শুক্রবার দুপুর ২:৩২, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবসে আপনাকে ভীষণ মনে পড়ে স্যার

৮৯২ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

 

হাজারো প্রাণে সেরা প্রধান শিক্ষক যিনি
মরহুম এস এম শামসুজ্জামান স্যার তিনি।

➤”একটি প্রদীপ বা মোমবাতি থেকে যেমন হাজারটি বাতি জ্বালানোর পরেও তা শেষ হয়না,ঠিক তেমনি জ্ঞানের আলো বিতরন করলেও তা কখনো ফুরিয়ে যায়না”।
➤”অধ্যবসায়,একাগ্রতা, নিষ্ঠা ছাড়া জীবনে সফলতা আসেনা”।
➤”তুমি যদি অন্যজনার মঙ্গলের কথা ভাব,তখন অন্যজন তোমাকে নিয়ে ভাববে”।

জীবদ্দশায় শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সময় প্রায়শ্চই উপরোক্ত জ্ঞানগর্ভ কথা ও উপদেশ গুলো যিনি বলতেন তিনি হলেন মরহুম এস এম শামসুজ্জামান স্যার।ভাল কথা,সুন্দর উপদেশ,যথার্থ আদেশ নিষেধ প্রদানে তিনি কখনো শিথিলতা প্রদর্শন করেননি।নৈতিকতার প্রশ্নে তিনি ছিলেন অটল,নিজ বিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীদের সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার চিন্তায় থাকতেন বিভোর।বাগানে কত ফুল ফুটে,গন্ধ বিলিয়ে ঝরে যায়।কে তারে মনে রাখে?কিন্তু তিনি ছিলেন এমনই এক সুগন্ধি ফুল হাজারো শিক্ষার্থীদের মনের বাগানে আজো সতেজ হাসনাহেনা,গোলাপ,রজনীগন্ধা!!

আমার ছাত্র জীবনের প্রিয় শিক্ষক,আদর্শ ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক তিনি।আমার বিশ্বাস যে সকল শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা জীবনে স্যারের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছেন,সেই সব সৌভাগ্যবানদের সকলেরই প্রিয় শিক্ষকের তালিকায় মরহুম শামসুজ্জামান স্যারের নামটি অম্লান।

এরিস্টটল,প্লেটো,সক্রেটিস রা বার বার জন্মগ্রহণ করেন না।শিক্ষক হিসাবে তিনি ওনাদের থেকে পিছিয়ে ছিলেন না।ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার স্বনামধন্য বিদ্যাপিঠ কাইতলা যঁজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি ছিলেন এক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব।ওনার আদর্শ, রুচিবোধ,শিক্ষা দান পদ্ধতি,পোশাক পরিচ্ছেদ,বাচনভংগি, চলার স্টাইল ছিল আধুনিক ও মার্জিত। এক কথায় অসাধারণ।
স্কুল জীবনে আমাকে ইংরেজীতে কথা বলতে যেই মহান ব্যক্তিটি বেশী চাপে রাখতেন তিনি হলেন জনাব, শামসুজ্জামান স্যার।স্যার আমাকে প্রায় প্রতিদিন ওনার অফিসে ডেকে পাঠাতেন,নিজের কাজের ফাকে কমপক্ষে দুটো English Passage করাতেন।আবার হোম ওয়ার্কও দিতেন।আমার সাথে ইংরেজিতে কথা বলতেন।স্যারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্কুল জীবনেই আমি অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতে পারতাম।মরহুম শামসুজ্জামান স্যার স্কুলের অফিস কক্ষে রক্ষিত অনার্স বোর্ড দেখিয়ে এক এক করে Mr. Abdul Majeed sir,প্রফেসর ড.শাহালম স্যার,মোঃশাহজাহান স্যার এবং Prof.Dr.Mohammad Abdur Rashid স্যারের ছাত্র জীবনের গল্ল শুনাতেন।যা আমাকে অনুপ্রাণিত করত।মনে পড়ে আমার এসএসসি পরীক্ষার পরের অবসর সময় টুকুতে স্কুলে গেলে ৯ম/১০ম শ্রেণির স্যারের ইংরেজি পিরিয়ডের ক্লাস গুলো আমাকে নিতে বলতেন। দপ্তরির মাধ্যমে চক ডাস্টার আনিয়ে নিজে আমাকে ক্লাস রুমে রেখে আসতেন।ওনার ঔ স্নেহভরা অবদানের কারণেই হয়তো পৃথিবীর ১৩টি দেশের পথে প্রান্তরে আর অফিস পাড়ায় নানান জাতির মানুষের সাথে নিজেকে প্রকাশ করতে পেরেছি।

শারীরিক গঠনঃ উচ্চতায় তিনি ছিলেন এমনই এক আকৃতির যে কারোর দৃষ্টি ওনার উপরে পড়তো। সোনালী ফর্সা বরণ ছিল শরীরের রূপ। যৌবনে সবসময় দাড়ি গোফ ক্লিন সেব করে রাখতেন।মুখে সবসময় হাসি লেগেই থাকতো।ওনার হাটা চলা ছিল যথেষ্ট মার্জিত ও গম্ভীর। স্পষ্ট ভাষায় ছোট ছোট কথা বলতেন।মাঝ বয়সে এসেও স্যারের মাথা ভর্তি কালো চুল ছিল।

পোশাক পরিচ্ছদঃপোশাক আশাকের ব্যাপারে তিনি ছিলে অতিব যত্নশীল। ইস্তিরি করা পরিপাটি প্যান্ট শার্ট,ব্লেজার,ওভারকোট,স্যুট এবং মাঝে মধ্যে হাফ হাতাওয়ালা ফতুয়া পরিধান করতেন।বিশেষ বিশেষ দিন গুলোতে পাজামা পাঞ্জাবীও পরতেন।আমার দেখা তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি মফস্বলের স্কুল শিক্ষক যিনি কোট-টাই পরে স্কুল করতেন।ওনার রুচিশীল পোশাক ও সুন্দর ব্যক্তিত্বের কারনে বহু পদস্থ ব্যক্তিরাও মন থেকে স্যারকে সমীহ করতেন।সবসময় পলিশ করা সু ; কখনো চামড়ার জুতা ব্যবহার করতেন। হাতে একটি সুদৃশ্য চামড়ার ছোট ব্যাগ এবং অনেক সময় বাঁধাই করা লাঠি রাখতেন।

“মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই,
যেন গোর থেকে মোয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই”।

সবাইকে ছেড়ে আজ তিনি কাইতলা গ্রামের নিজের গড়া মসজিদের পাশে পুকুরপাড়ে চির নিদ্রায় শায়িত।
মহান আল্লাহ পাক স্যারকে জান্নাত নসিব করুন।আমিন।

Some text

ক্যাটাগরি: নাগরিক সাংবাদিকতা, বিবিধ

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি