রবিবার দুপুর ১২:৪৬, ১২ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ. ২৬শে মার্চ, ২০২৩ ইং

আত্মবিধ্বংসী ভোগবাদ

২৬৭৭ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ৩ টি

ভোগের জীবনযাপন করার অর্থ- মরার জন্য বেঁচে থাকা; আর ত্যাগের জীবনযাপন করার অর্থ- বেঁচে থাকার জন্য মরে যাওয়া। ভোগে হয় পতন, ত্যাগে হয় বিকাশ। দুটি পথই উন্মুক্ত আছে- চয়ন করার অধিকারও।

ভোগবাদীদের লক্ষ্য একটাই- ভোগ, আরো ভোগ এবং আরো ভোগ। ভোগবাদের মূলে রয়েছে ‘আমার’ বোধ। ভোগবাদীরা যদি রাজনীতি কিংবা ধর্মানুষ্ঠানও করে, তবে তা করে অহং তুষ্টির জন্যই। তারা টাকা ছাড়ে ক্ষমতার জন্য, হজে যায় লোকে যেন হাজি সাহেব বলে ডাকে। তাদের জীবনের কেন্দ্রে রয়েছে অহং। অহং সর্বদাই দেওয়ার আগে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হতে চায়।

ভোগবাদের সূত্র একটাই- ‘পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই ভোগের জন্য। যা ভোগে আসবে না তার কোনো মূল্য নেই।’ ভোগবাদীর কাছে সম্পর্কও ভোগের বস্তু। যে ভোগে আসে না তার সাথে সম্পর্ক রাখার যুক্তি তারা খুঁজে পায় না। ভোগবাদিতায় প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রিত হয় ভোগের নীতিতে।

হাজারো উপায়ে অহং বাড়াতে থাকে অর্থ, ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি। এগুলো যত বাড়তে থাকে, ততই বাড়তে থাকে ভয়। ফলে নিজেকে রক্ষা করার জন্য সে নিরাপত্তা প্রাচীর তৈরী করতে থাকে; যত বেশি প্রাচীর তৈরী করে তত বেশি নিরাপত্তাহীন হয়ে উঠে সে। জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই, মহাবিশ্বের কোথাও এমন কোনো স্থান নেই যেখানে জীবন নিরাপদ।

ভোগ বস্তু-নির্ভর। বস্তু থেকে প্রাপ্ত সুখ ক্ষণস্থায়ী। শিশুরা যেমন একটা ছেড়ে আরেকটা খেলনার জন্য উতলা হয়, তারাও তেমনি- একটা ছেড়ে আরেকটা ধরে, কোনোকিছুতেই স্থির থাকতে পারে না। ভোগের বিষয় যদি ব্যক্তি হয় তবে তা আরো ভয়াবহ সংকট উৎপন্ন করে। কারণ, সে তখন ব্যক্তির উপর মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ফলে প্রবল হয়ে উঠে ঈর্ষা।

ভোগবাদ মানবজাতিকে আত্মবিধ্বংসী পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ভোগবাদী সমাজ প্রতিটি ক্ষণে আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, ‘আমার যথেষ্ট নেই’। টাকা আছে কিন্তু যথেষ্ট না।বাড়ি আছে কিন্তু যথেষ্ট না। সময় আছে কিন্তু যথেষ্ট না।

ভোগী মানুষ অবিরাম নিজ থেকে পালিয়ে বেড়ায়। তাদের ক্লাব, সিনেমা, পিকনিক কিংবা তীর্থভ্রমণ সবকিছুই নিজ থেকে পালিয়ে বেড়ানোর উপলক্ষ্য। কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাকলে সে ভুলে থাকতে পারে না পাওয়ার আত্মগ্লানি। যখনই সে একা হয় দুঃখ তাকে তাড়া করে। তাই দ্রুত কিছু একটা নিয়ে মেতে থাকার অবলম্বন সে খুঁজে নেয়। ভোগবাদ মানবজাতিকে আত্মবিধ্বংসী পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ভোগবাদী সমাজ প্রতিটি ক্ষণে আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, ‘আমার যথেষ্ট নেই’। টাকা আছে কিন্তু যথেষ্ট না। বাড়ি আছে কিন্তু যথেষ্ট না। সময় আছে কিন্তু যথেষ্ট না। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, বিশ্রাম, চিকিৎসা ইত্যাদি চাহিদা পূরণের একটা সীমা আছে। কিন্তু ভোগের কোনো সীমা নেই। প্রয়োজন মেটানো সম্ভব, কিন্তু ভোগেচ্ছার যোগান দেয়া অসম্ভব।

ভোগবাদী সমাজে মর্যাদা দেওয়া হয় ব্র্যান্ড ভোক্তাদের। মানুষের মর্যাদা নির্ধারণে এখন শিক্ষার মূল্য কম, দীক্ষার মূল্য প্রায় শূন্য, আর ব্র্যান্ডের মূল্য আকাশচুম্বী। তাই প্রসার ঘটছে ‘ঋণ করে ঘী খাওয়ার’ চার্বাক নীতি। ঋণপত্র, বাকিতে ক্রয়ের ব্যবস্থা ও ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প কেড়ে নিচ্ছে মানুষের স্বস্তি। ভোগবাদের প্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে দুর্নীতি। ভোগবাদিতা চরিতার্থ করতে বনাঞ্চল ধ্বংস করে ক্রমাগত স্থাপন করা হচ্ছে কলের কারখানা।

ভোগ ও ত্যাগ দুটি বিপরীত জীবন-দর্শন। ত্যাগের জীবনেও ভোগ আছে। প্রয়োজনীয় ভোগ, ভোগবাদ নয়। কাঁঠাল খাবার আগে হাতে তেল মাখিয়ে নিলে কাঁঠালের আঠা হাতে লাগে না। ত্যাগের জীবন-দর্শন হলো- সংসার রূপ কাঁঠালকে জ্ঞানরূপ তেল মেখে ভোগ করা।

ভোগের জীবনযাপন করার অর্থ- মরার জন্য বেঁচে থাকা; আর ত্যাগের জীবনযাপন করার অর্থ- বেঁচে থাকার জন্য মরে যাওয়া। ভোগে হয় পতন, ত্যাগে হয় বিকাশ। দুটি পথই উন্মুক্ত আছে- চয়ন করার অধিকারও।

Some text

ক্যাটাগরি: মতামত

[sharethis-inline-buttons]

৩ কমেন্ট “আত্মবিধ্বংসী ভোগবাদ

  1. লেখাটি এক কথায় দারুণ। অসংখ্য ধন্যবাদ লেখিকাকে। তবে আমি বলব, লেখায় লেখিকার নিজের অবস্থান ও কর্মকাণ্ডের তেমন সমালোচনা নেই। অর্থাৎ লেখাটা আত্মসমালোচনামুক্ত বলা যেতে পারে। তাই এর দ্বারা অন্যের সামান্য উপকার হলেও হতে পারে, কিন্তু নিজের খুব একটা উপকারের সম্ভাবনা কম। তবে নিজের চিন্তা-চেতনা, অবস্থান ও কর্মকাণ্ডগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে, বিচার করতে এবং আত্মসমালোচনায় আরো মনোযোগী হতে লেখাটা যে-কারো বিশেষ সাহায্যে আসতে পারে। সুতরাং অতটুকু লিখেই যেন আমরা আত্মতৃপ্তিতে না ভুগী। বরং অকপটে অতটুকু দেখতে ও বলতে পারার পর দায়িত্ব-কর্তব্য দ্বিগুণ হয়ে যায়।

  2. পুরো লেখাটা রূপে কোন আপত্তি নেই, কিন্তু প্রথমেই উনি যেই মন্তব্যটা লিখেছেন ( হজে যায় লোকে যেন হাজি সাহেব বলে ডাকে) এখানে পুরো পৃথিবীর সমস্ত মানুষ যার যার অবস্থান থেকেই এই অবস্থা, শুধুমাত্র একটা গোষ্ঠীকেই দোষারোপের তলে ফেলানো উচিত না। লেখাটা যখন পুরো পৃথিবীর মানুষের যন্যই, তখন পুরো পৃথিবীর মানুষের জন্য যেভাবে হয়, সেভাবেই লেখা উচিত। আমার লেখাটায়। অস্পষ্ট থাকলে মাফ করে দেবেন।

Leave a Reply

Flirt4free Review: Security, Prices, Models

The Best Chat Room Apps…

Videochat de sexo

Take part in the Finest…

The Fantasy About Ukraine Girls…

The Hidden Treasure Of Costa…

Se corre en su cara

On the web Pokies Modern…

5 Simple Techniques For Portuguese…

The Idiot’s Guide To Sexy…