শনিবার সকাল ১০:০৩, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

আমার বাবা-মা ও আমি (পর্ব-২)

৮৭১ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

পরর্তীতে তার চেয়ে একটু বড় একটি বাসা নেওয়া হয়। বস্তির পরিবেশ আর কতটুকু ভালই বা হয়। তবুও এই আমি সে পরিবেশ থেকেই আজকের এই অবস্থানে এসে পৌঁছেছি। এখনো মাঝে মাঝে আমার কানে খালাম্মার সেই কথা বেঁজে ওঠে,“ তুমি আশেপাশের আট-দশটি ছেলেমেয়ের মতো হলে আমাদের কিছু যায় আসে না, তবে তোমার জীবনেরই ক্ষতি বেশি হবে।” আমার বস্তির বন্ধুদের কথা আজও মনে হয়। তাদের বর্তমান জীবন কেমন তা আমার জানা নেই। ইচ্ছে হয় তাদের খোঁজ-খবর নিয়ে তাদের জীবনাধারাটা একটু দেখে আসি।

আসলে সেখানে ছেলেমেয়েদের জীবনধারা অনুন্নত হওয়ার জন্য দায়ী ছিল তাদের মা-বাবার চিন্তা-ভাবনা। আমরা সাধারণ মানুষরা দোষারোপ করি তাদের পরিবেশ ও পরিস্থিতিকে। আসলে পৃথিবীতে মানুষের আগমন হয়েছে পৃথিবীকে সুন্দর ও শান্তিময় করে তুলার লক্ষ্যে। তাই মানুষ যে পরিবেশ বা পরিস্থিতিতে থাকুক না কেন তা তার সুন্দর চিন্তা-ভাবনার অনুকূলে নিয়ে আসতে পারে। তাদের মা-বাবাও সমাজের উঁচু শ্রেণির অধিকাংশ মা-বাবার মত ভাবে উন্নত খাবার, প্রচুর আরাম আয়েশ, ভোগ-বিলাসিতা, যেখান হতে বিতাড়িত হয়ে এসেছে সেখানে জমিজমা ক্রয় করে একটা প্রভাব-প্রতিপত্তি তৈরি করা, মানুষকে তার ক্ষমতা প্রদর্শন ইত্যাদি। এতে তাদের প্রতিহিংসাপরায়ণ নীতিটাই প্রমাণ হয়ে থাকে।

পড়ুন- আমার বাবা-মা ও আমি (পর্ব-১)

যারা তার চেয়ে একটু ব্যতিক্রম ভাবে তারা কোনো রকম দুবেলা দুমুঠো ভাত খেয়ে কোনো রকম জীবন পার করে দেওয়া। তারা জীবনের আসল গতি-প্রকৃতি কী? তা অনুধাবনের কাছে গিয়েও তা হারিয়ে ফেলে। আমি তখন আমার সে সময়কার বন্ধুদের সাথে মেলামেশা-খেলাধুলা ঠিকই করতাম কিন্তু নিজেকে তাদের মাঝে হারিয়ে ফেলতাম না। দীর্ঘ আড়াইটা বছর কেটে যায় সেই বস্তির বাশেঁর বেড়া আর টিনের ছাউনির নিচে। আমি মাঝে মাঝে ভেবে অবাক হয়ে যায় এই আজকের আমি কী সেই দিনের বস্তির ছোট্ট ছেলেটি! যে কিনা আজকে শিক্ষকতা করছি, কলম চালাচ্ছি কঠোর হস্তে। জীবনের সেই দিনগুলোকে সামনে না রেখে আগামীর পথ চলা আমার পক্ষে অসম্ভব।

আমার খলাম্মা আয়েশা আক্তার রীমা। যিনি আমার সকল বিষয় দেখাশুনা করতেন। তার প্রভাবই বোধহয় আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি। তিনি বর্তমানে ঢাকায় আছেন। এক সন্তানের জননী। তিনি সবসময় আমাকে কড়া শাসনে রাখতেন। তিনি ১৯৯৯ সালে আইএ পাশ করেন। যার কারণে তিনিই সব সময় আমার পড়াশুনার ব্যাপারটা দেখতেন। চট্টগ্রামে যাওয়ার পর তাকে গার্মেন্টসে চাকরি নিতে হয়। সারাদিন গার্মেন্টসে চাকরি করার পরও রাতে বাসায় ফিরে এসে আমাকে পড়াতে বসতেন। সে কথা এখনো মনে হলে ভাবি, কেন আন্টি আজ আমার থেকে এত দূরে? সময় ও পরিস্থিতির বাস্তবতাকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না।

আব্বা মালয়েশিয়া থাকা সত্ত্বেও আমাদের পরিবারকে দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের চিন্তা থেকে তিনি নিস্তার দিতে পারিনি। অবশ্য আমাদের এই দুঃসময় তিনি আমাদের থেকে বহুদূরে। মালয়েশিয়ায় আব্বা ভালই ছিলেন। তবে হঠাৎ অনাকাক্সিক্ষত এক দুর্ঘটনায় আবার হাতের তিনটি আঙ্গুলে সমস্যা হয়। যা কখনো ভাল হয়নি। তার কাগজ পত্রে সমস্যা থাকায় মালয়েশিয়া থেকে চলতে আসতে হবে। এখবর পাওয়া মাত্র আমরা আকাশ থেকে পড়ি। তবে তিনি আসবে বলে আমাদেরকে এখন বস্তির এই ঘরটি ছেড়ে নতুন এলাকায় নতুন বাসায় গিয়ে উঠতে হবে।

চলবে

শরীফ উদ্দীন রনি : সাংবাদিক, শিক্ষক

Some text

ক্যাটাগরি: আত্মজীবনী

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি