শনিবার রাত ১১:৫৬, ২৭শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ. ১০ই জুন, ২০২৩ ইং

আমাদের মুসা স্যার: একজন বড় মানুষের সাথে আমার সুখস্মৃতি (পর্ব ২)

৮৭৭ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

সদ্যপ্রয়াত ভাষা সৈনিক ও সাংবাদিক মুহম্মদ মুসা স্যারের সাথে আমার পরিচয় খুব বেশি দিনের নয়। ২০০৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হই। সে বছরই কলেজে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া কর্মসূচি কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর পুনরায় চালু করেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শ্রদ্ধেয় প্রফেসর জনাব আবদুন নূর স্যার। সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন আমাদের শ্রেনী শিক্ষক শ্রদ্ধেয় জনাব ওসমান গণী সজিব স্যার এবং সহকারি ছিলেন জনাব মোঃ আব্দুল হান্নান স্যার।

প্রতি শুক্রবার ১০টায় কলেজের এল.টি কক্ষে ক্লাস ছিলো।এমনি একটি ক্লাসে একদিন সজিব স্যার মুসা স্যারকে অতিথি করে নিয়ে আসেন। ক্লাসের নিয়ম ছিলো আমরা বিগত সপ্তাহে যে বইটি পড়েছি সেটির উপর ১০টি ভালো লাগার লাইন ও ১০টি খারাপ লাগার লাইন উল্লেখ করে তার উপর আলোচনা লিখে আনা এবং ক্লাসে এসে মঞ্চে দাড়িয়ে সে বইটির আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে বক্তব্য রাখা।

সেদিন যে কয়েকজন বক্তব্য প্রদান করেছিলো, তারমধ্যে আমিও ছিলাম। আমাদের সবার আলোচনা শেষে সজিব স্যার মুসা স্যারের পারিচয় করিয়ে দিলেন আমাদের সাথে, যিনি এতো ক্ষণ আমাদের আলোচনা শুনছিলেন। সজিব স্যার মুসা স্যারের যে ‍পরিচিত আমাদের সামনে তুলে ধরলেন তাতে আমার মনে হলো তিনি যদি আমাদের বক্তব্যর আগে মুসা স্যারের পরিচয় দিতেন তাহলে আমরা হয়েতো নিজেদের বক্তব্যগুলি উপস্থাপন করতে পারতাম না।

সজিব স্যারের মুখে মুসা স্যারের পরিচিতি পেয়েই আমরা তার প্রতি অনুরক্ত হয়ে যাই এবং ‍মুসা স্যারের বক্তব্য শুনে তাঁর ভক্ত হয়ে যায়। সেদিন ক্লাস শেষে আমরা সবাই মুসা স্যার আর সজিব স্যারের সাথে এক সাথে বের হচ্ছিলাম। বের হতে হতে নানান কথার ফাঁকে মুসা স্যার আমার দেয়া বক্তব্যর প্রশংসা করলেন। গুণী মানুষের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে আমি উনার প্রতি আরো বেশি আগ্রহী হয়ে উঠি।

তারপর থেকে স্যারের সাথে প্রায়ই দেখা হতো। কখনো তিনি অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ স্যারের রুমে যাচ্ছেন বা ফিরে আসছেন। কখনো নিয়াজ মোহাম্মদ স্কুলের দিকে যাচ্ছেন। কখনো ডাক বাংলার মোড় বা শহরের দিকে হাঁটছেন।স্যারের সাথে দেখা হলেই সালাম দিতাম, দু’কদম স্যারের সাথে হাঁটতাম।স্যার কুশলাদী জিজ্ঞাস করতেন। স্যারের সাথে কুশলাদীর উত্তর দিয়ে এটা ওটা জিজ্ঞেস করতাম। একসময় এটা নিয়মিত হয়ে গেলো। স্যার যেহেতু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গবেষক তাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে এটা সেটা প্রশ্ন করতাম। স্যার আগ্রহ নিয়ে একের পর এক গল্প আর ইতিহাস গুলি বলতেন।

নানান সময় মুসা স্যারের সাথে হাঁটতে হাঁটতে তাঁর মুখে এই কলেজ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস শুনেছিলাম। শুনেছিলাম এই শহীদ মিনার নির্মাণের ইতিহাস। শুনেছিলাম অধ্যাপক হরলাল রায় স্যার, কবি আসাদ স্যার, আর কবি আল মাহমুদ স্যারের নানা কথা।নিয়াজ মোহাম্মদ স্কুল কিভাবে প্রতিষ্ঠা হলো, এটির নাম জর্জ মাইনর স্কুল বা কলেজিয়েট স্কুল কেন ডাকা হতো। স্যারের কাছেই শুনলাম যে মাঠটি আমরা কলেজ মাঠ নামে চিনি এটি আসলে কলেজের মাঠ নয়, এটি নিয়াজ মোহাম্মদ স্কুলের মাঠ। অবকাশ বা ফারুকী পার্ক প্রতিষ্ঠার গল্প। সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাবলিক লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠার কথা। কুরুলিয়া খাল বা এন্ডারসন খালের কাটার কথা। নিয়াজ মোহাম্মদ স্টেডিয়াম আর এসডিওর মেলার কথা মুসা স্যারের কাছ থেকে আমার শোনা। আরো অনেক কিছু শুনেছি যার অনেকটিই আমার মনে নেই।

মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সম্পর্কে জানতে আমি একটু বেশি আগ্রহী ছিলাম, কারণ জন্মসুত্রে আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্তান হলেও বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত আমরা সপরিবারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহিরে ছিলাম। তাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতাম না। মুসা স্যার ছিলেন আমার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সম্পর্কে জানার প্রথম ও সর্বত্তোম পাঠ এবং শিক্ষক।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সম্পর্কে আমার জানার আগ্রহ উপলব্ধি করে একদিন তিনি কলেজের গেটে কাছে আমাকে দেখে ডাকলেন। বললেন ভাতিজা তোমাকেই খুঁজতে ছিলাম। স্যার আমাকে খুঁজছেন শুনে আমি ততধিক ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললাম, জি স্যার কেন খুঁজছিলেন। স্যার তখন নিজের হাতে থাকা একটি বই আমার হাতে দিয়ে বলেন, এই বইটা পড়বা, এইটা পড়লে তুমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনেক ইতিহাস আর ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে জানতে পারবা।

বইটি ছিলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব থেকে প্রকাশিত, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আরেক খ্যাতিমান ব্যক্তি প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি জনাব মনসুর কামাল সম্পাদিত “কালোত্তোর ব্রাহ্মণবাড়িয়া” শীর্ষক বই।বইটি আজো আমার ব্যক্তিগত সংগহে আছে। এটি হাতে দেয়ার পর স্যার এটাও বলেছিলেন যে “ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিবৃত্ত” বইটা আমার কাছে খুব বেশি সংখ্যক নাই, তুমি পাবলিক লাইবেরি বা সরকারি গণগ্রন্থগারে পাবে। আমি ওখানে কপি দিয়ে রেখেছি”।

মুসা স্যার একদিন কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন এই যে, শহীদ মিনারের পেছনের গাছগুলি দেখছ, এগুলি আমার হাতে লাগানো, ফারুকী পার্কের বড় বড় অনেক গাছ সহ শহরের অনেক স্থানে আমার হতে বা উদ্যোগে লাগানো গাছ আছে। কোন কোন স্থাপনা করার সময় কোন কোন গাছ কাটা পরেছে সেগুলিও তিনি অবলীলায় বলতে পারতেন।তিনি বলেতন শোন তোমরা যে গাছের ছায়ায় বসে সময় কাটাও, ফুল ছেড়ো, ডাল ভাঙ্গ, এগুলি আমার সন্তানের মত আদর যত্নে বড় করা। কোন গাছ কাটা পড়লে আমি কষ্ট পাই। তোমরা সুযোগ পেলেই নিজে গাছ লাগাবে, অন্যদেরও গাছ লাগাতে বলবে। কারণ গাছ আমাদের অন্যতম বন্ধু। বই এবং গাছের ঋণ কখনো শোধ করা যায় না।

পড়ুন ১ম পর্ব- মুসা স্যার: বৃহৎ মানুষের সঙ্গে ক্ষুদ্রস্মৃতি

স্যারের সাথে আমার এই হাঁটতে হাঁটতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গল্প শোনা প্রায় বছর দেরেক ছিলো। স্যারের সাথে হাঁটতে দেখে আমার কয়েকজন বন্ধু একবার আমাকে বলেছিল মনির ঐ বুড়া লোকটা তোর কি হয়। অনেক সময় তাঁর সাথে তোকে দেখি। আমি স্যারের পরিচয় দিয়ে বলেছিলাম দেখতে সাদামাটা এই লোকটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজন সম্মানিত ব্যক্তি, তিনি সাংবাদিক, শিক্ষক, ব্রাহ্মবাড়িয়ার গবেষক, লেখক। আমি তাঁর কাছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাস জানতে চেষ্টা করি।(মুসা স্যার সাদা-মাটা জীবনের অধিকারী হলেও তখনও “সাদা মনে মানুষ” খেতাবটি পাননি।) বন্ধুদের একজন মন্তব্য করেছিল এক কবি আরেক কবির দেখা পাইছস। (ততদিনে আমি বন্ধু মহলে কবি হিসেবে ছোট খাটো একাট পরিচিত পেয়েছিলাম।) বন্ধুর মন্তব্যর প্রতিউত্তোরে আমি বলেছিলাম “কার সাথে কার তুলনা করস, আমিতো তাঁর পায়ের ধুলো পাওয়ারও যোগ্য নই”।

একসময় আমি ভাবতাম, স্যার আমাকে পেলেই কথা বলতে আগ্রহী কেনো। অনেক পরে এটার উত্তর জানতে পারি। মুসা স্যার আসলে আমার প্রতি নয়, তিনি এমন প্রত্যেক মানুষের সাথে কথা বলতে আগ্রহী, যারা ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে জানতে চায়; যারা ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ভালোবাসে। কারণ তিনি নিজেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেমিক।

চলবে…

মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯
(বিঃদ্রঃ বানান ভুল মার্জনীয়, শুধরিয়ে দিলে উপকৃত হবো)

Some text

ক্যাটাগরি: সাহিত্য, স্মৃতিচারণ

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

Choosing Virtual Data Rooms

Work Search Strategies – How…

THAT World and Business

Program For Modern Business

Why Every one Is Speaing…

Using Your Hot Filipino Girls…

Hot Brazilian Girls Some ideas

What To Expect From Bark…

GRATUITO ROM: Download Oppo Stock…