সোমবার রাত ১:০১, ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ. ২৮শে মে, ২০২৩ ইং

কী লিখব, কী লিখব না

৫২৩ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

রূপময় বাংলাদেশ। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর এই দেশের লেখক কবি সাহিত্যকগণ লেখার উপজীব্য সংগ্রহ করেন প্রকৃতি থেকে। ফুল, পাখি, গাছ, লতা, পাতা, পাহাড়, নদী, ঝর্ণা, আকাশ, চন্দ্র, সূর্য, তারা প্রভৃতি লেখার প্রাকৃতিক উপকরণ। প্রকৃতি ছাড়াও বাংলাদেশী লেখকদের লেখনীর অন্যতম বিষয় ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ। এসব ছাড়াও লেখার প্রধান বিষয়বস্তু হচ্ছে মানুষ। মানুষের জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ, সুখ, দুঃখ হাসি, কান্না, জীবনবোধ, প্রেম ভালোবাসা, লড়াই, সংগ্রাম, কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য লেখার মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত।

প্রাচীন বংলা সাহিত্য থেকে শুরু করে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ পার হয়ে আধুনিক বাংলা সাহিত্য এভাবেই চলে এসেছে। প্রার্থক্য হয়েছে শুধুমাত্র ভাষার প্রয়োগ আর ব্যবহারে। ভাষার উত্তরাধুনিক যুগ ধরা হয় একুশ শতাব্দীকে।এই শতাব্দীর শুরুতে ভাষার আধুনিকতা কিছুটা বজায় থাকলেও প্রযুক্তির উৎকর্ষতা ও সহজ লভ্যতার কারণে লেখার মাধ্যম, একদিকে যেমন কাগজ কলম ছেড়েছে, সেই সাথে লিখনীর উপজীব্য বিষয়ও বিরাট পরিবর্তন এসেছে। একসময়ের খ্যাতিমান ও জনপ্রিয়  বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের লেখকদের সবাই প্রকৃতি, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ আর মানুষ নিয়ে তাদের সাহিত্য রচনা করেছেন।

উত্তোরাধুনিক যুগের সাহিত্যে কম্পিউটারও মোবাইল ফোন নিয়েছে কলমের জায়গা, ওয়েবসাইট ও ওয়েব পেজ নিয়েছে বইয়ের জায়গা। বড় সাহিত্য এখন খুব বেশি একটা হয়না। এই যুগে ছোট ছোট সাহিত্যের জনপ্রিয়তা খুব বেশি। দুতিন লাইনে মানুষ নিজের অনুভুতি প্রকাশ করে আধুনিক সব মাধ্যমে।

আগেকার যুগের লিখকগণ ছিলেন হয়তো উচ্চ শিক্ষিত, নয়তো প্রচুর জীবনবোধ থেকে স্বশিক্ষিত। আজকাল লেখক হওয়ার জন্য উচ্চ শিক্ষা বা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত স্বশিক্ষার খুব বেশি দরকার হয়না। প্রযুক্তির ব্যবহার জানলে যে কেই হতে পারেন লেখক। তাই ভাষা পন্ডিতগণ বলেন ডিজিটাল মাধ্যমে লেখা বাড়লেও মানসম্মত কোন সাহিত্য বের হচ্ছে না।

এই যুগের সব চেয় বড় একটা পরিবর্তন হলো প্রকৃতি, ভাষা অন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়ে এখন আর তেমন একটা সাহিত্য রচনা হয়না। এখন মানুষের লেখার আর সাহিত্য রচনার মাধ্যম হলো শুধুই মানুষ। এর মধ্যেও আবার কথা আছে। এখন মানুষের ইতিবাচক সবদিকে লেখা যথেষ্ট কম তৈরী হয়। বেশি লেখা হয় মানুষের নেতিবাচক দিক নিয়ে। ইতিবাচক যা কিছু তার বেশির ভাগ আত্মকেন্দ্রিক।

আর তাইতো নানান মাধ্যমে আমাদের লেখায় প্রেম-ভালোবাসার জায়গা নিয়েছে পরকীয়া, ধোঁকা আর মানুষ ঠকানো। মানুষের জন্য মানুষের জীবন বাঁচানোর অসাধারণ গল্পের কাহিনী আজ চাপা পড়ে মানুষ মানুষের জীবন নেয়ার অসংখ্য গল্পে। ভাষার জন্য, দেশ-জাতীর জন্য জীবনবাজী রাখার ইতিহাস চাপা পড়ে নিজেস্ব স্বার্থে বিশাল বিশাল দূর্নীতির ইতিহাসে। পারষ্পরিক সহযোগীতর ছোট ছোট গল্পগুলি হারিয়ে যায় সর্বত্র অনিয়ম আর বিশৃংঙ্খলার গল্পের ভীরে। সুন্দর পোশাক, সুন্দর মুখশ্রী উপস্থাপনে ব্যস্ত মানুষ এখন আর সুন্দর মনের কবিতা লিখে না।

গাছের ডালে ঝুলন্ত অসহায় নারী শিশুর লাশ আর পেরক ঠুকানো বিজ্ঞাপনের সাইনবোর্ড দেখে এখন আর গাছ নিয়ে জন্ম হয়না কোন কবিতা। পুকুর ডোবা ভরাট, নদীর জল দূষিত, কি করে লেখা যায় মাছ বা নদীর ছড়া। তার উপর নদীতে নৌকা ডুবে লঞ্চ ডুবে ভেসে উঠে মানুষের লাশ। বীভৎস পঁচা লাশের দুর্গন্ধে বসে বসে আর লেখা যায় সখিনা জরিনা প্ররিতোষ সুবোধের সুখের সংসারের কোন উপন্যাস।

আমাদের লেখায় এখন তাই গুম, খুন, ধর্ষণ, প্রতারণা, দুর্নীতি আর অনিয়মের ছোট ছোট বড় আখ্যান। ইট পাথরে ঘর বাড়ি, লোহা লক্করের কারখান আর যানবাহনে গ্রামের মেঠো পথ হারিয়ে গেছে সেই কবে, কি করে গাই আমরা গরুর গাড়ীর গান। মানুষে মানুষে বিশ্বাস নেই, আস্থা নেই, ভরসা নেই, ভালোবাসা নেই। নেই প্রাণ খোলা হাসি। তাই বাংলা ভাষার এই উত্তর আধুনিকতায় নেই গর্বের ইতিহাস, বুকে লালনের ঐতিহ্য, সবাই মিলে মহাসমারোহে পালনের কোন কৃষ্টি।

 

এই সভতা, এই আধুনিকতা এই প্রযুক্তির উৎকর্ষতা আমাদের আরামদায়ক জীবন দিয়েছে। কিন্তু স্বস্তিদায়ক মন দিতে পারেনি। নিরাপদ খাদ্য, ওষুদ আর নিরাপদ জীবন দিতে পারেনি। একের পর এক দেশে ঘটে যায় আলোড়ন সৃষ্টি করা নেতিবাচক সব ঘটনা। কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা, কার পক্ষে লিখব আর কার বিপক্ষে লিখব, কি লেখা বৈধ, কি লেখা অবৈধ, লিখে আবার কি বিপদে পরি। কি লিখব আর কি লিখব না, এসব ভাবতে ভাবতে কেটে যায় সময়। কি করে আমাদের নতুন প্রজন্ম লিখতে পারবে বাংলা সাহিত্যর নতুন কোন অমর সাহিত্য।

রুপকথার রাক্ষস-খোক্ষস, জীন-পরী দেও-দানবের গল্প শুনে বড় হয়েছি আমরা। আর আমাদের সন্তানরা বড় হয় মানুষ নামক রাক্ষস-দানবের ছবি আর ভিডিও চিত্র দেখে। তাই বিশ্ব জগতের অধিকর্তার কাছের আমাদের প্রাত্যহিক প্রার্থনা “আমাদের রক্ষা করো প্রভু, আমাদের নিরাপদে রাখো। আমাদের সন্তানদের একটি সুন্দর পৃথিবী দাও।”

মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ : ১০ অক্টোবর ২০১৯

Some text

ক্যাটাগরি: চিন্তা, মতামত, সমকালীন ভাবনা

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

The Disadvantages of totally free…

Why I Bought TWO Persian…

Syrian Girl for Dummies

The Simple Truth About Russian…

New Report Shows The Reduced…

Azerbaijan Girls – Five Popular…

5 Closely-Guarded Bangladesh Women Strategies…

The New Fuss About Panamanian…

Simply How Much You Should…

The Thing You Need To…