শনিবার দুপুর ১২:২৮, ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ৫ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং

ব্রাহ্মণবাড়িয়া (সদর) উপজেলার নামকরণের ইতিকথা: এস এম শাহনূর

১২৩৮ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

প্রাচীন জনপদ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রাচীনত্ব সম্পর্কে বহু প্রমাণ পাওয়া যায়।বাণিজ্যিক নৌপরিচালনার সুবিধার্থে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জরিপবিদ ও প্রকৌশলী জেমস রেনেলকে বঙ্গীয় নদীব্যবস্থার জরিপ ও এর মানচিত্র প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। রেনেল ১৭৬৩ থেকে ১৭৭৩ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারের তরফে বাংলার এক সেট মানচিত্র প্রস্তত করেন। তাঁর ১৭৭৯ সালে মুদ্রিত বেঙ্গল এ্যাটলাস (Bengal Atlas) বাণিজ্যিক, সামরিক ও প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গির দিক দিয়ে একটি অতিমূল্যবান কাজ। শিক্ষামূলক, প্রশাসনিক ও নৌ-পরিচালনা- প্রতিটি ক্ষেত্রেই মধ্য উনিশ শতকে পেশাগত মানচিত্রের আত্মপ্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত রেনেলের মানচিত্রই একমাত্র নির্ভরযোগ্য নির্দেশক ছিল।”রেনেলের এই মানচিত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বেশ কিছু স্থান ও নদীর নাম গুরুত্বের সাথে উল্লেখ রয়েছে।মহাভারত প্রণেতা বেদব্যাসের ‘পদ্মপুরান’ গ্রন্থে জনশ্রুতি আছে, কালিদহ সায়র বা কালিদাস সাগরের তলদেশ থেকে ধীরে ধীরে স্থল ও জনপদে রূপান্তরিত হয় জেলার বৃহত্তর অংশ, একাদশ থেকে ষোড়শ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে। কালিদহ সায়র বা কালিদাস সাগর এর নামকরণেই এ অঞ্চলে হিন্দু আধিক্য ছিল বলে অনেকটা প্রমাণ মিলে। জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এর সত্যতা নিরূপণ করা যায়। হিন্দু আধিক্যের কারণে এই এলাকার কর্তৃত্ব তৎকালীন ত্রিপুরায় ব্রাহ্মণ্যবাদের বিস্তার ঘটে। ব্রাহ্মণ আধিক্য বা ‘ব্রাহ্মণদের বাড়ি’ থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উৎপত্তি হয়েছে বলে অনেকেরই ধারণা। তবে এ কথা অনস্বীকার্য, ব্রাহ্মণ শব্দ থেকে ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ নামকরণ হয়েছে।প্রাচীনকালে বর্তমান শহরের “পৌর মিলনায়তন” এর পশ্চিম দিকটায় “ব্রাহ্মণবাড়ি” নামে অভিজাত ব্রাহ্মণদের একটা বাড়ি ছিল। এ ‘ব্রাহ্মণবাড়ি’ থেকেই তৎকালীন মহকুমার নামকরণ করা হয় ‘ব্রাহ্মণবাড়ি’ তথা ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া’।বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া চট্টগ্রাম বিভাগের অধীন একটি জেলা। প্রাচীনকালে এটি সমতট জনপদের অন্তর্গত ছিল এবং পরবর্তীতে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ হয়েছিল।চৈনিক পরিব্রাজক ওয়াং চোয়াঙ কর্তৃক সমতট রাজ্য পরিভ্রমণের বৃত্তান্ত ও এ অঞ্চলে প্রাপ্ত প্রাচীন নিদর্শন‍াদি থেকে যতদূর জানা যায় খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দী থেকে ত্রিপুরা গুপ্ত সম্রাটদের অধিকারভুক্ত ছিল। ঐতিহাসিকদের মতে সপ্তম থেকে অষ্টম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত এ অঞ্চলে বৌদ্ধ দেববংশ রাজত্ব করে। নবম শতাব্দীতে হরিকেলের রাজাগণের শাসনাধীনে আসে। প্রত্নপ্রমাণ হতে পাওয়া যায় যে, দশম হতে একাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত প্রায় দেড়শ বছর এ অঞ্চল চন্দ্র রাজবংশ দ্বারা শাসিত হয়েছে।মধ্যবর্তী সময়ে মোঘলদের দ্বারা শাসিত হওয়ার পরে ১৭৬৫ সালে এটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অধীনে আসে। রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে কোম্পানী ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দ প্রদেশে একজন তত্ত্বাবধায়ক (Superintendent) নিয়োগ করে। ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে কুমিল্লাকে কালেক্টরের অধীন করা হয়। ১৭৯০ সালে ত্রিপুরা জেলা গঠনের মাধ্যমে ত্রিপুরা কালেক্টরেটের যাত্রা শুরু হয়।পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্ত সংলগ্ন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৮৬০ ইং সালে মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭৫ সালে নাসিরনগর মহকুমার নাম পরিবর্তন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা করা হয়। তৎপূর্বেই ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর পৌরসভায় উন্নীত হয়।ভারত বিভাগের পর ১৯৪৭ পরবর্তীসময়ে কুমিল্লা জেলার একটি মহকুমা হিসেবে থাকে।১৯৭১ সালে বাংলাদেশ এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা উত্তর প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের সময় ১৯৮৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে জেলা ঘোষণা করা হয়।

মুঘল আমলে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া মসলিন কাপড় তৈরির জন্য বিখ্যাত ছিল।ঈসা খাঁর প্রথম ও অস্থায়ী রাজধানী ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে ১০ কিমি উত্তরে সরাইলে।১৮২৪ সালে ব্রিটিশ সৈন্যদের মুনিপুর অধিকারের সময়ে তাদের সামরিক সদর দফতর ছিল এ শহরে।১৯২১ সালে সমগ্র মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার সৈয়দ শামসুল হুদা (১৮৬২-১৯২২) এবং ব্যারিষ্টার আবদুর রসুল (১৮৭৪-১৯১৭) ছিলেন কংগ্রেস তথা ভারতবর্ষের প্রথম সারির একজন নেতা। উল্লাসকর দত্ত (১৮৮৫-১৯৬৫), সুনীতি চৌধুরী, শান্তি ঘোষ, গোপাল দেবের মত অনেক ত্যাগী ও মহান নেতাদের জন্ম দিয়েছে এই ব্রাহ্মণবাড়ীয়া।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা (পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ড রয়েছে), ১১টি ইউনিয়ন, ১৪২ টি মৌজা ও ১৪৬ টি গ্রাম রয়েছে।এটি জাতীয় সংসদের ২৪৫নং নির্বাচনী এলাকা(বিজয়নগর উপজেলা সহ) ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ এর আওতাধীন।

🏔 প্রত্নসম্পদ ও উল্লেখযোগ্য নিদর্শন সমূহ:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর প্রতিষ্ঠার পূর্বে তিতাস তীরবর্তী মেড্ডা পঞ্চবটের জন্য বিখ্যাত ছিল। এখানে শ্রী শ্রী কালভৈরব” মন্দিরে রয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে উঁচু চোঁখ ধাঁধানো কালভৈরব মূর্তি।২৮ ফুট উচ্চতার এই মূর্তিটি ১৯০৫ সালে তৈরী করা হয়।মন্দিরের মূল কালভৈরবের বয়স প্রায় তিনশ বছর।শ্রীশ্রী কালভৈরব মূর্তিটির পাশে ছিলো ১১ কেজি ওজনের কষ্টি পাথরের শ্রীশ্রী কৈলাশ্বেশ্বর শিবলিঙ্গ,যা ১০৫ বছরের পুরনো।

♦ ভাদুঘর শাহী মসজিদ

এটি প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অন্তর্গত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে অবস্থিত। মুঘল শাসকগণের মধ্যে জিন্দাপীর বলে খ্যাত মহিউদ্দিন মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব আলমগীর (১৬৫৮-১৭০৭) এর রাজত্বকালে ১০৮৪ হিজরি আনুমানিক ১৬৬৩ খ্রিষ্টাব্দে সে সময়কার সরাইল পরগণার জমিদার নুর এলাহী ইবনে মজলিশ শাহবাজের তত্ত্বাবধানে ঐতিহাসিক ভাদুঘর শাহী মসজিদ নির্মিত হয়।ভাদুঘর শাহী মসজিদের প্রথম ইমাম হিসেবে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত হন বাদশাহ আলমগীরের শিক্ষক, তাফসীরাতে আহমদিয়া এবং নুরুল আনোয়ার এর মত বিখ্যাত গ্রন্থসমুহের লেখক শায়খ আহমদ ইবনে আবু সাঈদ ইবনে ওবায়দুল্লাহ আল হানাফী আস সিদ্দিকী [শায়খ মোল্লাজিউন (রহ)] এর যোগ্য উত্তরসূরি মাওলানা মোল্লা নাসিরউদ্দিন (রহ)।

♦ কাঙাল নাথ জমিদার বাড়ি:

প্রায় ২২০ বছরের পুরনো (১৭৯৯ সাল কিংবা কাছাকাছি একটি সময়ে নির্মিত।) জানা যায়,শহরের “মুন্সেফপাড়া” তে অবস্থিত জীর্ণ কায় সুন্দর দ্বিতল বাড়িটি “কাঙাল (কাঙালি) দেবনাথ” নামক এক ব্যক্তির।তাঁর কাপড়ের ব্যবসা ছিল।সেই সময়কালে লোকজন বাড়িটিকে “নোয়াবাড়ি” বলতো বা এই নামে সবার কাছে পরিচিত ছিল বলে জানা যায়।

♦উলচাপাড়া মসজিদ:

সদর থানার অধীনে উলচাপাড়া গ্রামে অবস্থিত প্রত্নসম্পদ। এটি উলচাপাড়া উত্তর পাড়া শাহী জামে মসজিদ নামেও পরিচিত। মসজিদটিতে যেসব শিলালিপি পাওয়া গেছে তা থেকে অনুমান করা যায় সপ্তদশ শতাব্দীতে অর্থাৎ ১৭২৭-২৮ খ্রিস্টাব্দে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। এটির প্রতিষ্ঠাতা পশ্চিম দেশীয় বনিক শাহ সৈয়দ মো: মুরাদ।যাঁকে মসজিদের পাশেই সমাহিত করা হয়েছে।

♦ সুহিলপুর মসজিদ:

সদর উপজেলার সুহিলপুর গ্রামের মধ্যপাড়ায় অবস্থিত সুন্দর এই মসজিদটি।সুহিলপুর জামে মসজিদ ১৯১০ সালে নির্মিত শতবর্ষী অর্থাৎ ১০৮ বছর পুরনো।

♦সোহাতা বড় জামে মসজিদ

উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি তথা চল্লিশের দশকে সদর উপজেলার সোহাতা গ্রামে নির্মিত আধুনিক স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন সোহাতা বড় জামে মসজিদ।১৩৬১ হিজরি তথা ১২ ই জ্যৈষ্ঠ,১৩৪৯ বঙ্গাব্দে মসজিদের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন তৎকালীন সোহাতা গ্রামের ধনাঢ্য ভূমি অধিপতি “মোঃ হাফিজ উদ্দিন”।

♦তিতাস গ্যাসক্ষেত্র;

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের “ঘাটুরা” ও “সুহিলপুর” এলাকাজুড়ে অবস্থিত এই গ্যাসক্ষেত্রটি। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে ‘পাকিস্তান শেল অয়েল কোম্পানি’ এটি আবিষ্কার করে এবং ১৯৬৮ সাল থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়।৬৪ বর্গ কিলোমিটার ব্যাপী বিস্তৃত এই গ্যাসক্ষেত্রটির ভূগঠন গম্বুজাকৃতির।তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড(১৯৬৪)” বৃহত্তর ঢাকা,বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলে গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ‘তেল,জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়’ এর আওতায় এবং ‘পেট্রোবাংলা’ এর অধীনে এই কোম্পানি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

♦ অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়:
ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয়টি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত।১৮৭৫ সালে ৭.৩৮ একর এলাকা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয় রাজা রায় বাহাদুর অন্নদা প্রসাদ এর নাম অনুসারে।

♦ পুরাতন কাচারী (আদালত ভবন) ভবন:
সদর উপজেলায় শহরের কেন্দ্র “কাচারীরপাড়”-এ অবস্থিত এই ঐতিহ্যবাহী ভবনটি।কুমিল্লার তিনটি সাব-ডিভিশন থেকে “ব্রাহ্মণবাড়িয়া” মহকুমা সৃষ্টি হয় ১৮৬০ সালের বৃটিশ আইনে।১৮৬৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া “পৌর শহর” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
তার ঠিক ১৩ বছর পর,১৮৮১ সালে নির্মিত হয় এই কাচারী (আদালত) ভবনটি।বর্তমানে এটি একটি পরিত্যক্ত ভবন।

♦ দানবীর লোকনাথ রায় চৌধুরী ময়দান কমপ্লেক্স:

জেলা শহরের “পাইকপাড়া”-তে অবস্থিত এটি একটি পার্ক।এলাকাবাসী একে “টেংকের পাড়”(লোকনাথ দীঘি) বলেই বেশি চেনেন।কোনো এক কালে এই এলাকার মানুষের পানীয় জলের সমস্যার কারণে হবিগঞ্জের মাধবপুর এর জমিদার ‘লোকনাথ রায় চৌধুরী’ এটি খনন করিয়েছিলেন।

★ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামকরণ:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামকরণের ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে।ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামকরণের আগে এই জনপদ কি নামে পরিচিত ছিল তা রহস্যাবৃত। তবে অধ্যাপক হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ এক প্রবন্ধে ঐতিহাসিক প্রমান এবং বস্ত্তনিষ্ঠ তথ্য ছাড়া ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ শহরের পূর্ব নাম ‘রং’ শহর উল্লেখ করেছেন। এই রং শহর কিভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামাঙ্খিত হল এ সম্পর্কে দুটি প্রচলিত জনশ্রুতি আজ প্রতিষ্ঠিত।

এক. (প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে)ঐতিহাসিকদের মতে, ভারতের কর্ণাটকের আদিবাসি সেন ব্রাহ্মণদের শাসনাধীনে ছিল এ অঞ্চল। তখনো এই অঞ্চলে মুসলমানদের আগমন ঘটেনি।বাংলাদেশে সেন রাজবংশের (১০৯৭-১২২৫ খ্রিষ্টাব্দ) শাসনামলে এদেশে কোন ব্রাহ্মণ পরিবার না থাকার কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা পার্বন অনুষ্ঠান পরিচালনায় অসুবিধা সৃষ্টি হতো। এ অসুবিধা দূর করার লক্ষ্যে রাজা বল্লাল সেন (১১৫৮-১১৭৯ খ্রিস্টাব্দ,তাঁর রাজ্য পূর্বে পূর্ববঙ্গ থেকে পশ্চিমে মগধ, উত্তরে দিনাজপুর থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত প্রসারিত ছিল।) তার শাসনাধীন আদিশূর, উত্তর প্রদেশের কান্যকুব্জ [(আধুনিক কনৌজ) প্রাচীনকালে এটি হর্ষবর্ধনের(৫৯০ – ৬৫৭) সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল। কথিত আছে,কান্যকুব্জ ব্রাহ্মণদের আদি নিবাস ছিল]থেকে কয়েকটি(পাঁচটি)অভিজাত ব্রাহ্মণ পরিবার এ অঞ্চলে এনে বসতি স্থাপন করেছিলেন।
ভিন্ন মতে, এদেশে বৃটিশ রাজত্ব পূর্বকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধীন সরাইলের প্রভাবশালী জমিদার দেওয়ান মোস্তফা আলি অন্যস্থান থেকে কটি অভিজাত ব্রাহ্মণ পরিবার হিন্দুদের পূজা পার্বনের সুবিধার জন্য এ এলাকায় এনেছিলেন। ধারণা করা হয়, আগত ব্রাহ্মণদের বাড়ি ও আস্তানা থেকে এ জেলার নামকরণ হয় ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া’।

দুই. ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামকরণের ব্যাপারে সমধিক প্রচলিত জনশ্রুতি হল,অনেকের মতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামকরণের সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের স্থপতি বলে কথিত কাজী মাহমুদ শাহ(রাঃ) এর নাম জড়িত ।এ আল্লাহর ওলী মোঘল শাসনামলে ইসলাম প্রচারে সুদূর দিল্লি থেকে ষোড়শ অথবা সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি কোনো এক সময়ে তিতাস পাড়ের বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকাধিন ৮নং ওয়ার্ডের কাজীপাড়া দরগাহ্ মহল্লা নামে পরিচিত এলাকায় আসেন। তাঁর নামানুসারে ওখানে একটি মাজার রয়েছে। শহরের ব্রাহ্মণেরা উক্ত দরবেশের অলৌকিক ক্ষমতায় বিষ্ময়াবিষ্ট হয়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন এবং তাদের বিরোধিতা জনিত অপকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে নবীনগর থানার বিদ্যাকুট গ্রামে চলে যান।যাবার প্রাক্কালে ব্রাহ্মণেরা কাজী সৈয়দ মাহমুদ শাহ(রাহঃ) কে এ মর্মে অনুরোধ করেন যে, দীর্ঘদিন রং শহরে তাদের প্রাধান্য ছিল। তাই তিনি যেন এ রং শহরের নামকরণে তাদের স্মৃতিকে সম্পৃক্ত রাখেন। ওলীয়ে কামেল সৈয়দ মাহমুদ শাহ (রাহঃ) তাদের অনুরোধ রক্ষা করেন এবং ‘ ব্রাহ্মণ বেড়িয়ে যাওয়া থেকে’ ব্রাহ্মণবেড়িয়া আবার ব্রাহ্মণবেড়িয়া থেকে ‘ ব্রাহ্মণবাড়িয়া ’ নামকরণ করেন।আবার,এও জনশ্রুতি রয়েছে, যারা দীক্ষিত হননি তাদের প্রতি রুষ্ট হয়ে সাধক কাজী মাহমুদ শাহ (র:) বলেন, ‘ব্রাহ্মণ বেরিয়ে যাও’। তাঁর এই উক্তি থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামের উৎপত্তি, যা আজকের ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামে পরিচিত।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আঞ্চলিক উচ্চারণ ‘বাউনবাইরা’ (বা ‘ব্রাহ্মণ বেরিয়ে যাও’)। ধারণা করা হয় সেখান থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামের উৎপত্তি। উল্লেখ্য বহুল প্রচারের ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামটি পরিবর্তিত হয়ে বি-বাড়িয়া ধারণ করতে থাকে।তাই ২০১১ সালে নামের অস্তিত্ব ঠিক রাখার জন্য জেলা প্রশাসন কর্তৃক এক প্রজ্ঞাপন জারি করে যে, এখন থেকে কেউ বি-বাড়িয়া নামটি ব্যবহার করতে পারবে না, সবাইকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামটি ব্যবহার করতে হবে।ধন্যবাদ জেলা প্রশাসনকে।

✪ পাদটীকা:
➤ ↑বল্লালচরিত।।আনন্দভট্র রচিত
➤ ↑তবকৎ-ই-নাসিরি।।মিনহাজউদ্দিন সিরাজ
➤ ↑নামকরণের ইতিকথা।। এস এম শাহনূর
➤ ↑উপজেলা তথ্য বাতায়ন।
➤ ↑নামকরণেরর ইতিকথা।। ৫স এম শাহনূর
➤ ↑প্রথম আলোঃ
http://archive.prothom-alo.com/detail/news/282274
➤ ↑কালের কণ্ঠঃ
http://www.kalerkantho.com/print-edition/culture/2011/07/08/169753

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান, কবি ও গবেষক)

Some text

ক্যাটাগরি: বিবিধ

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি