সোমবার রাত ২:১৮, ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ. ২৮শে মে, ২০২৩ ইং

নারী-পুরুষ সম্পর্ক প্রসঙ্গে

৯৩৪ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

পৃথিবীর প্রায় সব প্রাণীই নারী-পুরুষে বিভক্ত। নারী থেকে পুরুষ ও পুরুষ থেকে নারীকে কোন ভাবেই পৃথক করার উপায় নেই। পৃথিবীতে প্রাণী জগতের অস্তিত্ব থাকতে হলে নারী পুরুষের যৌথ উপস্থিতি ও দৈহিক মিলন অপরিহার্য। মানব প্রজাতির বেলায় নারী পুরুষের দৈহিক মিলনের বিষয়টি অন্য সব প্রাণী থেকে ভিন্ন। পৃথিবীর সব স্থ’লচর ও জলচর মেরুদন্ডী ও অমেরুদন্ডী স্ত্রীর প্রানীর দেহে বৎসরের নির্দিষ্ট দিনে দৈহিক মিলনের বিশেষ লক্ষণ দেখা দেয় এবং পুরুষ প্রাণী তাতে আকৃষ্ট হয়। কিন্তু মানব প্রজাতির বেলায় সেরকম কোন নির্দিষ্ট দিন নেই। মানব প্রজাতিতে নারী পুরুষ সম্পর্কের মধ্যে সৌন্দর্য, মাধুর্য ও তিক্ততা আছে। এ মানব সমাজ নারী পুরুষ দ্বারা গঠিত। কোন একজনকে বাদ দিয়ে আরেকজনের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। একজনের কাছে আরেকজন অপরিহার্য এবং একে অপরের পরিপূরক।

জীববিদ্যা, সমাজ বিজ্ঞান ও ইতিহাস গবেষণা করে এ সত্যে উপনীত হওয়া যায় যে, নারীকে নারীরূপে গন্য করা এবং তাকে পুরুষের বিকল্প হিসেবে না ভাবাই সর্ব সময়ের দাবী। কেননা পুরুষ কখনো পারে না নারী হয়ে যেতে। আবার নারীও পারে না পুরুষ হয়ে যেতে। উভয়েই সম্পুর্ন পরস্পর বিরোধী দেহাবয়ব, আকার-আকৃতি ও শক্তি সামর্থ্য নিয়ে জন্ম গ্রহন করে। এ পৃথিবীতে একই  স্থান ও কাল, একই আবহাওয়া ও পরিবেশ ও একই পিতা মাতার সন্তান হয়ে এবং একই ঘরে লালিত পালিত হওয়া সত্ত্বেও নারী ও পুরুষ স্বভাব- প্রকৃতি ও মনস্তাত্বিকতার দিক দিয়ে সম্পুর্ন পৃথক ও ভিন্ন ভিন্ন সত্তার অধিকারী।

এ পৃথিবীতে পুরুষেরা সাধারণত স্ত্রীদের থেকে দৈর্ঘ্য, ওজনে ও শক্তিতে অনেকটাই বেশী থাকে। তাদের কাঁধ বেশী চওড়া এবং পেশীগুলো স্ত্রীদের তুলনায় অনেক স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। পেশীর বিকাশ এবং ভ্রুর অভিক্ষেপের মধ্যকার সম্পর্কের দরুন স্ত্রীদের তুলনায় পুরুষদের দুই ভ্রুর মিলনস্থানটি সাধারনত অধিকতর স্পষ্ট হয়ে থাকে। পুরুষের সারা শরীরে বিশেষ করে মুখমন্ডলে বেশী লোম থাকে এবং তাদের কন্ঠস্বর স্ত্রীদের  থেকে ভিন্ন ধরনের ও বেশী জোরদার হয়। নারী পুরুষের এ শারীরিক গঠনের ভিন্নতার জন্য তারা সমপরিমান বায়ু ও খাদ্য গ্রহন করে না। তাদের রোগ ব্যাধিও হয় বিভিন্ন রূপের ও বিভিন্ন প্রকৃতির। তাদের মানসিক ঝোঁক – প্রবনতা ও নৈতিকতাবোধও একই রকমের নয়। নারী-পুরুষ সম্পর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন ও কেন্দ্রীয় বিষয় যৌনতা, নারীরা পুরুষদের থেকে কম বয়সেই যৌবনে উপনীত হয়। তাই তাদের যৌন চাহিদা বেশী থাকে। নারীদের যৌন চাহিদা অন্তর্মুখী অবস্থায় অবস্থান করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরুষ তাদের স্পর্শ না করলে, পুরুষের সংস্পর্শে না গেলে বা পরস্পরের মধ্যে রসালাপ না চললে নারীর যৌন শক্তি তাকে ততটা কষ্ট দেয় না বা দিতে পারে না। অপর দিকে পুরুষের যৌন শক্তি বহুমুখী অবস্থায় অবস্থান করে বিধায় পুরুষ নারীর প্রতি লালায়িত হয়ে তার পেছনে দৌড়ায়। কিন্তু নারীরা এরূপ পন্থায় পুরুষের পেছনে দৌড়ায় না। কিন্তু’ বিবাহিত নারী যদি তার স্বামীর দ্বারা পরিতৃপ্ত না হতে পারে, তাহলে সংসার জীবন তার কাছে একেবারে তুচ্ছ বলে গন্য হয়।

এ সময় তার শরীরে অতৃপ্ত, যন্ত্রনা, তালুতে, হাতে পায়ে জ্বালা-পুড়া, কাজে অনীহা, ক্রোধের প্রকাশনা, ঋতু-শ্রারাবে অস্বাভাবিকতা ইত্যাদি রোগের প্রকাশ ঘটে। এ অবস্থায় নারী যৌন চাহিদা পূরনের জন্য পরকীয়া, সমকামিতা ও বহুকামীতায় আসক্ত হয়ে পড়ে। তার এহেন কার্যকলাপের জন্য সমাজে পতিতা বৃত্তি বৃদ্ধি পাবে, তালাকের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকবে ও পারিবারিক বন্ধন দিন দিন শিথিল হয়ে পড়বে। এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার পন্থা হলো – পুরুষের নিয়মিত ব্যায়াম করা, সংসারের জীবনের সমস্যাগুলো অতি ধৈর্য্যরে সাথে যৌথ ভাবে মোকাবেলা করা, একই মতাদর্শের ব্যক্তিকে জীবন সঙ্গী হিসেবে যাচাই-বাচাই করা, স্বেচ্ছায় শারীরিক ও মানসিক  প্রস্তুতি নিয়ে উভয়ের মধ্যে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করা ইত্যাদি। এখানে জবরদস্তীর  কোনো স্থান নেই।

নারী-পুরুষ উভয়ে মানুষ নামে চিহ্নিত হলেও এরা পরস্পর বিপরীত মুখী প্রকৃতি বিশিষ্ট স্বতন্ত্র সৃষ্টি। এ স্বতন্ত্রতা বিশিষ্ট পার্থক্যের মাত্রা এত বেশী যে, বহুবিধ বিষয়ে এদের মধ্যে তুলনা চলতে পারে না। নারী ও পুরুষের মধ্যকার স্বভাবগত পার্থক্য প্রমানকারী মৌলিক সত্তকে উপেক্ষা করে নারী স্বাধীনতার আন্দোলনকারীরা দাবি করছে যে, নারী ও পুরুষের দায়িত ,কর্তব্য ও অধিকার সম্পুর্নরূপে অভিন্ন এবং তা সমান হতে হবে। অথচ প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে এই দুয়ের মধ্যে জন্মগত ও স্বভাবগত সহ সীমাহীন পার্থক্য বিদ্যমান। এ ক্ষেত্রে সৃষ্টির মূল থেকেই উত্তম পন্থা হলো- পুরুষকে পালন করতে হবে বাড়ির বাহিরের কাজের দায়িত্ব আর নারীকে পালন করতে হবে বাড়ির ভিতরের দায়িত্ব। নারীর বাড়ির ভিতরের গুরুত্বপুর্ন দায়িত্ব হলো – গর্ভধারন, সন্তান প্রসব, সন্তানকে স্তনের দুধ পান করানো, যাবতীয় গৃহস্থালীর কাজ সুচারুভাবে পম্পন্ন করা ইত্যাদি। নারী ছাড়া এ কাজগুলো সম্পন্ন করা কোনো পুরুষের পক্ষে সম্ভব নয়। অপরদিকে পুরুষের ঘরের বাইরের গুরুত্বপুর্ল কাজগুলো হলো- উপার্জন করা, স্ত্রীকে আজীবন লালন পালন করা। সন্তানদের প্রাপ্ত বয়স্ক পর্যন্ত লেখাপড়া সহ যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করা। সমাজের উন্নয়নমুলক কাজকর্মে এককভাবে নেতৃত্ব দেওয়া ইত্যাদি। সৃষ্টিগত ভাবে যে সকল দায়িত্ব এক তরফা ভবে নারীকে দেওয়া হয়েছে সে সমস্ত দায়িত্ব কোন পুরুষের পক্ষে পালন করা সম্ভব নয়। অপর দিকে উপার্জন করা ও নেতৃত্ব দেয়ার মতো গুরুত্বপুর্ন কাজ সুচারুভবে সম্পন্ন করা একমাত্র পুরুষের পক্ষেই সম্ভবপর, কোন নারীর পক্ষে নহে। মানব সভ্যতার বিকাশ ও অগ্রগতিতে নারীদের তুলনায় পুরুষদের অবদানই সবচেয়ে বেশী। যেমন- নারীদের মধ্যে কোন শেকসপিয়ার নেই, নজরুল নেই, প্লাটো, এ্যারিষ্ট্রটল নেই, কোনো প্রেরিত মহাপুরুষ নেই। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বর্তমান আধুনিক যুগে প্রচুর সুযোগ সুবিধা পাওয়ার পরও নারীদের মধ্যে থেকে এ ধরনের বিখ্যাত লোকদের আর্বিভাব ঘটছে না। তাই নারীদের উচিত ঘরের ভিতরের গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্বগুলো যথাযথ ভাবে পালন করা ও পুরুষদেরকে অনুকরণ না করা।

বর্তমান যুগে নারীরা পুরুষদের সমান স্বাধীনতা ও সুযোগ সুবিধা অন্ততঃ পাশ্চাত্য দেশসমূহে পেয়েছে বললে অত্যুক্তি হবে না। কিন্তু এই স্বাধীনতা ও সুযোগ সুবিধা কি নারীদের দৈহিক সংগঠন ও প্রকৃতিতে কোন মৌলিক পরিবর্তন এন দিতে পেরেছে ?

মানব ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে নারী অবাধ ও উদার সুযোগ সুবিধা পেয়েও নিজের বিশেষ কর্মক্ষেত্রের বাইরে উল্লেখযোগ্য কোনো কীর্তি স্থাপন করতে পারে নি। নারীর উপর অনেক সামাজিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব অর্পিত হওয়া সত্ত্বেও সে তা স্বাধীনভাবে পালন করতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। যেমন- মিশরের রানী কিওপেট্রা , দিল্লীর  সম্রাট সুলতানা রাজিয়া  ,ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি মেঘবতী, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ইলাংসিনাহাথ্রা, ব্রাজিলে রাষ্ট্রপতি দিলমা রৌসেফ প্রমুখ। বস্তুত নারী স্বভাবতঃই অন্যের সহানুভুতি পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। তার মধ্যে স্বাধীনতা ও স্ব-নির্ভরতার বাসনা পুরুষের ন্যায় দৃঢ় নয়। মানব ইতিহাসে এমন কোনো কীর্তিমতী নারীর নাম পাওয়া যায় না, যে পুরুষের সাহায্য ছাড়া স্বতন্ত্র ভাবে মানব জাতির জন্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিজ্ঞানী মাদাম কুরি তার স্বামী পিয়ার কুরির সাথে থেকে রেডিয়াম আবিস্কার করে বিজ্ঞানে, বিশিষ্ট লেখীকা বেগম রোকেয়া তার স্বামী সাখাওয়াত হোসেনের  সাথে থেকে সুলতানার স্বপ্ন উপন্যাস রচনা করে বাংলা সাহিত্যে যে অবদান রেখেছেন, তা নিতান্তই সহযোগিতা নির্ভর এবং এ সহযোগিতা এসেছে পুরুষদের নিকট থেকে। যুগে যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন বহু নির্যাতিত ও অবহেলীত নারীরা সরাসরি প্রচুর সুযোগ সুবিধা পাওয়ার পরও পুরুষদের সমান যোগ্যতা ও কর্মক্ষমতা অর্জন করতে সম্পুর্নরূপে ব্যর্থ হয়েছে।

এখানে উদাহরন স্বরূপ মাকির্ন নাগরিক হিলারী ক্লিনটনের কথা বলা যেতে পারে। বিগত ২০১৬ সালের মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাকে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে মনোনয়ন দেওয়ার পরও রিপাবলিকেন পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিকট বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরে যায়। এ  ছাড়াও তিনি নির্বাচনের পূর্বে নিজের দোষ স্বীকার করে সেচ্ছায় মাকির্ন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।

পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র এ তিনটি প্রতিষ্ঠান একে অন্যের সাথে গভীরভাবে জড়িত ও পরস্পর নির্ভরশীল। টিকে থাকার জন্য এগুলোর কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রন করার একক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে পুরুষকে, কোনো নারীকে নয়। ধর্মীয় বিধানের সাহায্যেও তা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। হিন্দু ধর্মে বলা হয়েছে- কুমারীকালে পিতার, যৌবনে স্বামী ও বার্ধক্যে পুত্ররা রক্ষা করবে নারীকে। নারীর স্বাধীনতা এখানে অযোগ্য। ইহুদি ধর্মে পিতা পেয়ে থাকে পুরোহিতের অধিকার। খ্রীষ্টানধর্মের বিধান  হচ্ছে’- পিতাই পরিবারের কর্তা। পবিত্র কোরআনে আছে – পুরুষ নারীর কর্তা। আধুনিক যুগে পৃথিবীর সব সরকারই এসব পবিত্র বিধান মেনে চলে এবং সব ক্ষেত্রেই পুরুষকে গন্য করা হয় পরিবারের প্রধান রূপে। যদি কোন সময় এর ব্যত্যয় ঘটে তা হলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ব্যাপক বিপর্যয় ঘটবে। সৃষ্টিগত ভাবে পুরুষের এ কর্তৃত্ব মেনে নেওয়াই নারীদের জন্য অতি পবিত্র ও বুদ্ধিমানের কাজ। এতে অপমান ও অপদস্ত হওয়ার মতো কিছু নেই।

মানুষ বন্যাবস্থা থেকে বর্বরতায় এবং বর্বরতা থেকে সভ্যতায় উত্তীর্ন হয়েছে। এই উত্তরনই প্রগতি। পর্যায়ক্রমে সভ্যতা থেকে উন্নততর আধুনিক সভ্যতায় উত্তীর্ণ হচ্ছে ।  মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের  ইতিহাসে পুরুষের একক অবদান, এখানে নারীদের কোনো উল্লেখযোগ্য অবদান নেই। পুরুষকে ছাড়া মানুষের কয়েক হাজার বছরের সভ্যতার ইতিহাস অন্ধকার। বর্বর মানুষকে অন্ধকার যুগ থেকে যারা আলোর পথে নিয়ে এসেছেন, সেই মহান ব্যক্তিরা হলেন- বাল্মীকি , হোমার, সক্রেটিস, কনফুসিয়াস, কোট্রিল্য, ইবনে সিনা, ইবনে খালদুন, রুশো, মনটেসকো, কালমার্কস, আল্লামা ইকবালসহ অজস্রর।

নিজের এবং নিজের পরিবারের জীবন ধারনের জন্য পুরুষরা স্ত্রীদের তুলনায় অধিকতর কঠোর পরিশ্রম করে থাকে। নারীর তুলনায় পুরুষের আকার, শক্তি, বুদ্ধি ও সাহস বেশী। এসব গুনাবলী পুরুষরা উত্তরাধিকার সুত্রেই লাভ করেছে। আর এসব গুণাবলীর বধৌলতে তারা যুদ্ধ করে একটি প্রতিষ্ঠিত সাম্রারাজ্যকে ধ্বংস করে নতুন আরেকটি সাম্রারাজ্যের সূচনা করেছেন। ইতিহাসের সেই সব দুর্জয়-দুধর্ষ যুদ্ধারা হলেন- রোমান সাম্রারাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা অগাষ্ট সিজার, আব্বাসীয় সাম্রারাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা আবুল আব্বাস আসসাফফা, মৌর্য্য সাম্রারাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্ত, ওসমানীয় সাম্রারাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ ওসমান, মুঘল সাম্রারাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহির উদ্দিন বাবর, মোঙ্গলীয় সাম্রারাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চেংগিস খান প্রমুখ। পরিতাপের বিষয় এখানে কোনো নারীর নাম আজ পযর্ন্ত পাওয়া যায়নি।

সবল ও দুর্বলের পার্থক্য কেবল নর-নারীর ক্ষেত্রেই নয়, সকল ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাই তো পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে পুরুষেরা যা করতে পারে স্ত্রীরা তা করতে পারে না। আইন প্রনয়নকারী ও আইন সভার সদস্যরা যখন আইন প্রনয়ন করেন, তখন তারা সমস্ত নর- নারীকে সমান বলে গন্য করেন না। বাস্তবেও সবাই সমান নয়। এ প্রসঙ্গে বিশ্ব বিখ্যাত দার্শনিক জ্যাঁ জ্যাক রুশো, জন রাসকিন, সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রচুর গবেষনা ধর্মী প্রবন্ধ লিখেছেন। এসব প্রবন্ধগুলো থেকে অবগত হওয়া যায় যে, প্রথা ও আইনে নারী পুরুষের যে অসাম্যতা বিদ্যমান, তা মানুষের সৃষ্টি নয়, তা শ্বাশ্বত , প্রাকৃতিক ও যুক্তি সঙ্গত। পুরুষ হচ্ছে শক্তিমান ও সক্রিয় আর নারী হচ্ছে দুর্বল ও অক্রিয়। তাই নারী থাকবে পুরুষের অধীন। আর পুরুষকে বশে রাখার জন্যে সে ব্যবহার করে যাবে তার রূপ ও যৌবন। নারী কখনো পুরুষের সমান হবে না। সে হবে পুরুষের সহায়ক। পুরুষের শক্তি অভিযাত্রার ও যুদ্ধের। আর তার মেধা প্রকল্পনার ও আবিস্কারের। কিন্তু’ নারীর শক্তি শৃংখলার, যুদ্ধের নয়। আর মেধা আবিস্কারের বা সৃষ্টির নয়। পুরুষের নিজের পরিবারের প্রতি প্রধান দায়িত্ব হলো- ভরনপোষন, উন্নতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আর নারীর কাজগুলো হচ্ছে সংসারকে সাজানো গোছানো, আরামপ্রদ ও মনোরম করা। সুতরাং পুরুষ অসুস্থ, কর্মহীন ও পঙ্গু হলেও নারীকে তার অধীনেই থাকতে হবে জগৎ সংসারের কল্যান অব্যাহত রাখার জন্যে। এতে হতাশা, উৎকন্ঠিত ও অপমানিত হওয়ার কিছুই নেই।

সমাজের উন্নতির দোহাই দিয়ে শিল্প শ্রমিকদের চাষাবাদের কাজে, সাংবাদিকদের শিক্ষকতার পেশায়, চিকিৎসকদের ব্যাংকারের পেশায় ও প্রকৌশলীদেরকে প্রশাসন যন্ত্র চালাবার কাজে লাগানো হলে যেমন কোনো অগ্রগতির আশা করা যায় না, ঠিক তেমনি ভাবে নারীকে পুরুষের কাজে নিয়োজিত করা হলে আশা করা যায় না নুন্যতম কল্যানের।  বস্তুত প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী নারীর যে কাজের যোগ্যতা রয়েছে, তাকে সেই কাজে নিয়োজিত করাই সর্বোত্তম পরিকল্পনা। সমাজ ও রাষ্ট্রে একজন স্বল্প শিক্ষিত পুরুষ অকপটে একজন উচ্চ শিক্ষিত নারীর তুলনায় অনেক বেশী অবদান রাখতে সক্ষম। কিন্তু নারীকে পুরুষ উপযোগী করতে বেশ বেগ পেতে হয়। কেননা নারীত্বই তার সে কাজের প্রধান প্রতিবন্ধক।

নারী পুরুষের কাম সমস্য সমাধানের জন্য সব ধর্মেই পুরুষের একাধিক বিয়ের অনুমোদন আছে। তবে নারী পুরুষের দাম্পত্য সম্পর্কের বাইরে কামজ নানা সম্পর্কের  ক্ষেত্রে নারীর কোনো অনুমোদন নেই। অবশ্য বেশীর ভাগ মহিলারাই ধর্মীয় এ বিধান মানতে চায় না। বিশিষ্ট নারীবাদী লেখিকাদের মতে , মেয়েরা মেয়েদেরকে যত হিংসে করে, ছেলেরা তত করে না। মেয়েদের মধ্যে এই নিচতা, হীনতা, কূটচাল, হিংসে, লোভ ইত্যাদি বেশী। তাদের এ ধরনের নেতিবাচক আচরনের কারনে বেশ কয়েক জন প্রেরিত মহাপুরুষকে নির্বাসনে যেতে হয়েছে। বহু রাজাকে রাজ্য হারা হতে হয়েছে, ইতিহাসখ্যাত অনেক ভয়ংকর যুদ্ধ হয়েছে, অনেক সম্রাটকে নির্মমভাবে নিহত হতে হয়েছে এবং বর্তমানেও অগনিত পুত্র বধূ ও কাজের মহিলাকে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে ।  অথচ নারী-পুরুষ সম্পর্কের ক্ষেত্রে অপরাধ দমনের জন্য নারীদের তুলনায় পুরুষের জন্য নিয়ন্ত্রনমূলক কঠোরতর আইন প্রবর্তন করা হয়েছে। তবে নর- নারীর সম্পর্কের প্রশ্নে এ ভারসাম্যহীন আইনের সংশোধন আনা দরকার। সুতরাং নারী পুরুষ সম্পর্কের রূপ, প্রকৃতি, দায়িত্ব ও কর্তব্যের ভিন্নতা অটুট রেখে উভয়কে তাদের নেতিবাচক আচরন গুলোকে ইতিবাচক আচরনে পরিনত করতে হবে,তা হলেই জগৎ সংসার সুন্দর, সার্থক ও মধুময় হবে।

সকল ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে নারী ও পুরুষ পরস্পরের সহযোগী রূপে কাজ করছে। সময় কখনো ভাল গিয়েছে ও কখনো খারাপ গিয়েছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিপুল বিকাশ, তথ্যপ্রযুক্তি ও জীব প্রযুক্তির বিপ্লবের প্রেক্ষিতে নারী-পুরুষ সম্পর্ককেও পুনগঠিত ও নবায়িত করতে হবে। সময়ের প্রয়োজনে মেয়েদের কর্মক্ষেত্র গৃহস্থালির বাইরে সম্প্রসারিত হওয়ার ফলে পরিবার, গৃহস্থালি ও সন্তান পালনের উপর যে অভিঘাত এসেছে তাতে পরিবারের অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখোমুখী । এর ফলে ভয়াবহ আকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে – যৌন বিকৃতি, লিভটুগেদার, নারী নির্যাতন, পুরুষ নির্যাতন, যৌন হয়রানী, স্ত্রী হত্যা, স্বামী হত্যা, বলপ্রয়োগ, এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষন, ভ্রুন হত্যা, আত্মহত্যা, গুম ইত্যাদি। এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য আর্থ-সামাজিক-রাষ্ট্রীয় অবস্থার প্রেক্ষিতে সরকারকে ধর্মীয়, নৈতিক ও মানবিক শিক্ষার আলোকে সমগ্র জনগনকে এমন সহিষ্ণু ভাবে গঠন করে তুলতে হবে যাতে পুরুষ ও নারীদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ এবং স্নেহ ও ভালবাসা গভীর ভাবে তৈরী হয়। পাশাপাশি আইনের এমন কঠোরতর প্রয়োগ করতে হবে যাতে নারী-পুরুষ তাদের স্বভাবগত যোগ্যতা অনুযায়ী পৃথক ভবে ভিন্ন ভিন্ন কাজে যোগদান করে কাংখিত উন্নতি ও অগ্রগতি লাভ করতে পারে। আর এ কথা সব সময় শ্রদ্ধার সাথে স্মরন রাখতে হবে যে, নারী-পুরুষ পরস্পর বিপরীতমুখী হলেও একে অপরের পরিপূরক।

খায়রুল আকরাম খান : ব্যুরো চীফ, দেশ দর্শন

Some text

ক্যাটাগরি: নাগরিক সাংবাদিকতা, মতামত, সমকালীন ভাবনা, সাহিত্য

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

The Disadvantages of totally free…

Why I Bought TWO Persian…

Syrian Girl for Dummies

The Simple Truth About Russian…

New Report Shows The Reduced…

Azerbaijan Girls – Five Popular…

5 Closely-Guarded Bangladesh Women Strategies…

The New Fuss About Panamanian…

Simply How Much You Should…

The Thing You Need To…