তিন নদীর সঙ্গমস্থলে গড়ে ওঠা শহরের নজির হিসেবে চাঁদপুর অনন্য।জেলা প্রশাসন জায়গাটিকে ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ নামে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে।

ছড়াকার ডাঃপীযূষ কান্তি বড়ুয়া লিখেছেন,
“শহরটা দেহ হলে আছে তার তিল
তিলটাই নেয় কেড়ে মুসাফির দিল্
সরকারি নামে তারে ডাকে মোলহেড
নদী ভেঙে গড়ে তিল যেন রেডিমেড।
অবারিত মিলনে তিনটি নদী
ছুটে যায় সাগরে মহাজলধি।
ত্রিনদীর সংযোগ নজর কাড়া
আছে তরু আকাশের নীলের সাড়া।
শান্তির হাওয়া মেলে মন জুড়িয়ে
বিনোদনের যায় দিন,কাল ফুরিয়ে।
নগরীর মোলহেড স্বর্গ বিলাস
মেঘনার সঙ্গমে স্বস্তিনিবাস।
এইখানে বসে খাও ইলিশ মুড়ি
পৃথিবীতে মোলহেড নেইকো জুড়ি।”

সেখানে বসে দেখা যায়, পদ্মা মেঘনার উন্মত্ততা, সূর্যাস্ত, মাছ ধরা, নানা ধরনের নৌযান চলাচলের দৃশ্য। এই বড় স্টেশনের পাশেই রয়েছে পদ্মা, মেঘনার রুপালি ইলিশসহ নানা ধরনের তাজা মাছের বিশাল আড়ত।
বড় স্টেশনের এক পাশে স্টিমারঘাট, আরেক পাশে লঞ্চঘাট, মধ্যখানে রেলস্টেশন। অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের জন্য জায়গাটি ঘুরে দেখা যায়, সেখানে কিছু স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। প্রবেশের মুখে রুপালি ইলিশের একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে।এ বিষয়ে পরে লিখব অবশ্যই। ইলিশ মাছের জন্য প্রসিদ্ধ চাঁদপুরকে ‘ইলিশের বাড়ি’ বলা হয়। তাই শহরের আইকন হিসেবে ভাস্কর্যের জন্য ইলিশকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। এই ভাস্কর্যকে ‘সেলফি জোন’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলে জানা গেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় চাঁদপুরে ব্যাপক গণহত্যার সাক্ষী বধ্যভূমিটিও সেখানে। সেই বধ্যভূমির স্মৃতিরক্ষার্থে ‘রক্তধারা’ নামে একটি সৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।
চাঁদপুরে মোলহেড ছাড়া সাধারণ বিনোদনের জন্য কোন স্পট নেই বললেই চলে।তিন নদীর মিলনস্থল এই মোলহেডে ভরা বর্ষায় প্রচন্ড ঘূর্ণস্রোতে এক ভয়ংকর সৌন্দর্যে রূপ নেয়। এই ঘূর্ণিস্রোতের পাকে পড়ে গত দু তিন দশকে বেশ কিছু যাত্রীবাহী লঞ্চ হারিয়ে যায়, অনেকটা বারমুডা ট্রায়াংগেলের রহস্যের মতো! সূর্যাস্তের প্রাক্কালে দিগন্ত ব্যাপী এক মায়াবী সৌন্দর্যের জাল বিস্তারী এই মোলহেড শত শত মানুষের সলিল সমাধিও ঘটিয়েছে। তবুও নৈসর্গিক সৌন্দর্য পিয়াসী মানুষের নিকট এর আকর্ষণ দুর্নিবার।

➤কিভাবে যাবেন:
বাস: পদ্মা এক্সক্লুসিভ (সায়েদাবাদ)। ভাড়া: ২৭০ টাকা। বাস সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রতি ৩০ মিনিট পরপর ছেড়ে যায়।

লঞ্চ: ঢাকা সদরঘাট থেকে সকাল ৭.২০ মিনিট থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রতি ঘন্টায় লঞ্চ চাঁদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
ভাড়া: ডেকঃ ১০০ টাকা, চেয়ার: ১৫০ টাকা (নন-এসি), চেয়ার: ২৫০-২৮০ টাকা (এসি), কেবিন (সিঙ্গেল): ৪০০-৫০০ টাকা।

চাঁদপুর ঘাট থেকে অটোতে ১০/১৫ টাকায় বড় স্টেশন, তিন নদীর মোহনায় যেতে পারবেন।অথবা চাঁদপুর জেলার প্রাণকেন্দ্র শপথ চত্তর মোড় থেকে রিক্সা, অটোরিক্সা, বা নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায়। শপথ চত্তর থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১/১.৫ কিলোমিটার।

💻লেখক: এস এম শাহনূর
(কবি ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক)

ব্রাহ্মণবাড়িয়া(ভাটি অঞ্চল)জেলার ভূ-প্রকৃতির উৎপত্তি রহস্য: এস এম শাহনূর

| ১৯ জানুয়ারি ২০২০ | ৮:৫৫ অপরাহ্ণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া(ভাটি অঞ্চল)জেলার ভূ-প্রকৃতির উৎপত্তি রহস্য: এস এম শাহনূর

যে কোন জনপদের ঐতিহ্যের স্মারক তাঁর অতীত জীবনের ইতিকথা। বাংলাদেশের প্রাচীনতম জনপদ সমতটের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সাথে এর ভূ-প্রকৃতির উৎপত্তি ও এতদ অঞ্চলে প্রথম বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর জীবন গাঁথাও অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এর পরিচয় জানতে হলে ফিরে যেতে হবে সহস্রাধিক বছরের নিরন্ধ্র পথে।কখনও কখনও আমাদের হৃদয়ে সতত প্রশ্ন দেখা দেয় কিভাবে ভাটি অঞ্চলের বুকে জেগে উঠা চরাভূমির প্রশস্ত ললাটে প্রতিভাত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামের রক্তিম আভা; কোন সাধকের পুণ্যপাদস্পর্শে ধন্য হয়েছে এখানকার মাটি ও মানুষ; সৃষ্টি হয় ইতিহাসের এক স্বর্ণাধ্যয়।

বাংলা ভাটা বা ভাটি শব্দ থেকে ‘ভাটি অঞ্চল’’ নামের উৎপত্তি। বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্রের মতো বৃহৎ নদীগুলো এবং তাদের অসংখ্য শাখা সমগ্র পূর্ব ও দক্ষিণ বাংলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এ অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকাকেই বছরের অর্ধেকের চেয়ে বেশি সময় প্লাবিত করে। তাই গবেষকগণ বাংলার বিভিন্ন অংশকে ভাটিরূপে শনাক্ত করেন।

আকবরনামা ও বাহারিস্তান-ই-গায়েবীতে প্রদত্ত যুদ্ধ বিগ্রহের বিস্তারিত বিবরণের ভিত্তিতে ভাটি অঞ্চল হলো পশ্চিমে ইছামতি নদী, দক্ষিণে গঙ্গা (পদ্মা) নদী, পূর্বে ত্রিপুরা রাজ্য এবং উত্তরে বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ উত্তর-পূর্বে সিলেটের বানিয়াচং। তিনটি বড় নদী গঙ্গা (পদ্মা), ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা ও তাদের শাখা-প্রশাখা বিধৌত ঢাকা, ময়মনসিংহ, ত্রিপুরা ও সিলেট বেষ্টিত নিম্নাঞ্চল হলো ভাটি অঞ্চল।

ব্রাহ্মণ বাড়িয়া জেলার ৯টি উপজেলার নামকরণের ইতিকথা লিখতে গিয়ে পড়তে হয়েছে বহু গ্রন্থরাজি,শুনতে হয়েছে লৌকিত অলৌকি কল্প কাহিনী।স্থান নামগুলোর নামকরণের তথ্য উদঘাটন করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে ভাটি অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতির উৎপত্তির নানান তথ্য।

কালিদাস সাগরের বুকে জেগে উঠা চরই আজকের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাস অতি প্রাচীন। অসংখ্য কিংবদন্তী এবং ঐতিহাসিক ঘটনাবলী ও তথ্যাবলীতে সমৃদ্ধ। প্রাচীন ইতিহাস থেকে অনুমান করা হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সমগ্র অঞ্চল এককালে নদীগর্ভে বিলীন ছিল। প্রাচীন জনপদ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রাচীনত্ব সম্পর্কে বহু প্রমাণ পাওয়া যায়। মহাভারত প্রণেতা বেদব্যাসের ‘পদ্মপুরান’ গ্রন্থে জনশ্রুতি আছে, কালিদহ সায়র বা কালিদাস সাগরের তলদেশ থেকে ধীরে ধীরে স্থল ও জনপদে রূপান্তরিত হয় জেলার বৃহত্তর অংশ,তাও আবার একাদশ থেকে ষোড়শ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে।প্রিয় পাঠক,আপনি কি ভাবছেন?আমাদের প্রিয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আসলেই কি এক সময় কালিদাস সাগরের তলদেশ নিমজ্জিত ছিল? কিংবা কালিদাস সাগরের তলদেশ থেকে ধীরে ধীরে জেগে উঠা চর?এমন ভাবনা যদি আপনার জিজ্ঞাসা হবে তবে আমার সাথে যোগ দিন।আর আবিস্কার করুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভূ-প্রকৃতির উৎপত্তি রহস্য।

➤বিভিন্ন ইতিহাস ও প্রাচীন পান্ডুলিপি থেকে জানা যায়, বৃহত্তর সিলেট ও বৃহত্তর ময়মনসিংহের একটি বড় অংশ এক সময় ‍কালীদহ সাগর’ (মতান্তরে লৌহিত্য সাগর) নামে একটি বিশাল জলরাশিতে নিমজ্জিত ছিল। পরবর্তীতে ভূ-প্রাকৃতিক বিবর্তনের ফলে তা পিরিচ আকৃতির নিন্ম সমতল ভুমিতে পরিণত হয়- যা পরিচিত হয় হাওর নামে। হাওর শব্দটির উৎপত্তিও সাগর থেকে সায়র; আর সায়র অপভ্রংশ হয়ে হাওর হয়েছে বলে ভাষা বিজ্ঞানীদের মত।অবশ্য, ‘হাওর’ নাম নিয়েও সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা রয়েছ। এ অঞ্চলের লোকেরা ‘স’ কে ‘হ’ বলে উচ্চারণ করে। তেমনি ‘সাগর’কে বলে ‘হাগর’। এভাবেই ‘সাগর’ শব্দের বিকৃত রুপ হিসাবে ‘হাগর’ এবং ‘হাগর’ থেকে ‘হাওর’ শব্দের উৎপত্তি হয়। উল্লেখ, ভাটি অঞ্চল নামেও হাওরাঞ্চলের আরেকটি পরিচিতি রয়েছে। প্রসঙ্গত, দেশের সাতটি উপজেলা নিয়ে বিশাল হাওর এলাকা গঠিত। জেলা গুলো হচ্ছেঃ নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভী বাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মনবাড়িয়ার একাংশ।

একটা ছিল সোনার কন্যা, মেঘবরণ কেশ
ভাটি অঞ্চলে ছিল সেই কন্যার দেশ।
হ্যাঁ, এই ভাটি অঞ্চল ই হচ্ছে সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা বলতে যা বুঝায় ঠিক তাই। পুরো অঞ্চলটাই এক সময় হাওর (সাগর) এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। বিখ্যাত হাকালুকি ও টাঙ্গুয়ার হাওর এখানেই। কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম এর পুরোটা, নিকলী, তাড়াইল ও করিমগঞ্জের কিছু অংশ, নেত্রকোণার খালিয়াজুড়ী, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জের কিছু এলাকাজুড়ে এই হাওর বিস্তৃত। বর্ষায় বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে মহাসাগরের রুপ নেয়। উত্তরদিকে তাকালে একেবারে মেঘালয় সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় দুইশ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শুধু পানি আর পানি। নিজের চোঁখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।
সুরমা নদীর একটি অংশ ধনু নদী নামে অবিভক্ত বাংলার প্রথম ব্যারিস্টার আনন্দমোহন বসুর জন্মস্থান ইটনা উপজেলার মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে।কিশোরগঞ্জ হতে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অষ্টগ্রাম উপজেলার অবস্থান।
অষ্টগ্রাম উপজেলা আজো একটি হাওর বেষ্টিত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন উপজেলা।

বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। কিন্তু হাওরে ঋতু মাত্র দু’টি। একটি বর্ষা। অন্যটি হেমন্ত। বছরের প্রায় পাঁচ-ছ’মাস এখানে বর্ষা থাকে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ থেকে শুরু হয়ে বর্ষা শেষ হয় আশ্বিন-কার্তিকে। এ সময় হাওর সাগরের রুপ ফিরে পায়। পানিতে একাকার হয়ে যায় সব মাঠ-ঘাট।হাওর আমাদের শস্যভাণ্ডার ও মৎস্যভাণ্ডার।ভরা বর্ষা হচ্ছে হাওরের যৌবনকাল একই সাথে নিদানকাল। চারদিকে পানি, শুধু পানি, থৈ থৈ করে। টলমল, উচ্ছ্বাস জলে জলকেলি খেলে প্রকৃতি,পানির মধ্যে দাপাদাপি বড়ই আনন্দের। সমুদ্রের সাথে হাওরের পার্থক্য হচ্ছে সমুদ্রের গভীরে সাঁতার কাটা, ডুব দেয়া, মাছ ধরা বা ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ খুব কম পাওয়া যায়।নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র মতে,এখানে প্রায় ৮ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের হাওর এলাকায় (প্রায়) ২০ মিলিয়ন লোক বসবাস করে। ভাটির বাংলায় রয়েছে মোট ৩৭৩টি হাওর।দেশের পূর্ব-উত্তরাংশের কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, মৌলভীবাজার হবিগঞ্জ ও ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার ৫৭টি উপজেলা নিয়ে ভাটির বাংলার হাওর এলাকা গঠিত। হাওর হচ্ছে একটা বিশাল চ্যাপ্টা বাটির মতো, হাওরের আছে ব্যাঞ্জরিত নাম। টাঙুয়ার হাওর, হাকালুকি হাওর, শনির হাওর, টগার হাওর, মাটিয়ান হাওর, দেখার হাওর, হালির হাওর, সানুয়াডাকুয়া হাওর, শৈলচকরা হাওর, বড় হাওর, হৈমান হাওর, কড়চা হাওর, ধলা পাকনা হাওর, আঙ্গরখালি হাওর, নখলা হাওর, চন্দ্রসোনার থাল হাওর, ডিঙ্গাপুতা হাওর আরও কত নাম।

➤কবে কোন অমানিশার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে প্রথম আলোর মুখ দেখেছিল এই অঞ্চল? হয়েছিল প্রথম মানব বসতির সূচনা?এর উত্তর নিশ্চিত করে বলা কঠিন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, লৌহিত্য সাগর থেকে নিম্ন সমভুমিতে (প্লাবন সমভূমি) পরিণত হওয়ার পরও বহু বছর বিরান পড়ে ছিল হাওর এলাকা। এরপর পলিমাটি বিধৌত এ উর্বর ভূমিতে প্রথম বসতি স্থাপন করে অস্ট্রো-মঙ্গোলিয়ান জাতি গোষ্ঠীর কোচ, হাজং, গারো ও খাসিয়া উপজাতিরা। এর মধ্যে কোচরাই ছিল সংখ্যাধিক্য। তারাই এসে প্রথম সেখানে অনেক উচু করে বাস্ত্তভিটা নির্মাণ করে এবং শুরু করে জমির চাষাবাদ এবং মাছ ধরার পেশা। এরপর এক সময় অঞ্চলটি কামরুপ রাজ্যের অধীনে চলে যায়। ততদিনে বিভিন্ন স্থানে প্রচার হয়ে যায় এ উর্বর ভূমির খবর। তাই সে ভূ সম্পত্তির মালিকানা পেতে উপজাতিদের পাশাপাশি অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনও ছুটে আসে সেখানে। আর এভাবেই হাওর জনপদে গড়ে ওঠেছিল বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর এক মিশ্র মেলবন্ধন। যাদের উত্তরসূরীদের নিয়ে হাওর অঞ্চল এখনও মাথা নুয়ে শুয়ে আছে হিজল-করচের ছায়ায়।

অনুমান করা হয়,ব্রাহ্মণবাড়িয়া,কিশোরগঞ্জ,কুমিল্লা সুনামগঞ্জ ও সিলেট বিভাগের বেশীর ভাগ অঞ্চল এককালে কালিদহ সায়র বা কালিদাস সাগরের বুকে নিমজ্জিত ছিল যা কালে কালে পলি ভরাট জনিত কারণে ও ভূ-প্রাকৃতিক পরিবর্তনের সূত্র ধরে ভূখণ্ডে পরিণত হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লার ভূগর্ভে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে গ্যাস খনি, সুনামগঞ্জের ভূগর্ভে চুনা পাথরের খনি ও কয়লা আবিষ্কারের ফলে এরূপ চিন্তার সক্রিয় সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে। সুনামগঞ্জের টেকেরঘাটে প্রাপ্ত চুনাপাথর এক ধরণের ক্যালসিয়াম যা সামুদ্রিক প্রাচীন শামুক ও শৈবাল দ্বারা সৃষ্ট। এতেও পূর্বোক্ত ধারণার পেছনে বৈজ্ঞানিক যোগ সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়।এ ছাড়া এখানকার শত শত হাওরের গঠন প্রকৃতি (basin type) বিশ্লেষণ করেও এ মতের সমর্থন দৃঢ় ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।প্রায় সব ঐতিহাসিক সূত্র মতে, এতদ অঞ্চলের বিশাল ভূখণ্ড যে সাগর বক্ষ থেকে জেগে উঠেছে সে সাগরকে ‘কালিদহ’ সাগর বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। হাছন রাজার জ্যেষ্ঠ পুত্র খান বাহাদুর দেওয়ান গনিউর রাজা চৌধুরীর আত্মজীবনীমূলক রোজনামচাতেও এর উল্লেখ রয়েছে; রয়েছে বিভিন্ন আঞ্চলিক গান, পালা-পার্বণের অনুষ্ঠানগুলিতেও।

সিলেটের কালেক্টর মিঃ লিন্ডসের অষ্টাদশ শতাব্দীতে লিখিত বর্ণনা থেকেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেন- “In the pre Historic days the southern part of Sadar Subdivision and the northern part of Moulivibazar and Habiganj Subdivision and nearly the entire Sunamganj Subdivision were a part of Bay of Bengal.”

মাটির ওপর জলের বসতি, জলে ওপর ঢেউ
ঢেউয়ের সাথে পবনের পিরিতি, নগরে জানে না কেউ”

হাওর শব্দটি সায়র (সাগর) থেকে এসেছে। বর্ষাকালে সিলেটের হাওরগুলো এখনো সে রূপই ধারণ করে। সুদূর অতীতে এই কালিদহ সাগর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, যার উপর দিয়ে ১০১১ খ্রিষ্টাব্দে চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং জাহাজে করে সরাসরি তাম্রলিপ্ত থেকে সিলেট পৌঁছেছিলেন বলে তাঁর লেখা থেকে জানা যায়। তাঁর মতে, নহরী আজরক নামে একটি নদী কামরূপের পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে হাবাং শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ নদী দিয়ে বাংলা ও গৌড়ে যাওয়া যেত। এ নদীকে প্রাচীন সুরমা বলে ঐতিহাসিকরা মনে করে থাকেন।

➤ত্রিপুরার ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৪ তম শতাব্দী থেকে ১৫ তম শতাব্দীতে ত্রিপুরা রাজ্য উত্তর ও পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদ ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, এছাড়াও সেই সময়ে ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্যে পূর্বাঞ্চলীয় বঙ্গের এবং বার্মার কিছু অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত ছিল।ত্রিপুরার উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে বাংলাদেশ কর্তৃক বেষ্টিত; রাজ্যের পূর্বভাগে ভারতের অপর দুই রাজ্য অসম ও মিজোরাম অবস্থিত।

সুপ্রাচীন মহাকাব্য মহাভারতে এবং পুরাণে ত্রিপুরা নামটির উল্লেখ পাওয়া যায়। এরপর ১৪শ শতকে রচিত রাজমালাতেও ত্রিপুরার উল্লেখ পাওয়া গেছে। এটি ছিল ত্রিপুরার মাণিক্য রাজবংশের কাহিনী। মাণিক্য রাজবংশ ১৯৪৭ সালে ত্রিপুরা ভারতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পূর্বাবধি অঞ্চলটি ধারাবাহিকভাবে শাসন করে। কথিত আছে প্রায় ২৫০০ বছর ধরে ১৮৬জন রাজা এই অঞ্চলটি শাসন করেছেন।ভারতে ব্রিটিশ শাসনকালে ত্রিপুরা ছিল একটি স্বাধীন করদ রাজ্য। রাজ্যের সরকারি ভাষা বাংলা ও ককবরক।ত্রিপুরা শব্দটির উৎপত্তি রাজ্যের আদিবাসীদের অন্যতম ভাষা ককবরক থেকে এসেছ বলে অনেকে মনে করেন। ককবরক ভাষায় ‘তৈ’ হল জল। ‘প্রা’ হল নিকটে। জলের নিকটবর্তী স্থান তৈ-প্রা থেকে ধীরে ধীরে তেপ্রা, তিপ্রা এবং শেষে বাঙালি উচ্চারণে ত্রিপুরা হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।জলের নিকটবর্তী ত্রিপুরা বলতে কালিদাস সাগরের তীরবর্তী ত্রিপুরা রাজ্যকেই বোঝানো হয়েছে বলে আমার গবেষণায় প্রতীয়মান ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুলতানপুর একটি গ্রামের নাম-সুলতানপুর একটি ইউনিয়নের নাম।সমতট অঞ্চলের বর্তমান তিতাস পাড়ে, হাজার বছর পূর্বে অথৈ জলরাশির মধ্যে যে কয়টি অঞ্চল ভেসে উঠে ছিল সুলতানপুর গ্রামটি তারই একটি।ক্রমান্বয়ে ভেসে উঠা চর হয়ে উঠে সুজলা সুফলা।এমন সুন্দর চরটিতে আস্তে আস্তে বসতি গড়ে উঠে। বসতি স্থাপনকারীরা বেশির ভাগ ধনী ছিল। সুলতানপুর গ্রামের আনাচে কানাচে ইট-পাথরের অট্টালিকার ধ্বংশাবশেষ ইহার সাক্ষ্য বহন করে। এখানে বসতি স্থাপনকারীরা কষ্টি পাথরের মূর্তি স্থাপন করেছিল। বিগত ২০০৮ ইং সনে স্থানীয় একটি পুকুর খননের সময় প্রায় সাত মন ওজনের কষ্টি পাথরের মহাদেব মূর্তি পাওয়া গিয়াছে।

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত পাওয়া মূর্তিগুলির মধ্যে এটাই বৃহৎ । এই মূর্তিটি কুমিল্লা যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এছাড়াও স্বর্ণ ও মূর্তির ভাঙ্গা অংশ পাওয়া গিয়াছে। প্রবীণগণের কাছে জানা যায় এখানে অন্যান্য সম্প্রদায়ের পাশাপাশি কোচ্ সম্প্রদায়ের বসতি ছিল। শতশত বৎসর ধরে বিবর্তনে ঐ সমস্ত জাতি গোষ্ঠি এক সময় বিলীন হয়ে যায়। আতঃপর বিভিন্ন প্রাচীন বসতি অঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা লোকজন নতুন করে আবার বসতি স্থাপণ শুরু করে। ক্রমান্বয়ে আশ পাশের এলাকাও ভরাট হতে থাকে আর ঐ নতুন ভরাট অঞ্চলগুলিতে বসতি স্থাপন শুরু হয়। ঐ সমস্ত প্রাচীন জনপদের পরিচিতি বা নাম কী ছিল তা জানা যায়নি।সুলতানী আমলে এই জনপদটির নাম সুলতানপুর হয়েছে বলে প্রবীনেরা অভিমত প্রকাশ করেন। সুলতানী আমলেই এখানে মুসলিম সমাজ গড়ে উঠতে থাকে । সুলতানপুর জামে মসজিদটি প্রায় ৪০০ বৎসর পূর্বে নির্মিত হয়ে ছিল বলে জানা যায়।

যখন ব্রিটিশ দখলকারীরা কিছু গ্রাম মিলিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করতে থাকে তখন বৃহৎ গ্রাম হিসাবে বড় সুলতানপুর কে কেন্দ্র করে সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করে আর এই ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হয় পাশাপাশি পাতৈরহাতা, উরশীউড়া, শিলাউর, হাবলাউচ্চ এবং বিরামপুর মৌজা।

➤মেঘনা,তিতাস আর ব্রহ্মপুত্রের বহমান বালুকা ও পলির সঞ্চয়ে প্রাচীন বাংলার সমতট জনপদে জেগে উঠেছিল এক ভবিষ্যৎ এর সমৃদ্ধ জনপদ,নাম তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া।১৬৬০ সালে অঙ্কিত ওলন্দাজ কোম্পানীর গভর্নর ভন ডেন ব্রুক(Van Den Brouke) এর মানচিত্র অনুযায়ী এবং ১৭৬১- ৮০ সালে জেমস্ রেনেল কর্তৃক অঙ্কিত মানচিত্র অনুযায়ী এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে সুরমা ও ব্রহ্মপুত্রের মিলিত স্রোত মেঘনা নাম ধারণ করে নবীনগরের পশ্চিম পাশ দিয়ে বর্তমানে যে ধারা বয়ে চলছে তা ১৭৪০ সালের পরবর্তী ধারা। তার আগে মেঘনার প্রবাহ ছিল নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুর এর মধ্যবর্তী বিল সমৃদ্ধ এলাকার মধ্য দিয়ে( নদীর গতি পরিবর্তনের কারণে বিলভূমি সৃষ্টি) প্রবাহমান ছিল। প্রাচীন সোনারগাঁ সরকারের অধীনে যে ৬১ টি পরগনা ছিলো তার মধ্যে বলদাখাল পরগনাভুক্ত ছিল বর্তমান বাঞ্ছারামপুর। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছিল সরাইল পরগনার অন্তর্ভূত। ১৭৪০ সালের পরের কোন এক সময় মেঘনার প্রবাহমান বালু ও পলির সঞ্চয়ে উত্তরের ভেলানগর, রূপসদী, হোগলাকান্দা ও খাগকান্দা পর্যন্ত এক সুন্দর দ্বীপ জেগে উঠেছিল।

(মুসলেম বঙ্গের সামাজিক ইতিহাস, মাওলানা আকরাম খা)।
নবী মুহাম্মদ মুস্তাফার (সা)[৫৭০খ্রীস্টাব্দ] দুনিয়ায় আগমনের বহুকাল পূর্বে বহুসংখ্যক আরব বণিক এদেশে (মালাবারে) আগমন করেছিলেন। তারা হরহামেশা এ পথ দিয়ে অর্থাৎ মালাবাদের উপর দিয়ে চট্টগ্রাম এবং সেখান থেকে সিলেট ও কামরূপ হয়ে চীন দেশে যাতায়াত করতেন।

➤মেঘনা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের মিলনস্থলে অষ্টাদশ শতাব্দীতে জেগে উঠা বালুরচর বর্তমান জনপদ ভৈরব। চরাঞ্চল ও জলাভূমিতে উলু-খাগড়ার বন জন্মানোর কারণে স্থানটির প্রথম নাম হয় উলুকান্দি। এলাকাটি ভাগলপুর দেওয়ানদের জমিদারীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। নবীনগর উপজেলার বিটঘরের দেওয়ান ভৈরব চন্দ্র রায় ভাগলপুরের জমিদার দেওয়ান সৈয়দ আহমদ রেজা এর কাছ থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়ে উলুকান্দি ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় জনবসতি শুরু করেন। জনবসতির পাশাপাশি একটি বাজার গড়ে উঠে। দেওয়ান ভৈরব চন্দ্র রায় তাঁর মা’র নামে বাজারটির নাম দেন কমলগঞ্জ যা প্রকাশ পায় ভৈরব বাজার নামে।

কসবা উপজেলার একটি ইউনিয়নের নাম বাদৈর। হাতনির বিলের দক্ষিণ পাড়ে বাদৈর গ্রাম অবস্থিত। শত শত বছর আগে বন-বাদাড়ে পরিপূর্ণ ছিল এ গ্রাম। অনেকেই বলেছেন-তিনলাখ পীর থেকে পশ্চিমে নবীনগরের শাহপুর পর্যন্ত অবস্থিত পোড়া রাজার জাঙ্গাল। এটিকে লোকেরা বাঁধ বলত। কারণ বিলের দক্ষিণে অবস্থিত গ্রামগুলোর ফসল রক্ষা পেত বাঁধ থাকার কারণে। এ বাঁধ থেকে বাদৈর নামকরণ করা হয়েছে। এটি গ্রহণযোগ্য মত।

খেওড়া গ্রামের নামকরণঃ
ঐতিহাসিক তথ্য উপাত্ত থেকে পাওয়া যায় প্রাচীনকালে অত্র অঞ্চল ছিল জলমগ্ন যা কালিদহ সায়র বা কালিদাস সাগর নামে অভিহিত। আর এ কালিদহ সায়রের বুকে জেগে উঠা ছোটছোট চরগুলোতেই পরবর্তীতে আস্তে আস্তে জনবসতি গড়ে উঠে।ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার অন্তর্গত আজকের খেওড়া নামক ঐতিহাসিক গ্রাম খানা(কালিদহ সায়রের বুকে জেগে উঠা চর) একসময় নূরনগর পরগণার একটি ব্যস্ততম খেয়া ঘাট ছাড়া আর কিছুই ছিলনা।বর্তমান ভারতের আগরতলা কিংবা ত্রিপুরা তথা নূরনগর পরগণা থেকে বরদাখাত পরগণার সাথে জল পথে যাতায়তের জন্য এ খেয়া ঘাট নদী বন্দর হিসাবে ব্যবহৃত হত।(কালিদহ সায়রের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে শেষ পরিচয় সর্পিলাকার রাজার খালের জলযানের খেয়া ঘাট হিসাবেও ইহা বহুকাল ব্যবহৃত হয়েছে।)গায়ের অশিক্ষিত আর অর্ধ শিক্ষিত মানুষের মুখে এ খেয়া ঘাটের উচ্চারণ শোনা যেত খেওয়া (খেওয়া পাড় বা খেওয়া ঘাট)।যা পরবর্তীতে খেওয়া থেকে খেওড়া নাম ধারন করে।

গবেষণা ও বিভিন্ন নির্ভরশীল তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, মেহারী ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪,৫ ও ৬ এই তিনটি ওয়ার্ডের অধিপতি শিমরাইল গ্রামে বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার লোকের বসতি। তবে এ গ্রামের গোড়া পত্তন হয় আজ থেকে(প্রায়) ৪৫০ বছর পূর্বে। এখানে এক সময় ছিল(প্রায়)১০ কি.মি.প্রশস্থ অথৈ জলরাশির কালিদাস সায়র। ধারনা করা হয়,আনুমানিক ৭০০ বছর পূর্বে ত্রিপুরা(বর্তমান কুমিল্লা) রাজ্যের কিছু কিছু জায়গায় প্রাকৃতিক দূর্যোগের ফলে পাহাড় ধ্বংস হয়ে কালিদাস সায়র(বা কালিদহ সাগরের)সৃষ্টি হয়েছিল। কালের পরিক্রমায় এ সায়রের মাঝখানে সৃষ্টি হয় একটি লম্বা চর বা আইল। এ আইলকে অবলম্বন করে গড়ে উঠতে থাকে বসতি। সায়রের এক বিশেষ সীমা রেখা ধরে জনপদটি গড়ে উঠার কারণে নাম হয়েছিল “সিম আইল” যা কালক্রমে বিবর্তিত হয়ে সিমরাইল/শিমরাইল নাম ধারণ করে।
নোটঃ #আইল সংস্কৃত আলি শব্দ হতে ব্যুৎপন্ন। যার অর্থ পানি ধরে রাখার নিমিত্তে মাটির বাঁধ।[১]
আইল একটি আঞ্চলিক বাংলা শব্দ, যার অর্থ হয় কৃষি জমির সীমানা প্রাচীর।সাধারণত যেসব জমিতে চাষ হয় সেসব খন্ড খন্ড জমির সীমানা নির্ধারিত হয় এই আইল দ্বারা। আইল মুলত জমির পাশে মাটির ঢিবী দিয়ে সরু লাইন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
#সীমানাঃ (বিশেষ্য পদ) সীমা, জমির প্রান্ত, চৌহদ্দি।

★সরাইলের নামকরণঃ
সরাইল নামকরণ নিয়ে দুটো মত প্রচলিত রয়েছে।আভিধানিক এবং ঐতিহাসিক বিচারে এলাকার লোকজনের নিকট দুটো মতই গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে।তার মধ্যে অন্যতম একটি :সর অর্থ সরোবর বা হ্রদ । এটাকে ব্যাখ্যা করলে বুঝায় বিশাল জলাশয় অার অাইল শব্দের অর্থ বাঁধ বা উচুভূমি । অর্থাৎ প্রাচীনকালে এ এলাকা ছিল বিশাল জলরাশিতে ভরা এক জলমগ্ন স্হান । কালের বিবর্তনে এখানে ধীরে ধীরে বেশ কিছু চর পড়তে থাকে যা দূর থেকে জমির অাইল বা বাঁধের মত দেখাত। এতে করে বিশাল জলাশয়ের সরঃ জেগে উঠা আইলে বা ভূখন্ডে জনপদ গড়ে উঠতে থাকে অার তাই অর্থাৎ বিশাল জলরাশিতে জেগে উঠা ভূখন্ডে সরঃ + আইল = সরাইল নামে পরিচিতি পায়। ওই বিশাল জলরাশিকে কালীধর সায়র বা কালীদহ সাগর বলে গবেষকরা চিহ্নিত করেছেন,যা প্রাচীনকাল থেকে এ এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলে কবি গান ও পুঁথি পাঠ অাসরের গাওয়া বন্দনা- গীতির শুরুতেই উল্লেখ পাওয়া যায় ।

➤নবীনগর নামকরণ:
কথিত আছে, অতীতে এই অঞ্চল নদীগর্ভে বিলীন ছিল। পরবর্তীতে পলি জমে এখানে চর পড়ে। কিছু সংখ্যক লোক এখানে এসে বসতি স্থাপনের জন্য নতুন নতুন ঘর (অর্থাৎ নবীন ঘর) নির্মাণ করে। এই নবীন ঘরই কালক্রমে পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানের নবীনগর নামের উৎপত্তি। আবার বলা হয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান এই চরে প্রথমে বসতি স্থাপন করলে তারা নবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর পবিত্র নামানুসারে এই জনপদের নাম রাখেন নবীনগর।তুলনামূলকভাবে দ্বিতীয় ধারার জনশ্রুতির স্বপক্ষে সত্যতা পাওয়া যায়।কারণ ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত সুফি দরবেশ হযরত শাহজালাল (১২৭১ – ১৩৪১) রাহ: ৭০৩ হিজরী মোতাবেক ১৩০৩ ইংরেজী সালে ৩২ বছর বয়সে ইসলাম ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে অধুনা বাংলাদেশের
সিলেট অঞ্চলে এসেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। হযরত শাহজালাল (র:) ও তার সফরসঙ্গী ওলী আউলিয়ারা এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে নদীপথে সিলেট যান বলে জনশ্রুতি আছে। ধারনা করা হচ্ছে, তাঁরা সে সময় যাত্রা বিরতি করে ইসলাম ধর্মের প্রচারের উদ্দেশ্যে এ অঞ্চলে কিছুকাল অবস্থান করেন। উপজেলার পূর্বাঞ্চলের বার আউলিয়ার বিল, তিন লাখ পীরের মাজার, নদী তীরবর্তী নাসিরাবাদ, শাহবাজপুর,নবীনগরসহ বিভিন্ন গ্রামের ইসলামী নামকরণের প্রবনতা দ্বিতীয় জনমতকেই জোরালো করে।

নবীনগর উপজেলার ২০নং কাইতলা দক্ষিণ ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১ থেকে ৭ পর্যন্ত এই সাতটি ওয়ার্ডের অধিপতি কাইতলা গ্রামে বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার লোকের বসতি। তবে এ গ্রামের গোড়া পত্তন হয় আজ থেকে(প্রায়) ৪৫০ বছর পূর্বে।কালের বিবর্তনে কালিদাস সায়রের মাঝখানে জেগে উঠে অসংখ্য ছোট ছোট চর।এই চর গুলো এক সময় হয়ে উঠে জেলেদের কর্মমুখর আশ্রয়স্থল।আর এ চর গুলোর মধ্যে কৈবর্ত নামক জেলে সম্প্রদায় যেখানে প্রথম বসতি স্থাপন করে সেটিই আজকের কাইতলা গ্রাম।জল থেকে জাল,জাল থেকে জেলে।তাহলে কি কৈবর্ত থেকে কৈতলা>কাইতলা শব্দের উৎপত্তি?
উপরোক্ত লিখাটুকু অধ্যয়নে অনেকের মনে এমন ধারনা জন্ম নেওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।মূল রহস্য জানতে হলে আপনাকে আরেকটু সময় ও ধৈর্য সহকারে কাইতলা গ্রামের নামকরণের ইতিকথা পাঠ করতে হবে।তবে এ কথা সত্য যে আলোচ্য জনপদে প্রথম কৈবর্ত সম্প্রদায়ের লোকজনই বসবাস শুরু করে। কাইতলা নামক জনপদে প্রথম বসবাসকারী কৈবর্ত সম্প্রদায় সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিই।তাতে জানা হবে কালিদাস সাগরের হালচাল।

কৈবর্ত হিন্দুদের চতুর্বর্ণের অন্তর্ভুক্ত একটি উপবর্ণ। এরা মূলত মৎস্যজীবী সম্প্রদায়। বৈদিক যুগে ভারতে কৃষিজীবী, পশুপালনকারী, শিকারি প্রভৃতি পেশাজীবী মানুষের পাশাপাশি মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের লোকজনও ছিল। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে উল্লিখিত ঊনত্রিশটি শূদ্র জাতির মধ্যে কৈবর্ত একটি

হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন –
কৈবর্ত অর্থ দাশ, ধীবর। যারা মৎস্য শিকার করে, তারা কৈবর্ত।
(বঙ্গীয় শব্দকোষ, ১ম খন্ড)
জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসও তাঁর বাঙ্গালা ভাষার অভিধানে প্রায় একই কথা বলেছেন। রাজশেখর বসু চলন্তিকায় বলছেন – ‘কৈবর্ত মানে হিন্দুজাতি বিশেষ। জেলে।’ কাজী আবদুল ওদুদ লিখেছেন – ‘কৈবর্ত : যে জলে বাস করে, জলের সহিত বিশেষ সম্বন্ধযুক্ত হিন্দুজাতি বিশেষ।’ (ব্যবহারিক শব্দকোষ)
আবু ইসহাক সমকালীন বাংলাভাষার অভিধানে বলেছেন – ‘কৈবর্ত অর্থ জেলে, ধীবর, মেছো।’
ভারতকোষে আছে – ‘কে বৃত্তির্যেষাং ইতি কৈবর্ত।’ ‘কে’ শব্দের অর্থ জল। জলে যাদের জীবিকা, তারা কৈবর্ত।

একাদশ-দ্বাদশ শতকে বাংলাদেশে কৈবর্তদের বলা হতো ‘কেবট্ট’।(সদুক্তি কর্ণামৃত নামক কাব্য সংকলন)

প্রাচীনকাল থেকে ভাটির দেশ খ্যাত বাংলায় অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল থাকায় দেশটি ছিল মাছে ভরা। তাই এ দেশে মৎস্যজীবী সম্প্রদায় গড়ে উঠেছিল।সৃষ্টি হয়েছিল “মাছে ভাতে বাঙালী”প্রবাদ। বাংলায় পাল আমলে (৭৫০-১১৬০) কৈবর্ত নামে একটি ধনবান ও বিত্তবান উপবর্ণ ছিল। তাদের কেউ রাজা, কেউ বা বণিক ছিল। তারা পরবর্তীকালে একটি শক্তিশালী উপবর্ণ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। উত্তরবঙ্গে কৈবর্তরা দিব্যকের নেতৃত্বে দ্বিতীয় মহীপালের (১০৭১-৭২) বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, যা ‘কৈবর্ত বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত। এ বিদ্রোহে জয়ী হয়ে তারা কিছুকালের জন্য একটি কৈবর্তরাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে কৈবর্তদের মৎস্যজীবী বলা হয়েছে।বাংলাদেশের সিলেট , ময়মনসিংহ ও ঢাকা অঞ্চলের মৎস্যজীবী ধীবর ও জালিকরা কৈবর্ত হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে বাংলাদেশের মৎস্যজীবীরা মালো, বর্মণ, রাজবংশী, কৈবর্ত গঙ্গাপুত্র,জলপুত্র,জলদাস ও দাস হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে। তবে এখন তাদের অনেকেই লেখাপড়া শিখে পৈতৃক পেশা ত্যাগ করে ব্যবসা ও চাকরী করছে।
কৈবর্তদের নিয়ে বাংলাভাষায় বেশ কিছু কালজয়ী উপন্যাস রচিত হয়েছে। এ-জাতীয় উপন্যাসগুলোর মূল উপজীব্য কৈবর্ত-সমাজজীবন। কৈবর্ত-জনগোষ্ঠীর জীবনসংগ্রামের পরিচয় এসব উপন্যাসে স্পষ্ট। বাংলা সাহিত্যে এ-বিষয়ে যে কয়েকটি স্মরণীয় উপন্যাস রচিত হয়েছে সেগুলো হলো – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মানদীর মাঝি (১৯৩৬), অমরেন্দ্র ঘোষের চরকাশেম (১৯৪৯), অদ্বৈত মল্লবর্মণের তিতাস একটি নদীর নাম (১৯৫৬), সমরেশ বসুর গঙ্গা (১৯৫৭), সত্যেন সেনের বিদ্রোহী কৈবর্ত (১৯৬৯), সাধন চট্টোপাধ্যায়ের গহিন গাঙ (১৯৮০), শামসুদ্দীন আবুল কালামের সমুদ্র বাসর (১৯৮৬), মহাশ্বেতা দেবীর কৈবর্ত খন্ড (১৯৯৪), ঘনশ্যাম চৌধুরীর অবগাহন (২০০০) ও শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের গঙ্গা একটি নদীর নাম (২০০২)।উপরোক্ত বিষয়গুলো অধ্যয়নেও প্রতীয়মান এতদ এলাকা এক সময় বিশাল জলরাশিতে নিমজ্জিত ছিল।

নাসিরনগর উপজেলা সদরে অবস্থিত ডাক বাংলো ঘেষে উত্তর এবং পশ্চিম এলাকা বিস্তৃত বিশাল মেদিনী হাওর। অপূর্ব সৌন্দর্যের অধিকারী এ হাওর সহসা মানুষের মন আকৃষ্ট করে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এ হাওরকে প্রকৃতি ষড়ঋতুতে নানা রূপে বিভিন্ন আঙ্গিকে সাজিয়ে দেয় যেন শিল্পীর তুলিতে রঙে রঙে, কখনো সবুজের গালিচা, কখনো কুয়াশার চাদরে আবৃত, তীব্র খরায় খাঁ খাঁ মাঠ, আবার আষাঢ় শ্রাবণের ঢলে বর্ষার বাঁধ ভাঙ্গা স্রোতে থৈ থৈ জলে টইটুম্বুর।বিশাল এই মেদিনী হাওর অনেক ছোট ছোট হাওরের সম্মিলিত রূপ-যেমন বাল্যাজুড়ি, শিংজুড়ি, উত্তর বাল্যা ইত্যাদির মিলিত নাম মেদিনী হাওর। এই হাওরের পরিপূর্ণ সৌন্দর্য দেখা দেয় বর্ষা মৌসুমে। চারদিকে অগাধ জলরাশি। উত্তর ও পশ্চিম দিকের গ্রামগুলো সবুজে সবুজময়। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলা যায়-

পরপারে দেখি আঁকা
তরু ছায়ামসী মাখা,
গ্রাম খানি মেঘে ঢাকা
প্রভাত বেলা।

সত্যিকার অর্থে মাছমা, গোয়ালনগর, ভিটাডুবি, রামপুর, কৃষ্ণপুর, লাখাই প্রমুখ দূরের গ্রামগুলো মনে হয় জলের উপর ভাসছে। বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত মেদিনী হাওর কালিদহ সাগরের সংকোচিত রূপ বলে মনে করা হয়।

➤আশুগঞ্জ নামকরণঃ
সবুজ শ্যামল পাখি ডাকা ছায়া সুনিবিড় মেঘনা পাড়ের আজকের বিখ্যাত আশুগঞ্জের প্রতিষ্ঠাকাল প্রায় একশত একুশ বছর পূর্বে।আশুগঞ্জ পতিষ্ঠার পূর্বে মেঘনার পূর্ব পাড়ের জনগণ ভৈরব বাজারে গিয়েই তাদের দৈনন্দিন কেনাবেচা করত। প্রতি বুধবার বসত ভৈরবের সপ্তাহিক হাট। ভৈরব বাজারের তদানীন্তন মালিক ভৈরব বাবু কর্তৃক আরোপিত করভারে মেঘনার পূর্ব পাড়ের ক্রেতা-বিক্রেতারা অতিষ্ট হয়ে মেঘনার পূর্ব পাড়ে সৈকতের বালিকণা তথা সোনারামপুর মাঠের উপর হাট বসিয়ে নেয়। প্রতি বুধবারে নদী সৈকতের চিকচিক বালিকণার উপর হাট বসেই চললো। তখন অত্র এলাকা সরাইল পরগনার জমিদারের অধীন ছিল।তৎকালীন সরাইল পরগনার জমিদার কাশিম বাজারের মহারাজা আশুতোষ নাথ রায় আশাব্যঞ্জক এ সংবাদ জানতে পেরে তিনি উদ্যোক্তাদের ডেকে পাঠান। উদ্যোক্তাগণ মহারাজার ডাকে সাড়া দিয়ে নিজেদের দুর্গতি অবসানের জন্য মহারাজার নামের সাথে মিল রেখে ঐ হাটকে ‘‘আশুগঞ্জ’’ নামকরণ করেন।নদী সৈকতের চিকচিক বালিকণার উপর হাট থেকেই আজকের আশুগঞ্জ যা একসময় নদীগর্ভে বিলীন ছিল বলে প্রতীয়মান।

➤শাহবাজপুর টাউনঃ
সরাইল উপজেলার অন্তর্গত একটি আধুনিক উন্নয়ন মূখী প্রশাসনিক অঞ্চল। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে স্বপ্ন বাস্তবায়নের স্যাটেলাইট নগরীর কয়েকটির মাঝে এটি হচ্ছে একটি আধুনিক ব্যস্ততম জনপদ।এই অঞ্চলটি একটি প্রাচীন জনপদ। বৌদ্ধ যুগে এই অঞ্চলটি একসময় বিশাল রাজ্য ছিল, যখন বিশ্বখ্যাত পরিব্রাজক হিউ-এন-সাং চীন থেকে এ অঞ্চলে পদব্রজে সফরে এসেছিলেন তখন এই এলাকার নাম ছিল সমতট।পরবর্তীকালে মুসলিম শাসনামলে এর নাম পরিবর্তন করা হয়, ভেঙ্গে ফেলা হয় এই রাজ্যকে এবং গঠন করা হয় কয়েকটি পরগনায়, রাজ্যের সমতট জনপদ কে শাহবাজ নামে নামকরণ করা হয়, পালাক্রমে শাহবাজ থেকে শাহবাজপুর তথা শাহবাজপুর টাউন।

এই অঞ্চলের জনপদ হওয়া নিয়ে মত বিভেদ ও দুটি ধারার জনশ্রুতির প্রচলন রয়েছে। প্রথম ধারার জনশ্রুতি অনুসারে প্রাচীন ইতিহাসে মুসলিম শাসনামল শাসনকালে সরাইল প্রাচীন জনপদ বলে এ জনশ্রুতি হয়। অন্যদিকে দ্বিতীয় ধারার জনশ্রুতি অনুসারে মুসলিম শাসনামলে মোগল সম্রাট আকবরের শাসনামলের প্রতিনিধি, উনচল্লিশটি নৌবহরের অধিনায়ক শাহবাজ আলীর পরিকল্পনার সময় কালে রাজ্যের শাসনকার্যের রাজধানী করেন এই শাহবাজপুর জনপদে, তবে ইংরেজ শাসনামলে ভারত বর্ষের প্রথম ম্যাপ রোনাল্ড রে প্রণীত মানচিত্রে এই অঞ্চলের নাম গুরুত্বের সাথে উল্লেখ থাকায় এর প্রাচীনত্ব প্রমাণিত হয়। সাধারণত জলপথ বা কোন যোগাযোগের কেন্দ্রে জনপদ নগর/টাউন গড়ে উঠে; কিন্তু সরাইল নদীর কাছে হলেও নদীপথ বা যোগাযোগের কেন্দ্রে অবস্থিত নয়। তুলনামূলকভাবে দ্বিতীয় ধারার জনশ্রুতির স্বপক্ষে সত্যতা পাওয়া যায়।ব্রিটিশ আমল থেকে শাহবাজপুর তিতাস নদীর তীরে বন্দরনগরী ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত ছিল।উনচল্লিশটি নৌবহরের অধিনায়ক শাহবাজ আলীর শাসনকার্যের রাজধানী যেখানে স্থাপন করা হয় সেখানে তার আশে পাশে নিশ্চয়ই বিশাল জলরাশি ছিল বলে ধারনা করা হয়।

➤কিশোরগঞ্জ:
কিশোরগঞ্জের ইতিহাস সুপ্রাচীন। এখানে প্রাচীনকাল থেকেই একটি সুগঠিত গোষ্ঠী আছে এবং এখনও তা বিরাজ করছে। ষষ্ঠ শতকে বত্রিশ এর বাসিন্দা কৃষ্ণদাস প্রামাণিকের ছেলে নন্দকিশোর ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে একটি গঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন; এ গঞ্জ থেকেই কালক্রমে নন্দকিশোরের গঞ্জ বা ‘কিশোরগঞ্জ’-এর উৎপত্তি হয়। একাদশ ও দ্বাদশ শতকে পাল, বর্মণ ও সেন শাসকরা এ অঞ্চলে রাজত্ব করে। তাদের পর ছোট ছোট স্বাধীন গোত্র কোচ, হাজং, গারো এবং রাজবংশীরা এখানে বসবাস করে। ১৪৯১ সালে ময়মনসিংহের অধিকাংশ অঞ্চল ফিরোজ শাহ-এর অধীনে থাকলেও কিশোরগঞ্জ সেই মুসলিম শাসনের বাইরে রয়ে যায়। পরবর্তীতে মুঘল সম্রাট আকবরের সময়কালে বেশিরভাগ অঞ্চল মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে থাকলেও জঙ্গলবাড়ি ও এগারসিন্দুর কোচ ও অহম শাসকদের অধীনে রয়ে যায়। ১৫৩৮ সালে এগারসিন্দুরের অহম শাসক মুঘলদের কাছে ও ১৫৮০ সালে জঙ্গলবাড়ির কোচ শাসক
ঈসা খাঁর কাছে পরাজিত হয়। ১৫৮০ সালে বার ভূঁইয়াদের প্রধান ঈসা খাঁ এগারসিন্দুরে আকবরের সেনাপতি মান সিংহকে পরাজিত করেন। ঈসা খাঁর মৃত্যুর পর জঙ্গলবাড়ি ও এগারসিন্দুর তার পুত্র
মুসা খাঁর অধীনে আসে কিন্তু ১৫৯৯ সালে তিনি মুঘলদের কাছে পরাজিত হন।

বাংলাদেশের সপ্তম বৃহত্তম শহর ময়মনসিংহ। বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। জেলার প্রায় কেন্দ্রভাগে পুরাতন
ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত এটি।
১৭৭৯-তে প্রকাশিত রেনেল এর ম্যাপে
মোমেসিং নামটি বর্তমান ‘ময়মনসিংহ’ অঞ্চলকেই নির্দেশ করে। তার আগে আইন-ই-আকবরীতে ‘মিহমানশাহী’ এবং ‘মনমনিসিংহ’ সরকার বাজুহার পরগনা হিসাবে লিখিত আছে; যা বর্তমান ময়মনসিংহকেই ধরা যায়।ময়মনসিংহ জেলায় জালের মত ছড়িয়ে রয়েছে অনেকগুলো নদী।এত এত নদী প্রমাণ করে একসময় এ এলাকা পানির নিচ থেকে জেগে উঠেছে।সেগুলো হচ্ছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী ,
কাঁচামাটিয়া নদী , মঘা নদী, সোয়াইন নদী, বানার নদী, বাইলান নদী, দইনা নদী,
পাগারিয়া নদী , সুতিয়া নদী , কাওরাইদ নদী , সুরিয়া নদী, মগড়া নদী , বাথাইল নদী, নরসুন্দা নদী, নিতাই নদী , কংস নদী ,
খাড়িয়া নদী , দেয়ার নদী, ভোগাই নদী ,
বান্দসা নদী , মালিজি নদী , ধলাই নদী , কাকুড়িয়া নদী, দেওর নদী, বাজান নদী, নাগেশ্বরী নদী, আখিলা নদী, মিয়াবুয়া নদী, কাতামদারী নদী, সিরখালি নদী, খিরু নদী, বাজুয়া নদী, লালতি নদী,
চোরখাই নদী , বাড়েরা নদী , হিংরাজানি নদী, আয়মন নদী, দেওরা নদী, থাডোকুড়া নদী, মেদুয়ারি নদী, জলগভা নদী, মাহারী নদী।

♦ মেঘনা,তিতাস,বুড়ি ও কুলকুলিয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রধান নদীগুলোর অন্যতম।

এ জেলার প্রধান প্রধান শাখা নদী গুলো হল-
১.হুরল,
২.সিংরা কালাছড়া,
৩.বালুয়া,
৪.আউলিয়া জুড়ি (আলিয়াজুড়ি নদী),
৫.পাগলা,
৬.ডোল ভাঙ্গা,
৭.বলভদ্র (সম্ভবত বলভদ্রা নদী। লংগন আর বলভদ্রা একই হিসেবে দেখানো হয়েছে একটি সূত্রে ),
৮.বিজনা,
৯.লংঘন (সম্ভবত লংগন নদী),
১০.লহুর (সম্ভবত লহর নদী),
১১.রোপা,
১২.সোনাই,
১৩.ছিনাইহানি প্রভৃতি।

➤এবার উপজেলাভিত্তিক নদীর নাম জানা যাকঃ
★ কসবা উপজেলা
১.তিতাস,
২.সালদা,
৩.বিজনা,
৪.সিনাই,
৫.সাঙ্গুর,
৬.বুড়ি,
৭.কালিয়ারা নদী।

উল্লেখযোগ্য কিছু খালঃ
১.রাজার খাল,
২.অদের খাল।

উল্লেখযোগ্য কিছু বিলঃ
১.হাতনীর বিল,
২.সিমরাইলের বিল ও
৩.কুটির বিল।

★ নবীনগর উপজেলা
১.বুড়ি,
২.তিতাস নদী,
৩.মেঘনা,
৪.যবনাই,
৫.পাগলা ও
৬.ভাটা।

★ নাসিরনগর উপজেলা
১.মেঘনা,
২.লঙ্গন (সম্ভবত লংগন নদী),
৩.ধলেশ্বরী,
৪.খয়রাতি,
৫.খাস্তি ও চিকনদিয়া,
৬.বলভদ্র (সম্ভবত বলভদ্রা নদী। লংগন ও বলভদ্রা একই নদী হিসেবে দেখানো হয়েছে একটি সূত্রে) ও
তিতাসের শাখা নদী –
৭.বেমালিয়া।
৮.হারাল নদী।

★ সরাইল উপজেলা
১.মেঘনা,
২.তিতাস,
৩.বগদিয়া ও
৪.ভৈরব নদী।

উল্লেখযোগ্য কিছু বিলঃ
১.আকাশী বিল ও
২.শাপলা বিল

★ আশুগঞ্জ উপজেলা
১.মেঘনা।

★ বাঞ্ছারামপুর উপজেলা
১.মেঘনা,
২.তিতাস।

উল্লেখযোগ্য কিছু বিলঃ
১.চন্দন বিল ও
২.বামন্ধার বিল।

★ আখাউড়া উপজেলা
১.হাওড়া ও
২.তিতাস নদী।

উল্লেখযোগ্য কিছু বিলঃ
১. ঘাগুটিয়া বিল ও
২. মিনারকুট বিল।
৩.পিপুলি বিল

★ বিজয়নগর উপজেলা
১.আউলিয়া জুড়ি নদী (আলিয়াজুড়ি নদী)।

উল্লেখযোগ্য বিলঃ
১. ছত্তরপুর (ছতুরপুর) শাপলা বিল।

★ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা
১. তিতাস নদী,
২. আউলিয়া জুড়ি নদী (আলিয়াজুড়ি নদী – সামান্য অংশ)।

উল্লেখযোগ্য খালঃ
১.কুরুলিয়া খাল (এন্ডারসন খাল)।

♦ কিছু নদী ও খালের বিশেষ তথ্যাদিঃ

১. সালদা নদী –

→ সালদা নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপত্তি লাভ করে কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারপর এটি কিছুদুর প্রবাহিত হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার বুড়ি নদীতে পতিত হয়েছে।

এটি একটি আন্তঃসীমান্ত নদী,নদীটির দৈর্ঘ্য ২৩ কিলোমিটার।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সালদা অববাহিকায় বন্যা প্রবণ এলাকা ৫২ বর্গ কিলোমিটার (২০ বর্গমাইল)।
(সালদা অববাহিকায় বন্যা প্রবণ এলাকার তথ্যসূত্রঃ বই ‘বাংলাদেশের নদীমালা – প্রকৌশলী আবদুল ওয়াজেদ’)

২. বেমালিয়া নদী –

→ কুন্ডার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক হয়ে মহিষবেড়-এর উত্তর দিক দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রবহমান রয়েছে তিতাসের শাখা নদী – বেমালিয়া।

৩. তিতাস –

→ তিতাস নদীর উৎপত্তি ভারতীয় অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার কাছাকাছি কোথাও। পরে এটি সেখান থেকে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলা দিয়ে প্রবেশ করে দেশে।

পরে এটি শাহবাজপুর টাউন অঞ্চল হয়ে ভৈরব-আশুগঞ্জের সীমানা ঘেঁষে বহমান অন্যতম বৃহৎ নদী মেঘনার সাথে মিশে গেছে।

এখানে উল্লেখ্য যে, প্রকৌশলী আবদুল ওয়াজেদ রচিত ‘বাংলাদেশের নদীমালা’ বইটিতে মেঘনা নদীর শাখা নদী হিসেবে দেখানো হয়েছে তিতাস নদীকে।
আরও বলা হয়েছে যে,মেঘনা হতে ছোট ছোট শাখা বেরিয়ে (তিতাস সহ কিছু নদীর নাম বলা হয়েছে) ত্রিপুরার বিভিন্ন পাহাড়ি নদীর পানি বহন করে পুনরায় মেঘনাতে পড়েছে।

এটি বাংলাদেশ-ভারতের আন্তঃসীমানা সংশ্লিষ্ট নদী হিসেবে পরিচিত,এর গড় দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৮ কিলোমিটার।

ত্রিপুরায় বাংলা ভাষায় ‘হাওড়া নদী’ এবং স্থানীয় কোকবোরোক ভাষায় ‘সাঈদ্রা নদী’ নামে তিতাস নদীর নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে নদীটি ”তিতাস নদী” হিসেবে পরিচিতি পায়।
উল্লেখ্য, হাওড়া নদীকে আলাদা নদী হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।

( তিতাস মেঘনার শাখা নদী ও মেঘনা থেকে বেরিয়ে ত্রিপুরা হয়ে পুনরায় মেঘনাতে পড়ার তথ্যসূত্রঃ বই ‘বাংলাদেশের নদীমালা – প্রকৌশলী আবদুল ওয়াজেদ’)

৪. পুরনো তিতাস নদী –

→ এই নামে একটি নদীর উল্লেখ আছে উইকিপিডিয়ার ‘বাংলাদেশের নদীর তালিকা [ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)- দক্ষিণ – পূর্বাঞ্চলের নদী] ‘ শীর্ষক তালিকা নিবন্ধে।

কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নরসিংদী জেলার একটি নদী,নদীটির দৈর্ঘ্য ৫৭ কিলোমিটার।

এটি নরসিংদী সদর উপজেলা, নবীনগর উপজেলা, মুরাদনগর উপজেলা, হোমনা উপজেলা এবং বাঞ্ছারামপুর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

৫. বুড়ি নদী –

→ কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একটি নদী,নদীটির দৈর্ঘ্য ২৬ কিলোমিটার।

কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নূরনগর ও বরদাখাত পরগনার মাঝখান দিয়ে বিল-ঝিলের উপর দিয়ে সর্পিলাকারে বয়ে চলা মুরাদনগর-কসবা-নবীনগরের সম্মিলন পয়েন্ট এই বুড়িনদী।

বুড়ি নদীর উৎস হল সালদা নদী, নদীটি নবীনগরের লঞ্চঘাট সংলগ্ন তিতাসের সাথে মিশেছে।
উল্লেখ্য, প্রকৌশলী আবদুল ওয়াজেদ রচিত ‘বাংলাদেশের নদীমালা’ বইয়ে বুড়ী নদীকে গোমতী নদীর একটি শাখা নদী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে একটি তথ্য উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, গোমতী নদী কুমিল্লা জেলার প্রধান নদী ও পাহাড়ি নদী।

বর্তমানে নদীটি অদৃশ্যপ্রায় – খাল, ডোবা, বসতভিটা ও কৃষি জমিতে পরিণত হয়েছে। বুড়ি নদীটি নবীনগর উপজেলা থেকে কসবা উপজেলার কুটি হয়ে ধরখার পর্যন্ত প্রবাহমান ছিল। বর্তমানে নদীর প্রায় ১৯ কি.মি. ভরাট হয়ে গেছে।

(বুড়ি নদী গোমতী নদীর শাখা নদী এবং কুমিল্লার প্রধান নদী ও পাহাড়ি নদীর সূত্রঃ বই ‘ বাংলাদেশের নদীমালা – প্রকৌশলী আবদুল ওয়াজেদ ‘)

৬. লহর নদী –

→ ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ জেলার একটি নদী,এটি একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার।

৭. লংগন বা,বলভদ্রা নদী –

→ লংগন নদী বা বলভদ্রা নদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ জেলার একটি নদী,নদীটির দৈর্ঘ্য ৩৮ কিলোমিটার।

৮. সোনাই নদী –

→ সোনাই নদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ জেলার একটি নদী। এটি একটি আন্তঃসীমান্ত নদী,নদীটির দৈর্ঘ্য ২৪/৩০ কিলোমিটার।

সোনাই নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপত্তি লাভ করে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারপর এটি মাধবপুর উপজেলার খাস্তি নদীতে পড়েছে।

৯. হাওড়া নদী –

→ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একটি নদী,এটি একটি পাহাড়ি নদী ।
আর পাহাড়ি নদীগুলো সঙ্গত কারণে বন্যা প্রবণ।

এটি বাংলাদেশ – ভারতের মধ্যকার আন্তঃসীমান্ত নদী,বাংলাদেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে এর দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য অংশে ৫০ কিলোমিটার।

নদীটিতে সারাবছর পানিপ্রবাহ থাকে না। তবে এই নদীতে জোয়ারভাটার প্রভাব আছে, জুলাই – আগস্টে বেশি পানিপ্রবাহের সময় প্রবাহের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৮ ঘনমিটার / সেকেন্ড।

উৎপত্তি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে, বাংলাদেশে প্রবেশ আখাউড়া উপজেলা দিয়ে আর কিছুদূর প্রবাহিত হয়ে উপজেলার তিতাস নদীতে (ধরখার – উজানিস্বারের কাছাকাছি) পতিত হয়েছে।

(পতিত হবার তথ্যসূত্র নিশ্চিতকরণেঃগুগল ম্যাপ,
পাহাড়ি নদী ও বন্যা প্রবণ তথ্যসূত্রঃ বই ‘বাংলাদেশের নদীমালা – প্রকৌশলী আবদুল ওয়াজেদ’)

১০. পাগলা নদী –

→ পাগলা নদীর সম্ভাব্য উৎপত্তিস্থল পুরাতন কৃষ্ণনগর লঞ্চঘাটে প্রবেশের পূর্বে অবস্থিত ত্রি-মোহনা এবং সম্ভাব্য সমাপ্তি ঐতিহ্যবাহী বাইশমৌজা বাজারের নিকটে মেঘনা নদী। (গুগলম্যাপ)

১১. আউলিয়া জুড়ি নদী (আলিয়াজুড়ি নদী)

→ আউলিয়া জুড়ি নদীটি জেলা শহরের শিমরাইল কান্দির ‘গাও – গেরাম রেস্টুরেন্ট ও বিনোদন পার্ক ‘ এর সামান্য উত্তর – পূর্বে তিতাস নদীর কাছাকাছি স্থান থেকে শুরু হয়েছে এবং মনিপুর, লক্ষীমুড়া,চম্পকনগর হয়ে ভিটিদাউদপুর পর্যন্ত গেছে। এরপর নদীটির অস্তিত্ব গুগল ম্যাপে পাওয়া যায় না।

গুগল ম্যাপে নাম আলিয়াজুড়ি নদী। কেউ কেউ অবশ্য একে তিতাস / তিতাসের শাখা নদী / মনিপুরী নদী প্রভৃতি নামেও ডাকে।

♦ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খালঃ

১. কুরুলিয়া খাল (এন্ডারসন খাল) –

→ ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি ঢলের তোড়ের আঘাত থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরকে রক্ষার জন্য এবং শহরের দুই দিকের তিতাসের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য (জনশ্রুতি) বৃটিশ আমলে মহকুমা প্রশাসক এন্ডারসন স্বেচ্ছাশ্রমে শিমরাইল কান্দি ও ভাদুঘর অংশের তিতাস নদী থেকে কাউতলি,উলচাপাড়া হয়ে আমিনপুরের কাছাকাছি তিতাস নদী পর্যন্ত কৃত্রিম খালটি খনন করান।

তখন নাম ছিল এন্ডারসন খাল,এখন নাম কুরুলিয়া খাল।

(Comillaweb. com – লিটন চৌধুরী)

২. অদের খাল –

→ নবীনগর উপজেলার সর্ব দক্ষিণের শেষ সীমানা এবং কসবা উপজেলার উত্তরের শেষ সীমানার (বল্লভপুর ও শিমরাইল গ্রামের) মধ্য দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে কূলকূল করে বয়ে যাওয়া স্রোতধারার নাম অদের খাল।

গাজীরহাট – বাঙ্গরা৷ সংযোগ ব্রিজ থেকে দক্ষিণে
-বৈলঘর, হাটখোলা, সাহগোদা, চন্দনাইল গ্রাম এবং উত্তরে
–রাজাবাড়ী, ইসাপুরা, সাতমোড়া, বাউচাইল,শাহপুর গ্রাম রেখে ঠিক পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে পিপিরা বাজার নৌকা ঘাটে তিতাস নদীর সাথে মিলিত হয়েছে।

(ourkantha24. com – কবি ও গবেষক এস. এম. শাহনুর)

★ এই খালের সাথে সম্পর্কিত যাঃ

১. অদের খাল – কবি ও গবেষক ‘এস এম শাহনুর’ রচিত কবিতা।
( ourkantha24. com)

♦ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিলঃ

১. ঘাগুটিয়া ও মিনারকুট বিল –

→ আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম ঘাগুটিয়া।
সেখানে রয়েছে নজরকাড়া পদ্মফুলের বিশাল সমাহার, ঘাগুটিয়ার পদ্মবিল বলা হলেও বিল মূলত ২ টি – ঘাগুটিয়া ও মিনারকুট বিল।

( বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য)

২. আকাশী হাওড় / বিল –

→ সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের ধরন্তি এলাকায় রয়েছে আকাশী হাওড় / আকাশী বিল।
পশ্চিমে বিশাল মেঘনা ও পূর্বে তিতাস নদী আর মাঝখানে রয়েছে এই হাওড় / বিল,বর্ষাকালে পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেলেই এটি মিনি কক্সবাজার হয়ে ওঠে এবং প্রচুর মানুষের আনাগোনা হয়।

[ OFFROAD BANGLADESH: Nayeem এবং বিডিলাইভ২৪]

৩. ছত্তরপুর (ছতুরপুর) শাপলা বিল

→ ছত্তরপুর (ছতুরপুর) শাপলা বিলটি বিজয়নগর উপজেলার ছত্তরপুরে অবস্থিত।
বিলটিতে বর্ষাকালে অনেক লাল শাপলা ফুটে এবং অনেকেই দেখতে যায়।

( বিভিন্ন সূত্র – বিশেষ করে Wish For Better Brahmanbaria গ্রুপ )

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এতগুলো নদী, খাল ও বিল কী প্রমাণ করে?অতীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আসলেই কি সমতল ভূমি ছিল?নাকি কালিদাস সাগর থেকে জেগে উঠা ছোট ছোট চরের সমষ্টি?

➤গ্রন্থপঞ্জি:
➤Ghulam Husain Salim, The Riyazussalatin, (tr. Maulavi Abdus Salam), The Asiatic Society, Calcutta, 1902; Mirza Nathan, ➤Baharistan-i-Ghaybi, (tr. M.I. Borah), Vol. 1, Government of Assam, Assam, 1936; Abul Fazl Allami,
➤The Ain-i-Akbari, (tr. H. Blochmann), New Delhi, 1965(Second edition);
➤Abul Fazl Allami, The Akbarnama, (tr. H. Beveridge), Vol. III, Ess Ess Publications, Delhi, 1977;
➤আবদুল করিম বাংলার ইতিহাস: মোগল আমল, ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ, রাজশাহী, ১৯৯২।
➤বঙ্গীয় শব্দকোষ।। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
➤মুসলেম বঙ্গের সামাজিক ইতিহাস।।মাওলানা আকরাম খাঁ
➤পদ্মপুরান।। বেদব্যাস
➤রাজমালা।।কৈলাস চন্দ্র সিংহ
➤নামকরণের ইতিকথা।। এস এম শাহনূর
➤.বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা:ব্রাহ্মণবাড়িয়া-শামসুজ্জামান খান।
➤.অপারেশন কিল এন্ড বার্ন:যুদ্ধাপরাধ (কুমিল্লা,ব্রাহ্মণবাড়িয়া,চাঁদপুর) দলিলপত্র-আবুল কাশেম হৃদয়।
➤ভাষা-আন্দোলনের ঐতিহাসিক পটভূমিকা এবং ভাষা-আন্দোলনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-এডভোকেট আবদুস সামাদ।
➤ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিবৃত্ত-মুহাম্মদ মুসা।
➤.যাঁদের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া ধন্য-রেজাউল করিম।
➤ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ইতিহাস-আমির হোসেন।
➤ব্রাহ্মণবাড়িয়া চাঁদপুর কুমিল্লা ইতিহাস পরিক্রমা-অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুস সাত্তার
➤ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিয়ের গীত-ফেরদৌসী লাকী
➤ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য-সিরাজুল করিম
➤ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উলামা-মাশায়েখ জীবন ও কর্ম-মাওলানা মুনীরুল ইসলাম
➤.মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাস:ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা-জয়দুল হোসেন
➤ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নদী, খাল ও বিল (একটি গবেষণা কর্ম)→ মোঃ ইব্রাহিম (তথ্য সংগ্রহ ও লিপিবদ্ধকরণ)
➤উইকিপিডিয়া

💻লেখক:এস এম শাহনূর
(কবি ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক)

ইংরেজি নববর্ষের ইতিহাস: এস এম শাহনূর

| ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ | ৮:৪৬ অপরাহ্ণ

ইংরেজি নববর্ষের ইতিহাস: এস এম শাহনূর

কিভাবে পেলাম এ ইংরেজি নববর্ষ? কি তার ইতিহাস? কখন থেকে শুরু হল এ নববর্ষ উৎযাপন? তাকি আমরা জানি? পৃথিবীর শুরু থেকেই ছিল নাকি পরবর্তীতে শুরু হয়েছে? আসুন! জানা অজানা কিছু বিষয় জেনে নেই। জেনে নেয়া যাক বর্ণিল উৎসাহে পালন করা ইংরেজি নববষের্র ইতিহাস। আমরা যে ইংরেজি সন বা খ্রীস্টাব্দ বলি আসলে এটা হচ্ছে গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার। এটা একটি সৌর সন। নানা পরিবর্তন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন, বিবর্তন এবং যোগ-বিয়োজনের মধ্য দিয়ে বর্ষ গণনায় বর্তমান কাঠামো লাভ করে।

গ্রেট ব্রিটেনে এই গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার প্রচলিত হয় ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে। এই ক্যালেন্ডার আমাদের দেশে নিয়ে আসে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে। গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডারের আগে নাম ছিল জুলিয়ান ক্যালেন্ডার। খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার মিসর দেশে প্রচলিত ক্যালেন্ডারটি রোমে এনে তার কিছুটা সংস্কার করে তাঁর রোম সাম্রাজ্যে চালু করেন। এই ক্যালেন্ডারে জুলিয়াস সিজারের নামে জুলাই মাসের নামকরণ করা হয়। মিসরীয়রা বর্ষ গণনা করত ৩৬৫ দিনে। মিসরীয়দের ক্যালেন্ডার সংস্কার করে জুলিয়াস সিজার যে ক্যালেন্ডার রোমে প্রবর্তন করলেন তাতে বছর হলো ৩শ’ সাড়ে পঁয়ষট্টি দিনে। এখানে উল্লেখ্য যে, মিসরীয় ক্যালেন্ডার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেছেন এই ক্যালেন্ডারের প্রবর্তন করা হয় খ্রিস্টপূর্ব ৪২৩৬ অব্দে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, মানুষ সূর্য দেখে সময় হিসেব করতো। কিংবা বলা যায় তারও আগে মানুষ বুঝতই না সময় আসলে কী। ধারণাটা আসে চাঁদের হিসাব থেকে। অর্থাৎ চাঁদ ওঠা এবং ডুবে যাওয়ার হিসাব করে মাস এবং তারপর বছরের হিসাব করা হতো। চাঁদ ওঠার সময় বলা হতো ক্যালেন্ডস, পুরো চাঁদকে বলতো ইডেস, চাঁদের মাঝামাঝি অবস্থাকে বলতো নুনেস। সূযের্র হিসাবে বা সৌর গণনার হিসেব আসে অনেক পরে। সৌর গণনায় ঋতুর সঙ্গে সম্পর্ক থাকে, কিন্তু চন্দ্র গণনায় ঋতুর সঙ্গে সম্পর্ক থাকে না। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো, তাকে বলা হয় মেসোপটেমীয় সভ্যতা। বর্তমানের ইরাককে প্রাচীনকালে বলা হতো মেসোপটেমিয়া। এই মেসোপটেমিয়ান সভ্যতার ৪টা আলাদা আলাদা ভাগ আছে আর তা হচ্ছে সুমেরীয় সভ্যতা, ব্যাবিলনিয় সভ্যতা, আসিরিয় সভ্যতা ও ক্যালডিয় সভ্যতা। এদের মধ্যে বর্ষ গণনা শুরু হয় ব্যাবিলনিয় সভ্যতায়।

কিন্তু তখন বর্তমানের মতো জানুয়ারির ১ তারিখে নতুন বর্ষ গণনা শুরু হতো না। তখন নিউ ইয়ার পালন করা হতো যখনই বসন্তের আগমন হতো। অর্থাৎ শীতকালের রুক্ষতা ঝেড়ে প্রকৃতি যখন গাছে গাছে নতুন করে পাতা গজাতে থাকে, ফুলের কলিরা ফুটতে শুরু করে তখনই নতুন বর্ষ! অন্যান্য দেশেরমতই আমাদের দেশেও প্রাথমিক বর্ষ পঞ্জিকায় অল্প পরিসরে সুমের/সুমেয়ী সভ্যতায় পরিলক্ষিত হয়। তবে মিশরীয় সভ্যতাই পৃথিবীর প্রাচীনতম সৌর ক্যালেন্ডার চালু করে বলে জানা যায়। খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩ সালের ১ জানুয়ারি নতুন বছর পালনের সিদ্ধান্ত নেয় রোমান সিনেট। আর বছরের প্রথম মাস জানুয়ারির নামকরণ করা হয় রোমানদের দেবতা জানুসের নামে। লাতিন শব্দ জানুস, অর্থ দরজা। এই দড়জা মানেই ইংরেজি নতুন বছরের আগমন,ইংরেজি নতুন বছরের শুরু। জানা যায়, প্রথম মিশরীয়রা সূর্য দেখে বছর হিসাব করতে শুরু করে। যাকে তারা সৌরবর্ষ নাম দিল।

কিন্তু সমস্যা হলো সূর্য দেখে হিসাব আর চন্দ্র দেখে হিসাবের অনেক পার্থক্য থাকতো। কিন্তু বছর গুনলে কী হবে তার হিসাব রাখা জরুরি। তাই সুমেরীয়রা বর্ষপঞ্জিকা আবিষ্কার করলো। যাকে ক্যালেন্ডার বলি। ইংরেজি নববর্ষ শুরুর ইতিহাস : গ্রিকদের কাছ থেকে বর্ষপঞ্জিকা পেয়েছিল রোমানরা। তারা কিন্তু ১২ মাসে বছর গুণতো না। তারা বছর গুনতো ১০ মাসে । মধ্য শীত মৌসুমের ৬০ দিন তারা বর্ষ গণনায় আনতো না। রোমানদের বর্ষ গণনার প্রথম মাস ছিল মার্চ। তখন ১ মার্চ পালিত হতো নববর্ষ উৎসব। শীত মৌসুমে ৬০ দিন বর্ষ গণনায় না আনার কারণে বর্ষ গণনা যে দুটি মাসের ঘাটতি থাকতো তা পূরণ করবার জন্য তাদের অনির্দিষ্ট দিন-মাসের দ্বারস্থ হতে হতো।

এই সব নানা জটিলতার কারণে জনসাধারণের মধ্যে তখন ক্যালে-ার ব্যবহার করবার প্রবণতা একেবারেই ছিল না বলে জানা যায়। রোম উপাখ্যান খ্যাত প্রথম সম্রাট রমুলাসই আনুমানিক ৭৩৮ খ্রীস্টপূর্বাব্দে রোমান ক্যালেন্ডার চালু করার চেষ্টা করেন। পরবর্তীকালে রোমান সম্রাট নূমা পন্টিলাস ১০ মাসের সঙ্গে আরো দুটো মাস যুক্ত করেন। সে দুটো মাস হচ্ছে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি। রোমানরা বছর হিসাব করতো ৩শ’চার দিনে। তিনি ‘মারসিডানাস’ নামে আরও একটি মাস যুক্ত করেন রোমান বর্ষপঞ্জিকায়। তখন থেকে রোমানরা ১ জানুয়ারি নববর্ষ পালন করতে শুরু করে। ১ জানুয়ারি নববর্ষ পালন শুরু হয় সম্রাট জুলিয়াস সিজারের সময় থেকে। খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সম্রাট জুলিয়াস সিজার একটি নতুন বর্ষপঞ্জিকার প্রচলন করে।

রোমানদের আগের বর্ষপঞ্জিকা ছিল চন্দ্রবষের্র, সম্রাট জুলিয়াসেরটা হলো সৌরবষের। খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩ সালের ১ জানুয়ারি নতুন বছর পালনের সিদ্ধান্ত নেয় রোমান সিনেট। আর বছরের প্রথম মাস জানুয়ারির নামকরণ করা হয় রোমানদের দেবতা জানুসের নামে। লাতিন শব্দ জানুস, অর্থ দরজা। এই দড়জা মানেই ইংরেজী নতুন বছরের আগমন,ইংরেজী নতুন বছরের শুরু। তার নামের সঙ্গে মিলিয়ে জানুয়ারি মাসের নাম হওয়ায় জুলিয়াস ভাবলেন নতুন বছরের ফটক হওয়া উচিত জানুয়ারি মাস।

সেজন্য জানুয়ারির ১ তারিখে নববর্ষ পালন শুরু হলো। আর পরে জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে প্রাচীন কুইন্টিলিস মাসের নাম পাল্টে রাখা হয় জুলাই। আরেক বিখ্যাত রোমান সম্রাট অগাস্টাসের নামানুসারে সেক্সটিনিস মাসের নাম হয় অগাস্ট। যিশুখ্রিস্টের জন্ম বছর থেকে গণনা করে ডাইওনিসিয়াম এক্সিগুয়াস নামক এক খ্রিস্টান পাদ্রি ৫৩২ অব্দ থেকে সূচনা করেন খ্রিস্টাব্দের। ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের কথা। রোমের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি জ্যোতির্বিদদের পরামর্শ নিয়ে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংশোধন করেন। এরপর ওই সালেই অর্থাৎ ১৫৮২ তে গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডারে ১ জানুয়ারিকে আবার নতুন বছরের প্রথম দিন বানানো হয়।

পরিশেষে আমার শিক্ষা জীবনের পিঠস্থান কাইতলা যঁজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক মেধাবী মুখ সুপ্রিয় অগ্রজ সঞ্জয় সাহার ফেইস বুক টাইম লাইনে লেখা একটি স্ট্যাটাস দিয়ে আজকের লেখাটি শেষ করতে চাই।তিনি লিখেছেন, বিদায় ক্ষণে দাঁড়িয়ে “২০১৯”। সকলে ব্যস্ত নতুন বছর ২০২০ কে স্বাগত জানাতে। এটাই সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রচলিত ধারা। একটা কথা আছে অতীতের দীর্ঘশ্বাস ও ভবিষ্যতের আশ্বাস কোনটাই বাস্তব জীবনে কাজে আসে না। তবু অতীতের পাওয়া না পাওয়ার কারণগুলো বর্তমানে নির্দেশনা হিসেবে কাজে লাগে প্রত্যেকের জীবনে। ২০১৯ এ আমি কি হারিয়েছি তার জন্যে আক্ষেপ করে যেতে চাই না। যা পেয়েছি তাকে মনে প্রাণে ধারন করে ২০২০ সাল কে বরণ করতে চাই। মানতে চাই ২০১৯ আমাকে যা দিয়েছে সেটাকে সূচনা করে ২০২০ আমাকে আরো অনেক ভাল কিছু দিবে যা পূর্বে আমি পাইনি। সবাইকে নতুন বছরের প্রীতি ও শুভেচ্ছা। ভাল থেকো ভালো রেখ ” ২০২০”।

💻এস এম শাহনূর
(কবি ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক)

চারগাছ রণাঙ্গনের ৩ শহীদের সমাধি জমশেরপুর: এস এম শাহনূর

| ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ | ১:২৩ অপরাহ্ণ

চারগাছ রণাঙ্গনের ৩ শহীদের সমাধি জমশেরপুর: এস এম শাহনূর

মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি
মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি।
যে মাটির চির মমতা আমার অঙ্গে মাখা
যার নদী জল ফুলে ফুলে মোর স্বপ্ন আঁকা
যে নদীর নীল অম্বরে মোর মেলছে পাখা
সারাটি জনম যে মাটির ঘ্রাণে অস্ত্র ধরি।
(গোবিন্দ হালদার)

আমাদের পাশের গ্রামে কিংবা আমাদের বাড়ির পাশে, কারো কারোর ঘরের পাশে, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক আবু, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবু জাহিদ আবু ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ইসলাম সাফু চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। ক’জনা তাঁদের খবর রেখেছি।কতটুকুই বা জানি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে  বাঙালি জাতির জন্য  আত্ম উৎসর্গকারী এ শ্রেষ্ঠ শহীদদের সম্পর্কে।

কুমিল্লার গৌরব তিন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা যথাক্রমে মোজাম্মেল হক আবু, আবু জাহিদ আবু ও সাইফুল ইসলাম সাফু।এই তিন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের রণাঙ্গন ও মৃত্যুস্থল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের চারগাছ বাজারের সন্নিকট এবং তাঁদের শেষ আশ্রয় স্থল বা কবর একই উপজেলার বাদৈর ইউনিয়নের জমশেরপুরে। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকার পর শহীদ মোজাম্মেল হক আবুর পরিবারের মাধ্যমে কবরগুলো পাকারণ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা গৃহীত হয়।

দীর্ঘদিন ধরে এ তিন শহীদদের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে কিছু লেখার ইচ্ছা মনে মনে পোষণ করে চলেছি। আমার বাড়ি উপজেলার মেহারী ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামে হলেও তাঁদের কবরগুলো জিয়ারত করার সৌভাগ্য এখনো হয়ে উঠেনি।আমার বড় বোনের শ্বশুর বাড়ি পদুয়া গ্রামে।তাই খুবই ছোট্টবেলা এবং কৈশোরে জমশেরপুর ও পদুয়া গ্রামের অধিকাংশ বনবাদাড় ও মেঠোপথে ঘুরে বেড়িয়েছি।ছোট্টকাল থেকে কবিতা ও গল্প লেখায় হাতেখড়ি হলেও সেই বয়সে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কিছু লিখব এমন চিন্তা কখনো মাথায় আসেনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আঞ্চলিক ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণা করতে গিয়ে  বছর দুয়েক আগে আলোচ্য বিষয়ের  সকল প্রকার তথ্য ও লেখাগুলো আমার সংগ্রহে আসে।কিছুদিন ধরে ভাবছিলাম সময় করে একদিন শহীনগণের কবর তিনটি জিয়ারত করে আসবো।অতঃপর কবরের নামফলকের ছবি দিয়ে আমার লেখাটি প্রকাশ করবো।দুর্ভাগ্য তারও সময় হয়ে উঠেনি।লেখালেখির সুবাদে পরিচয় হল প্রবীন লেখক,কবি ও প্রাবন্ধিক শামীম রেজা সাহেবের সাথে।তিনি বাংলাদেশের একজন গুণীজন।তিনি জমশেরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আব্দুর রউফ সাহেবের নাতি ও গ্রামের কৃতি সন্তান। তিনি সহ এলাকার সুধীজন গতকাল ১৬ই ডিসেম্বর সকালবেলা তিন শহীদের সমাধি বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের প্রতি শ্রদ্ধা ও দোয়া করেন।ধন্যবাদ আপনাদের সকলকে।

উল্লেখিত তিন মুক্তিযোদ্ধার রণাঙ্গনের সাথী ছিলেন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ-হিল-বাকী।চারগাছের যুদ্ধে তিনিও আহত হয়েছিলেন । সেই যুদ্ধের স্মৃতি কোনোদিনই ভুলতে পারেননি তিনি। চারগাছের যুদ্ধে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ-হিল-বাকী হারিয়েছেন তার সহযোদ্ধা অপর দুই কিশোর সহযোদ্ধা_ আবু জাহিদ আবু ও সাইফুল ইসলাম সাফুকে। অগ্রজপ্রতিম মোজাম্মেল হক আবুও শহীদ হন সেই যুদ্ধে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় কুমিল্লা জিলা স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়তেন আবদুল্লাহ-হিল-বাকী। যুদ্ধ শুরুর আগে শুরু হয়েছিল তার যুদ্ধ_ ‘পাকিস্তান দেশ ও কৃষ্টি’ নামের বই পাঠ্যতালিকা থেকে বাতিলের আন্দোলনের মধ্যদিয়ে। যার মূলে ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা। এরপর একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম… যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।’ তখন তিনিও প্রস্তুত হয়ে গেলেন। প্রস্তুতিপর্বে নেতৃত্ব দিলেন কুমিল্লা শহরের অগ্রজপ্রতিম ছাত্রলীগ নেতারা। বিশেষ করে ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল হাসান পাখীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ধাপে ধাপে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কাজটি সেরে নিলেন তিনি। তাদের দায়িত্ব দেওয়া হলো_ কসবা, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, মুরাদনগরের অংশবিশেষে দায়িত্ব পালন করার জন্য। সেই অনুযায়ী তারা যুদ্ধ করলেন বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু চারাগাছের যুদ্ধ নিয়ে এসেছিল তাদের জন্য চরম পরাজয়ের গ্লানি।
আবদুল্লাহ-হিল-বাকী বলেন, সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই জানতে পারেন তাদের যেতে হবে মুরাদনগর এলাকায়। তাদের কমান্ডার ছিলেন নাজমুল হাসান পাখী। সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখ তাদের বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল। অনিবার্য কারণে দেরি হয়ে যায়। পরে রওনা হলেন ১২ তারিখে। রওনা হওয়ার পর আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দক্ষিণে উজানিসার ব্রিজ পর্যন্ত আসতে দেরি হয়ে যায় তাদের। একপর্যায়ে গভীর রাতে নৌকায় রওনা হন জামসেদপুরের দিকে। রাজাকারদের উৎকোচ দিয়ে ব্রিজের নিচ দিয়ে বেরিয়ে আসতে তেমন কোনো অসুবিধা হয় না।
খালের পাড়ঘেঁষে নৌকা চলতে থাকে পশ্চিমে চারগাছের দিকে। নিশ্চিন্ত তখন নৌকার অন্যরাও। কারণ একটু আগেই চলে গেছে ঢাকার মোস্তফা মহসীন মন্টুদের একটি নৌকা। কোনো গুলির শব্দ হয়নি। তার মানে তারাও নিশ্চিন্তেই পাড়ি দিতে পারবেন পথটুকু। নৌকায় ছিলেন নাজমুল হাসান পাখী, মমিনুল হক ভূঁইয়া দানা মিয়া, মোজাম্মেল হক আবু, নৃপেণ পোদ্দার, আবদুল্লা-হিল-বাকী, আবু জাহিদ আবু, সাইফুল ইসলাম সাফু, নাবালক মিয়া, নুরুল ইসলাম, মেহরাব হোসেন ও রকিব হোসেন। ১১ জনকে নিয়ে যেন একটি পরিবার। বয়সে ছোট হওয়ার কারণে আবু ও বাকীর আবার আদর বেশি। কমান্ডার নাজমুল হাসান পাখী থেকে শুরু করে সবাই তাদের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখেন_ কোনোভাবে যেন ছোট এ দু’জনের কোনো অসুবিধা না হয়। তাদের দিকে থাকে বড়দের সজাগ নজর।
নৌকা চারগাছ বাজারের কাছাকাছি পৌঁছালে হঠাৎ আবদুল্লা-হিল-বাকীর নজরে আসে বাজারে কে যেন সিগারেট টানছে। সহযোদ্ধাদের বললেন, ব্যাপারটা অস্বাভাবিক লাগছে। ওখানে রাজাকারা পাহারা বসিয়েছে নাকি? দেখতে পেলেন অনুসন্ধানী বাতি জ্বলে উঠেছে। বাতি জ্বলার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির মতো গুলি আসতে শুরু করে বাজারের দিক থেকে। গুলি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নৌকার ভেতরে থাকা সাইফুল ইসলাম সাফু ও মোজাম্মেল হক আবু গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
কমান্ডার নাজমুল হাসান পাখী সবাইকে নৌকা থেকে পাল্টা গুলি চালানো এবং আত্মরক্ষার জন্য পশ্চাদপসরণের নির্দেশ দেন। কমান্ডারের নির্দেশে আবু জাহিদ হাঁটুপানিতে নেমে পাল্টা গুলি করছিলেন। শত্রুপক্ষের একটি গুলি এসে আবুকে ঘায়েল করে দেয়। তিনি সেখানেই শহীদ হন। আবদুল্লাহ-হিল- বাকী ও মমিনুল হক ভূঁইয়া দানা মিয়া গুরুতর আহত হন।
বাকী জানান, আহত হওয়ার পর ঘটনাস্থল থেকে বেশ খানিকটা সরে গিয়ে অন্ধকারে ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করতে থাকেন। ফজরের আজানের পর একটি নৌকায় করে যান চারগাছ থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের এক গ্রামে। তার ধারণা সেটি ছিল শিকারপুর। সেখানে এক গৃহবধূ তাকে আশ্রয় দেন। তিন দিন ছিলেন সেখানে। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর ওই নারী তাকে আগরতলায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
যে তিন দিন বাকী তার আশ্রয়ে ছিলেন, প্রতিদিন খবর পেতেন পাকিস্তানি সৈন্যরা চারগাছের আশপাশের গ্রামগুলো তছনছ করে মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজছে।

✪ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আবু জাহিদ

 

আবু জাহিদ নাম তার। তবে কুমিল্লার মুক্তিযোদ্ধারা তাকে চিনতেন আবু নামে। পড়ত কুমিল্লা জিলা স্কুলে নবম শ্রেণীতে। খুব ইচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে যাবে। বাড়ি থেকে অনুমতি মিলল না। শেষে বাড়ি থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে নাম লেখাল ও। সাঁতরে গোমতী নদী পার হয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সোনামুড়া টিলার কাছে মুক্তি শিবিরে এসে হাজির হলো। সময়টা তখন ১৯৭১ সালের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ। কম বয়সের কারণে অনেক মুক্তিযোদ্ধাই ওকে দলে নিতে চাননি। কিন্তু ওর অদম্য ইচ্ছার কাছে হার মানলেন সেক্টর ইস্টার্ন জোনের কমান্ডার শেখ ফজলুল হক মনি। প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেন আবুকে। প্রশিক্ষণের পর অপারেশন। একাত্তরের ১২ সেপ্টেম্বর। নাজমুল হাসান পাখির নেতৃত্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার চারগাছ বাজারের এক অপারেশনে যায় আবু। ৯ জন মুক্তিযোদ্ধার দল রওনা হলেন নৌকায় করে। কিন্তু মাঝপথেই আলবদর বাহিনীর সহায়তায় পাকিস্তানী বাহিনী গুলি চালায় মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর। সঙ্গে সঙ্গে মারা যান দুই মুক্তিযোদ্ধা। দলের সবচেয়ে ছোট মুক্তিযোদ্ধা আবু গুলিবিদ্ধ হয়ে নদীতে ঝাঁপ দেয়। এরপর নদী থেকে উদ্ধার করা হয় আবুকে। ততক্ষণে দেশের মুক্তির জন্য জীবন উৎসর্গ করে ফেলেছেন।হয়েছে শহীদ।

আবু জাহিদ একজন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি রণাঙ্গণে শহীদ হন। তিনি “আবু” নামে কুমিল্লার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরিচিত ছিলেন।

➤জীবন:
কিশোর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবু জাহিদের জন্ম ১৯৫৬ সালের জানুয়ারি মাসে কুমিল্লা শহরের মগবাড়ী চৌমুহনীতে। বাবা আবুল হাসেম দুলা মিয়া ও মা ভেলুয়া বিবির পাঁচ পুত্রসন্তানের একজন আবু। ১৯৬৭ সালে কুমিল্লা জিলা স্কুল এ পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন তিনি।

➤মুক্তিযুদ্ধে অবদানঃ
কুমিল্লা জিলা স্কুলের নবম শ্রেণীতে থাকার সময় তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। একাত্তরের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে আবু গোমতী নদী সাঁতরে পার হয়ে কুমিল্লা শহরের অদূরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সোনামুড়া টিলার কাছে মুক্তি শিবিরে এসে উপস্থিত হন। তখন তার শরীরের সব কাপড় ছিল ভেজা। সেখানে উপস্থিত অন্য মুক্তিযোদ্ধারা তাকে বয়স কম বলে মুক্তিযুদ্ধে যেতে বারণ করেন। অনেক পীড়াপীড়ির পর সেক্টর ইস্টার্ন জোনের কমান্ডার শেখ ফজলুল হক মনি তাকে প্রশিক্ষণের সুযোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে আবু অবস্থান করছিলেন নিমবাগ বাদাম ঘাট হেড কোয়ার্টারে।

➤মৃত্যু:
১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ রাতে নাজমুল হাসান পাখীর নেতৃত্বে ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার চারগাছ বাজারে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি ঝটিকা অপারেশনে বের হন। নয়জন মুক্তিযোদ্ধার একটি বহর নৌপথে ওই অপারেশনে রওনা হয়। ওই দলে ছিলেন শিব নারায়ণ দাস, নৃপেণ পোদ্দার, মুমিনুল হক ভূঞা, মোজাম্মেল হক, সাইফুল ইসলাম, আবু জাহিদসহ আরও অনেকে। রাতের অপারেশন, তাই কিছু বুঝে ওঠার আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর এ দেশের আলবদর বাহিনীর সহায়তায় মাঝনদীতে দলটির ওপর গুলি চালায়। তখন পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে মারা যান মোজাম্মেল হক ও সাইফুল ইসলাম। কনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা আবুও গুলিবিদ্ধ হয়ে নদীতে ঝাঁপ দেন। কিন্তু তিনিও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। সঙ্গী এবং মুক্তিকামী জনতা নদী থেকে কিশোর আবুর মরদেহ উদ্ধার করে। অতঃপর তাকেসহ তিন মুক্তিযোদ্ধাকে নিকটস্থ জমশেরপুর গ্রামে দাফন করা হয়।

➤স্বীকৃতি:
আবু জাহিদের নামে কুমিল্লা জিলা স্কুলে মিলনায়তনের নামকরণ করা হয়েছে।

✪ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সাইফুল ইসলাম সাফু

শহিদ মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ইসলাম সাফু ( জন্মঃ ১৫/০৬/১৯৫২ খ্রিঃ , শাহাদাৎ বরণঃ ১২/০৯/১৯৭১ ) ডানে … তারা দুই ভাই একই সাথে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন । একজন ( সাইফুল ইসলাম সাফু) সম্মুখ যুদ্ধে শহিদ হন মাত্র ১৯ বৎসর বয়সে।

১৯৫২ সালের ১৫ জুন কুমিল্লা শহরের উজির দিঘির পাড় রাজবাড়ি কম্পাউন্ড এলাকায় জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল গনি, মাতার নাম করিমুননেসা, ১০ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট।

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার অন্যতম রূপকার মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ইসলাম সাফুর  আপন ভাই। কানাডা  প্রবাসী রফিকুল ১৯৯৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানকে একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে তিনি ১৯৫২ সালে ভাষাশীহদদের অবদানের কথা উল্লেখ করে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করেন। রফিক তাঁর সহযোদ্ধা আবদুস সালামকে নিয়ে ‘এ গ্রুপ অব মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামের একটি সংগঠন দাঁড় করান এবং অন্যান্য সদস্যরাষ্ট্রের সমর্থনের প্রচেষ্টা শুরু করেন।

ইউনেস্কোভুক্ত বিভিন্ন দেশের কাছে রফিকুল ইসলামের অনুরোধপত্র ইউনেস্কোর সহযোগিতা ও বাংলাদেশের কূটনীতিকদের নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার ফলে বিশ্বের ২৮টি দেশ এ প্রস্তাবের সহ প্রস্তাবক হতে রাজি হয়। পরে ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ ইউনেস্কোর হেনারেল অ্যাসেম্বলিতে ১৮৮ সদস্য দেশের বিনা আপত্তিতে ও স্বত:স্ফূর্ত সমর্থনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করা হয়। এভাবে ঘটনালো রফিকুল ইসলামের স্বপ্ন বাস্তবায়ন বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষার বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিশাল উত্তরণ। এ গৌরবময় অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাঁদের সংগঠন একুশে পদক লাভ করে।

রফিকুল ইসলাম ১৯৫৩ সালের ১১ এপ্রিল কুমিল্লা শহরের উজির দিঘির পাড় রাজবাড়ি কম্পাউন্ড এলাকায় জন্ম গ্রহণ করেন তাঁর পিতার নাম আবদুল গনি, মাতার নাম করিমুননেসা, ১০ ভাইবোনের মধ্যে তিনি অষ্টম। উজির দিঘির পাড় হরেকৃষ্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুমিল্লা হাইস্কুল ও ভিক্টোরিয়া কলেজে তিনি লেখাপড়া করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে মুজিব বাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশ নেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবায় তাঁর ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম সাফু সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ কে স্বাধীনতা দিয়েই ক্ষান্ত হননি বরং বাঙালি জাতির তরফ থেকে বিশ্ব মানবকে দিয়েছেন এক অনন্য সাধারণ উপহার , বাঙালির ত্যাগ এবং গৌরবে গাঁথা একুশকে এনে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি … আজ পৃথিবীর সকল বিলুপ্তপ্রায় মাতৃভাষাগুলো একুশকে ঘিরে তাদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছে , একুশই তাদের বেঁচে থাকার উৎস … তাদের দুই ভাইকে জানাই সশ্রদ্ধ সালাম … আপনারা যুগ যুগ বেঁচে থাকবেন বাঙালিদের হৃদয়ে।

✪বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মোজাম্মেল হক আবু

কুমিল্লা মহানগরের ১৯নং ওয়ার্ডের ঢুলিপাড়া,চৌমুহনীতে ১৯৫০ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম আব্দুল মজিদ মাস্টার।কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ রোড থেকে দক্ষিণ দিকে কিছুদূর গেলে রাস্তার ডান পাশে লাল-সবুজ রঙের ইংরেজি(M) বর্ণ খোদাই করা একটি স্থাপনা চোঁখে পড়বে। এটি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মোজাম্মেল হক স্মৃতিস্তম্ভ।
কুমিল্লা জিলা স্কুল, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র মোজাম্মেল হক আবু স্বাধীনতা সূর্য ছিনিয়ে আনতে মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর কমান্ডার নাজমুল হাসান পাখির নেতৃত্বে নৌকায় করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা হয়ে মুরাদনগর যাওয়ার পথে চারগাছ নামক জায়গায় পাক বাহিনীর আক্রমণের শিকার হন। অপ্রস্তুত অবস্থায় যুদ্ধ করতে গিয়ে ১১ জনের ওই দলের মধ্যে তিনজন শহীদ হন। শহীদ মোজাম্মেল হক আবু তাঁদেরই একজন।ঢুলিপাড়ার প্রয়াত আব্দুল মজিদ মাস্টারের ছেলে এ কে এম মোজাম্মেল হক আবু সহ ঐদিন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের চারগাছের পাশের গ্রাম জমশেরপুরে সমাহিত করা হয়। পরবর্তীতে কবর তিনটি শহীদ মোজাম্মেল হক আবুর পরিবারের সহযোগিতায় সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

এই মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য (কুমিল্লায়) এলাকাবাসীর উদ্যোগে ১৯৭২সালে শহীদ মোজাম্মেল হক স্মৃতি সংসদ প্রতিষ্ঠা করা হয় যা ১৯৯৭ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন(কুমি ৭০৫/৯৭) লাভ করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটি কুমিল্লা পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় সমাজ কল্যাণ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। বর্তমান যে স্মৃতিস্তম্ভটি আছে তা নির্মিত হয়েছে ২০১০ সালে। স্থানীয় প্রশাসন (বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে) নিজস্ব নকশা ও অর্থায়নে এ স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করে দেয়।

বাংলাদেশের মানুষের যে স্বপ্ন আর আকাঙ্ক্ষার মানসে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, প্রকৃতপক্ষে সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়নি। দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী তৎপরতা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, যুবসমাজে সৃষ্ট হতাশা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, ঘুষ, দুর্নীতি ইত্যাদি কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমাজে বাস্তবায়িত হতে দেয়নি। সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রয়োজন দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে আন্তরিক পদক্ষেপ। এ লক্ষ্যে দুর্নীতিমুক্ত কল্যাণকর শাসনব্যবস্থা যেমন প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত গৌরবগাঁথা আর আত্মত্যাগের সঠিক ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা। যে আদর্শ, উদ্দেশ্য ও চেতনা নিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ তাদের তাজা প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছে, ইজ্জত দিয়েছে হাজার হাজার মা-বোন, আমাদের সমাজ এবং জাতীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধের সেই আদর্শ ও চেতনাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে- এটিই আমাদের অঙ্গীকার হওয়া উচিত।

➤তথ্যসূত্র:

১. ↑দৈনিক সমকাল: আরেক যুদ্ধের কথা বললেন আবদুল্লাহ-হিল-বাকী
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৪
২. ↑মুক্তি যুদ্ধকোষ,ষষ্ঠ খন্ড।। মুনতাসির মামুন
৩. ↑দৈনিক প্রথম আলো, “মুক্তিযোদ্ধা আবুর কথা বলছি”, গাজীউল হক | তারিখ: ১২-০৯-২০০৯
৪্ ↑মাঠ পর্যায়ে ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা।
৫.↑উইকিপিডিয়া

💻লেখক: এস এম শাহনূর
(কবি ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক)

৭১’র ১৪ ডিসেম্বর!বাঙালি জাতির শতবছর পিছিয়ে পড়ার দিন: এস এম শাহনূর

| ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ | ৩:২৪ অপরাহ্ণ

৭১’র ১৪ ডিসেম্বর!বাঙালি জাতির শতবছর পিছিয়ে পড়ার দিন: এস এম শাহনূর


বিশ্ববাসীসহ সারা বাংলার জনগণ মনে করে নিরস্ত্র বাঙালিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগ্রত করার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৭০-এর নির্বাচন হতে শুরু করে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয় অর্জন পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে এদেশের কবি, সাহিত্যিক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, চিত্রশিল্পী, সঙ্গীত শিল্পী, চলচ্চিত্রকারসহ বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম।

বীর বাঙালির সাহস ও মেধার কাছে যখন একে একে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প, আস্তানা নিশ্চিহ্ন হতে লাগলো, একে একে পরাস্ত হয়ে যখন আত্মসমর্পন করতে লাগলো, তখনই বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে ১৯৭১ সালের এই দিনে এদেশের রাজাকারদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বাংলাদেশকে চিরদিনের জন্য মেধা শূন্য দেশ হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।

💻এস এম শাহনূর
(কবি ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক)

আজ বিশ্ব শিশু দিবস ও আমাদের ভাবনা: এস এম শাহনূর

| ২০ নভেম্বর ২০১৯ | ২:৪৩ অপরাহ্ণ

আজ বিশ্ব শিশু দিবস ও আমাদের ভাবনা: এস এম শাহনূর

শিশুরাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যতের কর্ণধার’,
“শিশুদের হাতেই আগামীর পৃথিবীর ভার’

আর যাই হোক কথাগুলো কিন্তু একেবারে মিথ্যে নয়।সারাবিশ্বে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস। বিশ্বব্যাপী শিশুদের সম্মান করতে দিবসটি পালিত হয়
বিশ্ব শিশু দিবস শিশুদের নিয়ে উদযাপিত একটি দিবস। এটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় পালিত হয়ে থাকে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই শিশু। এই শিশুরাই একদিন বিশ্বের ভবিষ্যতের প্রতিনিধিত্ব করবে । শিশুদের সংরক্ষণ, কল্যাণ ও শিক্ষার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্যে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠন ধারাবাহিক ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু তারপরও ফুলের মতো শিশুরা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারছে না।এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, গত কয়েক বছরের যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের সংখ্যা- ক্ষতিগ্রস্ত সৈনিকদের চেয়েও বেশি । কেবল যুদ্ধই যে শিশুদের ভালভাবে বেড়ে উঠার পথে বাধার সৃষ্টি করছে তাই নয়, দারিদ্র্য, পুষ্টিহীনতা ও প্রাণঘাতী রোগ শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত করছে।বিশ্ব শিশু দিবস ২০শে নভেম্বর উদযাপন করা হয়৷আন্তর্জাতিক শিশু দিবস জুন ১ তারিখে উদযাপন করা হয়। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরুর জন্মদিন ১৪ নভেম্বর শিশু দিবস বলে পালিত হয়৷ ১৯৬৪ সালে নেহরুর মৃত্যুর পর তাঁর জন্মদিনটিকে এদেশের শিশুদিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।আন্তর্জাতিক শিশুদিবস থাকলেও ভারতে আলাদা করে শিশুদিবস পালন করা হয় প্রতি বছর ১৪ নভেম্বর৷
ডঃ চালর্স লিওনার্দের উদ্যোগে ম্যাসাচুসেটসে ১৮৫৬ সালে প্রথম শিশুদিবস পালিত হয়েছিল রোজ ডে হিসেবে৷ পরে তা নাম বদলে ‘ফ্লাওয়ার্স ডে’ এবং আরও পরে তা ‘চিলড্রেন্স ডে’ নামে পরিচিত হয়৷১৯২৯ সালের ২৩এপ্রিল তুরস্ক প্রজাতন্ত্রে প্রথম শিশু দিবস উপলক্ষ্যে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল৷ তবে তার আরও কয়েক বছর আগে ১৯২৩ সাল থেকেই তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি মুস্তাফা কামাল আতালুর্কের জন্মদিন ২৩ এপ্রিল দিনটিতে শিশু দিবস পালন করা শুরু হয়৷শিশু দিবসটি প্রথমবার তুরস্কে পালিত হয়েছিল সাল ১৯২০ সালের ২৩ এপ্রিল। বিশ্ব শিশু দিবস ২০ নভেম্বর -এ উদযাপন করা হয়, এবং আন্তর্জাতিক শিশু দিবস জুন ১ তারিখে উদযাপন করা হয়। তবে বিভিন্ন দেশে নিজস্ব নির্দিষ্ট দিন আছে শিশু দিবসটিকে উদযাপন করার।
বাংলাদেশে ১৯৯৬ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনটিকে শিশু দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব শিশু দিবস পালন করা হয় বাংলাদেশে [

✪ না-যেন ভুলি তোমাদের জন্য উৎসর্গিত বিশেষ দিনগুলি।
➤১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস।
➤৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় কন্যা শিশু দিবস।
➤১১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস।
➤বিশ্ব শিশু দিবস ২০শে নভেম্বর উদযাপন করা হয়, ➤আন্তর্জাতিক শিশু দিবস ১লা জুন উদযাপন করা হয়।

 

 

 

💻এস এম শাহনূর

(উইকিপিডিয়ান, কবি ও গবেষক)

আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবসে আপনাকে ভীষণ মনে পড়ে স্যার

২৯৩ বার পড়া হয়েছে

মন্তব্য ০ টি

 

হাজারো প্রাণে সেরা প্রধান শিক্ষক যিনি
মরহুম এস এম শামসুজ্জামান স্যার তিনি।

➤”একটি প্রদীপ বা মোমবাতি থেকে যেমন হাজারটি বাতি জ্বালানোর পরেও তা শেষ হয়না,ঠিক তেমনি জ্ঞানের আলো বিতরন করলেও তা কখনো ফুরিয়ে যায়না”।
➤”অধ্যবসায়,একাগ্রতা, নিষ্ঠা ছাড়া জীবনে সফলতা আসেনা”।
➤”তুমি যদি অন্যজনার মঙ্গলের কথা ভাব,তখন অন্যজন তোমাকে নিয়ে ভাববে”।

জীবদ্দশায় শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সময় প্রায়শ্চই উপরোক্ত জ্ঞানগর্ভ কথা ও উপদেশ গুলো যিনি বলতেন তিনি হলেন মরহুম এস এম শামসুজ্জামান স্যার।ভাল কথা,সুন্দর উপদেশ,যথার্থ আদেশ নিষেধ প্রদানে তিনি কখনো শিথিলতা প্রদর্শন করেননি।নৈতিকতার প্রশ্নে তিনি ছিলেন অটল,নিজ বিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীদের সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার চিন্তায় থাকতেন বিভোর।বাগানে কত ফুল ফুটে,গন্ধ বিলিয়ে ঝরে যায়।কে তারে মনে রাখে?কিন্তু তিনি ছিলেন এমনই এক সুগন্ধি ফুল হাজারো শিক্ষার্থীদের মনের বাগানে আজো সতেজ হাসনাহেনা,গোলাপ,রজনীগন্ধা!!

আমার ছাত্র জীবনের প্রিয় শিক্ষক,আদর্শ ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক তিনি।আমার বিশ্বাস যে সকল শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা জীবনে স্যারের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছেন,সেই সব সৌভাগ্যবানদের সকলেরই প্রিয় শিক্ষকের তালিকায় মরহুম শামসুজ্জামান স্যারের নামটি অম্লান।

এরিস্টটল,প্লেটো,সক্রেটিস রা বার বার জন্মগ্রহণ করেন না।শিক্ষক হিসাবে তিনি ওনাদের থেকে পিছিয়ে ছিলেন না।ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার স্বনামধন্য বিদ্যাপিঠ কাইতলা যঁজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি ছিলেন এক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব।ওনার আদর্শ, রুচিবোধ,শিক্ষা দান পদ্ধতি,পোশাক পরিচ্ছেদ,বাচনভংগি, চলার স্টাইল ছিল আধুনিক ও মার্জিত। এক কথায় অসাধারণ।
স্কুল জীবনে আমাকে ইংরেজীতে কথা বলতে যেই মহান ব্যক্তিটি বেশী চাপে রাখতেন তিনি হলেন জনাব, শামসুজ্জামান স্যার।স্যার আমাকে প্রায় প্রতিদিন ওনার অফিসে ডেকে পাঠাতেন,নিজের কাজের ফাকে কমপক্ষে দুটো English Passage করাতেন।আবার হোম ওয়ার্কও দিতেন।আমার সাথে ইংরেজিতে কথা বলতেন।স্যারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্কুল জীবনেই আমি অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতে পারতাম।মরহুম শামসুজ্জামান স্যার স্কুলের অফিস কক্ষে রক্ষিত অনার্স বোর্ড দেখিয়ে এক এক করে Mr. Abdul Majeed sir,প্রফেসর ড.শাহালম স্যার,মোঃশাহজাহান স্যার এবং Prof.Dr.Mohammad Abdur Rashid স্যারের ছাত্র জীবনের গল্ল শুনাতেন।যা আমাকে অনুপ্রাণিত করত।মনে পড়ে আমার এসএসসি পরীক্ষার পরের অবসর সময় টুকুতে স্কুলে গেলে ৯ম/১০ম শ্রেণির স্যারের ইংরেজি পিরিয়ডের ক্লাস গুলো আমাকে নিতে বলতেন। দপ্তরির মাধ্যমে চক ডাস্টার আনিয়ে নিজে আমাকে ক্লাস রুমে রেখে আসতেন।ওনার ঔ স্নেহভরা অবদানের কারণেই হয়তো পৃথিবীর ১৩টি দেশের পথে প্রান্তরে আর অফিস পাড়ায় নানান জাতির মানুষের সাথে নিজেকে প্রকাশ করতে পেরেছি।

শারীরিক গঠনঃ উচ্চতায় তিনি ছিলেন এমনই এক আকৃতির যে কারোর দৃষ্টি ওনার উপরে পড়তো। সোনালী ফর্সা বরণ ছিল শরীরের রূপ। যৌবনে সবসময় দাড়ি গোফ ক্লিন সেব করে রাখতেন।মুখে সবসময় হাসি লেগেই থাকতো।ওনার হাটা চলা ছিল যথেষ্ট মার্জিত ও গম্ভীর। স্পষ্ট ভাষায় ছোট ছোট কথা বলতেন।মাঝ বয়সে এসেও স্যারের মাথা ভর্তি কালো চুল ছিল।

পোশাক পরিচ্ছদঃপোশাক আশাকের ব্যাপারে তিনি ছিলে অতিব যত্নশীল। ইস্তিরি করা পরিপাটি প্যান্ট শার্ট,ব্লেজার,ওভারকোট,স্যুট এবং মাঝে মধ্যে হাফ হাতাওয়ালা ফতুয়া পরিধান করতেন।বিশেষ বিশেষ দিন গুলোতে পাজামা পাঞ্জাবীও পরতেন।আমার দেখা তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি মফস্বলের স্কুল শিক্ষক যিনি কোট-টাই পরে স্কুল করতেন।ওনার রুচিশীল পোশাক ও সুন্দর ব্যক্তিত্বের কারনে বহু পদস্থ ব্যক্তিরাও মন থেকে স্যারকে সমীহ করতেন।সবসময় পলিশ করা সু ; কখনো চামড়ার জুতা ব্যবহার করতেন। হাতে একটি সুদৃশ্য চামড়ার ছোট ব্যাগ এবং অনেক সময় বাঁধাই করা লাঠি রাখতেন।

“মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই,
যেন গোর থেকে মোয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই”।

সবাইকে ছেড়ে আজ তিনি কাইতলা গ্রামের নিজের গড়া মসজিদের পাশে পুকুরপাড়ে চির নিদ্রায় শায়িত।
মহান আল্লাহ পাক স্যারকে জান্নাত নসিব করুন।আমিন।

জাতীয় কন্যা শিশু দিবস ও আমাদের অঙ্গীকার: এস এম শাহনূর

| ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ৩:৫২ অপরাহ্ণ

জাতীয় কন্যা শিশু দিবস ও আমাদের অঙ্গীকার: এস এম শাহনূর

আজ জাতীয় কন্যা শিশু দিবস
‘কন্যা শিশুর অগ্রযাত্রা, দেশের জন্য নতুন মাত্রা’
এই প্রতিপাদ্যকে ঘিরে সারাদেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে।

বিধাতার নিকট কৃতজ্ঞ।
প্রার্থনা তোমার জন্য প্রিন্সেস সামীহা নূর জারা
মেধা মনন আর শিষ্টতায় তুমি হও সেরাদের সেরা।
আজ সকল পিতা মাতার এই হউক দৃপ্ত অঙ্গীকার
পূর্ণ করে দিবো তোমার সকল চাওয়া,জন্মগত অধিকার।

কন্যার মুখে আব্বু ডাক শুনার একী আনন্দ?
আমার স্ত্রী বলেন,”পৃথিবীতে মাতৃত্বের মত মধুর অনুভূতি দ্বিতীয়টি নেই”।আমার কাছে পিতা না হতে পারার বেদনা হিমালয় আল্পসের জমাট বাঁধা বরফ সম।যা কখনো গলে শেষ হবার নয়।আমাদের দাম্পত্য জীবনের স্নেহাস্পদ সামীহা নূর জারা’র মুখে আব্বু ডাক শুনার আনন্দানুভূতি সাতসাগর ঊর্মিমুখর।আকাশে প্রতি রাতে চাদ তার মাধবী রূপ নিয়ে হাজির হয়না কিন্তু আমার ঘরে প্রতি রাতে মায়াবী চাদের জোছনা উপচে পড়ে।মেঘে ঢাকা আকাশ কিংবা সূর্যগ্রহণ আমার ঘরের ঝলমলে দিনের আলোকে ম্লান করতে পারেনা। দীর্ঘ দিন চীনের হোবে প্রদেশে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের কোমলমনা বাচ্চাদের হইহুল্লোড় খুব কাছ থেকে দেখেছি।স্কুল গেইটে রেখে যাওয়া ছোট্ট বেবিটির সাথে মা কিংবা বাবার বিদায় আলিঙ্গন আমাকে গভীর আবেগাপ্লুত করত। পিতৃত্বের হাহাকার বালুকাময় জীবনের তীরে কখনো কখনো ঢেউয়ের মত আছড়ে পড়ত।পৃথিবীর অবাক শহর বৈরুতের কসমো সেন্টারে আন্ডা বাচ্চাদের খেলা উপভোগ করেছি।

মাঝেমধ্যে মনে হত আহা! আমার যদি এমন ফুটফুটে একটা বেবী থাকত!
সাইপ্রাসীয় মাই মলের কিডস জোনে আহ্লাদিত সোনামণিদের নানান রঙের খেলনার সাথে পরিচিত হয়েছি।সিঙ্গাপুরের চিল্ড্রেন হেভেনে সুন্দর সব কিডস টয়েস দেখে আহত হয়েছি।জাপানে চারতলা বিশিষ্ট চিলড্রেন্স টয় মার্কেট Hakuhinkan Toy Store ও Hakuhinkan Toy Park ভাবিয়েছে ঢের। জানি অনেক রাইড আর টয়েস আছে যা কিনা কোম্পানি আমার বেবীর জন্য তৈয়ার করেনি কিংবা ক্রয় করার ইচ্ছেও আমার নেই।অথবা আমার মানিব্যাগে সেই পরিমাণ ডলার কখনো রাখা হয়না।ইটস ডাজ নট এ মেটার। কি মালয়শিয়ার মাইডিন,তুরস্কের তারসুস,সিঙ্গাপুর সিটি যখন যেখানে গিয়েছি বুড়ো আর শিশুদের সাথে পেতেছি মিতালী।

আজ কিংবা এখনও যমুনা ফিউচার পার্কের কিডস প্যারাডাইস কিংবা ল্যাভেন্ডারের কিডস জোন কাজের ফাকে,অবসরে আমাকে ডাকে।মন চায় সবগুলো খেলনা কিনে ফেলি মেয়ের জন্য। এটা সেটা কেনাকাটা করলেও মনভরে না।যদি প্রশ্ন করা হয় পৃথিবীতে পিতা মাতা অর্থাৎ এডাল্ট মানুষজনের নিকট শ্রেষ্ঠ খেলনা সামগ্রী কি?আমি বলব নিজ শিশু সন্তান বা যেকোন শিশু বাচ্চা।কারণ,আমার সন্তানকে খেলনার ঝুড়ি আর পুতুল দিয়ে বলি,”সামীহা এই পুতুলগুলো হচ্ছে তোমার খেলার পুতুল আর তুমি হলে বাবার খেলার পুতুল।এসো আমরা খেলা করি।তখন মেয়ে আমার আনন্দে নিজের মত করে ঝর্নার মত নানান শব্দ ছড়ায়।বাবা মেয়ের এ খেলা কখনো শেষ হতো না যদিনা মেয়ের চোঁখে কিংবা বাবার চোঁখে ঘুম না আসতো। মেয়ের পেটে ক্ষুধা না পেত। অথবা বাবার অফিস না থাকতো………

শিশু অধিকার রক্ষাকল্পে ১৯৫৪ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক এক প্রস্তাবে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর একদিন ‘শিশু দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় | ফলে প্রতিবছর ২৯ সেপ্টেম্বর ‘শিশু অধিকার দিবস’ পালিত হয়ে আসছে | কন্যা শিশুর প্রতি বৈষম্য রোধেকন্যা শিশুর যথাযথ শিক্ষা, পুষ্টি, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ তথা সুষ্ঠু বিকাশকে সামনে রেখেই “জাতীয় কন্যাশিশু দিবস’’ পালন শুরু হয়। ইভটিজিং, এসিড সহিংসতা এবং যৌন নির্যাতনসহ কন্যা শিশুর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা বন্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলাই ছিল লক্ষ্য। কতটুকু সফল তা বলা দুষ্কর। কারণ, এখন সমাজে কন্যা শিশুরা বিভিন্ন দিক দিয়ে বৈষম্যের শিকার। তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুষ্ঠু বিকাশের বিষয়টিকে বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেয়ার লক্ষ্যে ২০০০ সালে তৎকালীন সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি সরকারি আদেশের মাধ্যমে শিশু অধিকার সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনকে কন্যাশিশু দিবস হিসেবে পালনের লক্ষ্যে ৩০ সেপ্টেম্বরকে ‘জাতীয় কন্যা শিশু দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেন | তখন থেকেই প্রতিবছর যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হচ্ছে | আজ ৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় কন্যাশিশু দিবস |সাধারণত একটি দিবস সামনে আসে এবং একটি প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয় | কিন্তু এ বছর কন্যাশিশু দিবসটির প্রতিপাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ | বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু এবং এদের মধ্যে ৪৮ শতাংশই কন্যাশিশু | শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হলেও আজও দেশের অধিকাংশ কন্যাশিশুর বিয়ে হচ্ছে ১৮ বছরের আগেই | বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক এন্ড হেলথ সার্ভে-২০০৭ এর তথ্য অনুযায়ী দেশে এখনও ১৮ বছরের আগে ৬৬ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হচ্ছে এবং দুই দশক ধরে এ হারের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না | আর ১৯ বছরের আগেই গর্ভবতী হচ্ছে ৬৬ শতাংশের এক শতাংশ | বাংলাদেশে নারীর গড় বিয়ের বয়স ১৫ বছর ৩ মাস | ইউনিসেফের তথ্যমতে, শিশু বিবাহের হারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয় | গত ৩০ বছরে শিশুবিবাহ আনুপাতিক হারে হ্রাস পেলেও গ্রামাঞ্চলে এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে সমস্যাটা প্রকট | আইসিডিডিআরবি এবং প্ল্যান বাংলাদেশের যৌথ জরিপ-২০১৩ মতে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষিত শতকরা ২৬ জনের বিয়ে হয়েছে ১৮ বছরের আগেই এবং নিরক্ষর নারীদের ক্ষেত্রে এই হার শতকরা ৮৬ | ইউনিয়ন পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলো কার্যকর করা হলে শিশুবিয়ের মাত্রা কমে যাবে অনেকাংশে | এটি প্রতিরোধে করণীয় এবং শাস্তি সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের বিলবোর্ড, পোস্টার প্রকাশ এবং তৃণমূলে তা ছড়িয়ে দেয়া জরুরি | সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিশুবিয়ে বন্ধ করতে পরিবার থেকেই এ প্রক্রিয়া শুরু করা প্রয়োজন |

হে আল্লাহ আমাদের সকলকে চক্ষু শীতলকারী নেক সন্তান দান করুন।আমিন।ছুম্মামিন।

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান,কবি ও গবেষক)

কাইতলা জমিদার বাড়ির ইতিহাস: এস এম শাহনূর

লেখা ও গবেষণা: এস এম শাহনূর | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ১২:৩৭ পূর্বাহ্ণ

কাইতলা জমিদার বাড়ির ইতিহাস: এস এম শাহনূর

রহস্যময়ী কাইতলা জমিদার বাড়ি আজ বিধ্বস্ত বিপর্যস্ত।বিলাসিনী তার আলো ঝলমলে রূপের সাথে হারিয়েছে গৌরবও।বিশ্বাস করতে একটু ভাবতে হয় এক সময় সেই দু’শ বছর পূর্বে ত্রিপুরা রাজার আমলে (অবিভক্ত ভারত শাসনামলে)এটি ছিল ত্রিপুরা রাজ্যের একটি পূর্ণাঙ্গ জমিদার বাড়ি ।ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার বিশাল আয়তনের উপর প্রতিষ্ঠিত কাইতলার প্রাণ কেন্দ্রে ছিল সেই জমিদারের প্রাসাদ ।

ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতবর্ষের অধীন বৃহওর কুমিল্লার শাসক ছিলেন ত্রিপুরার রাজা বিরেন্দ্র কিশোর মানিক্য। ১৩১৯ সাল থেকে ১৬৬৬ পর্যন্ত ২৪ জন রাজা বৃহত্তর কুমিল্লার ব্রাহ্মণবাড়ীয়া শাসন করেন। সেসব রাজাদের অধীনেই ছিলেন জমিদাররা। আর তাদের অধীনে ছিলেন তালুকদাররা। জমিদারের এ বাড়ি বর্তমানে এলাকাবাসীর কাছে ঐতিহাসিক “বড় বাড়ি “নামে পরিচিত ।

শুধু হেথায় হোথায় বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে থাকা কিছু ভগ্ন,অর্ধ ভগ্ন ইমারত টেরা কোটা পাথর আর গোটা কয়েক পুকুর ও দীঘি সাক্ষী রেখে অস্তিত্ব রক্ষা করে চলেছে কাইতলা জমিদার বাড়ি । আভিজাত্যের শির উচু করে যে বাড়ি এক সময়ে সমস্ত এলাকা জুড়ে বিশাল ভূমিকা নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছিল এখন সেই জমিদার বাড়ির দৈন্যদশা দেখে বিস্মিত হতে হয়। কোথায় সেই বিচারালয়ের ঘন্টাধ্বণী,জলসাঘরের গমগম লহরী,পায়েলের জমজম সুর ঝংকার, নূপুরের নিক্কন,মায়াবী অট্টহাসির ধ্বনি-প্রতিধ্বনি?ধূলি ধূসরিত মেঠো পথের পাগলা হাতি সওয়ার,পাইক বড়কন্দাজ পেশকার,তহশিলদার,মোসাহেবের দল কোথায়? সন্ধ্যার ঝলমলে আলোক সজ্জায় উলুধ্বনিতে যে বাড়ী এক সময় মুখরিত হতো,সেই বাড়ীতে ভুল করেও কেউ উলুধ্বনি দেয়না।কেউ আলো জ্বালায় না।বাজেনা সন্ধ্যা পূঁজার ঘন্টাধ্বনি।নেই সাধারন কৃষক প্রজার খবর নেবার তাড়না। ছুটে অাসে না নজীর। ফরমান জারি করেন না এখন ।এখন শুধু দাড়িয়ে থাকা কিছু ভগ্ন ইমারত,নহবত খানা আর মন্দিরের সৌধমালা চোঁখে পড়ে।শুধু নিথর গুমোট আবহাওয়ার মাঝে কংকালসার দেহ থেকে দীর্ঘ নিঃশ্বাস বের হয়।সে দীর্ঘ নিঃশ্বাসে কাঁপে পুকুর দিঘীর জলরাশি। উন্মাদের মত হাহাহা করে হাসে প্রকৃতি। জমিদার বাড়ী হারিয়ে ফেলেছে তার বিত্ত-বৈভব , দরবারি রূপ,ঐতিহ্যময় জৌলুস। একসময় জমিদার বাড়ীর পরতে পরতে শোভা পেত নানা বাহারী ফুল,রবি শস্যে ভরে যেত আঙিনা আর পরত জ্ঞানী গুনী লোকদের পদচিহ্ন। কিন্তু কাইতলা জমিদার বাড়ী তার সেই অতীত ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারেনি।যে কারণে অনুসন্ধিৎসু মনের কাছে আমরা মুক ও বধির।আজ উপযুক্ত তত্ত্বাবধানের অভাব,দখলদারিত্ব ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের চরম উদাসিনতায় ইতস্তত বিক্ষিপ্ত টেরাকোটা পাথর,ভগ্ন ইমারত ও সৌধ মালা কাঁদে নিরবে নির্জনে।এককালের অপূর্ব কারুকার্য খচিত ইমারত থেকে ঝুপ করে খসে পড়ে যায় জাফরি ইট।প্রাচীন লিপির পাথর ক্ষয়ে যায়।দীঘির প্রাচীন ঘাটে পাতলা ইট টলটলে পানিতে হারিয়ে যায়।কেউ কখনো তার খবরও রাখেনা।
ত্রিপুরা রাজার রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যে সমস্ত উল্লেখ্য যোগ্য জমিদারগণ দায়িত্ব প্রাপ্ত থাকতেন তাদের মধ্যে কাইতলা জমিদার বাড়ীর জমিদারদের ভূমিকা কোন অংশেই কম ছিলনা। সত্যিকার অর্থে ইংরেজ সরকার রাষ্ট্রের ভিত্তি সুদৃঢ় করণের জন্য জমিদার গোষ্ঠি সৃষ্টি করে।তারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য রাজা বাহাদুর, মহারাজা, স্যার, নাইট,খানবাহাদুর, রায় বাহাদুর প্রভৃতি উপাধি দিয়ে তাদেরকে সন্তষ্ট করত। ইংরেজদের এই দৌঁড় প্রতিযোগিতায়ও কাইতলার জমিদাররা পিছিয়ে ছিলেননা।

নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়,সেই কাইতলায় তৎকালীন সময়ে বিশ্বনাথ রায় চৌধুরী ছিলেন মূল জমিদার।এবং পর্যায়ক্রমে তার তিন পুত্র যথাক্রমে

(১)তিলক চন্দ্র রায় চৌধুরী

(২)অভয় চন্দ্র রায় চৌধুরী এবং

(৩)ঈশান চন্দ্র রায় চৌধুরী
জমিদারির তদারকি করেন।শুনা যায় তারা পশ্চিম বঙ্গের শিম গাঁও নামক স্থান থেকে কোন এক সময় এখানে এসে বসতি স্থাপন করেন।
জমিদার তিলক চন্দ্র রায় চৌধুরী ছিলেন নিঃসন্তান।তিলক চন্দ্র রায় চৌধুরীর পর জমিদারির দায়িত্ব পান অভয় চন্দ্র রায় চৌধুরী। দুর্ভাগ্যক্রমে তিনিও ছিলেন নিঃসন্তান।তবে তিনি অনেক জনহিতকর কাজ করেন বলে জানা যায়।অভয় চন্দ্র রায় চৌধুরীর নামানুসারে আজও কসবা কসবা উপজেলার মেহারী ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামের পশ্চিমাংশকে অভয় নগর নামে অভিহিত করা হয়।অভয় চন্দ্র রায় চৌধুরীর অধস্তন তিন পুরুষ পর জমিদার বংশের একমাত্র উওরসূরী অতিন্দ্র মোহন রায় চৌধুরী। যিনি এলাকার মানুষের কাছে হারু বাবু বলে সমধিক পরিচিত ছিলেন।কাইতলা যঁজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের কল্যানে তিনি

আমরন কাজ করে গেছেন। আমি লেখক তাঁকে দীর্ঘ সময় ধরে দেখেছি।মিশেছি। কথা বলেছি।অনেক তথ্য পেয়েছি।আমি কাইতলা যঁজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি আমাকে পড়াশোনার ব্যাপারে যথেষ্ট উৎসাহ দিতেন। স্বাভাবিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত অথচ তিনি ছিলেন চির কুমার।জমিদার বংশের নিবু নিবু এই প্রদীপ ২০০৩ সালে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে পরপারে চলে যান।

কালক্রমে অভয় চন্দ্র রায় চৌধুরীর পর সুপ্রসন্ন ঈশান চন্দ্র রায় চৌধুরী জমিদারীর সমস্ত দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন।বিভিন্ন জনহিতকর কাজের জন্য তিনি এখনো এলাকার মানুষের কাছে প্রাত স্মরণীয় হয়ে আছেন। জমিদার ঈশান রায়ের স্মৃতি রক্ষার্থে কসবা থানার মেহারী ইউনিয়নের একটি গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে ঈশান নগর।হয়তো ঐ গ্রামের অনেক লোকেরাই জানেনা এ ধরনের নামকরণের তাৎপর্য। আপাদমস্তক জমিদার প্রকৃতির ঈশান রায়ের একমাত্র পুত্র সন্তান ছিলেন যঁজ্ঞেশ্বর রায় চৌধুুরী।পিতার মৃত্যুর পর তিনি জমিদারীর দায়িত্বও পান।তবে তাঁর আমলে জমিদারী ও ঐশ্বর্যের ভান্ডারে ভাটার স্রোত প্রবাহিত হচ্ছিল।একি ভাগ্যের নির্মম পরিহাস!দুর্ভাগ্যক্রমে তিনিও ছিলেন নিঃসন্তান।তাঁর সুযোগ্য পোষ্যপুত্র প্রফুল্ল বর্ধন ওরফে প্রফুল্ল চন্দ্র রায় চৌধুরী ব্যতীত জমিদার বংশের প্রায় সকলেই বিলাস ব্যসনের গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে জীবন অতিবাহিত করেছেন। সচেতন ও বিবেক সম্পন্ন পূজনীয় প্রফুল্ল চন্দ্র রায় চৌধুরী গাঁয়ের অক্ষর জ্ঞান শূন্য মানুষের কথা ভেবেই হয়তোবা নিজ বাবার নামে(পালক পুত্র হয়েও)গ্রামের দক্ষিণে তখনকার সময়ে ১৯১৮ সালে একটি (ইংরেজী)মাইনর স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।যা আজ সময়ের প্রয়োজনে মাধ্যমিক স্কুলে পরিনত এবং সে স্কুলটি ১৯৯৭ ইংরেজী সন হতে এস এস সি পরীক্ষা কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে স্কুলটির পুরো নাম কাইতলা যঁজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়।এটি ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার একটি স্বনামধন্য বিদ্যাপিঠ। বিনয়াবনত প্রফুল্ল চন্দ্র রায় চৌধুরী গ্রামের মানুষের সুপেয় পানির সুবিধার্থে (পালক) মাতা সুখ মনি রায় চৌধুরানী ওরফে সুখ দেবীর (যঁজ্ঞেশ্বর রায়ের স্ত্রী )স্মৃতিকে প্রাণবন্ত করে রাখার উদ্দেশ্যে গ্রামের উত্তর পশ্চিমে প্রায় ১৪একর আয়তন বিশিষ্ট একটি দীঘি খনন করে মায়ের নামানুসারে তার নাম রাখেন”সুখ সাগর”।

দোর্দান্ত প্রতাপে, ঘোড়ার খুরের ঠকঠক আওয়াজে,হাতির পিঠে বসে যে জমিদারেরা একসময় পুরো এলাকায় রাজত্ব কায়েম করত,এই কাইতলার বড় বাড়ীতে বসে ;সেই ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ী আজ স্মৃতির অন্তরালে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নতুন চরের মত এখানেও দখলদারের সংখ্যা অধিক।তিন ভাগে বন্টিত বড় বাড়ী ধ্বসে যাচ্ছে,শ্যাওলা ঢেকে দিচ্ছে প্রাসাদ দেয়াল।বর্তমান উত্তরসূরী শুধু এক ভাগ রেখে বাকী দুভাগ হাত ছাড়া করেছেন অনেক আগেই।আর হাত ছাড়া হওয়া দুভাগের পুরো অংশটুকুই আজ নিশ্চিহ্ন প্রায়।অস্তমিত সূর্যের মতই দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাসাদ-মন্দির।প্রাচীন ইট সুরকি পাথরের চাকতি বিক্রি করে উজাড় করে দেয়া হয়েছে! নাচ মন্দির,স্বর্ণমন্দির,শয়ন কক্ষ, অন্দর মহল,কয়েদ খানার কিছু চিহ্ন মাত্র যতটুকু ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে অাছে তা নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার আগে প্রত্নতত্ত্বের গবেষণার জন্য রক্ষা করা যেতে পারে।

জমিদার বাড়ী বর্তমানে “বড় বাড়ী”বলে পরিচিত।কাইতলা গ্রামের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এ জমিদার বাড়ীটি অত্র গ্রামের বাজারের উত্তর দিকের অপ্রশস্ত মেঠো পথ ধরে ৩/৪মিনিটের রাস্তার শেষ ঠিকানা।একসময় দক্ষিণ দিক থেকে জমিদার বাড়ীতে প্রবেশ কালে দেখা যেতো বাঘ,সিংহ,সাপ, ড্রাগন ও বিভিন্ন লতাপাতায় কারুকার্য খঁচিত সিংহ দ্বারটি।এবং তারই উপরে নহবত খানাটি।স্থানীয় লোকেরা এটাকে বড় বাড়ীর গেইট নামে অভিহিত করে থাকেন।কোন এক সময় এখানে সারাক্ষণ লাঠি হাতে পাহারাদার মোতায়েন থাকতো।লতা পাতা জড়ানো শ্যাওলা৷ আবৃত্ত অর্ধভগ্ন পড়মান নহবতখানা পেরুলেই দেখা যেতো দু’ধারে প্রাচীর করা পাথর নুড়ি আর পাতিল ভাঙা দিয়ে আবৃত্ত এবড়ো থেবড়ো একটা প্রধান মেঠোপথ।যা কোন Visitor বা Tourist কে নিয়ে যেতো এবং এখনো নিয়ে যাবে বড় বাড়ীর মধ্যে নাচ মন্দিরের সামনের- সবুজ ঘাসে ঢাকা খোলা মাঠে।মাঠের উত্তর দিকে নাচ মন্দিরের প্রাসাদের সামনে তৎকালীন নির্মিত বসার জন্য সিঁড়ি রয়েছে যা আজও বিদ্যমান।মাঠে বিভিন্ন সময়ে মেলা,গান,পুতুল নাচ,আশুরার দিন তাজিয়া মিছিলের মাতম ও খেলার আয়োজনে আজও বহু মানুষ সিঁড়িতে বসে তা উপভোগ করে।মাঠের দক্ষিণেই ছিল সুসজ্জিত চৈঠক খানা এবং তারই সাথে জমিদারদের প্রশাসনিক কার্যালয়ের সুন্দর ইমারত খানা।যা কিছু কাল পূর্বেও কাইতলা ৩৪১৭ কোড নং বা সাব পোষ্ট অফিস কার্যালয় হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে।

মাঠের পূর্বদিকে রয়েছে এ এলাকার সবচেয়ে বড় দীঘি।দু’দিকে শানবাঁধানো পাকা ঘাট এবং কোন এক সময় দীঘির দক্ষিণ পাড়ে পারিবারিক পূজা-আর্চনার প্রয়োজনেই হয়তোবা একটি ছোট মঠও ছিল।মাঠের পশ্চিমে ছিল বিরাট প্রাসাদ এবং কয়েদ খানা।যেখানে এখন লাউ ও কুমড়ো গাছের মাচা আর দোয়েল বুলবুলির আনাগোনা। এই কয়েদ খানাই প্রমান করে একসময় এটি একটি পূর্ণাঙ্গ খানদানি জমিদার বাড়ী ছিল। মাঠের উত্তর দিকে চোঁখ ফিরালে দেখা যাবে রংচটা এবড়ো থেবড়ো আগাছা আর পরগাছায় মায়া মমতায় জড়ানো ভগ্ন একটি তিনতলা ভবন। ভবনের মাঝামাঝি একটি নাতিদীর্ঘ রাস্তা। আসুন আমরা সাবধানে সেখানে প্রবেশ করি। আমি নিশ্চিত এত শত বছর পরেও এখানে আপনি নিজেকে আবিস্কার করবেন নতুন ভাবে।এক অজানা সৌন্দর্য আপনাকে স্বাগত জানাবে। আপনি মনের অজান্তেই ছুটাছুটি করতে থাকবেন।চোঁখ আর মন এক হয়ে বলবে ” আমি হারিয়ে গেছি অন্য কোথাও, অন্য কোনখানে।”এখানে উত্তর দিক থেকে শুরু হয়েছে অন্দর মহল ও অন্যান্য কক্ষ এবং সুখমণী চৌধুরানী দেবীর বিশ্রামাগার ও প্রমোদ ভবন। এর উত্তর পূর্বে দাস দাসীদের কক্ষ। এছাড়া ভিতরে রয়েছে আরো বেশ কিছু কক্ষ। যেখানে ছিল পূজোরঘর,একান্ত পারিবারিক বৈঠক খানা।আরো কত্ত কি?মূল বাড়ীর একটু পশ্চিমে রয়েছে পাশাপাশি দুটো পুকুর।তার মধ্যে একটি পুকুর শত শত বছরেও খনন করা সম্ভব হয়নি।সারা বছরই ঘাসে আবৃত্ত এই পুকুরের নাম আন্ধা পুকুর। গবেষণায় জানা যায়, জমিদার বাড়ীর প্রতিটি দালান অত্যন্ত সুচারুভাবে নক্সা খঁচিত ছিল। বিভিন্ন ফুল পাখী লতা-পাতা,দেব দেবী বাঘ সিংহ সাপ ড্রাগন ইত্যাদির ছবিতে শোভা পেত প্রাসাদগুলো, যা সাধারন মানুষের মনে বিস্ময়ের সৃষ্টি করতো।সেই যুগে কিভাবে নির্মান করা হয়েছিল এত বড় বড় প্রাসাদ।দুতলা,তিনতলা; তাও আবার অজোপাড়া গাঁয়ে —–ভাবতেও অবাক লাগে।আর এ নিয়ে হাজারো মনে হাজারো প্রশ্ন আজো দোলা দিয়ে যায়।

জানা যায় তৎকালীন এই এলাকার সাধারনত মানুষের কাছে জমিদার মানেই ছিল ভয়,শংকা।শত জ্বালা যন্ত্রণা সহ্য করেও অসহায় কৃষকদের বিনা মাহিনায় জমিদারদের জমি চাষ করতে হতো।বিনয়ের সাথে হাত করজোড় করেও জমিদারের লাঠিয়াল বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেতনা প্রজাসাধারন। প্রজারা জমিদার ও কর্মচারী দিগকে সর্বদা সন্তুষ্ট রাখতে চেষ্টা করত।জমিদার বাড়িতে গরুর খাটি দুধ, টাটকা মাখন, ঘি, তরি তরকারী ঝাকা ভরে পৌঁছে দিতে হত। হিন্দু কিংবা মুসলিম সকল প্রজাদিগকেই জমিদার বাড়ির উৎসবের জন্য বিভিন্ন ধরণের উপঢৌকন পাঠিয়ে জমিদারের মন সন্তুষ্ট করতে হত।জমিদারদের ন্যায় তার অধীন ম্যানেজার, ইন্সপেক্টর, নায়েব,তহশীলদার, কেরানী, মুহুরী, পাইক ও বড়কন্দাজ প্রজাদের অত্যাচার করত।খাজনা পরিশোধ না করলে প্রজাদের দুকাধে ভারী ইট দিয়ে রোদে দাড় করে রাখা হত। অনেক সময় তহশীলদারেরা প্রজাকে চৌকির নীচে আটকে রাখত। বিদ্রোহী প্রজাকে শীতকালে পানির মধ্যে বেধে রাখা হত, খাজনা পরিশোধ করলে ছেড়ে দেওয়া হত। জমিদারেরা খাজনা ব্যতিত আব-ওয়াব, তহুরী, মহুরী প্রভৃতি খাতে অন্যায়ভাবে টাকা আদায় করত। প্রজা খাজনা দিতে ব্যর্থ হলে তহশীলদারেরা ভিটাই ঘুঘু চরিয়ে দেবে বলে ভীতি প্রদর্শণ করত। রায়তদের হাত পা শক্ত করে বেধে নাকে শুকনো মরিচের গুড়ো ঢুকিয়ে দেয়া হত।তাদেরকে নির্মম ভাবে বেত্রাঘাত করা হত। শাস্তি দেয়া হত নাভীর উপর গমর পিয়ালা রেখে।নব বধূকে পালকিতে চড়িয়ে,ছাতা কিংবা টুপি মাথায় দিয়ে,জুতা পায়ে দিয়ে কেউ জমিদার বাড়ী ঘেষে হাটতে পারতোনা।প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বেয়ারাদের গলা সমান ঠান্ডা পানিতে নামিয়ে শাস্তি দেওয়া হতো।হাতির পিঠে চড়ে খাজনা অানতে যেতো অসহায় প্রজাদের বাড়ী।না পেলে অাগুন জ্বালিয়ে ছারখার করে দিতো সাধারন প্রজাদের বাড়ীঘর।প্রকৃতপক্ষে সেই জমিদারদের শাসন ছিল নিরিহ মানুষের উপর শোষন। অনেক মানুষের ধারনা তাদের ঐ সমস্ত অত্যাচারের পরিনতি হিসাবেই দেশ অাজ জমিদারদের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হতে পেরেছে। অধিকাংশ জমিদার প্রজাপীড়ন করলেও যশোরের রাণী ভবানীর সুনাম ছিল। তিনি অনেক গরীব প্রজাদের খাজনা মওকুফ ও দান খয়রাত করে এ সুনাম অর্জন করেন। খুলনা অঞ্চলের একমাত্র হাজী মুহম্মদ মহসীন ব্যতিত প্রায় সমস্ত জমিদারই হিন্দু ছিল।১৯৫০ সালে এই ভারতবর্ষে জমিদারী প্রথার বিলুপ্তি ঘটলেও তার বহু পূর্বেই কাইতলার জমিদারদের হাত থেকে সাধারন মানুষ পরিত্রান পেয়েছিল। সে যাই হোক কাইতলা জমিদার বাড়ী অামাদের ঐতিহ্য।অামাদের অহংকার।আমাদের অমলীন ইতিহাস।আমাদের কাছে স্মৃতির স্মারক।

এ জমিদার বাড়ীর অনেক কিংবদন্তি ও গল্পগাঁথা আজো মানুষের মুখ থেকে মুখে মুখরিত। শুনা যায় তাদের সব মূল্যবান স্বর্ণালকার ও হীরা জহরত নাকী কলসিতে ভরে পাশের পুকুরে ডুবিয়ে রাখত।ঐ কলসি গুলো নাকি আবার মাঝে মধ্যে পুকুরে ভেসে উঠত।পুকুরে নাকি সিন্দুক ভেসে উঠত।রাত্রিকালে এ পুকুর থেকে ঐ পুকুরে যাওয়া আসা করতো স্বর্ণ,রূপা হীরা জহরত ভর্তি তামার পাতিল।আরো অনেক মুখরোচক কল্লকাহিনীতে আবর্তিত কাইতলা জমিদার বাড়ীর অভ্যন্তরীণ রহস্য।তবে এখনো ভয়ে কেহ নামতে চায়না সেই অান্ধা পুকুরে।ঘুটঘুটে কালো পানির পুকুরটি আজও বিদ্যমান।সত্যি কথা বলতে কি এখনও সেখানে গেলে গায়ের লোম কাটা দিয়ে উঠে।

জমিদারহীন “বড় বাড়ী”সেই থেকেই হয়ে উঠেছিল এলাকার বিশেষতঃকাইতলা গ্রামের মানুষের আড্ডাস্থল।বিকেলে ছেলে মেয়েদের বৌ চি, গোল্লা ছুট, দাড়িয়াবান্ধা, কানামাছি, হা-ডু-ডু,ফুটবল নানান খেলায় মুখরিত হয়ে উঠত জমিদার বাড়ীর উন্মুক্ত অঙ্গন।বিভিন্ন সময় যুবকদের দ্বারা আয়োজিত যাত্রা,জারি গান হতো,পুতুল নাচ, বসতো বৈশাখী মেলা।দূরদূরান্ত থেকে পিকনিক পার্টি আসতো।আশে পাশের কারো বাড়ীতে নতুন মেহমান আসলে এ জমিদার বাড়ী না দেখে যেতোনা।এখনো জমিদার বাড়ীর আকর্ষণ মোটেও কমেনি মানুষের কাছে। পূজা – পার্বণে,বিয়ে,আশুরায় এখনো ঢোল সানাইয়ের বাজনায় মুখরিত হয় জমিদার বাড়ীর আকাশ বাতাস। জমিদার বাড়ীর অস্থিমজ্জার সাথে মিশে অাছে জমিদারদের ঐতিহ্য।নৈসর্গিক শোভা মন্ডিত এ স্থানটির আবেদন প্রকৃতি প্রেমিকদের কাছে যুগান্তর প্রসারী। যে কেহ এখানে এসে এর শোভা স্নাত হবার নান্দনিক হাতছানি অনুভব করবেই।এখানকার অভ্যন্তরীণ কিংবা বহিঃপ্রকৃতির মুখশ্রী ও সৌন্দর্য সম্ভার অকবিকে কবি,অপ্রেমিককে প্রেমিক এবং ভাবনাহীনকে নিঃসন্দেহে ভাবুক করিয়া তোলার ক্ষমতা রাখে।এখনও যখন নহবত খানার সামনে দাড়াই,মাঠের সবুজ ঘাসে কিংবা সিঁড়িতে বসি, সুখ মণী রানী দেবীর অন্দর মহলে যাই কিংবা বড় দীঘির সিঁড়িতে অবসরে কিছু সময়ের জন্য বসি এক অদৃশ্য আমেজ অনুভূতিতে মন আপ্লুত হয়।বড় বাড়ীর কয়েকশো বছরের শ্যাওলা ঢাকা পুরনো প্রাচীন ইমারত গুলোর কক্ষে খুঁজি জমিদারদের ঐতিহ্য, ইতিহাস।কোথায় সেই বিলাস মন্দির?কোথায় সেই সুখ মণী দেবীর ঝমকালো মহল?এক সময় নহবত খানার ঢোল সানাই আর পায়েলের সুর মূর্চ্ছনায় যাদের ঘুম ভাঙত;খুঁজে ফিরি তাদের বড় বাড়ীর অন্তরে বাহিরে।

“ঈশান রায়ের বাড়ী,
অভয় রায়ের দাড়ি,
অবনী বাবুর ঘুম;
প্রফুল্ল বাবুর লোম।”

যেই জমিদার বাড়ীর জমিদারদের নিয়ে এলাকার মানুষ এরূপ ছড়া কাটতো,সে জমিদারেরা আজ নেই।জমিদার বাড়ী বিলীন হয়ে অন্তর্নিহিত হয়ে যাচ্ছে।১৯৯৮ সালে একটি প্রিন্টিং ম্যাগাজিনে আমি “স্মৃতির পাতায় কাইতলা জমিদার বাড়ী” শিরোনামে একটি গবেষণা ধর্মী প্রবন্ধ লিখেছিলাম।যা বিভিন্ন সাময়িকী তে একাধিকবার প্রকাশিত হয়েছে।এর পর জমিদার বাড়ীর প্রতি আমার মোহ আরো বেড়ে যায়।এবং আরো তথ্য সংগ্রহে নামি।কর্মজীবনে ব্যস্ততার কারণে প্রায় একযুগের ব্যবধানে গত ১৫/১২/২০১৬ তারিখে বাল্য বন্ধু মোজাম্মেল হক লিলুকে নিয়ে কাইতলা জমিদার বাড়ী দেখতে যাই।আমার কাছে মনে হয়েছে বড় বাড়ীকে আমরা আর বেশী দিন “বড় বাড়ী”হিসাবে দেখতে পাবোনা।এ আশংকা থেকেই আবার পুরনো প্রবন্ধটা নতুন করে লেখা। তবু যেটুকু ভগ্ন, অর্ধভগ্ন ইমারত কালের সাক্ষী হিসাবে দাড়িয়ে আছে তা সংরক্ষণ করা গেলেও নিজ চোঁখে৷ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জমিদার বাড়ীর ঐতিহ্য দেখতে পাবে।খুঁজে নেবে ম্রিয়মাণ ইতিহাস।

🏠কিভাবে যাবেন কাইতলা জমিদার বাড়ি?

ব্রাহ্মনবাড়ীয়া জেলার কাউতলী বাসস্টপেজ থেকে নিয়মিত সিএনজি আসা যাওয়া করে।
➤জনপ্রতি ভাড়া মাত্র ১০০টাকা।
➤সময় লাগবে বড়জোড় ১ থেকে সোয়া ঘন্টা।

➤কুমিল্লা থেকে বাসযোগে তিনলাখপীর বাসস্ট্যান্ডে নেমে সিএনজি যোগে কাইতলা যেতে পারবেন।
➤কাইতলা বাজারে পৌঁছে এক কাপ ধূমায়িত খাটি ও টাটকা দুধের চা এবং প্রয়োজনীয় নাস্তার পর্বটি সেরে নিতে পারবেন।
➤বাজার থেকে যে কেউ আপনাকে বিনা পয়সায় গাইড হিসাবে জমিদার বাড়ী দেখাতে নিয়ে যাবে।ভাল ব্যবহারেরও কমতি পাবেন না আশা করি।

★★রাস্তা পরিচিতিঃ
————————-
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কাউতলী/কুমিল্লা থেকে —>তিন লাখপীর–>চারগাছ বাজার–>বল্লভপুর—>কাইতলা বাজার–>আপনার কাঙ্ক্ষিত কাইতলা জমিদার বাড়ী।

★ তথ্য দাতাঃ
(১)স্বর্গীয় ডা.নিকুঞ্জ বিহারী সাহা।
(২)স্বর্গীয় গোপাল চন্দ্র রায় বর্ধন।
(৩)মরহুম এম শামসুজ্জামান।
(৪)সৈয়দ আলাউদ্দীন, বিসিএস(শিক্ষা )
(৫)স্বর্গীয় অতিন্দ্র মোহন রায় চৌধুরী(হারু বাবু)।

💻Copyright @ এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান, কবি ও গবেষক)

★প্রথম প্রকাশঃ
উন্মুক্ত সাহিত্য সংগঠন কর্তৃক প্রকাশিত
নব সাহিত্যের পাতা নামক সাময়িকী।
প্রকাশকাল: ১৯৯৮ইংরজী।

★পরবর্তীকালে প্রিন্ট মিডিয়া,অনলাইন প্রিন্ট মিডিয়া সহ সকল টিভি চ্যানেল এখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তাদের সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
★কাইতলা জমিদার বাড়ি উইকিপিডিয়াতেও উপরোক্ত তথ্যাবলী হুবহু সংরক্ষিত হয়।

কোথা থেকে এলো ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি?: এস এম শাহনূর

| ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ৩:৪১ অপরাহ্ণ

কোথা থেকে এলো ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি?: এস এম শাহনূর

🇧🇩 পূর্ববঙ্গ,পূর্ববাংলা হতে কি বাংলাদেশ?
একসময় এই উপমহাদেশ ভারতবর্ষ নামেই পরিচিত ছিল।এই ভারতবর্ষে নেপাল,ভুটান, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ও পাকিস্তান আছে।আছে বাংলাদেশ নামক এক সোনার দেশ।

১৯৩২ সালে ভারতবর্ষের পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমের পাঁচটি মুসলমানপ্রধান প্রদেশ ও রাজ্য পাঞ্জাব, উত্তরপশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ বা আফগান প্রদেশ, কাশ্মীর, সিন্ধু ও বেলুচিস্তানের নামের অংশ একত্র করে ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র চৌধুরী রহমত আলী (১৮৯৫-১৯৫১)।
‘পাকিস্তান’ নামটি তৈরি করেছিলেন।

নেপাল শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘নিপালয়া’ থেকে, যার অর্থ ‘পাহাড়ের পাদদেশে’।
আবার তিব্বতি ভাষাতে এই শব্দ এর অর্থ হল পবিত্র ভূমি। গঙ্গা অববাহিকা থেকে আসা ‘নেপ’ বা গো-পালকেরা যে উপত্যকাতে এসে বসবাস শুরু করেন, তাই বর্তমান নেপাল। আবার নেপালের উত্তরাঞ্চলের অধিবাসীরা, যারা তিব্বত থেকে এসেছেন, তারা বলেন ভিন্ন কথা। তিব্বতি ভাষাতেই ‘নে’ শব্দের অর্থ হল উল আর ‘পাল’ শব্দের অর্থ বাড়ি। এই অধিবাসীরা ভেড়ার উলের কাপড় বুনতেন। অন্যদিকে কাঠমান্ডুর মানুষদের কাছে আবার নেপাল শব্দের অর্থ হল ‘মধ্যাঞ্চলের দেশ’।

ভুটান শব্দটা এসেছে সংস্কৃত ‘ভোতান্ত’ থেকে, যার মানে করলে দাঁড়ায় ‘তিব্বতের শেষ প্রান্ত’। অথবা যদি এই একই শব্দ উচ্চারিত হয় আলাদা ভাবে, তাহলে এটা হবে ‘ভো-তান’ যেটার অর্থ ‘উচ্চভূমি’। আবার ভুটানিরা কিন্তু নিজেদের ডাকে দ্রুক উল নামে, যার মানে দাঁড়ায় ‘ড্রাগনের দেশ’।

শ্রীলংকা সরাসরি রামায়ণ থেকে টুপ করে পড়ে গিয়েছে। সেই আদি সময় থেকেই এটার নাম ছিল শ্রীলঙ্কা, রাবণের দেশ।

ইন্ডিয়ার উৎপত্তি হল ‘সিন্ধু’ থেকে, যাকে ইংরেজিতে ‘Indus’ বলা হয়। ‘ভারত’ এর উৎপত্তি ঋগ্বেদ থেকে। এটা ছিল একজন রাজার নাম।

মালদ্বীপ এর নামও সংস্কৃত থেকেই উৎপত্তি। সংস্কৃতে ‘মালা’ এবং ‘দ্বীপ’ থেকেই এই দেশ। আক্ষরিক অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘দ্বীপের মালা’।

তাহলে বাংলাদেশ নামটা আসলো কিভাবে?
বাংলা শব্দটি এসেছে
#দ্রাবিড়দের বং/বঙ্গা উপজাতি হতে ।
#অস্ট্রিকদের ভঙ্গা/বঙ্গা শব্দ থেকে । যার অর্থ “Sun-God” ।
#বৌদ্ধ_ধর্মগ্রন্থগুলিতে ১৬ টি জনপদের নাম পাওয়া যায় ।যার মধ্য একটির নাম ছিল বঙ্গ ।
#আরণ্যক_ব্রাহ্মনে বঙ্গ নামের জনপদের উল্লেখ পাওয়া যায় ।
#মহাভারত থেকে জানা যায় যে,বালি রাজের স্ত্রী সুদেষ্ণা দীর্ঘতমা ঋষি হতে অঙ্গ,বঙ্গ, কলিঙ্গ, সুক্ষ ও পুণ্ড্র নামে পাঁচ পুত্রের জন্ম দেন । এরা সকলেই নিজের নামানুসারে নামীয় প্রদেশের রাজা হন । বঙ্গের নামানুসারে এর শাসিত রাজ্য বঙ্গ নামে অভিহিত হয় ।
#মুসলমানদের বিশ্বাস অনুসারে, নবী নূহ আ:-এর ছয় পুত্র ছিলো । তারা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে উপনিবেশ গড়ে তোলেন। এর মধ্যে একজন ছিলেন হিন্দ্। এই হিন্দের নামানুসারে হিন্দুস্তানের নাম। হিন্দ্-এর চার পুত্র ছিলো । তাদের একজনের নাম ছিলো “বাং” । বাং-এর সাথে আল (বাঁধ)শব্দ যুক্ত হয় । যা জল প্লাবনের হাত থেকে জনপদ ও শস্যক্ষেত রক্ষা করতো ।এই বাং+আল থেকেই পরবর্তীতে বাংলা শব্দটির উৎপত্তি ঘটে । মধ্যযুগে সুলতান সামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ বঙ্গ শব্দের সাথে সংস্কৃত লাহ্ প্রত্যয় যুক্ত করে, বাংলা শব্দটির সুচনা করেন ।তিনি বেশ কিছু অঞ্চল কে একত্রিত করে ‘শাহ-ই-বাঙ্গালা’ উপাধি ধারণ করে । ইংরেজ আমলে বাংলা ভাষাভাষি প্রদেশটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশ ছিলো । যা ইংরেজিতে ‘Bengal’ নামে অভিহিত হত ।তখন থেকেই এই প্রদেশটি বাংলা নামে অভিহিত হয় । ১৯০৫ সালের পর থেকেই এ অঞ্চলটি পুর্ব বাংলা সমাধিক পরিচিতি লাভ করে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশ কিছু সময়ের জন্য পুর্ব পাকিস্থান নামে পরিচিত হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর আনুষ্ঠানিকভাবে এ অঞ্চলটি যে নামটি ধারন করে তা আমাদের আজকের প্রিয় ‘বাংলাদেশ’

#বাংলাদেশ_নামকরণে_বঙ্গবন্ধুর_ভূমিকাঃ

একাত্তরের চরমপত্রের লেখক এফ আর মুকুলের ভাষ্যমতে, “আলোচনার এক পর্যায়ে এসে মুজিবভাই এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা করলেন। বললেন, আমার মনে অনেক প্রশ্ন। ১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ বিভক্ত হউয়ার সময় পাঞ্জাব এবং বেঙ্গল প্রেসিডেন্সী প্রদেশ দুটিও খণ্ডিত হয়ে গেছে। এর পরেও বিরাট “কিন্ত” রয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের পাঞ্জাবীরা কেউ এই নামটা ছাড়ছে না। কেননা এই নামটার সাথে পাঞ্জাবী ভাষাভাষীদের জাতীয়তাবাদের প্রশ্নটি জড়িয়েছে। এ জন্য আজও পর্যন্ত পাঞ্জাব (পি) এবং পাঞ্জাব (আই) শব্দটি চালু রয়েছে।
অথচ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এইরকম ব্যাতিক্রম কেন? বিভক্ত বাংলার ভারতীয় অংশকে ‘পশ্চিমবঙ্গ’ এবং ‘পূর্ববঙ্গ’ হিসাবে আখ্যায়িত করে হাজার বছরের ‘বাংলাদেশ’ এই আদি নামটি দু’দলই ছেড়ে দিয়েছে। এখন আবার ষড়যন্ত্রকারীরা আমাদের বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদকে ভুলিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে প্রস্তাবিত সংবিধানে ‘পূর্ব পাকিস্থান’ নামকরন করতে চাচ্ছে। কিন্তু আমি তা হতে দিবনা। ভারতীয় বাঙ্গালীরা তাদের এলাকার নামবদলের কোনরকম আন্দোলন শুরু করার আগেই আমাদের জন্মভূমির নাম “বাংলাদেশ” করবই। না হলে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে অনেক বিলম্ব হয়ে যাবে।”(চল্লিশ থেকে একাত্তর, এফ আর আকতার মুকুল)।
এইভাবেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান “বাংলাদেশ” নামকরণের স্বপ্ন দেখেছিল এবং করাচীতে ১৯৫৫ সালে পাকিস্থান গণপরিষদের ধারা বিবরণীতে বক্তৃতায় স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছিলেন
“ মাননীয় স্পিকার, আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে, ওরা (পাকিস্থান সরকার) “পূর্ব বাংলা” নাম বদলিয়ে “পূর্ব পাকিস্থান” করতে চাচ্ছে। অথচ, আমরা বার বার এই দাবীই করেছি যে , এখন এর নাম শুধু “বাংলাদেশ” করা হোক। বাংলাদেশ শব্দের একটি ইতিহাস রয়েছে এবং এর নিজস্ব ঐতিহ্য বিদ্যমান। আপনারা নাম বদলাতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে গণভোট নিতে হবে। যদি আপনারা এই নাম বদলাতে চান, তাহলে আমাদের বাংলায় ফিরে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে তারা এই ধরনের পরিবর্তন মেনে নিবে কিনা।
‘ জুলম মাত করো ভাই’
‘ এইজন্যই আমি সরকারপক্ষের বন্ধুদের কাছে আবেদন করতে চাই, “জুলম মাত করো ভাই”। যদি এইসব কিছু আপনারা আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে চান তাহলে আমরা বাধ্য হয়ে সংবিধান বিরোধী পদ্ধতি গ্রহন করতে হবে। সংবিধানের বিধি মোতাবেক আপনাদের কে এগোতে হবে। আপনারা যদি জনসাধারণ কে শাসন তান্ত্রিক পদ্বতি গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেন, তাহলে তারা অগণতান্ত্রিক পদ্বতি গ্রহণে বাধ্য হবে। এইটাই বিশ্বের সর্বত্র ঘটে থাকে এবং তা বিশ্বের ইতিহাস থেকে অনুধাবন করা সম্ভব।”

ভাষার নামে দেশের নাম। এতদীর্ঘ বিবর্তন দিয়ে বাংলাদেশের নামকরণ হয়নি।

অতি সংক্ষেপে, একটা দেশের নাম ঠিক হয়ে যায়। হাজার বছরের ইতিহাস মাত্র কয়েক বাক্যে শেষ হয়। একটা দেশের নাম ঠিক হয়ে যায় কয়েক মুহূর্তে, হাজার বছরের প্রক্রিয়া, পরীক্ষা -নিরীক্ষা শেষ হয় এক মুহূর্তে।

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান,কবি ও গবেষক)

কসবা উপজেলার ইতিবৃত্ত: এস এম শাহনূর

| ১৪ জুলাই ২০১৯ | ৬:২৭ অপরাহ্ণ

কসবা উপজেলার ইতিবৃত্ত: এস এম শাহনূর

কসবা একটি ফরাসি শব্দ। কসবা শব্দটির আভিধানিক অর্থ জনপদ অথবা উপশহর।ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনামলে এ নামকরণ করা হয়।অনেক ঐতিহাসিকের মতে কসবার আদি নাম ছিল কৈলাগড়।কিল্লা শব্দের অর্থ সেনানিবাস যা সামান্য পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে কৈলা।গড় অর্থ দুর্গ।মুসলমানদের শাসনামলে এ কসবা ছিল একটি কিল্লা বা সেনানিবাস।আর এভাবেই কৈলাগড় থেকে কসবার উৎপত্তি।ভারতবর্ষে মুসলমান শাসনামলে ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ রেল স্টেশনের পশ্চিম পাশে কৈলাগড় নামে একটি দূর্গ নির্মাণ করেছিলেন। ঐ দূর্গের আশে পাশে প্রথম দিকে জনবসতি এবং পরবর্তীতে আস্তে আস্তে ছোট শহর কসবা গড়ে ওঠে।”কৈলাগড় নামের পরে এতদ্ অঞ্চলের নাম রাখা হয় নূরনগর।১৬১৮ সালে মোঘল সেনাপতি মির্জা নূরউল্লাহ খাঁ (বেগ)উদয়পুর রাজধানী দখল করে ত্রিপুরিদের বিতাড়িত করেন।১৬২৩ সালে তার নামে নূরনগর পরগণা নামকরণ করেন।’তদানিন্তন মোঘল শাসনকর্তা হিউং,বিউং ও কৈলাগড় নামক প্রদেশত্রয়কে সম্মিলিত করে স্বীয় নামানুসারে ‘নূরনগর পরগণা’ গঠন করেন।” (সুত্র: রাজমালা- কৈলাসচন্দ্র সিংহ, পারুল প্রকাশনী-২০০৯,পৃ.৪৪১)।

ত্রিপুরা রাজ্যের ইতিহাস গ্রন্থ “রাজমালা”থেকে জানা গেছে কোন এক সময়ে এই কসবা ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী ছিল।তাই সোনালী ইতিহাসের উজ্জ্বল সাক্ষী কসবা উপজেলার অধিবাসী হিসেবে আমরা সত্যিই গর্বিত।

★এক নজরে কসবা উপজেলা :
১। আয়তনঃ ২০৯.৭৬০ বর্গ কিলোমিটার
২। লোক সংখ্যাঃ ৩,১৯,২২১ জন
ক) পুরম্নষঃ ১,৫১,৮৫২ জন
খ) মহিলাঃ ১,৬৭,৩৬৯ জন
৩। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে লোকসংখ্যাঃ ১৫২১ জন
৪। ইউনিয়নের সংখ্যাঃ১০টি
৫। পৌরসভার সংখ্যাঃ০১টি
৬। গ্রামের সংখ্যাঃ২৩৭টি
৭। মৌজার সংখ্যাঃ১৫২টি
৮। সীমান্ত এলাকার আয়তনঃ ১৯ কিলোমিটার
৯। রেল লাইনের দৈর্ঘ্যঃ ১৮কিঃমিটার
১০। রেল স্টেশনের সংখ্যাঃ ৩ টি(মন্দভাগ,কসবা, ইমামবাড়ী)
১১। মোট ভূমির পরিমাঃ ৫১৮৭০ একর
১২। মোট খাস জমিঃ ২,৩৪৯.২২ একর
১৩। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা সুবিধাভোগীঃ ৮৯০ জন
১৪। পোস্টাল কোডঃ ৩৪৬০
১৫। শিক্ষার হার ৫০.৭% এবং সাক্ষরতার হার ৭৫%
( ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী)

★কসবার সোনালী ইতিহাসঃ
কসবা ছিল সুলতানি আমলের উপবিভাগীয় প্রশাসনিক কেন্দ্র। প্রশাসনিক উপ-বিভাগগুলোর মধ্যে ইকলিম, ইকতা, মুকতা, ইরতা, সোয়ার,ও কসবা নামের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট ৩৭টি কসবার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। কসবাগুলির অধিকাংশই বর্তমান জেলা শহরের মধ্যে বা অদুরে অবস্থিত ছিল। একটি কসবার অবস্থান থেকে অন্যটির দূরত্ব ও একটি বিষয়। এসব নামের সঙ্গে অনেক রাজকীয় আমলার পদবির সংযুক্তি লক্ষ করা যায়, যেমনঃ কাজূর কসবা, কতোয়ালের কসবা, শহর কসবা, নগর কসবা ইত্যাদি।
কসবাগুলোর অবস্থান, একটির সঙ্গে অপরটির দূরত্ব, রাষ্ট্রীয় কিংবা প্রাদেশিক রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা এবং নামের সঙ্গে যুক্ত রাজকীয় পদবি ও অন্যান্য বিষয় বিচেনা করে কসবাকে সুলতানি আমলের একটি উপ-বিভাগীয় প্রশাসন কেন্দ্র বলা যেতে পারে।
সুলতানি আমলের ‘কসবা’ কে জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। কসবার দায়িত্বে ছিলেন একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, একজন কাজি ও একজন কতোয়ালী। মূঘল আমলের অধিকাংশ কসবাই পূর্বের গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে।
কয়েকটি কসবার নাম নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
মুন্সিগঞ্জ জেলার কাজীর কসবা ও নগর কসবা
* টাঙ্গাইল জেলার কসবা আটিয়া
* ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলা,
* লক্ষ্মীপুর জেলার শহর কসবা
* বৃহত্তর রংপুরের কসবা নূরপুর
* দিনাজপুরের কসবা
* সাগরপুর কসবা
* খুলনার পয়গ্রাম কসবা
* বৃহত্তর রাজশাহী জেলার চোয়ারা কসবা
* আমর’ল কসবা
* কিসমত কসবা ও কসবা মান্দা
* গৌরনদী উপজেলার বড় কসবা
* লাখেরাজ কসবা
* যশোর কসবা ইত্যাদি।
ইতিহাস সাক্ষী দেয় যে, মহারাজ প্রতীত আনুমানিক একাদশ শতাব্দীতে কৈলাগড় (কসবা) অস্থায়ী রাজধানী স্থাপন করেন। এ পূর্বাঞ্চলে খলংমা, ধর্ম্মনগর, কৈলাসহর ও কৈলাগড়ে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সময়ে রাজধানী স্থাপিত হয়েছিল। কসবার আদিনাম কৈলাগড়। কিল্লাগড় থেকে বিবর্তিত হয়ে কৈলাগড়। বর্তমান বিজনা নদীর (বিজয়) পূর্ব পাড়ে টিলাময় অঞ্চলে ত্রিপুরী সৈন্যরা কাঠ ও বাঁশ দিয়ে কিল্লা বানাতো। কিল্লাগড় মানে বিল্লাদুর্গ। পশ্চিম পাড়ে আজকের কেল্লাবাড়ি, নাপিতের বাজার, মইনপুর, শাহপুর এ অঞ্চলে কিল্লা তৈরি করেছিল মুঘল সৈন্যরা। ১৮৫৭ সালে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামে (যাকে ইতিহাসে বলে সিপাহি বিদ্রোহ) চট্টগ্রাম থেকে সিপাহিদের একটি দল ত্রিপুরা পাহাড় শ্রেণি দিয়ে সিলেটে পালিয়েছিল। তখন ত্রিপুরার মহারাজ ইংরেজদের পক্ষে দালালি করে সিপাহিদের দমন করে। এর এক বছর পর ত্রিপুরা রাজ্যে ইংরেজদের পরামর্শে ১১টি থানা স্থাপিত হয়। তিন ভাগে বিভক্ত। যেমন হিউং, বিউং ও কৈলাগড়। ১৯০৮ সাল কসবা থানা স্থাপিন হয়। পুরাতন অফিসের মধ্যে একটি তহশিল অফিস ছিল পেয়ারী যাহার বাজারে (কসবা)। গরিব কৃষকদের সুদখোররা শোষণের জন্য ১৮৪৩ সালে তা স্থাপন করে। ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর ১৪ তারিখে কসবা থানাকে উপজেলায় উন্নীতকরা হয়।কসবা পৌরসভা গঠিত হয় ১৯৯৯ সালে।পৌরসভা প্রতিষ্ঠার এক যুগ পর ১২ জুন ২০১১ সালে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

কসবা উপজেলার যত দর্শনীয় স্থান,
সৌন্দর্যে ও গৌরবে সত্যিই অম্লান।
প্রায় দুইশত দশ বর্গ কিলোমিটার বিস্তীর্ণ সমভূমি,নিচু ভূমি,জলাধার,উচু নিচু পাহাড়,লাল মাটির পাহাড়,নদী -নালা,খাল বিল পরিবেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লিলাভূমি কসবা উপজেলা।তিতাস,সালদা, সিনাই,সাংগুর,বিজনা,কালিয়ারা,হাওড়া,রাজার খাল,অদের খাল,বুড়ি প্রভৃতি নদী এই প্রাচীন জনপদের উপর দিয়ে অতিক্রম করেছে।
মহান মুক্তি যুদ্ধের সময় কসবা দুই নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল। ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর লতোয়ামুড়া ও চন্দ্রপুরে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং কোল্লাপাথরে অপর এক লড়াইয়ে ৪৯ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাছাড়া এসময় উপজেলার আকছিনা, আড়াইবাড়ী, হরিয়াবহ, ক্ষীরণাল, চারগাছ ও বায়েক অঞ্চলে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই হয়।এই উপজেলার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে মুক্তি যোদ্ধাদের সমাধিস্থল দুটি এবং গণকবর সাতটি। (লক্ষ্মীপুর, কোল্লাপাথর, শিমরাইল ও জমশেরপুর)।

★কসবার ঐতিহাসিক নিদর্শন ও স্থানসমূহঃ
কমলা সাগর কালিমন্দিরঃ
দিঘির পূর্ব দিকে উঁচু টিলার ওপরে কমলাসাগর কালিমন্দির। ঐ পাড়ে কসবা নাম বদলে ফেললেও কসবেশ্বরী মন্দির কথাটি এখনো লেখা আছে মূল ফটকের ওপরে। ১৫ শতকের শেষ দিকে মহারাজা ধন্যমানিক্য (১৪৯০-১৫১০) এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সামনে বিশাল দিঘি খনন করে কমলাসাগর নাম দেন মহারাণী কমলাবতীর নামে। ভারতীয় অংশে কসবা নামটি চাপা পড়ে যায় কমলাসাগর নামের আড়ালে। তবে স্থানীয়রা এখনো এ এলাকাকে কসবা নামেই সম্বোধন করেন।

★সীমান্ত হাটঃ
কমলা সাগর দিঘির উত্তর-পূর্ব কোণায় উঁচু উঁচু কাঁটাতারে ঘেরা বর্ডার হাট। ২০১৫ সালের ১১ জুন প্রথম সীমান্ত হাট বসতে শুরু করে এখানে। শুরুর দিকে প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে হাট বসলেও এখন বসে রোববার করে। সকাল ১০টা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা অবধি বিকিকিনি চলে হাটে।২০৩৯ নম্বর সীমান্ত পিলার লাগোয়া এ বর্ডার হাট গড়া হয়েছে উভয় দেশের ১৪০ শতক জমির ওপর।

★কোল্লাপাথর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থলঃ
এখানে ৪৯ জন মুক্তিযোদ্ধার সমাধি আছে। অজ্ঞাত তিনটি সমাধি। কোনাবন সাব সেক্টরের কমান্ডার আব্দুল গাফফার হাওলাদার (খুলনা) নির্দেশে, কোল্লাপাথরের বিনুফকিরের আন্তরিক সহযোগিতায় তাঁর পারিবারিক কতক জায়গায় ৭১-এর জুন মাসে এ সমাধি স্থাপন করা হয়। ৭১-এর অক্টোবরে কসবা অঞ্চলে যুদ্ধ বেড়ে যায়। শহীদ যোদ্ধারা আসতে থাকে তখন তাদের এখানে কবর দেয়া হয়।

★লক্ষ্মীপুর মুক্তিযোদ্ধা সমাধিস্থলঃ
১২ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধিস্থল এখানে আছে। স্থাপিত ৭১-এর অক্টোবর-৯, লক্ষ্মীপুর সীমান্ত অঞ্চল। অক্টোবর ৯-২২ অক্টোবর পর্যন্ত কসবা যুদ্ধের ৪টি লাশ ও ২১ নভেম্বর চকচন্দ্রপুর চানমোড়ার যুদ্ধে নিহত ৮টি লাশ নিয়ে এ সমাধিস্থল। ক্যাপ্টেন হুমায়ুন কবির, স্বাধীনতা বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম, সদস্য সচিব এম এইচ শাহআলম, কসবা প্রেসক্লাবের সভাপতি সোলেমান খান, সাধারণ সম্পাদক নেপাল চন্দ্র সাহা, জহিরুল ইসলাম স্বপন এবং হুমায়ুন খাদেম (রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান), সাবেক এমপি শাহ আলম, তৎকালীন ইউএনও, শাহ মোকসেদ আলী ও সাবেক সচিব মিনাজুর রহমান এই সমাধি তৈরিতে আরও অনেকেই আন্তরিক সহযোগিতা করেছেন।

★দেশের প্রথম কুরআন ভাস্কর্যঃ
সৌদি আরবের জেদ্দা বিমানবন্দর নেমে পবিত্র নগরী মক্কার প্রবেশদ্বারে কুরআনের আদলে তৈরি যে বিশাল তোরণ রয়েছে। সে তোরণের ডিজাইনের আলোকেই কসবা উপজেলা সদরের ব্যস্ততম কদমতলা মোড়ে তৈরি করা হয়েছে এ ভাস্কর্যটি।কসবা পৌরসভার মেয়র এমরানুদ্দীন জুয়েলের তত্ত্বাবধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের মেধাবী ছাত্র ভাস্কর কামরুল হাসান শিপন এ ভাস্কর্যটি ডিজাইন করেন।উন্নতমানের গ্লাস ফাইভার দ্বারা তৈরি নান্দনিক ভাস্কর্যটির উচ্চতা ১৬ ফুট এবং প্রস্থ ৮ ফুট।২০১৬-১৭ অর্থবছরের এডিবির অর্থায়নে প্রায় ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১ জুন এই প্রকল্পের কাজ শুরু করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সান কমিউনিকেশন।কাজ শেষ হয় ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭।৩১ ডিসেম্বর ১৭ তারিখে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নির্মিত এই ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।

★শ্রী শ্রী আনন্দময়ী জন্মভিটা ও আশ্রমঃ
হিন্দু বা সনাতনী ধর্মের কেউ কেউ বলে সাধিকা, আবার গুণীজন ও সাধকরা বলেন অংশাবতার। সবার কাছে প্রিয়তমা ‘মা’। জন্ম এপ্রিল ৩০, ১৮৯৬, মৃত্যুঃ আগস্ট-২৭, ১৯৮২। জন্ম স্থান ঃ কেওড়া, কসবা। ১৯২৫ সালে ঢাকা সিদ্ধেশ্বরী শ্রীযুক্ত জ্যোতিষ চন্দ্র রায় (ভাইজী) কর্তৃক ‘শ্রী শ্রী আনন্দময়ী’ উপাধী পায়। ১৯২৭ সালে শাহবাগে ফকিরের কবরে নামাজ পড়েন। ১৯২৯ সালে রমনা আশ্রমের জমিতে পদার্পণ করেন। ১৯৩৭ সালে খেওড়া কসবা কালিমন্দিরে আসেন শ্রীমতি ইন্দিরা ভারতের উপ রাষ্ট্রপতি জি এস পাঠকসহ ভারত বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব তার শিষ্যত্ব বরণ করেন। শ্রী শ্রী আনন্দময়ী আশ্রম, খেওড়া ১৩৩৮ বাংলায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৫ সালে তার পাশেই দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপিত হয়। খেওড়া আনন্দময়ী উচ্চ বিদ্যালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আনন্দময়ী স্কুল (নিতাই পাল) তাঁরই নামে প্রতিষ্ঠিত।আগস্ট-২৭, ১৯৮২ সালে কৃষ্ণপুর আশ্রম, দেরাদুনে ৭-টা ৪৫ মিঃ মৃত্যুবরণ করেন।

★আনন্দ ভুবনঃ
মেহারী ইউনিয়নের অন্তর্গত বল্লভপুর গ্রামের পশ্চিম পাশে রাজার খালের উপর নির্মিত অপূর্ব সৌন্দর্যের হাতছানি ”বড় ভাংগা ব্রীজের দু’পাশ যা বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান সমূহের তালিকায় ‘অানন্দ ভুবন’ নামে খ্যাত।

★সালদা গ্যাস ক্ষেত্রঃ
বাংলাদেশের ১৯তম গ্যাস ক্ষেত্র (সালদা গ্যাস ক্ষেত্র) কসবার বায়েক ইউনিয়ন্থ সালদা নদীর তীরে অবস্থিত। মোট গ্যাসের মজুদ ৩০০ বিলিয়ন ঘনফুট। কূপ সংখ্যা ৩।

★মহেশ ভট্টাচার্য্য ব্রিজঃ
দানবীর মহেশ ভট্টাচার্য্য নামে কসবা বিজয় নদীর ওপর ব্রিজ তিনি স্থাপন করেন। জন্ম ১২৬৫ বাংলা মৃত্যু ১৩৫০ বাংলা। কসবা পুরাতন বাজারে প্রবেশ পথে নদীর উপর সুদৃশ্য ব্রীজ। কসবা সদরের কোন বদরাগী নৌকোমাঝি ভাংতি পয়সা দিতে পারেনি বলে, তাঁর ছাতা রেখে দেয়। তাই খেয়া পারের পর কুমিল্লায় গিয়ে একটি লোহা ব্রিজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। হোমিওপ্যাথিক ঔষধ কোং স্থাপন, বিনা পয়সায় চিকিৎসা করিয়েছেন।

★গোঁসাইস্থল মন্দির গুচ্ছঃ
গোপীনাথপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ নোয়ামোড়া গ্রামে মন্দিরগুলো অবস্থিত। আনুমানিক ৫শত বছর পূর্বে এলাহাবাদের জমিদার সনাতন গোঁসাই সন্ন্যাসী বেশে পূর্ব ভারতের পথ ধরে এ গ্রামে উপস্থিত হন। সাথে ছিল দুইজন ভাবশিষ্য। একজন গোঁপাল গোসাই ও অন্যজন জীবন গোসাই। স্থানীয় রাখাল ও জেলেদের সহযোগিতায় একটি উঁচু মোড়ার ওপর পুণ্যকুটির স্থাপন করেন। মোড়ার উত্তর প্রান্তে সনাতন ও গোপাল গোঁসাইর সমাধি। উত্তর-পশ্চিম কোণে শ্রী শ্রী বৈকুণ্ঠের সমাধি, দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে জীবন গোঁসাইর সমাধি। এ গোঁসাই হিন্দু না মুসলিম তার কোনো প্রমাণ নেই। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের ১ তারিখে মেলা হয় ও ১৪ ভাদ্রতে বসে হিন্দুদের উৎসব।

*পুড়া রাজার জাঙ্গালঃ
তিন লাখ পীর(তিলক পীর)থেকে বল্লভপুর পর্যন্ত।পাঁচ শত বছরের পুরনো।

*নবীজির অনুসারী সুফি সাধক শায়খুল বাঙাল ছৈয়দ অাবু মাছাকিন লাহিন্দী অাল কাদেরী(রঃ) এর অাব্বাজান বহু ভাষাবিদ মরহুম আলহাজ্ব মুকছদ আলী মৌলানা সাহেবের সমাধী(বল্লভপুর)

*আড়াইবাড়ির দরবার শরীফ।কসবা ।

*পুরকুইল দরবার শরীফ।

*১২৬৯ হিজরীতে মরহুম আজমত আলী প্রতিষ্ঠিত

*মইনপুর মসজিদ।মইনমপুর কসবা।

*ভিন্ন ধর্মী ব্যবসার আড়ৎ কুটি বাজার।

★কসবার ঐতিহাসিক সাগর ও দিঘিসমূহঃ

*কল্যাণ সাগরঃ
মহারাজ মশোধর মানিক্য তাঁকে কৈলাগড় সেনাপতি নিযুক্ত করেন। মহারাজ কল্যাণ মানিক্যের (১৬২৬-৬০) খ্রিঃ সময়ে একটি উদয়পুরে অন্যটি কসবায় তাঁর নামে এ দিঘি খনন করেন। দিঘিকে প্রতীকী অর্থে সাগর বলে। রাজার হৃদয় সাগর ও বিশালত্ব নিয়ে এ যেন দিঘিই সাগর। এ সমস্ত দিঘিগুলো মূলতঃ সামরিক প্রয়োজনে খনন করা হয়েছিল। কসবায় এ সাগরের আয়তন ১২ একর।

★কমলা সাগরঃ
রাজা ধন্যমানিক্য (১৪৯০-১৫২০) খ্রিঃ কসবায় এ দিঘি খনন করেন। রানী কমলাবতীর নামে কমলা সাগর। রাজার মৃত্যু হলে তিনিও সহমরণে যান। দক্ষিণ দেশের আমরাবাদ পরগণায় রাজা হরিশচন্দ্র। আমানতপুর গ্রামেও একটি কমলা দিঘি আছে।

★রাম সাগরঃ
মহারাজ রামদের মানিক্যের (১৬৭৬-১৬৮৫) খ্রিঃ মাইজখার গ্রামে রামসাগর নামে দিঘি খনন করেন।আয়তন ৮ একর।

*মহারাজ দ্বিতীয়ত মানিক্যের দীঘি -ধর্মসাগর কসবা।
*মহারাজ গোবিন্দ মানিক্যের স্ত্রী -গুনবতী মহাদেব্যার নামে -গুনসাগর, জাজিয়ারা,কসবা।
**আরো আছে পদ্মদিঘী (বাউরখন্ড),রাজার দিঘী(মূলগ্রাম),শ্রী দীঘি (শ্রীপুর),কৈলাস দীঘি, আন্ধাদীঘি (খেওড়া),পদ্মা পুকুর (বল্লভপুর গ্রামের পূর্ব পাশে), জুগি পুকুর(বল্লভপুর)

”নেই সেই দিন,মুক্ত জীবন আর হরিণ গতি;
এত সখী আর খেলার মাঝে রইল শুধু স্মৃতি ।
জুগি পুকুরের অবাঁধ সাঁতার, জল থৈ থৈ খেলা;
ছুঁয়ে যায় মোরে,এখনো প্রাণে দিয়ে যায় দোলা।”
(স্মৃতির মিছিলে কাব্যগ্রন্থ /এস এম শাহনূর )।

★বরেণ্য ব্যক্তিত্বঃ
*অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক – বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার প্রধান কৌসুলী ও ১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কৌসুলী।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য,মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক,সাবেক সংসদ সদস্য।

*মুহাম্মদ গোলাম রহমান -তত্বাবধায়ক সরকারের যোগাযোগ উপদেষ্টা (সাবেক)।

*মরহুম হযরত গোলাম হাক্কানী (রঃ) – আড়াইবাড়ীর প্রখ্যাত আলেম , ইসলামি চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদ। তিনি ছিলেন ইসলামি জ্ঞানচর্চায় একজন নিবেদিতপ্রাণ ও সমাজসেবক। মরহুম হযরত মাওলানা আসগর আহমদ (রঃ) এর সন্তান।

*তোফাজ্জল হোসেন (টি.অালী) – বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও আইনজীবি।

*মরহুম হাজী আব্দুল জব্বার -ছতুরা দরবার শরীফের পীর প্রফেসর আব্দুল খালেক (রঃ)র মাস্তান খেতাবে ভূষিত শিষ্য। তিনি ছিলেন আপাদমস্তক ঘুমজাগানিয়া একজন ধর্ম প্রচারক।

*মিয়া অাব্দুল্লাহ ওয়াজেদ – বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সাবেক সংসদ সদস্য। নকল নির্মূল কমিটির প্রধান।
রাজনীতিবিদ।

*এডভোকেট আনিসুল হক – রাজনীতিবিদ, আইন মন্ত্রী; এডভোকেট সিরাজুল হক বাচ্চু’ র সুযোগ্য সন্তান।

*সৈয়দ আব্দুল হাদী – বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী।

*শায়খুল বাঙ্গাল আলহাজ্ব হযরত মাওলানা শাহ্ সুফি সৈয়দ আবু মাছাকিন মোহাম্মদ মতিউর রহমান গোলাম কাদির (রাহ্) [প্রকাশ দুদু মিয়া পীর]।বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন জীবন নিবেদিত মোবাল্লিগ- ইসলাম প্রচারক, বুজুর্গ,সুফি সাধক।

*খন্দকার আশোক শাহ – উনি ছিলেন
সুফি সাধক, যিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন ইয়েমেন থেকে ধর্ম প্রচারের জন্য। উনি শায়িত আছেন গোপীনাথ পুর গ্রামের মধ্য পাড়ায়। বীর মুক্তি যোদ্দা, চিকিৎসক, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, সংস্ক্রিতিক ব্যাক্তিত্ব, জ্ঞান সাধক ও সুফি সাধক, ডঃএম.এ. রহমান উনার বংশ ধর।

★বিলঝিলঃ হাতনীর বিল, শিমরাইলের বিল ও কুটির বিল উল্লেখযোগ্য।

★মেলাঃ চৌমূহনী মেলা, মনকাসাইর মেলা ও মেহারি মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রাচীন কাল থেকে সকল ধর্ম বর্ণের মানুষের সহাবস্থানের এক নৈসর্গিক জনপদ কসবা।আসুন সকলে মিলে কসবার উন্নয়নে অবদান রাখি।

👍Copyright @এস এম শাহনূর
smshahnoor82@gmail.com
(উইকিপিডিয়ান,কবি ও গবেষক)।

বাউনবাইরা থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া শব্দের উৎপত্তি : এস এম শাহনূর

| ২৩ জুন ২০১৯ | ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ

বাউনবাইরা থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া শব্দের উৎপত্তি : এস এম শাহনূর

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত
“ব্রাহ্মণবাড়িয়া” শব্দটি নিয়ে বিতর্কের অবসান ও কিছু কথা।ব্রাহ্মণবাড়িয়া’র বিকৃত নাম ‘বি-বাড়িয়া’ বহুল প্রচলিত ।যার ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্য ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

👍উচ্চারণ—> ব্রাম্+হোন্+বাড়িয়া =ব্রাহ্মণবাড়িয়া
হ+ম=হ্ম(সঠিক)
ক+ষ=ক্ষ(ভুল)
ম+ম=ম্ম(ভুল)

কিন্তু উচ্চারণের ক্ষেত্রে “ম্” আগে উচ্চারণ হবে এবং “হো্” পরে উচ্চারিত হয়ে ব্রা+ম্+হো্+ণ+বাড়িয়া/বাড়ীয়া।

👍মোবাইল টাইপ= ব্রা–>হ+ম–>ণ–>বাড়িয়া/বাড়ীয়া

👍”ব্রাহ্মণ”–>শব্দটি সরাসরি সংস্কৃত থেকে এসেছে তাই এর বানানে কিংবা উচ্চারণে কোন পরিবর্তন সঠিক নই।

“” বাড়িয়া–> (ই/ি) বাড়িয়া
বাড়ীয়া–> (ঈ/ী) বাড়ীয়া “”
বাংলা একাডেমীর নতুন বানান রীতি অনুযায়ী ই-কার কিংবা ঈ-কারে কোন পার্থক্য করা হয়না (তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া)।

তৎসম শব্দ বাটী থেকে বাড়ী/বাড়ি শব্দটি এসেছে, তাই বাড়ি/বাড়ী শব্দটি তদ্ভব শব্দ।

তদ্ভব শব্দের ক্ষেত্র ই-কার কিংবা ঈ-কার দুটোই সঠিক। বর্তমান বানান রীতি অনুযায়ী ই-কার’ই বেশি ব্যবহার করা হয়।

★মধ্যযুগে আজকের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছিল সরাইল পরগনার অন্তর্গত। ঐতিহাসিক তথ্য উপাত্তে জানা যায় পাঠান সুলতান শেরশাহ রাজস্ব আদায় ও শাসন কার্য পরিচালনার সুবিধার্থে প্রথম পরগনার সৃষ্টি করেন। সুলতানী আমলেই সরাইল পরগনার সৃষ্টি হয়। সেখানেই দিল্লী থেকে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে আসেন সুফী হযরত কাজী মাহমুদ শাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। সে সময় ধর্মপ্রচারক কাজী মাহমুদ শাহ রহমতুল্লাহ ঐ এলাকায় মুসলমানদের ধর্ম পালনের সুবিধার্থে বসবাসরত ব্রাহ্মণ পরিবারদের বেরিয়ে যাবার নির্দেশ প্রদান করেন।

★ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আঞ্চলিক উচ্চারণ ‘বাউনবাইরা’ (বা ‘ব্রাহ্মণ বেড়িয়ে যাও’)। ধারণা করা হয় সেখান থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামের উৎপত্তি। উল্লেখ্য বহুল প্রচারের ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামটি পরিবর্তিত হয়ে বি-বাড়িয়া ধারণ করতে থাকে।তাই ২০১১ সালে নামের অস্তিত্ব ঠিক রাখার জন্য জেলা প্রশাসন কর্তৃক এক প্রজ্ঞাপন জারি করে যে, এখন থেকে কেউ বি-বাড়িয়া নামটি ব্যবহার করতে পারবে না, সবাইকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামটি ব্যবহার করতে হবে।ধন্যবাদ জেলাপ্রশাসনকে।

💻Copyright@এস এম শাহনূর
smshahnoor82@gmail.com

(তথ্য সংগ্রাহক, লেখক ও গবেষক)

💻তথ্য সূত্রঃ
প্রথম আলোঃ
http://archive.prothom-alo.com/detail/news/282274
কালের কণ্ঠঃ
http://www.kalerkantho.com/print-edition/culture/2011/07/08/169753
উইকিপিডিয়াঃ
https://bn.wikipedia.org/s/4mi

Jeita Grotto মহান আল্লাহর বৈচিত্র্যময় সৃষ্টির বহি:প্রকাশ: এস এম শাহনূর

| ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ৩:১৪ অপরাহ্ণ

Jeita Grotto মহান আল্লাহর বৈচিত্র্যময় সৃষ্টির বহি:প্রকাশ: এস এম শাহনূর

Jeita Grotto-the pearls of nature in Lebanon.আপনি সারা দুনিয়া ঘুরেছেন।কিন্তু লেবানন্থ Nahar El-Kalb ভেলির “Jeita Grotto”দেখেননি,আমি বলব আপনার দেশ ভ্রমন অসমাপ্ত।”Millions of years were captured in drops of water.It’s the superb work of Mother Nature. It’s unimaginable how nature has sculpted such a masterpiece!!!

Jeita Grotto is the biggest explored caves in Lebanon.7wonders world of the nature based on the first counts results on11/11/11 Jeita was one of the top most finalists on 14 of the 7Wonders world of the nature. And is now a major cultural symbol of the nation, not to mention a practical one considering it supplies drinking water to over a million Lebanese people.

“ও কারিগর দয়ার সাগর ওগো দয়াময়–
“মাওলা একি তোমার অপার লিলে।”
পবিত্র কুরআন এবং হাদিস শরীফে আল্লাহ পাক বেহেস্তের যে অতি চমকপ্রদ ও মনোমুগ্ধকর,সুশীতল, শান্তিময়(সত্যিকার অবস্থা বর্ণনা করার কি যোগ্যতাই বা আমার মত অধমের আছে?) বর্ণনা দিয়েছেন অবিশ্বাসীদের তা বুঝানোর জন্য এটি একটি উদাহরণ হতে পারে।যার রুপ,সৌন্দর্য, জৌলুস,মোহনীয়তা,কমনীয়তা,শীতলতা সশরীরে অনুভব না করলে এবং নিজ চোঁখে না দেখলে শুধু ছবি আর ভাষার বন্দনায় আন্দাজ করা যাবেনা।(হে আল্লাহ আমার দুচোঁখ তোমার তরে কুরবান হউক।)তবু ইচ্ছে করে কিছু লিখতে—–
এটি ছিল একটি অফিসিয়াল ভিজিট।জাতিসংঘ প্রদও আমাদের এসি-মিনিবাসের সামনে ছিল লেবানন আর্মির স্কট জিপ(গাইড)।রাজধানী বৈরুত থেকে ১৮ কি:মি:উত্তরে আমাদের গন্তব্যস্থল Jeita Grotto.
গাড়ী পার্কিং এর স্থল থেকে Cable Car এ চড়ে প্রজাপতির মত উড়তে উড়তে নিমিষেই পৌঁছে যাই Upper Grotto এর গেটে।
Upper Grotto পরিদর্শন শেষে  নানান দেশের বহু পর্যটকদের সাথে অনেক চমৎকার ট্রেনে চড়ে অল্প সময়ের মধ্যেই Lower Grotto গেটে পৌঁছি।শুরু হয় সেলফি আর ছবি তোলার মহোৎসব।
A very frequent drop by drop water flow mold the stalactite on the ceiling and the stalagmite on the floor of the galleries and halls.
Jeita Grotto is characterized by its unique dazzling beauty and the most varied shaped, size and colored fantastic stone concretions.At every step an astonishing limestone formation will surprise you.
১৮৩৬ সালে একজন আমেরিকান মিশনারি এটি আবিস্কার করেন।এতে দুটো গ্যালারী রয়েছে।

➤( 1)The lower gallery(Temp.18deg.)opened to public in1958 and where we took a short dreamy cruise in a rowboat at a distance of some 450 m from the cave’s total length of 7800m.

➤(2)The upper gallrrery(Temp.22deg.)inauguarted in1969 and where we have a walking tour and discover extraordinary stone forms of curtains,columns,draperies,mushrooms,etc.at a distance of some 700 m from the cave’s total length of 2200 m.
The cavern is so serene that it seems like an enormous cathedral.

 

💻এস এম শাহনূর

(উইকিপিডিয়ান,কবি ও গবেষক)

প্রবাস জীবন,অরণ্যে রোদন: এস এম শাহনূর

| ২২ আগস্ট ২০১৯ | ১১:৩৮ অপরাহ্ণ

প্রবাস জীবন,অরণ্যে রোদন: এস এম শাহনূর

“প্রবাস জীবন অাসলে কেমন?
বলছি এক বাংলাদেশী;
নেইকো ভালোবাসা,অরণ্যে রোদন”।

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ পাক এরশাদ করেন,”তোমরা পৃথিবী ভ্রমন কর এবং রবের অনুপম সৃষ্টির নিদর্শন সমূহ দেখ।”
**অন্যত্র এরশাদ হয়েছে, “সালাত কায়েম কর অতঃপর কর্মের খোঁজে বের হয়ে যাও।”
**”বিদ্যা শিক্ষার জন্য সুদূর চীন দেশ সফর কর।”(আল হাদীস) এরূপ নানান কারণে মানুষ আজ নিজ দেশের ভৌগোলিক সীমারেখা ছাড়িয়ে পাড়ি দিচ্ছে অন্যদেশে।আর আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের লোকজন দেশ ছাড়েন কর্মের খোঁজে।এক কথায় অর্থের প্রয়োজনে।

**বাংলাদেশ সরকারের একটি বিশেষ সংস্থায় নিজের কর্মদক্ষতা আর যোগ্যতার বিনিময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণ গ্রহন ও নানা ঐতিহাসিক নিদর্শনাবলী দেখা ও ভ্রমনের সুযোগ হয়েছে।”দেশ ভ্রমন বাস্তব জ্ঞানের পরিধিকে বাড়িয়ে দেয়।”নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি দুনিয়ার বহু জাতি ও ভাষাভাষী মানুষের সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময় করা অনেক তৃপ্তিকর।সেই সামান্য অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারি কেমন আছেন,প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশীরা।প্রবাসে নিজের হাড়ভাংগা পরিশ্রমের টাকায় অনেকেই দেশে “হোয়াইট হাউজ” বানিয়েছেন।অথচ তার কর্মস্থলে থাকতে হয় একই কামড়ায় গাদাগাদি করে বেশ কয়েকজন।ডিউটি শেষে নিজ হাতে রান্না করতে হয়,খেতে হয় হিসেব করে অপেক্ষাকৃত কমদামী খাবার।পরিবারের জন্য টাকা বাঁচাতে গিয়ে হাতে গোনা দু’তিনটে কাপড়ে পার করে দেন পুরো বছর।
**প্রবাসে দেশের মত আলস্য সময় কাটানোর সুযোগ খুবই কম। বাংলাদেশে থাকতে যে তরুণ শার্টের বোতাম খুঁলে,গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াতো, বিদেশে এসে সে হয়ে যায় কর্মঠ যুবক।কেউ একটু বাড়িয়ে বলেন রোবট।মা-বাবা,ভাই-বোন আর স্ত্রী,পুত্র-কন্যা র জন্য হাহাকার করে উঠে মন।রাতে ঘুমাতে গেলে মনের অজান্তে চোঁখের জলে ভিজে যায় নরম বালিশের কভার।নববর্ষ,ঈদ,বৈশাখী মেলা শুধু ক্যালেন্ডারের পাতায়ই থেকে যায়।যদি আমার কথাই বলি,২০১২ সালে কুরবানির ঈদের সময় ছিলাম চীনে প্রশিক্ষণরত।২০১৫ তে ঈদুল ফিতর উদযাপন করলাম লেবাননের রাজধানী বৈরুত। UNIFIL.UN Maritime Task Force.এ কর্মরত থাকায় ২০১৫ সালের কুরবানির ঈদও লেবাননে উদযাপন করতে হয়েছে।
**আমার ব্যক্তি চিন্তায়-বিদেশে এসি অাবাসন,এসি ন্যাশনাল এক্সপ্রেস গাড়ীতে ঘুরে বেড়ানো,পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় সম্মান আর সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা ভোগ করার পরেও মাঝে মধ্যে মনে হয় কি যেন নেই।
কি সেটা?
তা হচ্ছে বাঙালী মনের নির্মল ভালোবাসা।বোনের স্নেহ,ভাইয়ের আদর,মা বাবার কড়া-মিঠে শাসন,প্রিয়জনের প্রিয় কথামালা।আর প্রাণখোলা মন জুড়ানো বাংলা ভাষা।
** চীনে প্রশিক্ষণে থাকাকালীন সময়ে চীনের কেনটন,হোবে,ওয়াহান,সাংহাই বিভিন্ন প্রদেশে থাকাকালে আমার পরিচিত খুবই অল্প সংখ্যক বাঙালী আছেন,যাঁরা উচ্চ শিক্ষার জন্যে চীনে গিয়ে আর দেশে ফিরেননি। এমন ১/২জন বলেন, “প্রযুক্তি নির্ভর এ দেশেও আসলে আমরা ভাল নেই।দেশে যেয়েই বা কি করবো?”
**সূর্যোদয়ের দেশ জাপান ভ্রমনকালে অনেক বাংলাদেশীর সাথে দেখা হয়,কথা হয়।জাপানে বাংলাদেশ এম্বাসির একজন কে প্রশ্ন করেছিলাম,এখানে কেমন আছেন বাঙালীরা? উনার উত্তরটাও আমার কাছে ততটা সুখকর ছিলোনা।
**মালয়েশিয়া সফরকালে পোর্ট সিটি শাহালম,রাজধানী কুয়ালালামপুর সহ বাঙালী অধ্যুষিত “মাইডিন মার্কেট” ও তার আশে পাশের অলিগলি ঘুরেছি। উদ্দেশ্য ছিল কেমন আছেন প্রবাসে আমার দেশের মানুষগুলো।নিকটাত্মীয় না হলেও অনেকেই আপ্যায়নের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।এটা আসলে আমাদের বাঙালীদের একটা চিরায়ত ঐতিহ্য বা ভাল গুণ।কিন্তু আবার এও দেখেছি,দুপুর বেলা লাল শাক দিয়ে রুটি খেতে।যা আমাকে ব্যথিত করেছে।আমার বিশ্বাস বাংলাদেশে থাকলে হয়তো বা তিনি এমন খাবার অনন্ত দুপুরবেলা খেতেন না।কাউকে ছোট কিংবা খেয় করা আমার এ লেখার উদ্দেশ্য নয়।যাঁদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের টাকায় বাংলাদেশ উন্নয়নের স্বপ্ন দেখে।বড় বড় সুরম্য অট্রালিকা উঠে আকাশ পানে,রাতভর ঝলঝল করে জ্বলে হাজার রঙের বাতি।তাঁদের জন্য দেশের কিংবা সরকারের কি কিছুই করার নেই?আমার অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেও আছে ওনাদের জন্য এক বুক ভালোবাসা।যে কারণে কিছুদিন অাগে UNIFIL থেকে অফিসিয়াল কাজে লেবাননস্থ বাংলাদেশ এম্বাসিতে গেলে বাংলাদেশী শ্রমিকদের সমস্যাবলী সমাধানের অনুরোধ জানাই।
**সিংগাপুর সফরকালে শুনেছি বাঙালী ভাইদের প্রতি অবহেলার কথা।একই কাজ ইন্ডিয়ান কিংবা উন্নত বিশ্বের কোন শ্রমিক করলে যা বেতন পায়,বাংলাদেশী শ্রমিক হলেই তা কমে অর্ধেক হয়ে যায়।তাই ইদানিং সময় পেলেই এ বিষয়টি নিয়ে অামি ব্যক্তিগত ভাবে বিদেশীদের এই বাক্যটির মাধ্যমে বুঝাতে চেষ্টা করছি যে,
You show me respect, because I am a UN representative. But I am from Bangladesh. Why don’t you respect Bangladeshi people?

** ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনাম সফরে সরকারী জনবল ছাড়া কোন বাঙালী শ্রমজীবি মানুষের সাক্ষাত মেলেনি।
**সাম্প্রতিক তুরস্ক এবং ইউরোপের দেশ সাইপ্রাস ভ্রমনকালে,তুরস্কে ২জন এবং সাইপ্রাসে বহু শিক্ষিত বাঙালীর সাক্ষাত মেলে।যাঁরা বাংলাদেশে ফিরে আসলে দেশ পেত হিরের মত দামী সন্তান।জাতি হত দ্রুত উন্নত।কিন্তু আমরা কি তাঁদের উপযুক্ত সম্মান আর পারিশ্রমিক দিতে পারছি?
**বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতালে আর শিল্পকারখানায় বিদেশী প্রফেসর,ডাক্তার ও প্রকৌশলীরা উচ্চ বেতনে চাকরি করেন।আর আমার দেশের বহু বেধাবী বিদেশে অপেক্ষাকৃত কমবেতনে চাকরী করেন।কিন্তু কেন?এর উত্তর আমার জানা আছে।তবে আমার একা জানলে হবে না। জানতে হবে ১৬ কোটি বাঙালীকেই।
**দেশে কিংবা বিদেশে আমাদের হতে হবে সৎ আর অর্পিত দায়িত্বের প্রতি আরো নিষ্ঠাবান।মহান আল্লাহ আমাদের সকল ভাল কাজে সহায় হউন।আমীন।

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান,কবি ও গবেষক)

প্রবাসে নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করবেন?‌- এস এম শাহনূর

| ২৭ আগস্ট ২০১৯ | ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ

প্রবাসে নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করবেন?‌- এস এম শাহনূর

পৃথিবীর ডজন খানেক দেশ ভ্রমণ কালে কুড়ি-বিশেক ভিন্ন জাতির মানুষের সাথে ভাব বিনিময়কালে দেখেছি অধিকাংশ ভিনদেশী নাগরিকই বাংলাদেশীদের তত একটা মূল্যায়ন করতে চান না।যদিও বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রতিনিয়ত বাঙালীরা তাদের অবদান রেখে চলেছেন।
আর মূল্যায়ন না করার পিছনেও অনেক কারণ রয়েছে। তবে আমার মতে পরিশ্রমী বাঙালীরা সততা আর সময়ের মূল্য দিয়ে অচিরেই প্রবাসেও শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে তুলবেন ইনশাআল্লাহ।

★কিছু টিপস এন্ড ট্রিকস★

(১)কর্মস্থল,অফিস কিংবা আড্ডায় নিজেকে সব সময় পরিপাটি ও স্মার্ট রাখুন।

(২)সময় মত কর্মস্থলে যোগদান করুন এবং আপনার কর্তব্য কাজটুকু বুঝে নিন ও অধিনন্থদের ভালভাবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিন।

(৩)ইংরেজী জানা না থাকলে দ্রুত সে দেশের ভাষা শেখার চেষ্টা করুন।কারণ,আপনি যেখানে কাজ করেন সেই স্থান কিংবা সে দেশের ভাষা আপনার জন্য হাতিয়ার হিসাবে কাজ করবে।

(৪)কোন বিদেশী নাগরিকের সাথে ভাব জমার পরে তাকে বাংলাদেশে বেড়িয়ে আসার আমন্ত্রন জানান।তাকে বলুন-
➤বাংলাদেশে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম (Longest sea beach in the world )সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার।
➤অতিব মনোরম প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন।
➤বাংলাদেশ রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন। (The largest mangrove forests in the world.)
➤এবং সুন্দরবনে রয়েছে Royal Bengal Tiger.যা পৃথিবীর অন্যসব জঙ্গলে নেই।

(৫)পরিচিত কোন বিদেশী কিংবা ফ্যাশন হাউজ গুলোতে আপনার প্রয়োজনীয় কাজের অবসরে কথার ফাকে সম্ভব হলে বলুন,
➤বাংলাদেশে তৈরীকৃত পোষাক(Readymade Garments)পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয় এবং আমাদের পোষাক শ্রমিকরা খুবই দক্ষ ও শিল্পমনা।
➤বাংলাদেশে তৈরী এক সময়কার “মসলিন” নামক কাপড় বাইজ্যানটাইন ও মোগল সম্রাটদের খুবই প্রিয় ছিল।সেই কাপড় এতই মসৃণ ছিল যে একটি আংটির ভিতর দিয়ে অনায়াসে কয়েক শত গজ কাপড় ঢুকানো যেত।
➤বর্তমানে তৈরীকৃত বেনারশী নামক শাড়ী তোমার নজর কাড়বে।

(৬)অাপনার বিদেশী বন্ধুটিকে অবসরে কথার ভাজে বলুন,
➤বন্ধু, তোমাদের দেশে আমরা শুধু কাজ করতেই আসিনি।বরং তোমাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা দেশ গড়বো।
➤তুমি যাকে এখানে শ্রমিক মনে করছো,এদের অনেকেরই বাংলাদেশে রয়েছে নিজের সুন্দর বাগান বাড়ি ও অনেক সম্পদ।

( ৭)সুযোগ হলে আপনার বিদেশী বন্ধুকে বলুন,
➤আমরা মা বাবা ভাই বোনকে অনেক ভালোবাসি। সুখে দুখে একে অপরের পাশে থাকি।এবং সবাই স্বাধীনভাবে নিজেদের ধর্ম পালন করে থাকি।দেশের সংবিধান মেনে চলি।

(৮)সামরিক বাহিনীতে কর্মরত কোন ব্যক্তির সাথে পরিচয় হলে, আলোচনার এক ফাঁকে বলতে পারেন,
➤আমাদের সশস্ত্র বাহিনী খুবই আধুনিক ও সুশৃঙ্খলিত।
➤সেনা বাহিনী প্রধানের পদ মর্যাদাঃ জেনারেল।
➤নৌ বাহিনী প্রধানের পদ মর্যাদাঃ এডমিরাল।
➤বিমান বাহিনী প্রধানের পদ মর্যাদাঃ এয়ার চীফ মার্শাল।
কারণ,সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ পদ মর্যাদার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড মেন্টেইন করা হয়।
(৯)বলুন,আমাদের দেশের ভূগর্ভে রয়েছে প্রচুর পরিমানে প্রাকৃতিক গ্যাস।যা দুনিয়ার অনেক উন্নত দেশেও নেই।
(১০)সব সময় কর্মস্থল কিংবা বন্ধু
মহলে সত্য কথা বলুন।ছুটির দিনে পরিশীলিত পোষাকে কোথাও বেড়িয়ে আসুন।আড্ডা দিন।নিজের প্রতি খেয়াল রাখুন।

মহান আল্লাহ আমাদের সকলের প্রতি সহায় হোন।আমিন।

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান,কবি ও গবেষক)’

হাজারো দর্শনার্থীর ভিড়ে মুখরিত বল্লভপুর আনন্দ ভুবন: এস এম শাহনূর

| ১৪ আগস্ট ২০১৯ | ১২:১৬ অপরাহ্ণ

হাজারো দর্শনার্থীর ভিড়ে মুখরিত বল্লভপুর আনন্দ ভুবন: এস এম শাহনূর

ঈদের দিন বিকেল থেকে ঈদের দ্বিতীয় দিনেও হাজারো দর্শনার্থীর ভিড়ে মুখরিত আনন্দ ভুবন খ্যাত বল্লভপুর ব্রীজের দুপাশ। মাঝে মাঝে এক পশলা বৃষ্টি।তাতে কী?বৃষ্টি কোন বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি এই বর্ষায় প্রকৃতির নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা দর্শনার্থীদের।

বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান সমূহের তালিকায় নৈসর্গিক সৌন্দর্য মন্ডিত এ স্থানটির নাম আনন্দ ভুবন।কসবা উপজেলার মেহারী ইউনিয়ন এর পশ্চিম উওরে বল্লভপুর ও শিমরাইল নামক গ্রামের মধ্যবর্তী রাজার খালের উপর নির্মিত এক দীর্ঘ সেতুকে কেন্দ্র করেই এলাকার সৌন্দর্য পিপাসু মানুষের ঢল। বর্ষাকালে দক্ষিণে কসবার কুটি বাজারের পশ্চিম পাশের হাওড়ের উদাস করা বাতাসের সুরভী আর ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে বল্লভপুর -শিমরাইলের সংযোগ স্থাপনকারী এই ব্রীজে/আনন্দ ভুবনে।আর কোন বাধা না থাকায় এই প্রাণজুড়ানো বাতাস ছোট ছোট ঢেউয়ের তালে তালে নবীনগরের পাশে মেঘনাতে গিয়ে মিশে যায়। বর্ষাকালে বিশেষতঃ ঈদের উৎসব মুখর সময়টুুুকুতে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার দর্শনভিলাষী মানুষ এখানে এসে প্রকৃতির নান্দনিক সৌন্দর্য ও আনন্দ উপভোগ করে থাকেন।

নবীনগর,কসবা,আখাউড়া,মুরাদনগর,আশুগঞ্জ থেকেও এখানে শিক্ষা সফর ও পিকনিক পার্টি এসেছে।আনন্দ উপভোগ করছে প্রতিনিয়ত।
বর্ষাকালে এখানে পর্যটকদের জন্য মাঝির পালের নৌকা/বৈঠার নৌকা ছাড়াও স্বল্প মূল্যে হাই স্পীড বোটে বেড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়।শিশুদের খেলনা সামগ্রী, হালকা খাবারের ভাসমান দোকান,প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারের মাধ্যমে ছবি তোলার ব্যবস্থা, সাঁতারের জন্য শর্টস,সুইমিং কাষ্ট,সাঁতার কাটার জন্য লাইফ বয় এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এখানে আপনি তার সবই পাবেন।

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান,কবি ও গবেষক)

তুরস্ক সফরে সুন্দরী ক্লিওপেট্রার শহরে: এস এম শাহনূর

| ০৬ আগস্ট ২০১৯ | ৮:২৪ অপরাহ্ণ

তুরস্ক সফরে সুন্দরী ক্লিওপেট্রার শহরে: এস এম শাহনূর

আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ পাকের অশেষ মেহের বানীতে প্রায় দশ হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ইসলামী ঐতিহ্যে লালিত তুরস্কের বেশ কয়েকটি শহরের মানুষ,তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহাসিক নয়নাভিরাম নিদর্শন গুলো দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। এ সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল”Rest,Recreation and Visit historical places.এদিক থেকে শতভাগ সফল হয়েছি।এবার আবার বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজে কর্মস্থল লেবাননে ফিরেছি।শুরু হলো গতানুগতিক রুটিন বাঁধা জীবন।
“আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা,আমি বাঁধি তার ঘর,
আপণ করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।”(প্রতিদান/জসীমউদ্দিন)
কতইনা চমৎকার কবির কবিতার পঙক্তিমালা! ব্যক্তিগত জীবনে কেউ আমার ঘর ভাঙেনি, কেউ পরও করেনি।তবে অপরের শান্তি নিশ্চিত করতে গিয়ে ব্যক্তি জীবনের অনেক সুখ আর আরাম আয়েশ ত্যাগ করতে হচ্ছে।এরই নাম যদি দেশ প্রেম বা বিশ্বপ্রেম হয় তবে আরো কিছু ত্যাগ করতে রাজি অাছি।আমীন।
স্কুল জীবনে দেশ ভ্রমণ রচনা হ্যান্ড নোট করতে গিয়ে পড়েছিলাম, (বর্তমানের স্টুডেন্টরা হ্যান্ড নোট করে পড়ে কিনা বলতে পারছি না) “ভাবুক আর ভ্রমনকারী দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দরবেশ।”(শেখ সাদী) সেই থেকেই দেশ ভ্রমনের প্রতি মনের নিভৃত কোণে একটা আকাঙ্খা পোষণ করেছি।শৈশব থেকেই মনে মনে কিছু লিখার উপকরণ খুঁজতাম।তার জন্য ভাবনার জগতে ডুব দিয়ে ভাবুক হতাম।কিন্তু বাকি ছিল দেশ ভ্রমণ।একটি বিশেষ বাহিনীতে কর্মরত থাকায় মহান অাল্লাহর ইচ্ছায়,”বহু দেশ দেখিয়াছি,বহু নদ দলে।”

আর কত নগর,বন্দর আর ভৌগোলিক সীমারেখা দিতে হবে পাড়ি?জানা নেই।তাই ত মাঝেমধ্যে বেসুরা গলায় গেয়ে উঠি,
“আমি তন্দ্রা হারা এক নদীর মত ছুটে যাই
আমার চলার শেষ কোন সাগরে তার ঠিকানা ত জানা নাই।
★তুরস্কে যা দেখেছি–
**সারা বছর হাজারো বিদেশী পর্যটকদের ভীড়ে মুখরিত Mersin International Port.
**সুস্বাদু আংগুর ফলের বাগান,
**পবিত্র কুরআনে বর্ণিত যয়তুন গাছ ও আসহাবে কাহাফের গুহা,
**নবী হযরত দানিয়েল (আ:)এর কবর ও মাকামে দানিয়েল,
**আড়াই হাজার বছরের পুরনো দানিয়েল মসজিদ,
**বাদশা হারুন অর রশীদের জীবনের সাথে জড়িত MIRALAY AHMED BEY মসজিদ,
**বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক মসজিদ,
**প্রাকৃতিক জলপ্রপাত BARDAN RIVER AND WATERFALL.
যে জলধারায় আলেকজান্ডার দি গ্রেট,খলিফা মামুন অর রশিদ সহ বহু গুণীজন গোসল করেছেন,
**বিশ্বে ঝড় তুলা সুন্দরী ক্লিওপেট্রা গেইট,(যেখানে আমি লেখক দাড়িয়ে আছি)
সুন্দরী ক্লিওপেট্রা, যার স্মৃতির সাথে সম্রাট জুলিয়াস সিজারের নাম জড়িত।
ক্লিওপেট্রা এবং মার্ক অ্যান্টনির সত্য প্রেমের কাহিনী পৃথিবীজুড়েই আলোচিত। এ দুই বিখ্যাত ঐতিহাসিক চরিত্র নিয়ে নাটক লিখেছেন শেক্সপিয়র।Shakespeare তাঁদের জন্য বলেছিলেন, “great love demands great sacrifices!”. অন্যদিকে জর্জ বানার্ড শ লিখেছেন সিজার-ক্লিওপেট্রা। অধিকাংশ সাহিত্যকর্মেই প্রাধান্য পেয়েছে ক্লিওপেট্রার প্রেম ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা। আর প্রায় প্রত্যেকেই আশ্চর্য দক্ষতার সঙ্গে নিজস্ব স্টাইলে বর্ণনা করেছেন ক্লিওপেট্রার রূপের।

**বিলাস বহুল শপিংমল আরো কত কি?

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান,কবি ও গবেষক)

সাইপ্রাস ভ্রমন ও কিছু কথা: এস এম শাহনূর

| ০১ আগস্ট ২০১৯ | ৮:২৯ অপরাহ্ণ

সাইপ্রাস ভ্রমন ও কিছু কথা: এস এম শাহনূর

বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের “পথের পাঁচালী ” উপন্যাসের অপু আর দূর্গার মত আমারও এক চির চঞ্চলা মন। জীবনের এতগুলো বছর পার করে এসেও যখন নতুন কোন ঐতিহাসিক বা দর্শনীয় স্থানে কিংবা কোন দেশে যাওয়ার প্রোগ্রাম হয় আমি ভাসি এক কল্পনার রাজ্যে।বিছানায় এপাশ ওপাশ করে কাটে নির্ঘুম রাত।
“Happiness is a way of travel and travel is the only thing we buy that make us richer.If the world is a book, and those who don’t travel read only one page.”সত্যিই তাই।ভ্রমনের চেয়ে সুখ,ভ্রমণের চেয়ে নির্মল বিনোদন দ্বিতীয়টি নেই।তা হতে পারে দূরে কিংবা কাছের কোন দর্শনীয় স্থান।স্বদেশ কিংবা বিদেশ। পাহাড় সাগর কিংবা গহীন অরণ্যে। আপনার নিজ শহরের অদেখা কোন স্থান,গ্রামের মেঠো পথ কিংবা ঢেউ খেলানো ফাটাবিল,উল্লারের ধান খেত।

**১৫ আগস্ট ২০১৫ ইংরেজী।প্রথম বার সাইপ্রাস ভ্রমনের প্রাক্কালে লিখেছিলাম,Travelling to Cyprus.
Only for Rest, Recreation and Visit historical places=Mental Refreshment.
“অাল্লাহুম্মা তাওয়াক্কালতু অালাল্লা ওয়ালা হাওলা ওয়ালা ক্যুয়াতা ইল্লাবিল্লা হিল অালিউল অাজীম।”
অতঃপর লিখেছিলাম –
“শৈশব কৈশরে মনের গহীনে বুনা স্বপ্নগুলো জীবনে আজ আর স্বপ্ন নয় সত্যি;
আসুন স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকি একদিন স্বপ্নই আপনাকে দিবে স্বপ্ন থেকে মুক্তি।”
সে বার অবশ্য Limasool গিয়েছিলাম। তাই আমার গন্তব্য সম্পর্কে লিখলাম
***Limasool is the second (after the capital- Nicosia) largest urban area in Syprus.
***Syprus is an island in the Mediterranean Sea,the North of Turkey. It’s a country in Europe.
**স্কুল জীবনে সৈয়দ মুজতবা আলীর লিখা রম্যরচনা “রসগোল্লা”র রসালো চরিত্র ঝান্ডু দা’র কথা মনে পড়ে।তিনি ইতালির ভেনিস বন্দরে কি মজার কান্ডই না ঘটিয়েছিলেন।তখন মনে হতো ঝান্ডু দা’র মত যদি দেশে বিদেশে ঘুরে বেড়াতে পারতাম! কোমল বয়সের সেই চাওয়া টুকু অমূলক ছিলনা।সেই চাওয়াই আমার বাস্তব জীবনে সত্য হয়েছে। ঝান্ডু দা’র মত ইতালির ভেনিসে এখনো পৌঁছাতে পারিনি।তবে এরই মধ্যে ঘুরেছি—- চীন,জাপান,ভিয়েতনাম,সিংগাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া,লেবানন,ইসরায়েল,তুরস্ক, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ সহ বহু ঐতিহাসিক স্থান আর মনোরম লোকেশনে। আর এবার ঘুরে এলাম ইউরোপের অন্যতম আকর্ষনীয় দেশ সাইপ্রাস।
**সময়টি ২০১৫ সালের আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহ।প্রচন্ড রোদ মাথার উপর খা খা করছে।তবু হাটি,দেখি আর ভবি।”প্রতিটি রাস্তায়, প্রতিটি জানালায় হাসি মুখ,হাসি মুখে আনন্দ ধারা।”আমার বাস্তব চোঁখের ক্যামেরায় এটিই হচ্ছে শিক্ষা অার পর্যটনে উন্নত দেশ সাইপ্রাস।জানা যাক সত্যিকার অর্থে সাইপ্রাস কেমন?
Cyprus is a country in Europe. It’s situated in the northeastern corner of the Mediterranean Sea, at the meeting point of Europe, Asia and Africa. Since the dawn of history, Cyprus has been one of the most interesting areas of the region and has a much visible cultural history.
**সরকার ব্যবস্থা-প্রজাতন্ত্র,
রাষ্ট্রীয় ভাষা গ্রিক এবং তুর্ক,
প্রচলিত মুদ্রার নাম ইউরো।
আয়তন:৯২৫১বর্গ কি:মি:
মোট জনসংখ্যা ১০ লাখ যা আমাদের তিলোওমা খ্যাত রাজধানী ঢাকার চেয়েও কম।দেবী আফ্রোদিতির জন্মস্থান বলা হয় এই সাইপ্রাসকেই।এখানে মানব বসতির আদিভূমি হচ্ছে দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকা ইতোকবেমনস।
**খ্রিষ্টজন্মের ১০হাজার বছর পূর্বে এখানে শিকারের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহকারীদের বসতি ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।তারা খ্রিস্ট পূর্ব ৮হাজার ২শ বছর পূর্বে স্থায়ীভাবে গ্রামীণ জীবনের অাওতায় আসে।এখানে প্রথম সভ্য মানুষ আসে আনাতোলিয়া থেকে খ্রিষ্ট পূর্ব ২হাজার ৪শ বছর আগে।
**ডালিম,কাঁচা খেজুর অার কমলা লেবুর বাগানে ঘুরেছি ।এছাড়াও সাইপ্রাসের যে সকল দর্শনীয় স্থান ও নিদর্শনাবলী দেখেছি– Lady’s Mile Beach.Golden beach.Captain’s cabin beah.Mediterranean beach. Nissi beach. Petro tou Romiou beach.
** Limasool Zoo.Limasool Castle. Limasool Marina.Toms of the Kings. Cyprus Museum. Kukkos Monastery. Aphrodite Hills.Fasouri watermarie.Kolossi Castle. Saint Barbara Church. Port Garden Park.Queen Street.Eden Park.My Mall.Selimiye Mosque.Foresty College of Cyprus. Technical University of Cyprus and what not?
**এখানে Inter City Bus.নামে একটিAC Bus সার্ভিস চালু অাছে।বাসে উঠা-নামা ভাড়া দেড় ইউরো =১৩৫টাকা।একসাথে সারা দিনের জন্য টিকেট ৫ ইউরো।এতে আপনি সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত একই টিকেটে যে কোন বাসস্টপে নেমে কাজ শেষে আবার উঠতে নামতে পারবেন।১লিটার পানির দাম=১৮০টাকা।ফ্রি আছে শুধু সাগর সৈকতে সাদা চামড়ার মানুষ গুলোর সূর্যস্নান দেখা। অনেক মজার ঘটনা অার মজার স্মৃতি জমা হয়ে আছে সাইপ্রাস ভ্রমনকে ঘিরে।ঘুরে দেখতে দেখতে মনে হয়েছে,”পড়ে না চোখের পলক,কি তোমার রূপের ঝলক।”তাই Eden Park এ বসে সাইপ্রাস ভ্রমনের মর্মকাহিনী নিয়ে”সাইপ্রাসের কবিতা” শিরোনামে লিখে ফেলি একটি কবিতা।

১৫ জুন ২০১৬ ইংরেজী।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছিলাম-
Alhamdulillha. It’s the third time going to dreamly island Cyprus in Europe.Purpose,,meantal refreshment = only for rest, recreation and visit beautiful places. And it’s maybe the last visit during serving in UNIFIL.UN Maritime Task Force.May Allah help us.
এই লেখা শেষ করার আগে যাঁর কথা না লিখলেই নয়।তিনি আমার সহধর্মিণী। শিক্ষিতা,মার্জিত ও প্রফেশনাল। তাতে কি? বাঙ্গালী মেয়ে বলে কথা।এশিয়ার যে কোন দেশে আমার ভ্রমনকালে তাঁর মধ্যে তেমন কোন এলার্জি ভাব দেখিনি।ইউরোপের কথা শুনেই যত এলার্জি!!তাই তিনি আমাকে লিখলেন,
“বিদেশ বিভূঁয়ে ঘুরিয়া;
মিটল কি মনের নেশা?

আমি মনে মনে কি যেন কি ভেবে মুচকি হাসলাম।খানিক ভাবলাম।ত তাঁকে উদ্দেশ্য করে বার্তা পাঠালাম,
“স্বপ্ন মঙ্গল গ্রহে পৌঁছা।
তাই মিটে নাই,মিটিল না,মিটিবেনা অাশা।”

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান,কবি ও গবেষক)

খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর, এ যেন আমার ঘরের পাশে অদেখাঘর: এস.এম. শাহনূর

| ১৩ জুলাই ২০১৯ | ১:১৯ অপরাহ্ণ

খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর, এ যেন আমার ঘরের পাশে অদেখাঘর: এস.এম. শাহনূর

প্রশস্ত সিঁড়ি দিয়ে ওঠার পথেই চোঁখ আটকে গেলো থরে থরে সাজানো মুক্তিযুদ্ধের নানা ছবির উপর।দু’তলায় ঘুরে ঘুরে দেখা মিললো শত বছরের পুরনো শিবমূর্তী, পুরনো দিনের জমিদার বাড়ির ব্যবহৃত বাসন, অলংকার, হাতিয়ার,পাথরে খোদাইকরা দরূদ শরীফ,পরিত্র কোরআন মজিদের বেশ কিছু সুরা প্রভৃতি।

আধো আলো,আধো আধারীর ৬টি গ্যালারির প্রতিটিতে আপনি হারিয়ে যাবেন কখনো মোগল,পাল,পট্টিকের কিংবা খ্রীস্টপূর্ব হাজার বছর আগের ইতিহাসে।
এখানে রয়েছে বেশ কিছু শিলালিপি। যার অনেকগুলোর অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে।১৯৯৮ সালে এই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়।জাতীয় জাদুঘরের আওতায় ও প্রত্নতত্ত অধিদপ্তরের তত্তাবধানে জাদুঘরটি পরিচালিত। আয়তনের দিক থেকে এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জাদুঘর।ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটি এলাকাবাসীর বিনোদন এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে।

জাদুঘর একটি অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্র। সিরিয়াস দর্শনার্থী বা Highly Sophisticated না হলে প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর পরিদর্শনকালে আপনি হয়তো নিরানন্দ,নিষ্প্রাণ,একঘেঁয়েমী কিংবা হতাশা
বোধ করতে পারেন, এমনকি আপনার কাছে তা যথেষ্ট উপভোগ্য নাও হতে পারে।পোঁড়ামাটি, ইট, কাঠ ও পাথর কিংবা ধাতব উপাদানে নির্মিত জাদুঘর এর প্রতিটি পুরাবস্তুর পরতে পরতে লুকিয়ে আছে ইতিহাসের সব বিচিত্র উপাদান ও বিমুর্ত ইতিহাস। যা হাজার পৃষ্ঠার ইতিহাস গ্রন্থ অধ্যয়নের চেয়েও তা উত্তম,ফলপ্রসূ ও কার্যকরী।

খুলনা নিউ মার্কেট ও খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের মাঝামাঝি-খুলনা জেলার শিববাড়ী ট্রাফিক মোড়ের জিয়া পাবলিক হলের পাশেই প্রতিষ্ঠিত
খুলনা জাদুঘর।দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাপ্ত নানান প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন বিশেষ করে ঝিনাইদহের বারবাজার, যশোরের ভরত ভায়ানা এবং বাগেরহাটের খানজাহান আলী সমাধিসৌধ খননের ফলে প্রাপ্ত নানান দুর্লভ নিদর্শন প্রদর্শিত হচ্ছে এ জাদুঘরে।
এ জাদুঘরে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের বিভিন্ন ঐতিহ্য খ্যাত আলোকচিত্র দেখা যাবে,তার মধ্যে বিশ্ব ঐতিহ্য খ্যাত ষাটগম্বুজ জামে মসজিদ, নয়গম্বুজ মসজিদ, রনবিজয়পুর মসজিদ, জিন্দা পীরের মসজিদ, সোনা বিবির মসজিদ, সিঙ্গারা মসজিদ, দীদার খার মসজিদ, আনোয়ার খার মসজিদ, আহমদ খার মসজিদ, চিল্লাখানা, খানজাহান আলী (র.) এর বসতভিটা ও দীঘি, কোতয়ালী, কালোদীঘি, বিবি গোগিনীর মসজিদ এবং দশ গম্বুজ মসজিদসহ বৃহত্তর খুলনা,
যশোর , বাগেরহাট , সাতক্ষীরা , নড়াইল ,
মাগুরা, কুষ্টিয়া , ঝিনাইদহ , মেহেরপুর অঞ্চলের। এছাড়াও সারা দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতত্ত স্থাপনার আলোকচিত্র এখানে দেখা যাবে।
আলোকচিত্র ছাড়া জাদুঘরে দেখা যাবে গুপ্ত, পাল, সেন, মোগল ও ব্রিটিশ আমলের নানা রকম পুরাকীর্তির নিদর্শন, পোড়ামাটির বিভিন্ন মূর্তি, কষ্টি পাথরের মূর্তি, কালো পাথরের মূর্তি, তামা, লোহা, পিতল, মাটি ও কাচের তৈজসপত্র, বিভিন্ন ধাতুর তৈরি অস্ত্র, বিভিন্ন খেলনা, নানা রকম ব্যবহার্য সামগ্রী, মোগল আমলের স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রাসহ বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির হাজার বছরের পুরনো নিদর্শনসমূহ।একটু অনুসন্ধিৎসু, কৌতুহলী হয়ে উঠলে আপনি এই জাদুঘর পরিদর্শন করে পেতে পারেন বাংলা ও বাঙালির হাজার বছরের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ছোঁয়া,দুর্লভ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অমূল্য উপাদান।আপনি হয়ে উঠতে পারেন জ্ঞানদীপ্ত, প্রত্নমনস্ক একজন আলোকিত মানুষ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুর বাড়ি ও আদি পুরুষের জন্মভিটার প্রেমে: এস এম শাহনূর

| ২৫ জুলাই ২০১৯ | ১২:২৩ পূর্বাহ্ণ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুর বাড়ি ও আদি পুরুষের জন্মভিটার প্রেমে: এস এম শাহনূর

রবীন্দ্রনাথ মানেই বাঙালীর মনন ও সাহিত্যের আরেক নাম।এই নাম শুনতেই আমাদের আন্তর চোঁখে ভেসে ওঠে কত আবেগ, অসংখ্য গান, কবিতা, উপন্যাস আর ছোট গল্পের সমাহার।আর কবিগুরু যার প্রেমে মুগ্ধ হয়ে এত ভালোবাসার গান রচনা করেছেন তিনি কি না আমাদের বাংলাদেশি এক নারী।হ্যাঁ! কবিপত্নী মৃণালিনী দেবীর কথাই বলছি।মৃণালিনী দেবীর বাড়ি অর্থাৎ রবি ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি বাংলাদেশের খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি গ্রামে।কবিগুরুর স্মৃতি বিজড়িত একটি জায়গা হল খুলনার দক্ষিণডিহি।চাইলেই খুব সহজে ঘুরে আসতে পারেন কবিগুরুর শ্বশুরবাড়ি থেকে।খুলনা শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে দক্ষিণডিহি গ্রাম। যশোর ও খুলনা জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ভৈরব নদের তীরে অবস্থিত এই গ্রাম। গ্রামের ঠিক মধ্যখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে রবীন্দ্র-মৃণালিনীর স্মৃতি ধন্য একটি দোতলা ভবন। এটাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুর বাড়ি। বর্তমানে এটি ‘রবীন্দ্র কমপ্লেক্স’ নামে অধিক পরিচিত।গত ১৭ জুন ২০১৯ ইংরেজী,দিনটি ছিল বেশ আলোকোজ্জ্বল।আমার স্ত্রী,কন্যা সহ আরো কয়েকজন ভ্রমন পিপাসু খুলনা শহরের অলিগলি ও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান সমূহে ঘুরে বেড়াই।আমাদের জার্নির এসি কোস্টারের বাহিরে ছিলো প্রচন্ড তাপদাহ,মনে ছিল নতুন ও অজানাকে দেখার আকাঙ্খা। আমার একমাত্র তনয়া প্রিন্সেস সামীহা নূর জারাও দিনটিকে বেশ উপভোগ করেছে।আলো ঝলমল দুপুর বেলা গ্রামের পিচঢালা আঁকাবাঁকা সরু পথ দিয়ে আমরা সেখানে যাই। শতাধিক বছর আগে এ পথ নিশ্চয়ই এমন সুগম ছিল না। দুই পাশে তরুসার। ছায়াময়। তার ফাঁকে ফাঁকে নয়ন মনোহর গ্রামীণ দৃশ্যপট। সবুজ ধানখেত। পাখিদের কলকাকলি।গাছ-গাছালির ঘেরাটোপে বন্দী পুরনো দোতলা বাড়ি। বাড়ির থামগুলো বেশ চৌকস। রয়েছে প্রাচ্যরীতি লেখা অনুলিপি। এটির সিঁড়ির কারুকার্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।দোতলা বাড়িজুড়েই আছে রবি ঠাকুরের বিভিন্ন সময়ে ধারণকৃত ছবি এবং কবির সাহিত্যকর্মের হাতে লেখা অনুলিপি।নিচতলায় রয়েছে ছোট্ট পরিসরে একটি পাঠাগার যেখানে কবির লেখা সমগ্র সংরক্ষিত আছে।
ভ্রমণ যাদের নেশা তাদের বলছি, জীবনে একবার হলেও বেড়িয়ে যাবেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদি বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি। যেখানে গেলে আপনার পরিচয় হবে ইতিহাসের সাথে। জানতে পারবেন বাংলা সাহিত্যাকাশের এ উজ্জ্বল নক্ষত্র সম্পর্কে অনেক অজানা কথা।নোবেল বিজয়ী অমর কবির আদি আত্মীয়তা ছড়িয়ে আছে খুলনা জেলাতে। রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়ি খুলনার দক্ষিণডিহিতে এলে দেখবেন, বাংলাসাহিত্যের প্রবাদপুরুষ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবক্ষ ভাস্কর্য, কবিপত্নীর আবক্ষ ভাষ্কর্য, শ্বশুর বাড়ির দ্বিতল ভবন।

সঞ্চয়িতা বইয়ে প্রকাশিত “প্রাণ”কবিতাটির হস্তলিপি দোতলার দেয়ালে টানানো আছে।কবিতাটি হল-
মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে,
মানবের মাঝে আমি বাঁচিবার চাই।
এই সূর্যকরে এই পুষ্পিত কাননে
জীবন্ত হৃদয়-মাঝে যদি স্থান পাই!
ধরায় প্রাণের খেলা চিরতরঙ্গিত,
বিরহ মিলন কত হাসি-অশ্রু-ময় –
মানবের সুখে দুঃখে গাঁথিয়া সংগীত
যদি গো রচিতে পারি অমর-আলয়!
তা যদি না পারি, তবে বাঁচি যত কাল
তোমাদেরি মাঝখানে লভি যেন ঠাঁই,
তোমরা তুলিবে বলে সকাল বিকাল
নব নব সংগীতের কুসুম ফুটাই।
হাসিমুখে নিয়া ফুল, তার পরে হায়
ফেলে দিয়ো ফুল, যদি সে ফুল শুকায়।।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শৈশবের একটি ছবি সম্বলিত “জন্মকথা” কবিতাটিও দেখতে পাবেন।যা পড়লে হারিয়ে যাবেন আপনার শিশুকালে।
খোকা মাকে শুধায় ডেকে–
“এলেম আমি কোথা থেকে,
কোন্‌খানে তুই কুড়িয়ে পেলি আমারে।’
মা শুনে কয় হেসে কেঁদে
খোকারে তার বুক বেঁধে–
“ইচ্ছা হয়ে ছিলি মনের মাঝারে।

দেখবেন কাঁচের গ্লাসে রাখা রবি কবির নিজের হাতের লিখা গীতাঞ্জলি কাব্যের পুনমুদ্রিত কপি।
আপনার চোঁখ আটকে যাবে দেয়ালে টানানো কবির বিভিন্ন বয়সী ছবির পানে।দেখবেন মৃণালিনী দেবীর ছবিও।

এছাড়া রয়েছে সবুজ-শ্যামল ঘন বাগান, পান-বরজ ও নার্সারি।এ অঞ্চলে আছে ছোট-বড় অনেকগুলি নার্সারি। এই নার্সারিগুলিতে ঘুরে ঘুরে পরিচিত হতে পারবেন বাহারি সব প্রজাতি,ফুল, ফল ও ঔষধি বৃক্ষের সাথে।ফুল, ফল আর বিচিত্র গাছগাছালিতে ভরপুর সৌম্য-শান্ত গ্রাম দক্ষিণডিহি। কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে দক্ষিণ ডিহির সম্পর্ক নিবিড়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মা সারদা সুন্দরী দেবী আর কাকি ত্রিপুরা সুন্দরী দেবীর জন্ম এ গ্রামেই। আর রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী দেবীও দক্ষিণ ডিহিরই মেয়ে। তার আরেক নাম ভবতারিণী। বিয়ের পর নাম রাখা হয় মৃণালিনী দেবী। কিশোরী বধূর উদ্দেশ্যে কবি লিখেছেন,
‘এই তনুখানি তব আমি ভালবাসি,
এ প্রাণ তোমার দেহে হয়েছে উদাসী’।

বেণীমাধব রায় চৌধুরী। তিনি ছিলেন কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর এস্টেটের সেরেস্তাদার। তাঁর স্ত্রী দাক্ষায়ণী দেবী। তাঁদের একমাত্র কন্যা ভবতারিণীর জন্ম সম্ভবত ১৮৭৪ সালের ১ মার্চে। ফুলি নামেই কাছের মানুষদের কাছে পরিচিত ছিলেন। জোড়াসাঁকো পরিবারের প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের পুত্র দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর দক্ষিণদিহি গ্রামের রামনারায়ণ চৌধুরীর কন্যা সারদা দেবীকে বিয়ে করেন। উভয় পরিবারই ছিলেন পিরালি বংশোদ্ভূত। এই দম্পতির কনিষ্ঠ সন্তান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

১৮৮২ পুজার ছুটির সময় জ্ঞানদানন্দিনী দেবী উৎসাহী হয়ে বাস্তভিটা দেখবার অজুহাতে যশোরের নরেন্দ্রপুর যান। উদ্দেশ্য কাছাকাছি পীরালী পরিবারের মধ্য হতে বধু সংগ্রহ।জ্ঞানদানন্দিনীর সঙ্গে কাদম্বী দেবী, বালিকা ইন্দ্রানি, বালক সুরেন্দ্র নাথ ও রবীন্দ্রনাথ আসেন পুরাতন ভিটা দেখতে।সে সময় ফুলতলা গ্রামের বিনিমাধব রায় চৌধূরীর কন্যা ভবতারিনীকে তারা দেখেন।যৌবনে কবিও কয়েক বার তাঁর মায়ের সঙ্গে দক্ষিণডিহি গ্রামের মামা বাড়িতে এসেছিলেন।

সারদা দেবীর পিসি আদ্যাসুন্দরীর ঘটকালিতে ভবতারিণীকে বিয়ে করেন রবি। ১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর ব্রাহ্ম মতে বিয়ে হয়েছিল জোড়াসাঁকোর মহর্ষি ভবনে রবিদের পৈত্রিক নিবাসে। এটি ছিল ব্যতিক্রমধর্মী এক ঘটনা। বিয়েতে কোনো আড়ম্বর ছিল না। এমনকি নিজের পৈত্রিক নামটিও হারিয়ে ফেলতে হয় ভবতারিণীকে। বিয়ের পর স্বামী তাঁর নামকরণ করেন মৃণালিনী।

“তুমি কি কেবলি ছবি
শুধু পটে লেখা? ”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর প্রিয়তমা পত্নী মৃণালিনী দেবীকে নিয়ে এ কবিতার চরণ কখন লিখেছিলেন আমার জানা নেই তবে এতটুকু জেনেছি যে,রবীন্দ্রনাথের ২২ বছর ৭ মাস বয়সে বিবাহ হয় দক্ষিনডিহি গ্রামের বেনীমাধব রায় চৌধুরীর ১১ বছর বয়সী মেয়ে ভবতারিনী দেবী ওরফে পদ্ম ওরফে ফুলি ওরফে ফেলি ওরফে মৃণালিনী দেবীর সাথে। ১৯ বছরের বিবাহিত জীবন ছিল আড়ম্বরহীন।আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও সারল্য দিয়ে পরিবারের সবার হৃদয় জয় করতে সক্ষম হন তিনি। বিত্তবান পরিবারের পুত্রবধূ হয়েও তাঁর মধ্যে দেখানদারি ভাব একদমই ছিল না। পাঁচ সন্তানের জননী হন তিনি। তিন কন্যা ও দুই পুত্র মাধুরীলতা, রথীন্দ্রনাথ, রেণুকা, মীরা ও শমীন্দ্রনাথ। বিয়ের পরই একবার নিজ বাড়ি দক্ষিণডিহিতে এসেছিলেন ভবতারিণী।

রবীন্দ্রনাথের আদিপুরুষ জগন্নাথ কুশারী ষোলো শতকের গোড়ার দিকে খুলনার পিঠাভোগ ছেড়ে এসে দক্ষিণ ডিহির জমিদার দক্ষিণানাথ রায় চৌধুরীর পুত্র রায় চৌধুরীর কন্যা সুন্দরী দেবীকে বিয়ে করে এই দক্ষিণডিহিতে বসতি স্থাপন করেন। এবং তারা বংশপরম্পরায় প্রায় দুই শত বছর এই দক্ষিণডিহির স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন। লেখা বাহুল্য, এই দক্ষিণা নাথের নামানুসারে এলাকাটির নাম দক্ষিণ ডিহি। অতঃপর জগন্নাথ কুশারীর অধস্তন পঞ্চম পুরুষ পঞ্চানন কুশারী দক্ষিণ ডিহি ত্যাগ করে কলকাতার উপকণ্ঠে গোবিন্দপুরের আদি গঙ্গার পাড়ে জেলেদের চৌহদ্দির মধ্যে বসবাস শুরু করেন। পঞ্চানন কুশারীর পৌত্র নীলমণি ঠাকুর জীবনের প্রান্ত-সীমায় এসে ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথের জন্মের ঠিক সাতাত্তর বছর আগে জোড়াসাঁকোয় বাড়ি নির্মাণ করেন। এই নীলমণি ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের পিতামহ। দেশত্যাগ করলেও বিয়ের কাজসহ অন্যান্য পারিবারিক কারণে ঠাকুর পরিবারকে বারবার দক্ষিণডিহিতে আসতে হয়েছে।

২৫ বৈশাখ ও ২২ শ্রাবণ এখানে নানা আয়োজনে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী ও কবিপ্রয়াণ দিবস পালন করা হয়।

এক জীবনে কত কিছু নিয়েই না লিখেছেন। বলতে গেলে হেন কোনো বিষয় নেই, যা তাঁর লেখার বিষয়বস্তু হয় নি। তাঁর লেখার পরিমাণ হয়ে আছে অনন্ত এক বিস্ময়। এক জীবনে একজন মানুষ এত লেখেন কী করে? এত এত লেখার পরও অনেক বিষয় রয়ে গেছে অনালোচিত। অনালোকিত। অনাবিষ্কৃত। ব্যক্তিগত অনেক কথাই তিনি ঊহ্য রেখে গেছেন। পারিবারিক জীবন নিয়ে খুব বেশি মুখ খোলেন নি। বিশেষ করে স্ত্রী আর শ্বশুরালয় নিয়ে বোধকরি তাঁর এক ধরনের অস্বস্তি ছিল। ছিল নির্লিপ্ততাও। না হলে এ বিষয়ে তিনি কেন এত নিশ্চুপ ছিলেন?

তাঁর লেখনি, তাঁর কর্মকাণ্ড ও তাঁর জীবন নিয়ে বিস্তারিত লেখা হয়েছে এবং হচ্ছে। তাঁকে নিয়ে গবেষণাও তো কম হচ্ছে না। নিত্য-নতুনভাবে উম্মোচিত হচ্ছেন তিনি। কত কত বিষয় নিয়ে আলোকপাত করা হচ্ছে। তাঁর মন মজেছে, এমন নারীদের নিয়েও তো লেখার কমতি নেই। কিন্তু তাঁর শ্বশুর বাড়ির বিষয়ে খুব বেশি তথ্য বা লেখা পাওয়া যায় না।

অথচ শ্বশুর বাড়ি নিয়ে তাঁর অনেক স্মৃতি, অনেক মুগ্ধতা, অনেক নস্টালজিয়া থাকার কথা। সেটি তো শুধু শ্বশুরালয় নয়, তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁদের বংশের অনেক ইতিহাস, অনেক ঐতিহ্য, অনেক গৌরব। তাঁর শ্বশুর বাড়ি যে গ্রামে, সেই গ্রামটি তো তাঁর মাতুল বাড়িও। এ গ্রামের সঙ্গে পারিবারিক বন্ধন অনেক আগে থেকেই। এমনকি তাঁদের পূর্বপুরুষ পিঠাভোগের জমিদার জগন্নাথ কুশারী এ গ্রামের পতিত ব্রাহ্মণের ঘরে বিয়ে করার অপরাধে জাতচ্যুত হয়ে শ্বশুরালয়ে ওঠেন এবং সেই সুবাদে এখানে দীর্ঘ দিন বসবাসও করেছেন। একটা সময় পূর্বপুরুষদের কেউ কেউ জ্ঞাতি কলহে বিরক্ত হয়ে কলকাতা যান এবং সেখানেই স্থায়ী হন।

পরবর্তীকালে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা ঠাকুর পরিবার হিসেবেই বিখ্যাত হন। কিন্তু তার আগে যে গ্রামটিতে বসবাস, সেখানকার আলো-হাওয়া-জল-মাটি তো বংশানুক্রমে তাঁর দেহ-মনে প্রবাহিত হওয়ার কথা। আর কিছু না হোক, অন্তত মায়ের জন্মস্থান বলে কথা। মামা বাড়িতেও কতবারই এসেছেন। খেয়েছেন দুধ ভাত। সেই স্মৃতি কি তাঁকে উদ্বেলিত করেনি? তাহলে এ নিয়ে উচ্চবাচ্য নেই কেন?

রবি মামার বাড়ি এলেও শ্বশুরবাড়ি এসেছেন কিনা জানা যায় না। তবে বিয়ের আগে পাত্রী দেখার উছিলায় একবার বোধকরি ঘুরে গিয়েছিলেন। বাধ্য হয়ে নিজেদের এস্টেটের কর্মচারীর মেয়েকে বিয়ে করায় বোধকরি একরকম অস্বস্তি ছিল। অস্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করতেন হয়তো। রবির পিতৃব্য ও চিত্রশিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর জানিয়েছেন, বিয়ের ব্যাপারে এক রকম চাপে পড়েই শেষ পর্যন্ত নিমরাজি হয়েছিলেন রবি। তাহলে তিনি কি অন্য কারও প্রতি গভীরভাবে অনুরক্ত ছিলেন?

একটি সূত্রে জানা যায়, একটি মামলার কারণে খুলনা মহকুমা হাকিমের আদালতে তাঁকে হাজিরা দিতে হয়। সেই সুবাদে ১৯০৮ সালের ৪ ডিসেম্বর শ্বশুরবাড়ি নাকি বেড়াতে আসেন। অবশ্য তার আগেই ১৯০২ সালের ২৩ নভেম্বর ভবতারিণীর মৃত্যু হয়। দক্ষিণডিহির কোথায় রবির মামাবাড়ির ভিটা, তা সঠিকভাবে জানা যায় নি।

ভবতারিণীর পরিবার অনেক আগেই কলকাতা চলে গেলেও সেখান থেকেই সম্পত্তির দেখভাল করা হতো। কিন্তু দেশভাগের পর এই সম্পত্তি আস্তে আস্তে বেদখল হতে থাকে। তারপরও ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত ক্ষীণ হলেও তাঁদের একটা যোগাযোগ ছিল। ক্রমান্বয়ে তা চলে যায় দখলদারদের কবজায়। একপর্যায়ে এটি হয়ে পড়ে ঠিকানাবিহীন।
পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হওয়ার কারণে ১৯৯৫ সালে খুলনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাড়িটি উদ্ধার করা হয়। এটি এখন পরিচিত ‘দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স’ নামে। ১৯৯৯ সালের ১৯ নভেম্বর বাড়িটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তখন থেকে এটি পরিচালনা করে আসছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।

★দূর থেকেই দ্বিতল সাদা একটি বাড়ি দৃষ্টি কেড়ে নেয়। পারিপার্শ্বিক পরিবেশের মধ্যে ব্রিটিশ ঘরানার বাড়িটির আভিজাত্য ও পরিপাট্য নজর না কেড়ে পারে না। নিচের তলায় চারটি ঘর। উপরের তলায় দুটি। সামনে বড় একটি খোলামেলা বারান্দা। তাতে মনের আনন্দে দৌড়ে বেড়িয়েছে আমার ২০ মাস বয়সী কন্যা। আর আমরা প্রাণ ভরে নিয়েছি গ্রামের বিশুদ্ধ বায়ূ।

জানা যায়,প্রথমে বাড়িটি ছিল দোচালা টিনের। ভবতারিণীর সঙ্গে রবির বিয়ের পর সেখানে দ্বিতল পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়। বর্তমান কাঠামোটি সে সময়ের। নিজেদের মর্যাদার খাতিরে ঠাকুর পরিবারই এটা নির্মাণ করে দেয়। এখন বাড়িটির অবয়ব আর আগের মতো নেই।খানিকটা বদলে ফেলা হয়েছে। তবে বেড়েছে সীমানা। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে মঞ্চ। ভবনটির অবকাঠামো ছাড়া অতীতের তেমন কিছু নেই। হাল আমলে সংযোজিত হয়েছে কিছু ফটোগ্রাফ।এই দ্বিতল ভবনের উপর একটি চিলেকোঠা রয়েছে। মূল ভবনের নীচ তলায় ৪টি এবং দ্বিতলে ২টি কক্ষ রয়েছে। দক্ষিণ দিকে একটি বারান্দা আছে। পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা এই ভবনটি বাহ্যিক পরিমাপ ১৫.৫৫মিটার (দৈর্ঘ্য) ও ৭.৮৮ মিটার (প্রস্থ)। বারান্দার পরিমাপ ৮.১২ মিটার (দৈর্ঘ্য) ও ৩.৪২মিটার (প্রস্থ)। ভবনের দেয়ালের পুরুত্ব ০.৬০মিটার। ভবনের নীচতলার উচ্চতা ৪.০১মিটার। উপর তলার উচ্চাতা ৪.২১ মিটার। ভবনটির দেয়ালের গাথুনীতে ব্যবহৃত ইটের পরিমাপ ২৫সেমি, ১২সেমি ও ৭সেমি। ভবনের স্থাপত্য ও গঠন কাঠামোতে বৃটিশ যুগের স্থাপত্য রীতিনীতির প্রভাব সুস্পষ্ট। সম্ভবত উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এই ভবন নির্মিত হয়েছিল।

দক্ষিণ দিকে ৫ টি ধাপ বিশিষ্ট সিঁড়ির সাহায্যে ৩টি অর্ধবৃত্তাকার খিলানপথের মধ্যে দিয়া বারান্দায় প্রবেশের পথ রয়েছে। খিলান তিনটি দুটি গোলাকার স্তম্ভের উপর স্থাপিত। পূর্ব-পশ্চিম দিকেও বারান্দায় দুটি অর্ধ বৃত্তাকার খিলান আছে। ভবনটির ছাদ লোহার কাড়িকাঠ ও বর্গার সমন্বয়ে নির্মিত। ভবনের ছাদের তলদেশ লোহা ও কাঠের বর্গার উপর স্থাপিত। একতল ও দ্বিতলা ছাদ বরাবর সমান্তরাল কার্ণিস আছে। ছাদের উপরে দক্ষিণ দিকে একটি প্যারাপেট আছে। প্যারাপেটের মধ্যে চুন বালির কাজ করা নকশা রয়েছে। নীচ তলায় ৮টি দরজা ও ২১টি জানালা আছে। ভবনের দরজা জানালায় কাঠের খড়খড়ি রয়েছে। জানালা ও দরজায় পিতলের কব্জা আছে। নীচতলার বারান্দায় প্রবেশের পর মূল ভবনে প্রবেশের জন্য ১টি দরজা ও ২ পার্শ্বে ২টি জানালা আছে। জানালায় মোটা লোহার গরাদ আছে। ভিতরে ও বাহিরে ২টি করিয়া প্রতি জানালায় কাঠের মোট ৪টি পাল্লা আছে। কোন কোন জানালায় কাঠের খড়খড়ি দেখা যায়। নীচ তলায় একটি কক্ষে কাঠের পাল্লা যুক্ত দেয়াল আলমিরা আছে।

দ্বিতলে মোট ৭টি দরজা এবং ৬ট জানালা আছে। দোতলায় নীচ তলার অনুরুপ কাঠের পাল্লাযুক্ত তিনটি দেয়াল আলমিরা আছে। দ্বিতলের বারান্দার সম্মুখ ভাগে ৬টি গোলাকার স্তম্ভ ক্যাপিটালসহ দৃশ্যমান। বারান্দার পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশে লোহার রেলিং রয়েছে। দ্বিতলের বারান্দার উভয় পার্শ্বে লোহার রেলিং এবং উপরে ড্রপওয়াল হিসাবে ব্যবহৃত কাঠের খড়খড়ি আছে। সিঁড়ির সাহায্যে দোতলায় ও তিনতলার চিলিকোঠায় ওঠার ব্যবস্থা আছে। লোহার কারুকার্য খোচিত নকশার উপরে কাঠের নির্মিত সিড়ির রেলিং রহিয়াছে। মূল ভবনের পূর্বদিকে চারটি অর্ধবৃত্তকার প্রবেশপথসহ একটি কক্ষ রহিয়াছে। উত্তর দিকের দেওয়ালের বাহিরের দিকে নীচতলার ছাদ বরাবর অনেকগুলি লোহার কড়া সমান্তরাল ভাবে লাগানো আছে। পূর্বে সম্ভবত: ইহার সহিত একটি চালা সংযুক্ত ছিল। এই দিকের দোতালার জানালাগুলির বাহিরের দিক কাঠের সানশেড দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। ইহাতে বৃষ্টির পানি ঘরে প্রবেশ করিতে পারিত না।

★বহুকাল আগে থেকেই ইতিহাসের পাতায় দক্ষিণ ডিহি এবং পিঠাভোগ নামক দুটি গ্রামের মধ্যে সৃষ্টি হয় আত্মীয়তার বন্ধন। এর ফলে বদলে যায় ইতিহাসের ধারাক্রম। খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার ৫ নম্বর ঘাটভোগ ইউনিয়নে অবস্থিত পিঠাভোগ গ্রাম। এ গ্রামের কুশারী বাড়িতে বসবাস করতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষরা।প্রত্যন্ত এলাকায় দর্শনার্থীদের স্বাগত জানায় নবনির্মিত একটি ফটক।কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষের কারুকার্যখচিত আদি ভিটাবাড়ি ১৯৯৪ সালে ভেঙে ফেলা হয়। হারিয়ে যায় ইতিহাসের একটি অমূল্য নিদর্শন। এ নিয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হলে এই ভিটা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন। শূন্য ভিটায় নির্মাণ করা হয়েছে রবীন্দ্র সংগ্রহশালা। একতলা এই ভবন সংলগ্ন গড়ে তোলা হয়েছে উম্মুক্ত একটি মঞ্চ। আদি ভিটাবাড়ি না থাকলেও অনেকটাই অকৃত্রিম আছে এ এলাকার গ্রামীণ পরিবেশ ও প্রকৃতি। অসংখ্য গাছগাছালি। পেছনে মস্ত একটি নির্জন পুকুর। তাতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে শাপলা। পাশে ছন আর টিনের ঘর। গোধূলি চারপাশে ছড়িয়ে দিতে থাকে তার মাধুরী। যেন থমকে আছে আবহমানকালের চিরায়ত বাংলা।

পূর্বপুরুষের ভিটায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কখনও এসেছিলেন কিনা জানা যায় না। তবে ভিটা সংলগ্ন এলাকায় এখনও বসবাস করেন কুশারী পরিবারের বংশধররা। তাঁদের আর্থিক অবস্থা মোটেও স্বচ্ছল মনে হলো না। তাঁরাই দেখভাল করেন সংগ্রহশালা।

দর্শনার্থীরা এলে খুলে দেন ইতিহাসের সিংহদ্বার। তবে লতা-পাতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বংশধর হতে পেরেও তাঁরা খুবই গর্ব অনুভব করেন। যত দূরের সময়ের হোক না কেন, এই মাটিতে পোতা বীজের এক সন্তান আলোকিত করেন বিশ্ব সাহিত্যের ভুবন। এ গর্বটুকু আমাদেরও ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়।

★যেভাবে যাবেন দক্ষিণডিহি:
দেশের যে কোনো স্থান থেকে খুলনা মহানগরীতে এসে ১৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম ফুলতলা উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গেলে দক্ষিণডিহি গ্রাম। গ্রামের ঠিক মধ্যখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে রবীন্দ্র-মৃণালিনীর স্মৃতিধন্য একটি দোতলা ভবন। এটাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুর বাড়ি। খুলনা শহর থেকে বাস বা সিএনজি তে করে প্রথমে ফুলতলা এবং তারপরে সেখান থেকে ভ্যান বা অটো তে করে সহজেই চলে যেতে পারবেন দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্সে।

★যেভাবে যাবেন পিঠাভোগ:
খুলনা জেলার রূপসা নদীর পূর্ব তীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে একটি সুপ্রাচীন গ্রাম। নাম তার পিঠাভোগ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের পূর্ব পুরুষের আদিনিবাস ছিল এই গ্রামের কুশারী বাড়ি । খুলনা মহানগরী থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার পূর্বে রূপসা উপজেলায় অবস্থিত এ পিঠাভোগ গ্রামে। খুলনা আঞ্চলিক প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের পরীক্ষামূলক সমীক্ষায় পিঠাভোগ গ্রামে রবীন্দ্রনাথের পূর্ব পুরুষের ভিটার ভিত্তিপ্রস্তরের সন্ধান পাওয়া গেছে। এখানে কবিগুরুর একটি আবক্ষ ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। প্রতি বছর এখানে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হচ্ছে।

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান,কবি ও গবেষক)

 

Some text

ক্যাটাগরি: বিবিধ

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি