শনিবার ভোর ৫:৩৬, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

বিএনপির নির্বাচিতদের শপথ : একটি রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

৪৭০ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

ত্রিশে ডিসেম্বর নির্বাচনের পর থেকে আন্দোলনের কথা বার বার বললেও আজ অবধি বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। বিশ দল তো আগেই ব্যর্থ। মূলত ঐক্যফ্রন্ট বিশ দলের ব্যর্থতারই ফসল। বিশ দল ব্যর্থ না হলে ঐক্যফ্রন্টের কোনো প্রয়োজন ছিল না।  কারণ এর আগে কয়েকবার আন্দোলনের মাঠে দাড়াতে গিয়ে বেশ খেসারত গুনতে হয়েছে  তাদের। গণহারে মামলায় জর্জরিত হয়ে তারা এখন পর্যুদস্ত। তারপর থেকে দেশজুড়ে একটা অস্বাভাবিক শান্তি বিরাজ করছে। অস্বাভাবিক শান্তির ব্যাখ্যা হলো- বাহিরে শান্তি বিরাজ করলেও ভেতরে স্বাভাবিক নেই।

অতীতে সামরিক শাসন ছাড়া অন্য কোনো সরকার আমলে এমন নজীর নাই। তবে রাজনৈতিক অস্বস্তি থাকলেও দেশের মানুষ যে শান্তিতে আছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। হরতাল লংমার্চ অবরোধের কথা মানুষ এখন ভুলেই গেছে। এগুলো এখন ইতিহাস। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এমন নিরবতা জাতি এর আগে কখনো দেখেনি আবার সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন কঠোর দমন-পীড়ন ও কখনো দেখেনি। সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর দমন-পীড়ন ক্ষমতায় টিকে থাকার কৌশল হলেও বিরোধীদলের এমন নিরব অবস্থান কেমন কৌশল তা আমাদের জানা নেই।

ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য পূর্বের ক্ষমতাসীনরা এমন কোন কৌশল নেই যা প্রয়োগ করেনি। আওয়ামী লীগ হয়তো একটু বেশিই করেছে। তবে পার্থক্য হলো পূর্বের ক্ষমতাসীনরা বেশীদিন টিকেনি আর আওয়ামী লীগ টিকে গেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো স্বৈরাচার সে যত বড়ই হোক, গণআন্দোলনের পরেও টিকে গেছে এমন নজির খুব কম। একই সরকার তিনবার টিকে থাকার নজির বাংলাদেশে এই প্রথম। একটি শক্তিশালী বিরোধী দল থাকলে হয়তো এমনটা হতো না। বিরোধী দলের দুর্বলতার সুযোগেই এমনটা সম্ভব হয়েছে।

শুধু একরোখা ক্ষোভ নিয়ে শপথ বা সংসদ বর্জন করার মধ্যে দল ও দেশের কোন লাভ আছে বলে আমার মনে হয় না। তার চেয়ে শপথ গ্রহণ করে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় রাজনীতি চর্চা করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আন্দোলন করতে না পারলে অযথা নেত্রীকে কেনো জেলে পঁচে মরতে হবে? দেশের মানুষই বা কেনো অস্বস্তিতে থাকবে । তারচেয়ে শপথ নিয়ে সংসদে যান। জনগণের কথা বলুন।

দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে ধাবমান, এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। দেশে আন্দোলন-সহিংসতা আর রাজনৈতিক হৈ-হুল্লোড় নেই। অন্তত এই কয়টা ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সফল। আর সফল এর পক্ষে সবাই থাকে। যে পরাজিত হয় তার পক্ষে লোক পাওয়া খুবই কঠিন। গত দশ বছরের লড়াইয়ে বিএনপি বারবার হেরেছে। আর হেরে যাওয়া দলের পক্ষে কেউ থাকেনা। তাই হয়তো এক বছরের অধিককাল ধরেও খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলেও এখন পর্যন্ত তাকে মুক্ত করার কোন চেষ্টায়‌ও বিএনপির সফল হয়নি।

সর্বশেষ নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ এর বিনিময়ে প্যারোলের একটা সমঝোতা পর্দার আড়ালে হচ্ছে বলে কানাঘুষা চলছে। যদিও বিএনপি সেটা বারবার অস্বীকার করছে। কথা হলো- নির্বাচিতদের শপথ এর মাধ্যমে লাভ ক্ষতির হিসাব বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট নিজেরাই করবে। যদিও এ নিয়ে তাদের মধ্যে মতানৈক্য সুস্পষ্ট । তবে যেহেতু বিগত দশ বছরে সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি, সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায় করতে পারেনি এবং ঐক্যফ্রন্টের একটি অংশ ইতিমধ্যে শপথ নিয়েও ফেলেছে।

পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো স্বৈরাচার সে যত বড়ই হোক, গণআন্দোলনের পরেও টিকে গেছে এমন নজির খুব কম। একই সরকার তিনবার টিকে থাকার নজির বাংলাদেশে এই প্রথম। একটি শক্তিশালী বিরোধী দল থাকলে হয়তো এমনটা হতো না।

সুতরাং আন্দোলনের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সরকারের সাথে সমঝোতা-ই এখন তাদের জন্য সহজ পথ। রাজপথে এবং আদালতে যখন তাদের কোনো শক্তি নাই তখন বয়োবৃদ্ধ একজন সাবেক নারী প্রধানমন্ত্রীকে কারাগার প্রকোষ্ঠে ফেলে রেখে তিলে তিলে মারতে হবে কেন? তার চেয়ে সমঝোতা করে হলেও অসুস্থ বয়োবৃদ্ধ মানুষটাকে কারাগার থেকে বের করে একটু স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার, উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে মন্দ কী ? সেটা নির্বাচিত সদস্যদের শপথ এর বিনিময়ে ও হতে পারে।

শুধু একরোখা ক্ষোভ নিয়ে শপথ বা সংসদ বর্জন করার মধ্যে দল ও দেশের কোন লাভ আছে বলে আমার মনে হয় না। তার চেয়ে শপথ গ্রহণ করে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় রাজনীতি চর্চা করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আন্দোলন করতে না পারলে অযথা নেত্রীকে কেনো জেলে পঁচে মরতে হবে? দেশের মানুষই বা কেনো অস্বস্তিতে থাকবে । তারচেয়ে শপথ নিয়ে সংসদে যান। জনগণের কথা বলুন। দেশকে রাজনৈতিক অস্থিরতা মুক্ত করুন। নেত্রীর মুক্তির কথা বলুন। রাজনীতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসুন । দেশের জন্য ভালো হবে । দলের জন্য ভালো হবে। আশা করি নেত্রীর মুক্তি প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত হবে।

Some text

ক্যাটাগরি: মতামত

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি