সোমবার সন্ধ্যা ৭:৪৪, ৬ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ. ২০শে মার্চ, ২০২৩ ইং

বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু

১১৬৯ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

১৫ আগস্ট, শোকাবহ একটি দিন। এই দিনে ঘাতকের বুলেটের আঘাতে সপরিবারে নিহত হন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের অজ পাড়াগাঁ টুঙ্গিপাড়ায় শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। খোকা নামের সেই শিশুটি পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালির ত্রাতা ও মুক্তির দিশারী। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ এবং জনগণের প্রতি মমত্ববোধের কারণে পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। রাজনৈতিক সংগ্রামবহুল জীবনের অধিকারী এই নেতা বিশ্ব ইতিহাসে ঠাঁই করে নেন স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার হিসেবে।

আজীবন সংগ্রামী এই মহান নেতার যখন জন্ম হয় তখন ছিল ব্রিটিশ রাজত্বের শেষ অধ্যায়। গ্রামের স্কুলে তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয়। ছোটবেলা থেকেই স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। আর এর ফলশ্রুতিতে কিশোর বয়সেই বঙ্গবন্ধু সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৩৮ সালে তৎকালীন বাংলার শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে পরিচয় ও সাহচর্য লাভ করেন বঙ্গবন্ধু। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যায়নকালে তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। এবং সাতদিন পর জামিনে মুক্তি লাভ করেন। এরপর থেকে শুরু হয় তার বিপ্লবের জীবন। ১৯৪১ সালে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করার পর তিনি কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। এ সময়েই মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হকসহ তৎকালীন প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সান্নিধ্য লাভ করেন বঙ্গবন্ধু।

১৯৩৯ সালে গোপালগঞ্জ মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলীম লীগ গঠন করা হয়। শেখ মুজিব সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৪৩ সালে প্রাদেশিক মুসলিম লীগ কাউন্সিলের সদস্য হন বঙ্গবন্ধু। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলীম লীগের পক্ষে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন। সোহরাওয়ার্দী সাহেব প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১৯৪৬ সালের জুলাইয়ে কলকাতা ও বিহারে হিন্দু মুসলমান দাংগা বন্ধে ও আহতদের পূর্নবাসনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৪৭ এ পাকিস্তান গঠনের পক্ষে জোরাল ভূমিকা রাখেন বঙ্গবন্ধু। দেশ ভাগের সময় আসামের জেলা সিলেটকে বাংলাদেশে রাখার বিষয়ে গনভোটে সক্রিয় কার্যক্রম চালিয়ে তিনি বাংলার অন্যতম নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৪৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী করাচিতে পাকিস্তান সংবিধান কমিটির সভায় উদুর্কে রাষ্ট্রভাষা করার ব্যাপারে আলোচনা হয়। এবং পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এর প্রতিবাদ করে। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ও তমদ্দুন মজলিস যুক্ত ভাবে রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। ফরিদপুর, যশোর হয়ে দৌলতপুর, খুলনা ও বরিশালসহ জেলায় জেলায় ছাত্রসভায় বক্তব্য প্রদান করেন বঙ্গবন্ধু। ১১ মার্চ বাংলা ভাষা দিবস পালনের দায়ে মিছিলে লাঠিচার্জের শিকার হন ও দ্বিতীয় বারের মত গ্রেপ্তার হন বঙ্গবন্ধু। সেবার পাঁচদিন জেলে থাকেন তিনি।

১৯৪৭ সালের পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ার পর এক মুহূর্ত তিনি থেমে থাকেননি। পশ্চিম পাকিস্তানীদের নির্যাতনের খড়গ রুখতে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে গঠন করেন ছাত্রলীগ। এরপর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তৎকালীন ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল আওয়ামী মুসলীম লীগ থেকে মুসলীম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নামকরণ করা হয়। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীর ও তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নামকরণে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী প্রথমবারের মতো আঁতকে ওঠে। এরপর থেকে কখনো ভাষার জন্য, কখনো স্বাধিকারের জন্য চলতে থাকে আন্দোলন। এসবের আড়ালে গড়ে ওঠে স্বাধীনতার আন্দোলন। ৫৭ সালেই মাওলানা ভাষানী পাকিস্তান কে বলেছিলেন “আসসালামু আলাইকুম”। ৪৭ এর দেশ ভাগ ও স্বাধীনতা আন্দোলন, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ৭০ সালের নির্বাচনে নেতৃত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাঙালীর অবিসাংবাদিত নেতায় পরিণত হন। আমাদের মহান মুক্তি সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধুর নাম তাই চিরভাস্বর হয়ে আছে। বাংলা, বাঙালী ও বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক কালজয়ী অধ্যায়।

তার ৭ মার্চের ভাষণটি প্রথিবীর ঐতিহাসিক ভাষণগুলোর একটি। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু এক অবিচ্ছেদ অধ্যায়। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান চিত্রায়িত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কারণেই। বিশ্বসভায় বাঙালী জাতির সগর্ব উপস্থিতিই স্মরণ করিয়ে দেয় বঙ্গবন্ধুকে। এ অবিভাজ্য অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এক আত্মত্যাগী মহান নেতা। পিতা-মাতার কাছে বঙ্গবন্ধু ছিলেন তাদের প্রিয় খোকা। সংগ্রামী জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে তার অনুপ্রেরণার উৎস ছিল বাংলার মানুষ। আর এই দেশের ভুখা-নাঙ্গা, তাপক্লিষ্ট, কুলি-কামিন, মজুর, কৃষাণ-কৃষাণী, জেলে-বাওয়ালী, বঞ্চিত শ্রেণীর মানুষেরা ছিল তার রাজনীতির অবলম্বন। এদের জন্যই তিনি লড়েছেন।

শৈশব থেকে আমৃত্যু দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে কাজ করেছেন তিনি। জাতি-বর্ণ, বিভেদ-বৈষম্য তার কাছে ছিল না। এ জন্যই তিনি বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। ১৯৪৮ সাল থেকে ’৫২-এর মহান ভাষা আন্দোলন, ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-এর ঐতিহাসিক ৬ দফা, স্বায়ত্তশাসনের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে, কথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু কারারুদ্ধ হন। ৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর দেয়া ৬ দফার পক্ষে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায় বাঙালি জাতি। এতে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের মর্যদা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী শেখ মুজিবের নেতৃত্বে এই নির্বাচনে বাঙালির বিজয়কে মেনে নেয়নি। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে তারা নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে। আর অপেক্ষা নয়, ৭১-এর মার্চের বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু বর্জকণ্ঠে ঘোষণা করেন এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।

বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণে সাড়া দিয়ে সেদিন গোটা বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ’৭১-এর ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট নামে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ঘোষণা আসে। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কারাগারে আটক রেখে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী তার প্রথম বিচার শুরু করে। ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বীর বাঙালী ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে নেয়। জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। ৭২-এর ১০ জানুয়ারি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের চাপে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরেই তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু সেই সুযোগ বেশি দিন পাননি তিনি। ৭৫-এর ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকদের তপ্ত বুলেটে সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

লেখক : সামছ্ আল ইসলাম ভূঁইয়া

Some text

ক্যাটাগরি: চিন্তা, মতামত

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

Take part in the Finest…

The Fantasy About Ukraine Girls…

The Hidden Treasure Of Costa…

On the web Pokies Modern…

5 Simple Techniques For Portuguese…

The Idiot’s Guide To Sexy…

The Fundamentals Of Turkish Girls…

Short Report Reveals The Plain…

The Laotian Women Trap

The Ugly Side of Dog…