বৃহস্পতিবার রাত ১২:১৫, ৯ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ. ২২শে মার্চ, ২০২৩ ইং

ব্যভিচার

৭৬৯ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

নারী ও পুরুষ- একজন দাতা অন্যজন গ্রহীতা। যে দাতা সে গ্রহণ করার জন্য দাতা। যে গ্রহীতা সে দেওয়ার জন্য গ্রহীতা। এই হলো নারী-পুরুষের যথার্থ পরিভাষা। ব্যভিচার শব্দটির মূল রয়েছে √ চর। ‘চ’ হলো চাওয়া, ‘র’ হলো রক্ষণ। চাওয়া রক্ষণ থাকে যাহাতে তাকে বলে চর। চরণের আধার হলো আচরণ। বিপরীত কিংবা অন্যায় আচরণ হলো ব্যভিচার। যে যা চায় তাকে তা দেওয়া আচার, যে যে যা চায় না তাকে তা দেওয়া ব্যভিচার।

যার দেওয়ার ইচ্ছা নেই কিন্তু নেওয়ার ইচ্ছা আছে সেও এই অর্থে ব্যভিচারী। ইরাক আমেরিকার কাছে গণতন্ত্র চায়নি- কিন্তু আমেরিকা ইরাককে গণতন্ত্র দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে গেলো- এটি ছিল বড় ধরনের ব্যভিচার। কারো ক্ষতি করা তো অবশ্যই ব্যভিচার- জোর করে কারো উপকার করাও ব্যভিচার বটে। দুইজনের ইচ্ছার সম্মিলন ছাড়া সবই ব্যভিচার। ঈশ্বর ব্যভিচার করেন না। অর্থাৎ যে যা চায় না- তিনি তাকে তা দেন না। যে যা চায় এবং চাওয়ার প্রতি তার একনিষ্ঠতার প্রমাণ দেয়, তিনি তাকে তা-ই দিয়ে থাকেন। তিনি সর্বশক্তিমান। ইচ্ছা করলে জগতের সব মানুষকে তিনি শান্তি দিতে পারেন। কিন্তু যে শান্তি চায় না, তাকে শান্তি দেওয়াও অশান্তির কারণ হয়।

তিনি তার কাছেই ধরা দেন, যে তাকে চায়। যে তার জন্য ব্যাকুল হয় না, তার কাছে তিনি অস্তিত্বহীন। আধ্যাত্মিকতা আর কিছু না- তাঁকে ঐকান্তিকভাবে চাওয়া। চাওয়ার প্রতি নিষ্ঠার প্রমাণ দেওয়া। প্রতিদিন কতো নতুন নতুন আকাঙ্ক্ষাই না জাগে। জীবনধারা বয়ে চলে আকাঙ্ক্ষার নুড়ি সঙ্গে নিয়ে। সব আকাঙ্ক্ষা থেকে চয়ন করতে হয় সম্যক আকাঙ্ক্ষা। এবং সম্যক আকাঙ্ক্ষার প্রতি সমর্পণ প্রমাণ করতে হয় একনিষ্ঠ কর্মের মাধ্যমে, তবেই তা পাওয়া যায়।

স্ত্রী পুরুষের শারীরিক সম্বন্ধে- যেখানে অসম্মতি, সেখানেই ব্যভিচার; যেখানে যৌথ সক্রিয়তা নেই সেখানেই ব্যভিচার; যেখানে অশান্তি, সেখানেই ব্যভিচার; যেখানে বিয়োগ সেখানেই ব্যভিচার; ব্যভিচার হলো অন্তরের অসম্মতি; ব্যভিচার হলো সঙ্গীর অসম্মতি; মিলন তো ভালোই, কিন্তু সংশয় ও ভয় মিশ্রিত মিলন হলো ব্যভিচার। নরনারীর মিলন যে ভাবেই সাধিত হোক না কেন, যদি অন্তরে সংশয় না থাকে, যদি অপরাধবোধ না থাকে, যদি প্রেম ও শ্রদ্ধা থাকে, তবে তাতে অপরাধ আবিষ্কার করার সাধ্য সমাজ ও ধর্ম সংস্থার নাই। দুজন মানুষের সম্মিলনের সামাজিক বিধি থাকতে পারে কিন্তু এসব বিধি লঙ্ঘন করা অপরাধ বিবেচ্য নয়। স্বামী-স্ত্রী মিলিত হবে এটিই সামাজিক বিধি। বিধির সমর্থন থাকলেও স্বামী স্ত্রীকে কিংবা স্ত্রী স্বামীকে হেনস্তা করা ব্যভিচার।

মনোমিলন ছাড়া নারী যদি দেহমিলনে সম্মত হয়, তবে তা শুধু ব্যভিচার নয়- পতিতাবৃত্তি। বাস্তবতা হলো এই যে, সন্তান জন্ম নেয়ার পর নারী পরিপূর্ণভাবে মাতা হয়ে যায়। তার সমস্ত মনোযোগ থাকে সন্তানের প্রতি। নারী যদি আরেকটি সন্তান চায়, তবেই মিলনের জন্য উদগ্রীব হয়। নিতান্ত ইন্দ্রিয়সুখ লিপ্সা নারীর কম। বেশিরভাগ নারী স্বামীর প্রস্তাবে সে সাড়া দেয় দায়িত্ববোধ থেকে- প্রেমের তাগিদে নয়। বিবাহিত জীবনে নারীকে সহ্য করতে হয় ইচ্ছা বিরুদ্ধ মিলন। এটি স্পষ্টতই পুরুষের ব্যভিচার। এইসব ব্যভিচারী পুরুষরা যদি আধ্যাত্মিকতার দিকে ধাবিত হয়- তবে তারা ‘রতি সাধনা’ ও পঞ্চরসের কদাকারতত্ত্ব দিয়ে আধ্যাত্মিক জগৎটিকেও কলুষিত করে ফেলে।

প্রেম কখানো পুরান হয় না। প্রত্যেক মানুষ সমুদ্রের মতো- চিরদিনই থেকে যায় অজানা। যে যাকে ভালোবাসে সে প্রতিদিন তার মধ্যে নতুন কিছু খুঁজে নেয়। একবার জল পান করলে জলের তৃষ্ণা নিবারণ হয়। কয়েকঘণ্টা পর আবার তৃষ্ণা পায়। প্রতিবারের জলতৃষ্ণা নতুন। এবং নতুন জল পানের মাধ্যমে চলতে থাকে কোষের নবায়ণ ক্রিয়া। প্রেমও এমনই।

প্রেম একটি অবিরাম নবায়নক্রিয়া। আধ্যাত্মিকতাও একটি অবিরাম নবায়নক্রিয়া। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক আকর্ষণ কমে যাওয়া সাধারণ ঘটনা। কেন এমনটি হয়? কার বেলায় এমনটি হয়? যে সম্পর্ক নবায়ন করতে জানে না, যে নতুনত্ব আবিষ্কার করতে অপারগ, দৃষ্টি স্থূল তার বেলায়ই এমনটি হয়।এজন্য যে শুধু পুরুষ দায়ী, তা নয়- নারীও সমান দায়ী, বরং কিছুটা বেশি।

আধুনিক বিশ্বে প্রায় সব নারী তার প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন নারী সাজগোজ করে পার্টিতে যায় নিজের বিত্ত প্রদর্শনের জন্য। স্বামীর মনোযোগ আকর্ষণের জন্য সেজেগুজে অপেক্ষা করছে এমন নারী খুঁজে পাওয়া দুরূহ। কাম নিজে তৃপ্ত হওয়ার জন্য নয়- সঙ্গীকে তৃপ্তি দানের জন্য। এখানে নিজের তৃপ্তি অন্যকে তৃপ্তি দানের ফল। এমন দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেই কেবল কাম আত্মার সঙ্গে যুক্ত হয়। তবে স্ত্রীর সৌন্দর্য চর্চা হয় স্বামীর জন্য, স্বামীর উপার্জন হয় স্ত্রীর জন্য।

শারীরিক পরিতোষের অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা রূঢ়তা বৃদ্ধি করে। এই সূত্রেই কাম-ক্রোধ একসঙ্গে সাঁটা। ক্ষুধার্ত ব্যক্তি খাদ্য চায়। খাদ্য যদি সে না পায়, তবে অখাদ্য খায়। অখাদ্য স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও সে বিরত থাকতে পারে না। ধর্মবাণীও তাকে ফেরাতে পারে না, কারণ গোড়াতেই অধর্ম থাকে। যা খুশি খাওয়াতে ঈশ্বরের নিষেধ আছে বটে, কিন্তু আনন্দের স্পৃহা তো ঈশ্বরের কাছ থেকেই আসে। এক তালার একটি চাবি থাকাই নিরাপদ।
এক চাবির চার তালা, ঈশ্বরের বিধান হতে পারে কি? হতে পারে। যে সমাজে কামের আধিপত্য সেখানে দিন হয়ে যায় রাত, রাত হয়ে যায় দিন। দোহাই সূর্যদেবের- চন্দ্রদেবের চরিত্র কে না জানে?

যেখানে প্রেম নেই, সেখানেই কেবল কাম সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। আমাদের জীবনের পরতে পরতে, সিনেমায়, নাটকে, কবিতায়, উপন্যাসে, টিভিতে, শিল্পে, সংগীতে, নৃত্যে, রাজনীতিতে, ধর্মে, আধ্যাত্মিকতায়- সর্বত্রইি এখন ব্যভিচারের আধিপত্য। কারণ কি? কারণ, প্রেম নেই। প্রেমিক কখনো ব্যভিচারী হয় না। যেখানে প্রেম নেই সেখানে ব্যভিচার থাকবেই থাকবে। যেখানে প্রেম আছে সেখানে সতীত্ব থাকবেই থাকবে। কিন্তু সতীত্ব বজায় রাখার জন্য যে খুব যত্নশীল সে ভেতরে ভেতরে ইতোমধ্যেই ব্যভিচারী হয়ে গেছে। সততা প্রমাণিত হয় অসৎ হওয়ার স্বাধীনতায়। পাই না তাই খাই না- সততা নয় নিশ্চয়ই। পাই কিন্তু খাই না, ‘কেন খাই না’- এই বুঝ থেকে আসে সততা।

প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে ব্যভিচার ভয়াবহ অপরাধ। ঘুষ, দুর্নীতি, হত্যা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কোনো কিছুর শাস্তিই এতোটা ভয়াবহ নয়- যতটা ব্যভিচারের শাস্তি। কেন? কারণ প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের অস্তিত্বই নির্ভর করে মানুষের ভয় ও বিচ্ছিন্নতার উপর। এক চাবির চার তালা বানিয়েও ধর্ম ব্যর্থ। কারণ প্রেম ছাড়া এ সমস্যা সমাধানের কোনো বিকল্প নেই।

প্রেম যেখানে গভীর- কাম সেখানে প্রাকৃতিকভাবেই অনুপস্থিত। বিপক্ষ (শয়তান) আক্রমণ করে দুর্বল দিক দিয়ে, আর মানুষের সবচেয়ে বড় দুর্বল দিক হলো কাম। তাই কামশুদ্ধির শিক্ষা প্রত্যেক মানুষের জীবনে অতি আবশ্যক। বিপক্ষের আক্রমণ থেকে কেউ মুক্ত নয়। মানুষ যেভাবে টোপ দিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করে, বিপক্ষও সেভাবে কামটোপ দিয়ে মানুষ ধরার চেষ্টা করে। অতএব, সাবধান।

ড. এমদাদুল হক : লেখক, গবেষক

Some text

ক্যাটাগরি: মতামত

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

Flirt4free Review: Security, Prices, Models

The Best Chat Room Apps…

Take part in the Finest…

The Fantasy About Ukraine Girls…

The Hidden Treasure Of Costa…

Se corre en su cara

On the web Pokies Modern…

5 Simple Techniques For Portuguese…

The Idiot’s Guide To Sexy…

The Fundamentals Of Turkish Girls…