বুধবার দুপুর ১:১৫, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

১৪ ফেব্রুয়ারি ভালবাসা দিবস? জানুন ভ্যালেন্টাইন ডে’র ইতিহাস

২১৬৭ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ১ টি

ফুল, ক্যান্ডি, চকলেট, রেড হার্ট, কার্ড এবং রোমান্স! ভালবাসার অভিব্যক্তি গুলোই কি ভ্যালেন্টাইন্স ডে? ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিবছর ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স দিবস পালিত হয়। এ দিনে তরুণ-তরুণীরা তাদের ভালোবাসার মানুষকে কার্ড, ফুল বা চকোলেট উপহার এবং শুভ কামনা জানিয়ে তাদের স্নেহ-ভালোবাসা প্রদর্শন করে।

তবে ভ্যালেন্টাইন্স ডে কে কেন ভালোবাসা দিবস বলা হয়? এটি উদযাপনের প্রচলন কিভাবে শুরু হলো? সেন্ট ভ্যালেনটাইন ডে বা কথিত ভালবাসা দিবস সম্পর্কে জানতে পুরো লেখাটি পড়ুন।

কে এ সেন্ট ভ্যালেন্টাইন?

বিভিন্ন Encyclopedia স্টাডি করে Saint Valentine-এর ইতিহাস জানা যাবে। ২৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট ২য় ক্লডিয়াস নারী-পুরুষের বিবাহ বন্ধনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তার ধারণা ছিল, বিবাহ করলে যুদ্ধের প্রতি পুরুষদের অনীহা সৃষ্টি হয়। সে সময় রোমের খ্রিষ্টান গির্জার পুরোহিত ‘ভ্যালেন্টাইন’ গোপনে নারী-পুরুষের বিবাহ বন্ধনে সহযোগিতা করতেন। এ ঘটনা জানাজানি হবার পর তাকে রাজার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ভ্যালেন্টাইন রাজাকে জানালেন, খিষ্টধর্মে বিশ্বাসের কারণে তিনি কাউকে বিবাহ বন্ধনে বারণ করতে পারেন না। রাজা তখন ভ্যালেন্টাইনকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। কারাগারে থাকা অবস্খায় রাজা তাকে খ্রিষ্টান ধর্ম ত্যাগ করে প্রাচীন রোমান পৌত্তলিক ধর্মে ফিরে আসার প্রস্তাব দেন এবং বিনিময়ে তাকে ক্ষমা করে দেয়ার কথা বলেন। উল্লেখ্য, রাজা ২য় ক্লডিয়াস প্রাচীন রোমান পৌত্তলিক ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। তখনকার রোমান সাম্রাজ্যে এ ধর্মের প্রাধান্য ছিল।  ভ্যালেন্টাইন রাজার প্রস্তাব মানতে অস্বীকৃতি জানান এবং খ্রিষ্ট ধর্মের প্রতি অবিচল থাকেন। এরপর সম্রাট তাকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করেন। তিনি কারাবন্দি থাকার সময় কারারক্ষীর এক সুন্দরী তরুণী কন্যার প্রেমে পড়ে যান। কারাভ্যন্তরেই তারা দেখা করতেন। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন-এর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। মৃত্যুর আগে তিনি তার প্রেমিকাকে “ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন from your Valentine” লিখে সর্বশেষ একটি লাভলেটার পাঠিয়েছিলেন।

পরে রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিষ্ট ধর্মের প্রাধান্য হলে ভ্যালেন্টাইনকে `Saint’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার স্থানে তার স্মরণে একটি গির্জা নির্মাণ করা হয় ৩৫০ সালে। ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু পোপ গ্লসিয়াস ১৪ ফেব্রুয়ারিকে `Saint Valentine Day’ ঘোষণা করেন। ভালোবাসার ঘটনায় `Saint Valentine Day’ ঘোষণা করা হয়নি। কারণ খ্রিষ্ট ধর্মে পুরোহিতদের জন্য ভালবাসা ও বিয়ে বৈধ নয়। পুরোহিত হয়ে তরুণীর প্রেমে আসক্তি খ্রিষ্ট ধর্মমতে অনৈতিক কাজ। মূল বিষয় হলো ভালোবাসার কারণে ভ্যালেন্টাইনকে কারাভোগ করতে হয়নি। তিনি কারাগারে যাওয়ার পরই কারারক্ষীর মেয়ের প্রেমে পড়েছিলেন। সুতরাং ভ্যালেন্টাইনকে কারাগারে নিক্ষেপ ও মৃত্যুদন্ডের সাথে ভালোবাসার কোনো সম্পর্ক ছিলো না। তাই ভ্যালেন্টাইনের কথিত ভালোবাসা সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ডে’র মূল বিষয় নয়। ধর্মের প্রতি গভীর ভালোবাসাই তার মৃত্যুদন্ডের কারণ।

`Saint Valentine Day’ বনাম লুপারকেলিয়া’:

প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যে ‘লুপারকেলিয়া’ নামে একটি পৌত্তলিক ধর্মীয় উৎসব ছিলো। তখন ফেব্রুয়ারি মাসের ১৩ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত লুপারকেলিয়া উৎসব পালন করা হতো।
লুপারকেলিয়া উৎসবে প্রেমের দেবী জুনুর আশির্বাদ কামনায় তরুণদের কাছে তরুণীদের বন্টনের জন্য লটারির আয়োজন করা হতো। তরুণরা তরুণী মেয়েদের নাম লিখে একটি বক্সে রাখতো এবং তরুণরা এসে লটারির মতো তুলতো। লটারিতে যে তরুণ-তরুণী জুটির নাম ওঠতো তারা এক বছরের জন্য লিভ টুগেদার (বিনা বিবাহে একসাথে বসবাস) করতো। এ ধরণের অনৈতিকতা, কুসংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাসে আচ্ছন্ন এ রীতি ইউরোপ থেকেই কোনঠাসা হয়ে যায়। ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার ভ্যালেইটাইন উৎসব নিষিদ্ধ করে। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় এ দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ করে। এছাড়া অস্ট্রিয়াহাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়। ইসলাম বিরোধী হওয়ায় ২০১৭ সালে ভ্যালেন্টাইন উৎসব নিষিদ্ধ করে পাকিস্তানের একটি আদালত। বর্তমানে পাশ্চাত্যে এ উৎসব মহাসমারোহে উদযাপন করা হয়। ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন `Valentine Day’ কার্ডে Cupid-এর প্রতীক ব্যবহার করা হয়। যুক্তরাজ্যে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক এ ভালোবাসা দিবসের জন্য কার্ড, ফুল, চকোলেট, অন্যান্য উপহার সামগ্রী ও শুভেচ্ছা কার্ড ক্রয় করতে প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে। সে দেশে প্রায় ২.৫ কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়।

কিভাবে কথিত ভালবাসা দিবস এলো?

আধুনিক সভ্যতার এ যুগে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভ্রান্ত বিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি ইউরোপীয় রীতি তথাকথিত ভালবাসা উৎসব হলো কিভাবে? ইস্টার এ হল্যান্ড নামক এক চতুর কার্ড বিক্রেতা কোম্পানি প্রথম ‘What Else Valentine’ নামে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম আমেরিকান ভ্যালেন্টাইন ডে কার্ড তৈরী করে। প্রথম বছরই ৫০০০ ডলারের কার্ড বিক্রি হয়। পরে সুযোগ সন্ধানী মিডিয়া কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় ভ্যালেন্টাইন ডে ব্যাপাক প্রচার ও প্রসারিত হয়। পাশ্চাত্যের ক্ষেত্রে জন্মদিনের উৎসব, ধর্মোৎসব সবক্ষেত্রেই ভোগের বিষয়টি মুখ্য। সুযোগ সন্ধানী, নীতিহীন ব্যবসায়ী ও সস্তা জনপ্রিয়তাকামী একশ্রেণীর মিডিয়া লটারির মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে তরুণীদের বন্টনের ২৫০০ বছরের পুরনো ঘৃণ্য রীতিকে ভালোবাসা দিবস নামে প্রবর্তন করে তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত করছে।

বাংলাদেশে কথিত ভালবাসা দিবসের আমদানী:

প্রথমে সাপ্তাহিক পরে দৈনিক যায় যায় দিন পত্রিকার সম্পাদক শফিক রেহমান ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশে ভালবাসা দিবসের আমদানী করেন। তার পত্রিকা সাপ্তাহিক যায় যায় দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি কথিত বিশ্ব ভালবাসা দিবস উপলক্ষে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ শুরু করে। শফিক রেহমান লেখাপড়া করেছেন ইংল্যান্ড। সে দেশের সংস্কৃতি ও কালচারকে ব্যক্তিগত ভাবে তার পছন্দ হতেই পারে। সেটা দোষের কিছু নয়। অভিজ্ঞ মহল বলছেন, সমষ্টিগত ভাবে একটি বিজাতীয় কালচার জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত ও বিপদগামী করার যে কোনো তৎপরতা খুবই বিপদজনক হতে পারে।

ইসলামের দৃষ্টিতে বিজাতীয় উৎসব বা দিবস:

আল্লাহ্ সুবহানাওয়া তা’আলা বলেন: ‘যারা বিশ্বাসীদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার পছন্দ করে, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।’-সুরা আন নুর-১৯

Happy Cupid with bow and arrow – vector illustration;

রাসুল (সা.) মদিনাতে আগমন করার সময় সেখানকার অধিবাসীদের দুটো দিবস ছিল-যে দিবসে তারা খেলাধুলা করতো৷ রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন এ দু’দিনের কি তাৎপর্য আছে? মদিনা বাসীগণ উত্তর দিলেন: আমরা মূর্খতার যুগে এ দু’দিনে খেলাধুলা করতাম৷ তখন রাসূলে করিম (সা.) বললেন: ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ দু’দিনের পরিবর্তে তোমাদের এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ দু’টো দিন দিয়েছেন৷ তা হলো: ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর৷’-আবু দাউদ।

রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন: ‘যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরণ করবে, সে ব্যক্তি সে জাতিরই একজন বলে গণ্য হবে’-আবূ দাঊদ।

এতোকিছু জানার পরও মুসলিম পরিচয় ধারণ করে তরুণ-তরুণীরা ২৫০০ বছরের পুরনো রোমান পৌত্তলিক ধর্মের অশালীন, কুসংস্কারাচ্ছন্ন উৎসব ‘লুপারকেলিয়া’ কে ভালবাসা দিবসের মোড়কে উদযাপন করবেন? ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রিয়জনের উপহারের প্রত্যাশায় থাকবেন?

সাইয়েদ ইকরাম শাফী

লেখক: তরুণ গল্পকার, সাংবাদিক ও কলাম লেখক।

E-mail: s.iquram03@gmail.com
রেফারেন্স: Wikipedia

Some text

ক্যাটাগরি: মতামত

[sharethis-inline-buttons]

১ কমেন্ট “১৪ ফেব্রুয়ারি ভালবাসা দিবস? জানুন ভ্যালেন্টাইন ডে’র ইতিহাস

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি