রবিবার সকাল ১১:৫২, ১২ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ. ২৬শে মার্চ, ২০২৩ ইং

আমার বাবা-মা ও আমি (পর্ব-৩)

৮১৭ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

আমরা চট্টগ্রাম থাকার সময় হঠাৎ বড় মামা এসে উপস্থিত হয় আমাদের নিকট। তিনি তখন কক্সবাজার থাকতেন। কিভাবে যেন আমাদের চট্টগ্রামে আসার খবর তার কাছে পৌঁছায়। তিনি ছন্নছাড়া জীবনযাপন করতেন। ঘর সংসারের প্রতি তার কখনো আমি আকর্ষণ দেখিনি। থাকলেও হয়তো তা অভাব অনটনের কারণে খুব বেশি একটা জেঁগে উঠতে পারেনি। বিদেশ গিয়েও বেশি দিন টিকতে পারেননি তিনি। নানির অনেকগুলো টাকা অযথা নষ্ট হয়েছিল তার পেছনে। সময় কখন কাকে কোথায় টেনে নিয়ে যায়?  তা কেউ ভাবতেও পারে না। চট্টগ্রাম আসার পর কিছু বন্ধু-বান্ধব জুটে যায় তার। তাদের সাথে খুব বেশি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়। একসময় তিনি ফলের ব্যবসা করতেন। পরে তিনি তার বন্ধুদের সাথে মিলে মাছের ব্যবসাও করেন। তিনি জীবনে কোনো ব্যবসাতেই সফলতার দেখা পাননি। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে কী ভেবে তাদের বংশগত পীরকে ছেড়ে অন্য পীর সাহেবের কাছে মুরিদ হয়। তিনি তখন হতে  আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যায়। নানিদের তাকে বিয়েসাদির কথা  বলতে কখনও আমি শুনিনি। কী কারণে তার বিয়েসাদি করা হয়নি তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। অনেক বছর পর নানার বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়। এরপর বেশিদিন পৃথিবীতে জীবিত ছিলেন না তিনি।  তার জীবনের শেষদিনগুলো খুবই কষ্টের ছিল। আমার পরিবারের কারোরই তার চিকিৎসার জন্য টাকা খরচ করার মত সামর্থ্য ছিল না। তার চিন্তাভাবনাগুলো তাকে জীবন থেকে সরিয়ে ফেলেছিল। একজন পুরুষ হয়েও সারাজীবন কাটতে হয়েছে অন্যের দিকে চেয়ে।

আম্মা বড়াইলের পীরসাহেবের মুরিদ। যারা কিনা মুরিদ হওয়ার পর গরুর মাংস ছুঁয়েও দেখে না। আম্মার বাবার বাড়ির সবাই আগে থেকে সেই পীরসাহেবের মুরিদ হওয়ায় তিনি জন্মের পর আমার মনে হয় এখনও এক টুকরো গরুর মাংস খেয়ে দেখেননি। এ নিয়ে তাদের সাথে আমি অনেকের বাদানুবাদ হতে দেখেছি। আব্বাতো ঘরে যেদিন গরুর মাংস খেতেন আম্মা গাল ফুলিয়ে থাকতেন। আব্বা বিদেশ যাওয়ার পর একটু হুজুর ধরনের হয়ে যায়। তিনি তখন থেকে আমার ধর্মীয় শিক্ষাকেই গুরুত্ব দিতেন বেশি। আব্বা এসব পীরটির দেখতে পারেন না। আমার এখনও মনে আছে ছোটবেলা আব্বা দোকানে নিয়ে আমাকে বিভিন্ন খাবার জিনিস খাইয়ে বশে এনে জিজ্ঞেস করতেন আম্মা বড়াইল গিয়েছে কিনা। আমি কি আর তখন এতসব কিছু বুঝতাম। আমিও সব বলে দিতাম। তখন তাদের একদফা হয়ে যেত। সেই সুবাদে দীর্ঘ আঠার বছর আমিও গরু মাংস খাইনি। তবে এখন পেলে ছাড়ি না। বাসায় এর মধ্যে অনেকেই এটা টের পেয়ে গেছে। তাতে কি যা মিথ্যা তাকে কি আর বেশি দিন নিজের মধ্যে ধরে রাখা যায়?

আব্বা আসার কিছুদিন পূর্বেই আমাদের বাসা পরিবর্তন করতে হবে। তাই শহরের জীবনে অন্যতম ঝামেলাপূর্ণ কাজ হলো বাসা খোঁজ করা। তা আমাদেরকেও রেহাই দেয়নি। অনেক কষ্টে খোঁজ করে ঈদাগাহ এলাকার কাছকাছি মুন্সি পাড়ায় একটি বাসা পেয়ে যায়। ভাড়াও খুব বেশি না বাইশ টাকার মতো। অবশ্য তখন আমাদের পরিবারের জন্য এই টাকা বাইশ হাজার টাকার সমান ছিল। তবে আমি এসবের কিছুই জানি না। বড় হওয়ার পর সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আম্মা ও অন্যান্যদের কাছ থেকে বের করেছি। পিকআপ দিয়ে ঘরের মালামাল সেই বাসায় আনা হয়। নতুন এলাকায় এই প্রথম আমার পা পড়ল।

নতুন বাসার পরিবেশ অনেকটা ভাল। এখানে দুই রুমের ঘর ছিল প্রায় ষোলোটা। এধরনের পরিবেশে একত্রে একাধিক পরিবার বাস করলে তাকে চট্টগ্রামে কলোনি বলা হত। আমরা যে কলোনিতে থাকতাম তার নাম ছিল ‘রফিক মাদ্রাসের’ কলোনি। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে গেলে নিজের মতের সঙ্গে বা কথার সঙ্গে মিলে এমন মানুষ মিলে যায়। সেখানেও কিছু পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা বেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার করত আমাদের সাথে। আমি একটু চুপচাপ বেশি থাকতাম ও কাউকে ডিস্টার্ব করতাম না বলে তারা আমাকে অনেক আদর-যত্ন করত। যা আমি আমার আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকেও পাইনি। আসলে মাঝে মাঝে এমন হয় যার জীবনে কিছু পাওয়ার সম্ভাবনাই নেই। সেও চলতে ফিরতে এমন সব পায় যা সে নিজেই কল্পনা করতে পারে না। তাদের ভালোবাসার কথা আজও আমার হৃদয়ে গেঁথে আছে।

Some text

ক্যাটাগরি: আত্মজীবনী, স্মৃতিচারণ

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

Flirt4free Review: Security, Prices, Models

The Best Chat Room Apps…

Videochat de sexo

Take part in the Finest…

The Fantasy About Ukraine Girls…

The Hidden Treasure Of Costa…

Se corre en su cara

On the web Pokies Modern…

5 Simple Techniques For Portuguese…

The Idiot’s Guide To Sexy…