শনিবার রাত ১১:১৪, ২৭শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ. ১০ই জুন, ২০২৩ ইং

আমার বাবা-মা ও আমি (পর্ব-১)

১১২৫ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

পথ চলতে চলতে কীভবে পঁচিশ বছর অতিক্রম করে ফেললাম, ভাবতে অবাক লাগে। যেন সেদিন হাঁটতে শিখলাম। ক’দিন আগেও মায়ের পাশে থাকতে কোনো দ্বিদ্ধা-দ্বন্দ্ব কাজ করত না। আজ অশোভনীয় মনে হয়। শৈশবে-কৈশোরে অনেক কিছুই ভাল লাগতো যা আজ ভালো লাগে না। সময়ের সাথে নিজের চিন্তা-ভাবনা, পৃথিবীকে উপলব্ধি করার অনুভূতি, মানুষ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিসহ অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। এ যেন প্রকৃতির শাশ্বত বিধান। একটা সময় ভাবতাম আমার কাজের জন্য মানুষ আমাকে চিনবে জানবে। চারপাশটা শুধু আমার নামে মুখরিত হয়ে থাকবে। জীবনকে ভাবতাম শিল্পীর তুলিতে আঁকা ফ্রেমে আবদ্ধ একটি ছবি।

আসলে জীবন তা নয়। জীবনের রয়েছে নিজস্ব একটি গতি। যা তার নিয়ম মেনে চলে। আমার চাওয়াগুলো হয়তো তার সাথে যায়নি, তাই জীবনের ভাবনাতে এতো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। কিছুদিন আগেও অতীতের দুঃসময়গুলোর কথা মনে হলে মাঝে মাঝে খারাপ লাগত; কিন্তু এখন এমনটা হয় না। অতীতটা যদি তেমন না হত, আজকের আমি কি এমন হতে পারতাম? অতীতকে বেশি বেশি স্মরণ করি নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য। পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য। জীবনে না তার চেয়ে আরো খারপা পরিস্থিতি এসে উপস্থিত হয়।

খুব ছোটবেলায় ৬ বছর বয়সে নিজ জন্মস্থান নবীনগর ছেড়ে চট্টগ্রামের দিকে পা বাড়াতে হয়। তার কারণ অল্প কথায় বর্ণনা করা দুষ্কর, তবুও করলমা। একটি মানুষকে বিবেচনা করতে হলে তার জীবনধারা ও জীবনের বাঁকগুলো সম্পর্কে অল্প হলেও জানা প্রয়োজন। কারণ তা ব্যক্তির নিজ জীবন হতে প্রায়ই হারিয়ে যায়। ব্যক্তিকে তার চারপাশটা বদলাতে প্রচুর সংগ্রাম ও সাধনা করতে হয়। তারপর সে তার সুন্দর বর্তমনটাকে পায়। আশপাশের মানুষগুলো ব্যক্তির বর্তমান জীবনটাকেই প্রকৃত জীবন ভেবে প্রায়ই ভুল করে। তার এই সুন্দর বর্তমানটা পেতে তাকে দীর্ঘ একটা সংগ্রাম ও বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে হয়েছে তা তারা জানতে অধিকাংশ সময় অনাগ্রহী থাকে। মানুষের সামগ্রিক জীবনটা বিভিন্ন পরিস্থিতি আর উপলব্ধির উপর দাঁড়িয়ে থাকে।

আমার জন্মের সময় দাদা আব্দুল করিম সাহেবের অবস্থা মোটামুটি ভালই ছিল। যার কারণে আমার মায়ের সাথে আব্বার বিয়ে হয়। আম্মার মুখ থেকে যতটুকু শুনেছি আব্বার ইমিডিয়েট ছোট ভাইয়ের সাথে তার বিয়ের কথাবার্তা হয়। চাচা, লম্বা, দেখতে সুন্দর। তার সাথে আব্বার গঠন ও রঙের আকাশ-পাতাল ফারাক। যা পরবর্তিতে আমার মা মেনে নিতে পারেনি।আম্মা পরিষ্কার ভাবে তা আমাকে কখনো বলেনি। যাহোক তবুও তারা পরিবারের মাধ্যমে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আম্মা ভূঁইয়া বাড়ির মেয়ে, তার মধ্যে আজও এর প্রভাব দেখা যায়। মাঝে মধ্যে ভাবি তখন না জানি তাঁর মধ্যে এ প্রভাব কতটুকু প্রখর ছিল? পরিবার বিয়ে দিয়েছে বলে কথা, যেভাবেই হোক শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর মন রক্ষা করে চলতে হবে। হলোও তাই। বাধ্যপুত্র বধুর মতো আমার মায়ের নতুন জীবন চলা শুরু হলো।

দাদা নবীনগরের নামকরা ঠিকাদার ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তাকে দুহাতে টাকা খরচ করতে হতো মান-সম্মান ও নামধাম রক্ষা করার জন্য। অর্থ যা উপার্জন করত তার চেয়ে বেশি খরচ করত। যার কয়েক বছরের মধ্যে নবীনগর ও বাঘাউড়া তার ঋণের পরিমাণ বেড়ে যায়। পরবর্তীতে এই সূত্র ধরে তাকে নবীনগরের বাড়ি বিক্রি করে ঢাকায় যেতে হয়। বাড়ি বিক্রি করেও তার ঋণ শেষ হয়নি। সেখান থেকে বর্তমানে ময়মনসিংহে। শুনেছি একটি কয়েল ফ্যাক্টরিতে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নাকি করেন। সেই সময় থেকে তার সাথে আমার দূরত্ব বেড়ে যায়। পরবর্তীতে মামারাও কিছু ঋণে জড়িয়ে পরেন। একদিকে দাদা ও মামাদের ঋণ পরিশোধ ও অন্যদিকে আমাদের সংসারের ভবিষ্যৎ দাঁড়িয়ে ছিল আব্বার উপর। সেজন্য আব্বাকে মালয়েশিয়া যেতে হয়। ভাগ্যের পরিহাস ঋণের পরিমাণ এত বেশি ছিল যে আব্বার এই সামান্য উপার্জনে তা দেওয়া সম্ভব নয়। পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নানার যে বাড়ি ছিল তা বিক্রি করে আম্মা, আমি এবং নানার পরিবারের সকলে চট্টগ্রামে চলে যাব। যেই কথা সেই কাজ।

১৯৯৯ সালে সেপ্টেম্বর মাসে আমরা চট্টগ্রামে পাড়ি জমাই। প্রথমে কাজেরদেউড়ী এলাকায় একটি বস্তিতে ছোট্ট একটি ঘর ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। ঘরটি এত ছোট ছিল মালামাল রাখার পর তিন ভাগের দুই ভাগ পরিপূর্ণ হয়ে যায় বাকি একভাগে আমাদের ৮ জনকে থাকতে হবে। প্রায় ১৫ দিনের মত সেই ছোট্ট ঘরটিতে ছিলাম আমরা। আজও সে ঘরের ছবি আমার স্মৃতিতে রয়ে গেছে। তখন শহর মানে আমার জন্য অনেক কিছু। বুঝতাম না সুন্দর ও উন্নত পরিবেশ কী? তাই যেখানেই থাকি না কেন! বড় শহর বলে কথা। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে রুচিশীলতাইও এসেছে পরিবর্তন। তবুও আমি আবার বস্তিতে ফেরত যেতে রাজি। কারণ এখন গেলে তাদের জন্য হয়তো অনেক কিছুই করতে পারব। যা তখন আমার জন্য সম্ভবপর ছিল না।

চলবে…

শরীফ উদ্দীন রনি : সাংবাদিক ও শিক্ষক

 

Some text

ক্যাটাগরি: আত্মজীবনী

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

Choosing Virtual Data Rooms

Work Search Strategies – How…

THAT World and Business

Program For Modern Business

Why Every one Is Speaing…

Using Your Hot Filipino Girls…

Hot Brazilian Girls Some ideas

What To Expect From Bark…

GRATUITO ROM: Download Oppo Stock…