শনিবার বিকাল ৩:১৩, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

প্রবন্ধ : নাম, শ্রেণিকরণ ও বৈষম্য

৫৭৩ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

বিশাল এই পৃথিবীজুড়ে রয়েছে কত বৈচিত্র্যময় সৃষ্টি, তা হয়ত গণনা করা সম্ভব নয়। সারা পৃথিবীতে রয়েছে হাজারো দ্রব্য, লৌহ, সোনা, রূপা, হীরা আরো মানুষের নাম দেওয়া কত জিনিস! মানুষ আবার প্রতিটি জিনিসকে যেমন নিজস্ব নাম দিয়েছে, তেমনিভাবে অালাদা অালাদা শ্রেণিকরণ করেছে। শ্রেণিকরণ মানুষ তাদের প্রয়োজনের তাগিদেই করেছে।

যেমন অামরা চারপাশে চোখ মেললে দেখতে পাই কত গাছ। সকল গাছের অাছে ভিন্ন ভিন্ন নাম ও অালাদা অালাদা শ্রেণি। যে গাছে কাঁঠাল হয় সে গাছের নাম কাঁঠাল গাছ। অাচ্ছা ফলটার নাম কাঁঠাল কে রাখলো? অাসলে এসব মানুষেরই রাখা নাম। অাবার নীল অাকাশে উড়ে পাখি। যাদের ডানা অাছে উড়তে পারে তারা সবাই পাখি বলে জানি। কিন্তু তাদেরও অাছে নানা রকম নাম। অামরা তাদের চিনে নেই মানুষের দেওয়া নামে।

অামাদের কারো ক্ষমতা নেই বাঁশ গাছকে অাম গাছ বলার। যে বাঁশ গাছকে অাম গাছ বলবে তাকে অামরা সবাই পাগল ছাড়া কি অার কিছু বলব? যে জিনিসটার যে নির্ধারিত নাম দেওয়া হয়েছে বা যে শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে অামাদের সেটাকে সেই নামে বা সেই শ্রেণিতে চিনতে হবে। এটাই নিয়ম। এসব নিয়ম ঠিকই আছে, অামাদের এ নিয়ম মেনে চলতেই হবে। এর বাইরে যাওয়ার উপায় নাই।

মানুষ সমাজের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। অনেক সময় শ্রেণিকরণে ও নামে এমন এক বৈষম্য তৈরি করে যা মন মানতে পারে না কখনো। গরিব আর ধনীর শ্রেণীকরণের, উচ্চ বংশ আর নিম্ন বংশের শ্রেণিকরণের নামে মানুষ যে বৈষম্য তৈরি করে তা কখনো মানা যায় কি?

মানুষ সকল কিছুর মতো নিজেদেরকেও করেছে নানা শ্রেণিতে বিভক্ত। যেমন, যারা মাছ ধরে তারা জেলে, যে নৌকা চালায় সে মাঝি, যিনি কৃষি কাজ করেন তিনি কৃষক। অাবার যে দেশ চালায় তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী। এমনিভাবে একেক কাজের উপর বা যে যেই পেশায় অাছে তাদের সকলেরই অালাদা নাম বা পেশার নামকরণ করা হয়। এটাও ঠিক অাছে।

কিন্তু মানুষ সমাজের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। অনেক সময় শ্রেণিকরণে ও নামে এমন এক বৈষম্য তৈরি করে যা মন মানতে পারে না কখনো। গরিব আর ধনীর শ্রেণীকরণের, উচ্চ বংশ আর নিম্ন বংশের শ্রেণিকরণের নামে মানুষ যে বৈষম্য তৈরি করে তা কখনো মানা যায় কি?

হতে পারে যার যার কর্মের উপর ভিক্তি করে অালাদা পেশা বা শ্রেণীর মানুষ। তবে অামরা কেউ ভিক্ষুক বা মন্ত্রী হয়ে মায়ের গর্ভে জন্মায় না। কেউ চোর ডাকাত হয়েও জন্মায় না।

সমাজে যদি কোনো এক ভিখারীর ছেলে নিজ কর্মগুণে সম্পদশালী হয়ে উঠতে পারে, সেও মানুষের মধ্যে এই শ্রেণিকরণের ভেদাভেদ বা বৈষম্য তৈরি করে। উঁচুতলার মানুষের কাছে খেটে খাওয়া দিনমজুরদের যেন কোন মূল্যই নেই। কিন্তু তবুও নানা কাজে আবার খেটে খাওয়া দিনমজুরদের উপর নানাভাবে নির্ভর করতে হয় তাদের।

অামরা সবাই মায়ের গর্ভে জন্মাই নিষ্পাপ শিশুরূপে। কেউ জন্মায় কোটিপতির ঘরে। অাবার কেউ বা ভিখারীর ঘরে। তাই পৃথিবীতে মানুষের বংশ পরিচয় মানুষ নির্ধারণ করতে পারে না এটা স্পষ্ট। এসব সৃষ্টিকর্তা নিজেই নির্ধারণ করে দেন। মানুষ চাইলে কর্মগুণে সমাজে মর্যাদা লাভ করতে পারে।

তবে আমাদের সমাজে যদি কোনো এক ভিখারীর ছেলে নিজ কর্মগুণে সম্পদশালী হয়ে উঠতে পারে, সেও মানুষের মধ্যে এই শ্রেণিকরণের ভেদাভেদ বা বৈষম্য তৈরি করে। উঁচুতলার মানুষের কাছে খেটে খাওয়া দিনমজুরদের যেন কোন মূল্যই নেই। কিন্তু তবুও নানা কাজে আবার খেটে খাওয়া দিনমজুরদের উপর নানাভাবে নির্ভর করতে হয় তাদের।

জানি না মানুষ কেন বুঝে না, আমরা সবাই মানুষ। অামাদের মধ্যে একই শ্রেণিকরণ হওয়া উচিৎ- অামরা সবাই মানুষ। গরীবরা তো ধনীদের অর্থ কেড়ে নিতে চায় না। যদি তাদের কাছে কিছু নেয় বদলা দিয়ে নেয়। কিন্তু ধনীদের কাছে গরীবের যতটুকু সম্মান পাওয়া উচিৎ সেটুকু কেন পায় না? এমন শ্রেণিকরণ ও বৈষম্য সমাজ থেকে বিলুপ্ত হোক, যে শ্রেণিকরণে ধনীদের কাছে গরিবের বা খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষের কোনো মূল্য নেই। আমাদের সবার এক পরিচয়- আমরা মানুষ।

লেখক : শাকিল আহমেদ সৌরভ

Some text

ক্যাটাগরি: চিন্তা, সাহিত্য

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি