রবিবার সকাল ১১:৩৮, ১২ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ. ২৬শে মার্চ, ২০২৩ ইং

নেতিবাচক চিন্তা

৮৭৭ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

নেতিবাচকতা ও ইতিবাচকতা চিন্তার দুটি উপাদান। পানির উপাদান যেমন অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন, তেমনি চিন্তার উপাদান ইতিবাচকতা ও নেতিবাচকতা। পানির মধ্যে হাইড্রোজেন যেমন, চিন্তার মধ্যে নেতিবাচকতা তেমন। জলজ প্রাণীগুলো পানি থেকেই হাইড্রোজেন বাদ দিয়ে অক্সিজেন গ্রহণ করে। মানুষ অক্সিজেন গ্রহণ করে বাতাস থেকে, অথচ বাতাসের ৭৮% নাইট্রোজেন।

নেতিবাচক চিন্তা না করার উপদেশে পৃথিবী ঠাসা। অথচ মানুষ নেতিবাচক চিন্তাই করে বেশি। নেতিবাচক চিন্তার উৎপাদন বৃদ্ধিতে উপদেষ্টাদের ভূমিকা প্রতুল। মানুষকে যতই নেতিবাচক চিন্তা না করার উপদেশ দেওয়া হবে, মানুষ ততবেশি নেতিবাচক চিন্তা করবে। যদি বলা হয়, ‘সবদিকে যেও শুধু উত্তরদিকে যেও না’, তবে সে প্রথমে উত্তর দিকে যাবে। যদি বলা হয়ে, ‘লাল হাতি নেই, লাল হাতির চিন্তা করো না’, সঙ্গে সঙ্গে চিন্তাজগতে লাল হাতির উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে। মানুষকে যতবেশি লালহাতির চিন্তা না করার জন্য বলা হবে, চিন্তাজগতে তত বেশি লাল হাতি উৎপন্ন হবে।

সত্য হলো এই যে, বাতাসে যেমন ৭৮% নাইট্রোজেনের প্রয়োজনে আছে, তেমনি জীবনে ৭৮% নেতিবাচক চিন্তার প্রয়োজন আছে। আর এটিই হচ্ছে সেরা ইতিবাচক চিন্তা। যা আছে এবং থাকবে তাকে অস্বীকার করা প্রথমত আত্মপ্রতারণা; দ্বিতীয়ত যা আছে তাকে গ্রহণ না করে রূপান্তর করা অসম্ভব ব্যাপার। ফুসফুস যেমন বাতাস থেকে অক্সিজেন রেখে অন্য সব উপাদান বের করে দেয়, ঠিক তেমনি চিন্তাজগৎ থেকে ইতিবাচকটি রেখে বাকি সব বের করে দেয়া- এই হলো জীবন রূপায়নের শিল্প। সুতরাং করণীয় হলো, প্রথমত নেতিবাচক চিন্তাগুলোর অস্তিত্ব স্বীকার করা এবং গ্রহণ করা। দ্বিতীয়ত, এগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া এবং তৃতীয়ত, এগুলোকে অবজ্ঞা করে ইতিবাচক চিন্তা প্রতিস্থাপন করা।

কাম, ক্রোধ, হিংসা, ঈর্ষা নেতিবাচক চিন্তার ফল। প্রথমে উৎপন্ন হয় ক্রোধচিন্তা, এরপর উৎপন্ন হয় ক্রোধ। ক্রোধ নিষ্ক্রিয় করার প্রথম ধাপ- ক্রোধের আগমন সম্বন্ধে সচেতন হওয়া, বুঝা যে ‘এটি ক্রোধ’। দ্বিতীয় ধাপ- ক্রোধ নিষ্ক্রিয় করা, উদিত নেতিবাচক চিন্তাকে নাকচ করে দেওয়া এবং ‘আমি ক্রোধান্বিত’ এভাবে চিন্তা না করে, ‘এটি ক্রোধ’- এভাবে চিন্তা করা। তৃতীয় ধাপ, ইতিবাচক চিন্তার প্রতিস্থাপন এবং ক্রোধচিন্তাকে ক্ষমা, উদারতা, সহমর্মিতা, সহযোগিতার সমাবেশে প্রেমে রূপান্তর।

নেতিবাচক চিন্তার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করার জন্য, ‘লোকটি ভণ্ড’ এভাবে না বলে বলা যায় যে, আমার চিন্তা হচ্ছে ‘লোকটি ভণ্ড’। ‘তাকে আমার ভালো লাগে না’- এভাবে না বলে বলা যায় যে, ‘আমি তার প্রতি ভালো না লাগা অনুভব করছি’। ‘আমি হতাশ’। এভাবে না বলে, বলা যায় যে ‘আমি হতাশা অনুভব করছি’। এমন ব্যক্ততায় ঘোষণা করা হয় যে, এগুলো স্থায়ী নয়- অস্থায়ী একটা স্তর মাত্র। তাহলে লোকটি সম্বন্ধে ধারণা পরিবর্তনের সুযোগ থাকে, তাকে ভালো লাগার একটা সুযোগ থাকে এবং আশার দিগন্তটি উন্মুক্ত থাকে।

মূল সমস্যা হলো ‘সর্পকে রজ্জু’ প্রত্যক্ষণের বিভ্রম। অধিকাংশ নেতিবাচক চিন্তাই আমাদের সম্মুখে উপস্থিত হয় ইতিবাচক হিসেবে। ভণ্ডরা আমাদের সামনে আসে সাধু বেশে। জাল টাকাগুলো যেমন আসল টাকার মতোই তেমনি নেতিবাচক চিন্তাগুলোও ইতিবাচক চিন্তার মতোই। যেমন, পর্যায়ক্রমিক বাসনা আমাদের কাছে ইতিবাচক বলেই মনে হয়। বাসনা পূরণের চেষ্টাই আমরা করি সারাজীবন। কিন্তু বাসনা কখনো পূরণ হয় না। আমরা ধরতেই পারি না যে, বাসনা নেতিবাচক। আগে যাওয়ার চিন্তা সবাই করে। তাই সবাই পিছিয়ে পড়ে। মানুষ ধরতেই পারে না যে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে আগে যাওয়ার চিন্তাটি নেতিবাচক। স্বার্থচিন্তা সবাই করে তাই স্বার্থ উদ্ধার হয় না। মানুষ ধরতেই পারে না যে, অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে নিজের স্বার্থ হাসিল করার চিন্তাটি নেতিবাচক।

বলা হয়, জেলকে ভয় পাওয়া নাকি নেতিবাচক চিন্তা; যে জেলকে ভয় পায় তার নাকি জেল হয়- মিথ্যা কথা। জেলে যাওয়ার ভয় ইতিবাচক। জেলে যাওয়ার ভয় না থাকা নেতিবাচক। জেলে যাওয়ার ভয় কার হয়? যে অপরাধ করে তার। কার বারবার জেলে যাওয়ার ভয় হয়? যে বারবার অপরাধ করে তার। এই ভয় একটি ইতিবাচক আবেগ, যদি ভয় জাগ্রত হওয়া মাত্র ঐ কাজটি থেকে বিরত থাকা যায়। জেলের ভয়েই মূলত মানুষ অপরাধ থেকে বিরত থাকে। আগাছার বীজ যেমন বপন করতে হয় না, তেমনি নেতিবাচক চিন্তা চেষ্টা করে করতে হয় না- এগুলো স্বয়ং উৎপন্ন হয়। ফুলের বীজ যেমন যত্ন করে বপন করতে হয়, সেচ দিতে হয়, নিড়ানি দিতে হয় তেমনি ইতিবাচক চিন্তা বপন করতে হয়, যত্ন করতে হয়, লালন-পালন করতে হয়। যে জমিতে আগাছা হয় না, সে জমিতে ফুল গাছও হয় না। ফুলের চাষ করবো অথচ আগাছা পরিষ্কার করবো না, তা হবে না। আগাছা হবেই এবং এই আগাছাগুলো তুলেই জৈবসার উৎপন্ন করতে হবে, তবে আগাছাও রপান্তরিত হবে পুষ্পের সৌরভে।

যে মালী আগাছা আর সদ্যোজাত চারার পার্থক্য জানে না, তাকে যদি নিড়ানির কাজে লাগানো হয় তবে তো আর বাগান হবে না! সদ্যোজাত ফুলের চারা ও আগাছার চারা দেখতে যেমন একই রকম, তেমনি নবাগত সব চিন্তাই একই রকম। কোনটা ফুলের চারা আর কোনটা আগাছা তা শনাক্ত করার জন্য যেমন কিছু সময় দিতে হয়, তেমনি কোনটি ইতিবাচক চিন্তা এবং কোনটি নেতিবাচক তা শনাক্ত করার জন্যও কিছু সময় দিতে হয়। ভয় ক্রোধ ইত্যাদি নেতিবাচক আবেগও ইতিবাচক হয়, যদি নেতিবাচকের বিরুদ্ধে হয়।

সুতরাং ক্রোধ উৎপন্ন হওয়া মাত্রই একে নেতিবাচক বলা যাবে না। এটি ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক তা চেনার জন্য কিছুটা সময় দিতে হবে। অতীতের রোমন্থন মারাত্মক নেতিবাচক, কিন্তু তা ইতিবাচক বলেই মনে হয়। যারা নেতিবাচক চিন্তা না করার উপদেশ দেয় তারাও দিনরাত পড়ে থাকে অতীত নিয়ে। সবগুলো প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের ভিত্তি অতীত। যা সকলেই অবগত। তাই তারা উচ্চনিদানে বারবার অবগত করে। অতীতের কথা বৎসরে এক-দুইবার শোনা মন্দ না, কিন্তু দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ, অতীতের রোমন্থন মহামারী উৎপাদক।

মানুষ চরম অজ্ঞানে নিমজ্জিত কিন্তু তারা তা জানে না। তাদের অবস্থা সেই গাড়ির মতো যার চাকা দেবে গেছে, চাকা একই স্থানে ঘুরছে তো ঘুরছেই। চালক গ্যাস দিয়েই চলছেন, ঢাউস শব্দ হচ্ছে, আর চালক ভাবছেন গাড়ি বুঝি এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে।

দাঁড়াও হে পথিক বর! দেখ, চিন্তার চাকা কোথাও দেবে গেল কিনা? দেখ, একই স্থানে চাকা ঘুরছে কিনা? যদি তাই হয়, প্রথমে দেবে যাওয়া চাকা তোলার ব্যবস্থা কর, এরপর গ্যাস দিও।

ড. এমদাদুল হক : লেখক, গবেষক

সভাপতি- জীবনযোগ ফাউন্ডেশন

বাংলাদেশ

Some text

ক্যাটাগরি: মতামত

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

Flirt4free Review: Security, Prices, Models

The Best Chat Room Apps…

Videochat de sexo

Take part in the Finest…

The Fantasy About Ukraine Girls…

The Hidden Treasure Of Costa…

Se corre en su cara

On the web Pokies Modern…

5 Simple Techniques For Portuguese…

The Idiot’s Guide To Sexy…