সোমবার দুপুর ১:৫১, ১৩ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ. ২৭শে মার্চ, ২০২৩ ইং

যাত্রাপথে সংকট কোথায় : সমাপ্তি চক্রবর্তী

১০০৬ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ২ টি

মহাকালের লক্ষ্যে যাত্রারম্ভে প্রায় প্রত্যেকেই পথ চয়নের সংকটে পড়ে যায়। চারিদিকে এতো পথ, এতো তরিকা, এতো গুরুদের মার্কেটিং চলছে যে, সে কোন পথে যাবে, কাকে পথপ্রদর্শক হিসেবে চয়ন করবে বুঝে উঠতে পারে না। নানা তরিকার নানা তত্ত্বে অন্বেষী মনে বিশ্বাসের স্থলে সন্দেহ উৎপন্ন হয়।

তরিকা ৪/৫টি না। ৪/৫ হাজারও না- আরো অনেক বেশি। কে রাখে হিসাব? শুধু পথ আর পথ; তত্ত্ব আর তত্ত্ব। হাজারো তত্ত্বের ভিড়ে অধ্যেতার সম্মুখে একটি প্রশ্নই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে, ‘কোন তত্ত্বে আমি বিশ্বাস করবো? কার কাছে যাবো? কার সঙ্গে যাবো? কোথায় যাবো? সম্যক গুরু কে’? এসব প্রশ্নের উৎপীড়ন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে যখন সে দেখে যে, একটি তত্ত্ব আরেকটি তত্ত্বকে নাকচ করে দিচ্ছে। ফলে অন্বেষীর হৃদয় প্রেমের স্থলে ঘৃণায় ভরে যায়। অসংখ্য তত্ত্বে সে বিভ্রান্ত হয়ে যায়। আগ্রহের কচি পাতাটি বিভেদমূলক তত্ত্বঝড়ে ছিঁড়ে যায়।

‘নিজেকে জানলেই তাকে জানা যায়’ এসব কথা যারা সবচেয়ে বেশি বলে তারাই সবচেয়ে কম বিশ্বাস করে যে, সত্য নিজের মধ্যে আছে। বেশিরভাগ পথই নিজ থেকে পৃথক ‘কিছু একটা’ দেখিয়ে দেয়। ফলে যা হবার তা হয়- অন্বেষীরা মেতে উঠে পূজা, অর্চনা, সমাবেশ, শোভাযাত্রা ও নানাবিধ প্রচার কাজে। ব্যক্তি নিজের মধ্যে সত্য আবিষ্কার না করে যদি আরেকজনকে সত্য হিসেবে ধরে নেয়, তবে তা প্রতারণাপূর্ণ হবেই হবে- যদি আরেকজন সত্য হয় তবেও। ঈশ্বর সত্য। কিন্তু ব্যক্তি যদি নিজের মধ্যে ঈশ্বরকে খুঁজে না পেয়ে আরেকজনের মধ্যে ঈশ্বরকে খুঁজে পায়, তবে সে এবং তার খুঁজে পাওয়া ঈশ্বর- দুজনেই উদভ্রান্ত পথিক।

প্রথমে প্রয়োজন আত্মোপলব্ধি। এরপর আসে পরমাত্মার উপলব্ধি। সেজদা করার আগে নিজের অন্তর্জগতে আরাধ্যকে খুঁজে পেতে হয়। তবেই বাহ্যজগতের আরাধ্যের সঙ্গে অন্তস্থিত আরাধ্যের যোগ হয়। কিন্তু হচ্ছেটা কি? মানুষ নিজে সত্য না হয়ে বাহ্যজগতে সত্য খুঁজছে। কেমন করে সে তা খুঁজে পাবে? কে বিচার করবে যে, তিনি সম্যক গুরু? যে ব্যক্তি সম্যক সঙ্গী চয়ন করতে পারেনি, সম্যক কর্ম চয়ন করতে পারেনি, সম্যক বাক যার নেই, সম্যক দৃষ্টি যার নেই সে কেমন করে খুঁজে পাবে সম্যক গুরু?

শিক্ষা পণ্য হয়েছে অনেক আগেই। গান পণ্য হয়েছে, কবিতা পণ্য হয়েছে। শিল্প পণ্য হয়েছে। আধ্যাত্মিকতাও এখন স্রেফ একটি পণ্য। কর্পোরেট গুরুরা তাদের শাখা বিস্তার করে রেখেছে সারা বিশ্বে। প্রত্যেক গোত্র বাজারজাত করে যাচ্ছে মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য। টাকার জন্য হাত পেতে আছে সবাই। সত্য যদি টাকা দিয়ে কিনতে হয়, তবে তা কি সত্য? যার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হলে টাকা দিয়ে বুকিং দিতে হয়, সে গুরু নাকি সিনেমার হিরো? যে গুরু মামলায় জেতার মন্ত্র দেয়, সে গুরু নাকি মতলববাজ উকিল? গুরুরা শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন সেই সনাতন পদ্ধতি, অথচ জগৎ কত বদলে গেছে। মানুষ গরুর গাড়িতে আর চলে না, বনদেবতার পূজা দেয় না, সেই সুজাতা নেই, সেই পায়েসও নেই। অথচ এখনো রয়ে গেছে সেই পদ্ধতি।

চুপচাপ বসে থাকবে স্থির হয়ে, চিন্তা পাঠ করবে কিংবা শ্বাসের দিকে খেয়াল রাখবে। এটুকু শেখার জন্য মানুষ গমন করছে দূর-দূরান্তে। টাকা ঢালছে- সাথে কদমবুচি। তামিল নাডু থেকে ফিরে এলে কী হয়? যেই লাউ সেই কদু। শুনতে একটু অবাকই লাগে কিন্তু বাস্তবতা হলো এই যে, আধ্যাত্মিক জগৎটি মিথ্যাচার, ভণ্ডামি, কুসংস্কার ও কপটতায় ভরা। এই বিশাল ছাইভষ্ম থেকে রত্ন বের করা সত্যিই কঠিন কাজ।

কঠিন কাজ কেউ করতে চায় না, তাই প্রায় প্রত্যেক অধ্যেতা প্রতারণার শিকার হয়। নারী নির্যাতিত হয় সেবাদাসী হিসেবে, পুরুষ নির্যাতিত হয় সেবাদাস হিসেবে। কেউ কেউ অর্থ-বিত্ত হারিয়ে পথের ভিখারি হয়। অনেকের মনেই সন্দেহ জাগে বাস্তবেই সত্যপথ বলতে কিছু আছে তো! সত্য বলতে কিছু আছে তো! যে বিশ্বাস তাকে অন্বেষী করে তুলেছিল, তা হারিয়ে যায়। কেউ কেউ অন্য পথ ধরে। যারা টিকে থাকে, এটিকেই তারা বানিয়ে নেয় জীবিকা অর্জনের পথ। পরম্পরার জালে বদ্ধ হয়ে নিজেই হয়ে উঠে আরেক আড়তদার।

প্রত্যেক দরবার, আস্তানা, আশ্রম, মেডিটেশান সেন্টার, ইয়োগা সেন্টার, মাজার, মন্দির তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ব্যস্ত। যে তাদের কাছে যায়, তাকেই প্রতিষ্ঠানের প্রচার, প্রসার, নির্মান, বই, ক্যাসেট, সিডি বিক্রি ও সদস্য সংগ্রহের কাছে লাগিয়ে দেয়া হয়। কেউ নির্ধারণ করে মাসিক চাঁদা, কেউ বা ধরিয়ে দেয় মাটির ব্যাংক।

ঠিক কর্পোরেট মালিকদের মতো চিপতে থাকে আর রস বের করতে থাকে। অবশেষে ছোবড়াটা ফেলে দেয়। ব্যক্তির উন্নতির জন্য তারা কিছু করে না। দাসত্ব করতে করতে অধ্যেতারাও ভুলে যায়, কেন তারা এসেছিল, কী তারা পেলো। উন্নতি হচ্ছে নাকি অবনতি এই বিচার বোধই হারিয়ে ফেলে অনেকে। সাম্প্রদায়িক গোত্রে বদ্ধ থেকে তারা বাইরের মানুষের সঙ্গে মেশার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলে। অসামাজিক আচর-আচরণ করে। পিতা-মাতা, ভাই-বোনদের সঙ্গেও তাদের সুসম্পর্ক থাকে না, পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরী হয়। আধ্যাত্মিকভাবে তারা নিচের দিকে নামতে থাকে, কিন্তু তারা তা বুঝে না।

যেসব গুরুরা বিশ্বজুড়ে এখন আধ্যাত্মিক নেতৃত্বে আছে তাদের প্রায় সকলেরই একই অবস্থা। যারা দোকান খুলে বসেছে তারা খরিদ্দারের জন্য উদগ্রীব থাকে। খরিদ্দারের আধ্যাত্মিক উন্নতির পরিকল্পনা দোকানদারদের থাকে না। সব পথ মানুষের তৈরি। সব আধ্যাত্মিক তত্ত্ব, শাস্ত্রের সব ভাষ্য, সব দর্শন ও অধিবিদ্যা মানুষের তৈরি। সমগ্র আধ্যাত্মিক সাহিত্য মানুষই তৈরি করেছে, মানুষই নতুন নতুন সংস্করণ বের করেছে।

সব শাস্ত্র মনুষ্যের রচনা। মানুষই লেখে, মানুষই ছাপায়, মানুষই পড়ে। সব তরিকা ও মাযহাব মনুষ্যের উদ্ভাবন। সকল গোত্র ও সম্প্রদায় মনুষ্যের প্রবর্তন। ধর্মে-ধর্মে, দেশে-দেশে, গোত্রে-গোত্রে যত দ্বন্দ্ব-সংঘাত আছে সব মনুষ্যের অবরোপন। সত্য কোথায়? সত্য আছে সমুদ্রের ওপাড়ে- যেখানে বিভেদ নাই, গোত্র নাই, তরিকা নাই, সম্প্রদায় নাই, গোত্র নাই।

সত্য আছে প্রত্যেক মানুষের ভেতরে। ভেতরের এই সত্যই প্রত্যেককে দেখায় আলোর পথ। যে প্রকৃতই সত্যের সন্ধান করে সে সত্যের সন্ধান করে নিজের মধ্যে। নিজের সত্যকে সে প্রতিষ্ঠিত করে নিজেরই জীবনে। ‘আমি’ সত্য না হয়ে যা কিছু আমরা সত্য হিসেবে উপাসনা করি- তা শুধু আমাদের চিন্তারই দূষণ।

Some text

ক্যাটাগরি: দর্শন

[sharethis-inline-buttons]

২ কমেন্ট “যাত্রাপথে সংকট কোথায় : সমাপ্তি চক্রবর্তী

  1. একটি একটি চমৎকার, গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ লেখা…

    এর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণার ভাষা নেই। ধন্যবাদ জানালেও লাভ নেই। শুধুই নিজে চর্চার বিষয়।
    অনেকগুলো কথাই গভীর অনুসন্ধানের সাক্ষ্য দেয়। তবুও একটা উল্লেখ করছি..

    “প্রত্যেক দরবার, আস্তানা, আশ্রম, মেডিটেশান সেন্টার, ইয়োগা সেন্টার, মাজার, মন্দির তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ব্যস্ত। যে তাদের কাছে যায়, তাকেই প্রতিষ্ঠানের প্রচার, প্রসার, নির্মান, বই, ক্যাসেট, সিডি বিক্রি ও সদস্য সংগ্রহের কাছে লাগিয়ে দেয়া হয়। কেউ নির্ধারণ করে মাসিক চাঁদা, কেউ বা ধরিয়ে দেয় মাটির ব্যাংক।”

  2. এক কথায় বলতে গেলে পুরো লেখাটাই সুন্দর, তবে পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু আছে, একক কোন কিছুর শক্তি নেই, শক্তি বা ফল পেতে গেলে দুইটারই প্রয়োজন হয়, বিদ্যুতের নেগেটিভ ছাড়া পজেটিভ অচল। এমনিভাবে সব, (সত্য আছে প্রত্যেক মানুষের ভেতরে ) এটা সত্য, তবে এই সত্যটা কে চিনতে হ, ও জাগ্রত করতে হলে, আরেকটি সত্যের অবশ্যই প্রয়োজন হয়।

Leave a Reply

Flirt4free Review: Security, Prices, Models

The Best Chat Room Apps…

Videochat de sexo

Take part in the Finest…

The Fantasy About Ukraine Girls…

The Hidden Treasure Of Costa…

Se corre en su cara

On the web Pokies Modern…

5 Simple Techniques For Portuguese…

The Idiot’s Guide To Sexy…