শনিবার দুপুর ১:৪২, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

কেমন আছে গোকর্ণ ঘাটের সমাজ ও বিচার ব্যবস্থা

১২৬৪ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ৩ টি

তিতাস পাড়ে জন্ম নেওয়া “তিতাস একটি নদীর নাম” উপন্যাসের কালজয়ী লেখক অদ্বৈত মল্লবর্মণের জন্ম ভিটা- গোকর্ন ঘাট। এ গ্রামে বসবাস করত লালা বত্রিশ শিং নামক এক সনাতন ধর্মাবলম্বী, যার বাড়িটি ছিল গোকর্ন ঘাট সরকারী প্রাঃ বিদ্যালয় (অধুনালুপ্ত গগণ কর্মকার সরকারী প্রাঃ বিদ্যালয়ের) পশ্চিম-উত্তর কোণে।

যে বাড়িতেই পরিচালিত হত বিচারকার্য – এও শুনেছি এই বাড়িতে একটি কূপদণ্ড ছিল এমনকি ফাঁসি ও দেওয়া হত এখানে । বয়োবৃদ্ধ অনেকের সাথেই কথা বলে জানা যায় – লালা বত্রিশ শিং- এর বাড়ির সামনে দিয়ে জুতা পায়ে চলার অনুমতি না থাকায় এই পথে চলাচল কারীকে জুতা হাতে বা ছাতার ভিতর রেখেই চলাচল করা লাগত। জেলা শহরের একমাত্র নৌ ও লঞ্চঘাট সহ জেলার প্রথম তেল ডিপু ও ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায় পাদপীঠ খ্যাত আমাদের এই ঐতিহ্যময় গ্রাম গোকর্ন ঘাট ।

এতদিন পর আজ মনে প্রশ্ন জেগেছে ” কেমন আছে গোকর্ন ঘাটের সমাজ ও বিচার ব্যবস্থা ? হিন্দু মুসলমানের মাঝে সামাজিক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমাদের এই গোকর্ন ঘাট। একথা আজো অপটকে বলা যায়। তাহলে সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে আমার মনে কেন এই অদ্ভুত প্রশ্ন? হ্যাঁ বাপ দাদা চৌদ্দ পুরুষের জন্মভিটা এই গ্রামের হওয়ায় পূর্বপুরুষদের কাছে কিছু হলে ও জেনেছি , তাদের সময়কার সামাজিক ও বিচার ব্যবস্থার কথা।

উনবিংশ – বিশ শতক পেড়িয়ে একবিংশ শতাব্দীতে এসে আজ চ্যাটে দেখতে ইচ্ছে করছে আজকের সমাজ ও বিচার ব্যবস্থাকে। আজকে আমি দাঁড়িয়ে যে সমাজ ও বিচার ব্যবস্থার সামনে তা বড়ই হতাশা জনক । সমাজ বলতে ১০ দিন পূর্বে মরে যাওয়া নদীর জলে এক ডজন শুকুনে ঠুকরানো পঁচা গরুর দেহের মতন . বড্ড বেশী দূর্গন্দ্ধ বেরুচ্ছে,, শুঁখে দ্যাখ আমার ঘা- য়ে পাবে সমাজ পঁচা দূর্গন্দ্ধ । ছিঃ এই সমাজে কি মানুষ থাকে ?

দ্যাৎ কি বাজে বকছি আমি থাকছি কেমন করে? হ্যাঁ আমি বেচেঁ ঠিকই সেই মুখ পুড়া হুনুমানটার মতন । না সমাজের না অসমাজের । ঠিক যেন মরে মরে বেচেঁ থাকার ন্যায় । তবে সমাজ যে দেখেনি তা নয় – সমাজের কুমারী রুপ না দেখলে ও সমাজের পোয়াতি ক্লান্ত শরীর ঠিকই দেখেছি । যেখানে যাদের হাতে সমাজের ক্লান্ত শরীর ও উঠোনে গড়াগড়ি মারা বিচার দেখেছি আজ তারা নেই । নেই উঠানে বিছানো সেই ল্যাঠা মেরে বসার ছাটাই ও ! উঠানের বিচারক নেই, ছাটাই নেই, সমাজ নেই সামাজিকতা নেই, নেই কোন ন্যায় বিচার ও।

উঠোন ছেড়ে যেদিন বিচার গিয়েছে গদি ঘরে ! ছাটাই যেদিন চেয়ারের খোলস পড়েছে সেই দিন থেকে যে নিরুদ্দেশ হল সমাজ -বিচার আদৌ খুঁজে পায়নি কারো । মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে কোন এক চেয়ার পতিকে ধরে এনে ছাটাইয়ে চেপে ধরি – একবিংশ প্রজন্মের হাতে হাত রেখে গড়ে তুলি গত সমাজ ও বিচার । না তা আর হয়ে উঠে না , যেই চেয়ার পতির কানে মুখ নিতেই দেখি সিন্ডিকেটের লাল চোখ ! এই বুঝি আগুনের গোলা হয়ে ধেয়ে আসছে আমার গায়। কি আর করি পিছন ফিরে আসি। আমার চেহারায় অমাবস্যাতিথি জিহ্বা জুড়ে পানসে, কখনো নিম তিতে আড্ডা জমিয়ে দেয় ।

আফিল মেম্বার, আলী সর্দার ও ,দারু মেম্বাররা শুধুই মরেইনি – সাথে মেরে দিয়ে গেছে আমাদের সমাজ ও বিচার ব্যবস্থা ও । ওনাদের পর আর কেউ আমাদের সমাজটাকে নিজের মত করে কোলে তুলে নেয়নি, সেই যে কোল ছাড়া হয়েছে আমাদের সমাজ ও বিচার কেউ আর তুলে ধরার চিন্তা ও করেনি! যেদিন থেকে ওদের কবরে চেপে দিতে থাকি মাটি জানতাম কি আর, মাটির সাথে চেপে দিয়ে আসছি আমাদের সমাজ ও বিচার ? আজ আমাকেই খুনি মনে হচ্ছে ।

আমিই কবরে লাশ রাখতে গিয়ে মাটি চাপা দিয়ে এসেছি -সমাজ/ বিচার । আমাদের বাজারে এক পান বিক্রেতা কাকা ছিল নাম তার হাছু মিয়া। নিজের দোকানের কাষ্টমার থেকে শুরু করে আমি ছাড়া কেহই বোধই বাদ পরত না তার গাল থেকে! কিন্তু ঐ মানুষটি এই ছোট্র আমি কে কখনো আব্বা আর আপনি ছাড়া ডাকতেনই না। আমার চায়ের দোকানে আড্ডা দিত – ওনি টোলে পা তুলে বসে আছেন একটি ছেলে ওনার জুতা গুলোতে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল তিনি নিশ্চুপ কিছু বললেন না ।

ছেলেটি চলে যাওয়ার পর হাছু কাকা আমাকে লক্ষ করে বলছে, দেখ বাবা ছেলেটি মাটি পায়ে আমার জুতা গুলোর কি হাল করে গেল। অথচ আমার বাপ দাদারা যখন রাস্তায় চলত তারা কতটা আদবের সাথেই না চলত জান? তাদের পাশ দিয়ে যখন মুরব্বিরা চলাচল করত তারা খেয়াল করত কখন না মুরব্বিদের ছায়ায় পা পড়ে যায় । আর অহনের পোলাপান আমরার উপর দিয়া পারলে পাইরা যায়। কি যে ওইল সমাজডা আল্লাই ভাল জানে ।

মনে ত হয় সেই থেকেই ধীরে ধীরে হারাতে থাকা সমাজ আর ছাটাই চেয়ারের খোলস পড়ার পর থেকে নিরুদ্দেশ আমাদের গোকর্ন ঘাটের সমাজ ও বিচার। যেদিন থেকে সমাজ পতিদের মনে সমাজপতি নামক শব্দটা পুঁজি করে সুবিধাভোগের চিন্তা চেতনা লালন করতে শুরু করলেন, সেইদিন থেকে সমাজ নামের বৃক্ষটা শাখা প্রশাখা গুলো এক এক করে মরতে শুরু করে, এরপর থেকে যখন ক্ষমতা প্রদর্শন করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে সেদিন থেকে সমাজ ও বিচার ব্যবস্থার মূল অঙ্গেই পঁচন ধরে গেছে ।

বিশেষ করে ২০১২ পর থেকে সামাজিক শক্তিহীন হয়ে পড়ে পতিরা – মড়মড় করে ভাঙ্গতে থাকে সামাজিক বিচার ব্যবস্থা। ২০১৫ পর থেকে আমাদের গোকর্ন ঘাটের সমাজ ও বিচার ব্যবস্থার দাফন শুরু হয়ে গেছে এখন মরা নদীর রেখে যাওয়া অস্পষ্ট রেখা গুলোর মতই মিটমিট করে জ্বলছে । যেকোন সময় আজকের শেষ রেখাটি চিরতরে বিলীন হয়ে যেতে পারে। বড়ই ভয় লাগছে আমরা কোন সমাজের হাতে তুলে দিয়ে যাচ্ছি আমাদের সন্তানদের ?

সামাজিক -অবক্ষয় যখন চারিপাশকে অন্ধকার করে তুলছে – সেই সময় ভয়ানক চেহারা নিয়ে হাজির হয়েছে আগামী প্রজন্ম বিনাশী ( ইয়াবা ) গত ৩/৪ বছর আগেই গ্রামের যে কচি কচি ছেলে গুলোর পবিত্র মুখ গুলো চাঁদের মত ঝলমল করত – গত ৩ বছর পরে এসে ইয়াবার বিষে সেই কচি মুখ গুলোই আজ ঝরা শীর্ণ কঙ্কালসার, চোখ গুলো কোঠরে বসে গেছে মাথায় এলোমেলো চুল – প্যান্ট গুলো আপনা আপনিতেই খুলে পড়ে যাচ্ছে,, কথা বার্তা ও চালচলনে উন্মাদনা, বড্ড কষ্ট হয় ওদের দ্যাখে ।

৩ বছর আগের শান্ত ছেলে গুলোই আজ ভিষণ অশান্ত ওদের যন্ত্রনায় মা বাবা পরিবার পরিজনরা অশান্তি আগুলে দাউ দাউ করে জ্বলছে – শান্ত ছেলেটি অশান্ত হাতে প্রতিনিয়ত বাড়ি ঘরে ভাংচুর অব্যাহত রয়েছে, গর্ভধারিনী মায়ের চোখের জলে বুক ভাসলে ও শান্তনা দেওয়ার যেন কেউ নেই । এমনই ঝরা জীর্ণ সমাজ নিয়ে কেমন আছি আমরা তা সহজেই অনুমেয়।

ব্যক্তি বিশেষের স্বার্থ হাসিলের মাঝ খানে পড়ে মড়মড় করে ভাংছে আমাদের সমাজ। তাছাড়া ইবায়ার আগুন নিভানোর পথে বড় বাধা আজ সমাজ পতিরাই ‘ তাদের ছেলে, ভাই, ভাতিজারাই আজ ইয়াবা আগুনে জ্বালাচ্ছে পুরো সমাজ সুতরাং এখানে আর নিভায় কে ? ইয়াবা ব্যাপারীরা যেমন আগামী প্রজন্মকে জ্বালিয়ে ও পার পেয়ে যায় – তদ্রুপ বিচারহীনতার সুযোগে অবিচার ও সমাজের ঘাড় চেপে বসে বসে নিপীড়ন চালিয়ে যায় । সুতরাং বুঝায় যায়, ভাল নেই আমাদের সমাজ, বিচার নেই আমাদের গায়, এমন সমীকরণ যখন আমাদের সামনে, তখনই নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আগামীর পথ চলাকে আরো বেশি কঠিন করে তুলছে। এখনই যদি এর থেকে বেড়িয়ে আসার পথ খুঁজা না হয়। তাহলে অনিশ্চিত আগামী একথা আগে ভাগেই বলেই রাখা যায়…!

মোঃ মাহফুজুর রহমান পুষ্প
প্রতিষ্ঠাতা এডমিন
মাদক মুক্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া চাই
গোকর্ন ঘাট- ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ইমেইল – pushpabd1983@gmail.com

Some text

ক্যাটাগরি: ছবি ব্লগ

[sharethis-inline-buttons]

৩ কমেন্ট “কেমন আছে গোকর্ণ ঘাটের সমাজ ও বিচার ব্যবস্থা

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি