শনিবার সকাল ৮:১০, ১৮ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২রা নভেম্বর, ২০২৪ ইং

বিয়ে উৎসব : অতীত ও বর্তমান

১৫৫৮ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

বিবাহ বা বিয়ে শব্দের আভিধানিক অর্থ পরিনয় বা পাণি গ্রহন। মানব জীবনে বিবাহ এমন এক বন্ধনের নাম যা দ্বারা বৈবাহিক অধিকারের সুবিধা পাওয়া যায়। ফলে সুস্থ প্রকৃতির নারী পুরুষের জন্য সম্ভ্রম ও সতীত্ব রক্ষা করা সহজতর হয়। আসলে বিয়ে একটি সামাজিক অনুষ্ঠান ও আনন্দঘন উৎসব। মুসলিম সমাজে এটি এক ধরনের সামাজিক চুক্তি ও ধর্মীয় বিধান। তিতাস বিধৌত ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকার জনগন বিয়ের ব্যাপারে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার মতো প্রায় একই ধরনের আচার-অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। এ ধরনের আচার গুলো কোনটি বিয়ের আগে, আবর কোনটি বিয়ের সময় এবং কোনটি বিয়ের পরে পালন করা হয়। সময়ের ব্যাবধানে এসব আচার-অনুষ্ঠানে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।

বিবাহ সম্পর্কিত আচারগুলোর মধ্যে “কনে দর্শন” অনুষ্ঠান আগে সম্পন্ন হয়। ছেলে বিয়ে দেওয়ার উপযোগী হলে, আত্মীয়-স্বজন বা ঘটকের মাধ্যমে বিয়েযোগ্য মেয়ে তালাশের কার্যক্রম শুরু হয়, কোন সুপাত্রির সন্ধ্যান পেলে বরপক্ষ থেকে ছেলের বাবা, ভগ্নিপতি, চাচা ও ঘটকসহ পান-সুপারী, বাতাসা, জিলাপী ইত্যাদি নিয়ে মেয়ের বাড়ীতে আসেন কনে দেখার জন্য; এ সময় কনে দেখার পর পছন্দ হলে তাকে বকশিস প্রদাণ করা হয়। তারপর মেয়ে পক্ষ ছেলের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য ছেলের বাড়ীতে আসেন। উভয় পক্ষের পছন্দের পর মোহাম্মদী পঞ্জিকা দেখে বিয়ের দিন ধার্য্য করা হয়।

এ সময় উভয় অভিবাবকের মধ্যে মহর অথবা দেন-পাওনা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কোনো মতবিরোধ সৃষ্টি হলে ঘটকের মধ্যস্থতায় উক্ত সমস্যার সুন্দর সমাধান হয়। মহর সাধারনত বংশীয় মর্যাদা ও ছেলের উপার্জন অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়। প্রচলীত প্রথা অনুযায়ী মা-বাবার পছন্দকে শির ধার্য্য করে নেয় ছেলে-মেয়েরা। তবে বর্তমানে বেশীর ভাগ ছেলে-মেয়েরা ইন্টারনেটের বধৌলতে খুজেঁ নেয় তাদের পছন্দের জীবন সঙ্গী। আবার কেউ কেউ অনেক সময় কাউকে কোনো কিছুনা জানিয়ে বা ঘর থেকে পালিয়ে গিয়ে আদালতের মাধ্যমে নিজেরাই নিজেদের বিয়ে সম্পন্ন করে নেন। এতে মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজনদেরকে সামাজিক ভাবে বেশ অপদস্থ হতে হয়।

বিয়ে অনুষ্ঠানের পূর্নতা দেওয়ার জন্যে বিবাহের ধার্য তারিখ এর সাত দিন পূর্ব থেকে বরও কনের বাড়ীতে আত্মীয়-স্বজনরা আসতে শুরু করে। এ সময় উভয়ের বাড়ীতে বিভিন্ন ধরনের নকশী পিঠা ও নতুন পোষাক বনানোর ধুম পরে যায়। বিয়ের ২/৩ দিন পূর্বে উভয় পক্ষের আত্মীয়-স্বজনরা সম্মিলিতভাবে বর-কনে ও তাদের গনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনদের জন্য বিভিন্ন ধরনের শাড়ী-কাপড়, সেলোয়ার-কামীজ ও গহনা-কসমেটিক্স পছন্দ করে ক্রয় করেন । তবে মাঝে মধ্যে পছন্দের কোনো বিষয় নিয়ে মত বিরোধ দেখা দিলে মুরুব্বীদের হস্তক্ষেপে উক্ত সমস্যার সুষ্ঠু সামাধান হয়।

বিয়ের একদিন পূর্বে বর ও কনের বাড়ীতে পৃথক ভাবে গায়ে হলুদ ও মেহেদি অনুষ্ঠান খুব আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দুপুর দিকে বর ও কনের ভাই-বোন ও ভগ্নিপতি-ভাবীরা পৃথক ভাবে উভয়ের হাতে পায়ে হলুদ মেখে দেন। অতঃপর তারা গোসল সম্পন্ন করেন। তারপর সন্ধ্যার দিকে বর ও কনের আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে একে আপরের বাড়ীতে পান-সুপারী ও বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন সহ একটি বিচিত্র কুলায় করে গাছের টাটকা মেহেদী পাঠানো হয়। উক্ত মেহেদী দিয়ে রকমারী নকশায় বর ও কনের হাতকে রঙ্গিঁন করা হয়।

এই দিন সন্ধ্যার পর কনের বাড়ীর উঠানে ডেকোরেটার্সের লোকজন দিন রঙ্গিঁন সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে অতিথিদের জন্য বিয়ে বাড়ীর তোরণ, বর ও কনের জন্যে পৃথক ভাবে ঘর তৈরী করে রঙ্গিন কাপড় ও ঝালর বাতি দিয়ে সাজানো হয়। আগেকার দিনে মহল্লার যুবকরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এই কাজগুলো সুচারু রুপে সম্মন্ন করতো। বিয়ের দিন সকাল দিকে বরের বাড়ী থেকে পান-সুপারী, বাতাসা সহ বাজারের বৃহৎ আকারের এক জোড়া মাছ পাঠানো হয় কনের বাড়ীতে। এই মাছ,পান-সুপারী ও বাতাসা দিয়ে কনের বাড়ীর লোকেরা বর যাত্রীদেরকে অপ্যায়িত করে থাকেন। এই রীতিকে বলা হয় “যাত্রার মাছ”। বর্তমানে এই রীতি প্রায় বিলুপ্তীর পথে।

বিয়ের দিন সকাল দিকে বর পরিস্কার-পরিছন্ন হয়ে সুগন্ধী আতর মেখে সাদা রং এর পায়জামা -পাঞ্জাবী, শেরওয়ানী-পাগড়ী ও চটি জুতা পরে বিয়ে বাড়ীতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। সাধারণঃ পাগড়ী, শেরওয়ানী ও চটিজুতা দর্জির দোকানে থেকে ভাড়া করে আনা হয়। বর্তমানে অবশ্য অবস্থাপন্ন ব্যাক্তিরা গোল্ডেন, সিলভার, মেরুন ইত্যাদি রং এর শেরওয়ানী-পাগড়ী ও প্যান্ট-চটিজুতা অভিজাত শপিং মল থেকে ক্রয় করে নেন। যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পর বর মায়ের হাতে এক গ্লাস গরম দুধ পান করে বিয়ে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। এটিকে “দুধের ঋণ শোধ” অনুষ্ঠান বলা হয়। এ অনুষ্ঠানটি বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন ভাবে পালন করে থাকে।

আজ থেকে ৪০/৫০ বছর আগে বরযাত্রীরা নৌকা অথবা রিকসায় চড়ে কনের বাড়ীতে যেতো। আবার অনেক সময় মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে যেতে হতো।তবে এই প্রতিকুল পরিস্থিতিতে কনে পালকিতে কর্ েআসা যাওয়া করতো। কিন্তু বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার কারণে সড়কপথে বাস, টেক্সি, মাইক্রো অথবা টেম্বুতে চড়ে অতি সল্প সময়ে কনের বাড়ীতে আসতে পারে। কনের বাড়ীতে পৌঁছানোর ১৫/২০ মিনিট পূর্বে বরযাত্রীর পক্ষ থেকে আতশবাজী ফুটিয়ে বরযাত্রী আগমনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়। অতঃপর কনের বাড়ীতে বর যখন বৈরাতীসহ উপস্থিত হয়; তখনই বরকে তাজিমের সঙ্গে বরণ করে নেয়া হয়। অবশ্য তোরণ এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের পরই তা করা হয়। প্রচলীত প্রথা অনুযায়ী এ সময় বরযাত্রীর পক্ষ থেকে শিশু-কিশোর মাঝে বাতাসা বিতরণ করা হয়। সেই বাতাসা পাওয়ার জন্যে তাদের মাঝে তুমুল হুলস্থুল সৃষ্টি হয়।

বরযাত্রীরা কনের বাড়ীতে আসার পর পরই তাদেরকে শরবত ও রকমারী নকশী পিঠা দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। অতঃপর স্থানীয় কাজী, ইমাম সাহেব, মনোনীত উকিল শ্বশুর ও দু’জন স্বাক্ষীগণের উপস্থিতিতে বিবাহ সম্পাদনেরকাজ শুরু হয়। বর ও কনের মৌখিক স্বীকৃতি ও লিখিত স্বাক্ষরের মাধ্যমে বিবাহের কাজ সুসম্পন্ন হয়। বিবাহ সম্পাদন হওয়ার পর শুরু হয় মাধ্যাহ্ন ভোজ। এ সময় মাছ, মাংস, কোরমা, পোলাও, দই ইত্যাদি দিয়ে অতিথিদেরকে আপ্যায়ন করা হয়। বর্তমানে খাবার তালিকায় আরো যোগ হয়েছে- চায়নীজ শব্জী, পনির পোলাও, খাসির রানের রোস্ট, বোরহানী, মুরগীর রোস্ট, বিরয়ানী, গরুর রেজালা, গলদা চিংরির ফ্রাই, শাহি খাসির কাচ্চি, ক্যারামন চিকেন, বিফকাইলান ইত্যাদি দামি খাবার। কিন্তু সব দামী খাবার দ্বারা আপ্যায়িত করা নি¤œ বা মাধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে খুবই কষ্টকর ও অসম্ভপর।

প্রচলীত রীতি ও প্রথা অনুযায়ী এই দিনে বরকে এক দিনের বাদশা বলা হয়। তাই তার জন্য স্পেশার ভাবে তৈরী করা হয় অতি উন্নত মানের খাবার। এই খাবারের ম্যানুতে থাকে রকমারী নকশী পিঠা, কোরমা, পোলাও, আস্ত মুরগীর রোস্ট, ভোনা মাছ, ক্ষির দই ইত্যাদি। এই খাবারকে আঞ্চলিক ভাষায়“খদর” বলা হয়। বরকে উক্ত খাবার দ্বারা আপ্যায়ন করার পর কনের ভাই-বোনেরা বরের কাছ থেকে মোটা অংকের বকশিস হাতিয়ে নেন এবং এই বকশিসের টাকা নিয়ে তাদের মধ্যে চলে মহা উল্লাস

মাধ্যাহ্ন ভোজের পর্বশেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর শুরু হয় বর ও কনের লজ্জা ভাঙ্গাঁনোর পালা। এই জন্যে বরকে তার ভাই-বোন, বন্ধু ও ভগ্নিপতিসহ বকশিসের বিনিময়ে আন্দরমহলে যেতে হয়। অতঃপর বর ও কনেকে পাশাপাশি বসানো হয় এবং উভয়ে ছোট একটি আয়নার মাধ্যমে একে অপরের মুখ দেখেন। এ সময় বর ও কনের পক্ষের লোকজন পরস্পরকে বিভিন্ন ধরনের কৌশলী প্রশ্ন করে পরাজিত করার চেষ্টা করে। তবে যে জয়ী হয় তাকে বিশেষ উপহার প্রদান করা হয়। এই লজ্জা ভাঙ্গাঁর অনুষ্ঠানকে “রোনময়ী” বা “রোনামা” বলা হয়। এটি হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোকেরাই পালন করে। পূর্বে এই অনুষ্ঠানটি গভীর রাতে হতো; কেননা তখন বেশীর ভাগ বিয়েই অনুষ্ঠিত হতো সন্ধ্যার পর। কিন্তু বর্তমানে দেশের আইন-শৃংখলার অবস্থা অনুকুলে না থাকার কারনে বিবাহ সম্পর্কিত আচার-অনুষ্ঠান গুলো বিকালের মধ্যেই সুসম্পন্ন করা হয়।

রোনামা অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর বরপক্ষকে মেয়ে পক্ষ বিভিন্ন অতিথিদের নিকট থেকে পাওয়া উপহার সামগ্রী গুলো প্রদান করে থাকেন। অতঃপর বরপক্ষ কনেকে সঙ্গেঁ নিয়ে বাড়ীতে প্রত্যাগমনের প্রস্তুতি নেন। এ সময় এক হৃদয় বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয়। কনে চিরদিনের জন্যে বিদায় নিয়ে শ্বশুর বাড়ীতে চলে যায়। বাবার বাড়ীর পরিবারের সঙ্গেঁ তার বিচ্ছেদ ঘটে। এই বিচ্ছেদ খুবই বেদনাদায়ক। এ যন্ত্রনা মা-বাবা ও ভাই-বোনদের মনকে করে কাতর ও পীড়িত। তখন চারিদিকে কান্নার রোল পরে যায়। এমন পরিস্থিতিতে কনে বিদায় নেয়। এ সময় কনের মনে সাহস যোগানো ও তাকে বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করার জন্য ছোট ভাই-বোন ও একজন বয়স্ক মহিলা তার সাথে শ্বশুর বাড়ীতে গমন করেন। এই হৃদয় বিদারক পর্বকে বলা হয় “কনে বিদায়” অনুষ্ঠান।

নব বধূকে নিয়ে বাড়ীর আঙ্গিঁনায় আসর পর ছেলের মা একটি চিত্রিত কুলায় ধান-দূর্বা, তেল-হলুদ ইত্যাদি সাজিয়ে অতি আনন্দের সাথে নব বধূকে বরণ করে নয়ে। এই প্রথাকে “বধূ বরণ” বলা হয়। অতঃপর রাত্রি বেলার খাবার সম্পন্ন হওয়ার পর বর ও কনের ভাই-বোনরা মিলেমিশে আন্দর মহলে রঙ্গিঁন কাগজ ও ঝরির মালা দিয়ে অতি সুন্দর ভাবে বাসর ঘর তৈরী করে। বাসর ঘর তৈরীর কাজ শেষ হওয়ার পর বিশেষ নজরানার বিনিময়ে বর ও কনে উক্ত ঘরে প্রবেশ করে। তারপর মা, ভাবী ও দাদীরা নব দম্পতিকে দর্শন করে সালামি প্রদান করেন। এই প্রথাকে“নজর সেলামি” বলা হয়। সবাই চলে যাবার পর বর ও কনে ওজু করে মিলিতভাবে দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করেন। অতঃপর বর কনের মহর পরিশোধ করেন এবং উভয়ে সংসার জীবনের যাবতীয় দায়িত্ব- কর্তব্য এবং নিজেদের পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে বিস্তারীত আলোচনা করেন। যাদের মহর সাধ্যের মধ্যে থাকে তারা নগদ টাকা দিয়ে নির্ধারিত মহর আদায় করেন। আর যারা আপারক হন তাদের মহর অনাদায়ী থাকে। অনাদায়ী মহর পুরুষের জন্য আত্মমর্যাদাহানীকর ব্যাপার। বিবাহের প্রথম রাতে যখন বর-কনে একান্তে মিলিত হয় তখন মহিলার কানপাতে। এটা সীমাহীন নির্লজ্জতা। নব বধূ বরের বাড়ীতে আসর ৩/৪ দিন পর “বৌ-ভাত” অনুষ্ঠান পালিত হয়। এটি হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোকেরাই পালন করে। এটি মূলতঃ খাওয়া – দাওয়ার উৎসব অনুষ্ঠান । এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বর ও কনের বাড়ীর আত্মীয়-স্বজরা একে অপরের সাথে গণিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ পায়।

বৌ-ভাত অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর বর তার ছোট ভাই-বোন ও ভগ্নিপতিসহ নববধূকে সঙ্গেঁ নিয়ে কণের পিত্রালয়ে গমন করেন। এটি হিন্দু-মুসলমান উভয় সমাজেই প্রচলিত। এই রীতিকে “ফিরা যাত্রা” বলা হয়। বর এখানে ২/৩ দিন অবস্থান করেন। এই সময় বর নব বধূকে সঙ্গেঁ নিয়ে শ্বশুর বাড়ীর আত্মীয় স্বজনদের জন্য বিভিন্ন ধরনের উপহার সামগ্রী ক্রয় করেন এবং উক্ত উপহার সামগ্রী প্রদান করার জন্যে আত্মীয় -স্বজনদের বাড়ীতে বেড়াতে যান এবং তাদের কাছ থেকে “নজর সেলামি” পেয়ে থাকেন। এছাড়াও এ সময় নতুন বরকে নিয়ে কনের বাড়ীর আত্মীয়-স্বজনরা অতি আনন্দের সঙ্গেঁ বিভিন্ন রং দিয়ে রং খেলা খেলেন এবং বাড়ীর পুরো উঠান রঙ্গিণ করে তুলেন। এই অনুষ্ঠানের পরই বরের শ্বশুর বাড়ীতে যখন খুশী তখন আসতে কোনো বাধা- নিষেধ থাকে না।

এইভাবেই পালিত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া তথা বাংলাদেশের অন্যান্য জেলায় পবিত্র বিবাহ উৎসব অনুষ্ঠান। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যাচ্ছে বিবাহের ঐতিহ্যবাহী রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান ও আন্তরীকতা। আজ থেকে তিন দশক আগেও প্রায় প্রতিটি বিয়ের অনুষ্ঠানের মধ্যেই থাকত শিল্পের ছোঁয়া ও অফুরান সৃজনশীলতা। সেটা বিয়ের তোরণ সাজানো থেকে শুরু করে ফুলশয্যা, খাবার দাবার পরিবেশন কিংবা বর-কনের ঘর সাজানো সব কিছুতেই থাকত বিয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসাসিক্ত হাতের ছোঁয়া । এখন টাকার বিনিময়ে বিয়ের সবকিছুই করে দেয়; “ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট” নামক এক দল লোক। বর্তমানে বিয়ে মানেই শুধু কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ফেলে দেয়া; যা অনভিপ্রেত ও অনাকাংক্ষিত।

সুতরাং বর্তমানে বিবাহ অনুষ্ঠানে প্রচলিত যাবতীয় অশ্লীষতা, অতিরিক্ত ব্যায়, অভিশপ্ত যৌতুক প্রথা, আপসংস্কৃতি, অধর্মীয়-অসামাজিক রীতিনীতি পরিহার করে আবহমান কাল থেকে চলে আসা আচার ও প্রথা মেনে ঋনগ্রস্ত না হয়ে আন্তরীকভাবে আত্যান্ত সাদাসিধে বিবাহ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে; তা হলেই নব-দম্পতির বৈবাহিক জীবন এবং পবিত্র বিবাহ উৎসব সুন্দর, সার্থক ও আনন্দময় হবে ইনশাআল্লাহ।

খায়রুল আকরাম খান

Some text

ক্যাটাগরি: মতামত

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি