শুক্রবার সকাল ১১:০৫, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ. ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং

বিড়ালের কান্না -সিত্তুল মুনা সিদ্দিকা (গল্প)

১০৭১ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি
আজ শুক্রবার, স্কুল বন্ধ। তপ্ত দুপুর খাঁ খাঁ রোদ্দুর। বাইরে চোখে জ্বালা করা সূর্যের আলো, বাহিরে পা রাখা দায়। বাগানে গাছের পাতাগুলো রোদের তাপে কেমন যেন নুয়ে পড়েছে। আমের ডালে একটা তৃষ্ণার্ত কাক, দু’ফোটা পানির অপেক্ষায় হা করে আছে।

-আহনাফ জানালার পাশে বসে আছে। হঠাৎ দেখে, হলুদ রঙের একটা প্রজাপতি উড়ছে, বেলকনির বাগানে। -চোখ তার পিছু নিলো প্রজাপতিটার দিকে।

-আহনাফ ও ইনান দুই ভাই বোন। বাবার সাথে গল্প করে সময় কাটাতে ওদের ভালো লাগে। ইনান বয়স সবে মাত্র চার বছর। খুব শান্ত প্রকৃতির আদুরে ছেলে। আহনাফ ক্লাস ওয়ানে পড়ে, লেখাপড়ায় মনোযোগী ছাত্রী। -নবী সাহেব আহনাফকে ডাকলেন, এতক্ষণ কি করছিলে, মা? –কাল তোমার সাথে স্কুলে যাবো।

-ব্যাংকে গিয়ে স্কুলের বেতন ও পরীক্ষার ফি পরিশোধ করতে হবে। আহনাফ -স্কুলে বিজয় দিবসের উন্মুক্ত চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতার নোটিশ দিয়েছে -তোমার জন্য একটা রং পেন্সিল কিনে আনতে হবে। তুমি যাবে?

আহনাফ -জি বাবা। আর্ট পেপার আর রঙ পেন্সিল কেনার কথা শুনে আহনাফের সে কী আনন্দ! -বাচ্চা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন নবী সাহেব । -একটু পরে বাইর রোদের আঁচটা কমে এলো। হেমন্তের সাদা মেঘের আড়ালে সূর্যের লুকোচুরি খেলা। -ছাদের এক কোনে কোয়েল পাখি পালন করে আহনাফ, জাল দিয়ে ডাকা খাঁচাটা। কোয়েল ওর খুব সখের পাখি, সময় পেলেই পাখি গুলোর খুব যত্ন করে। আপনমনে ছাদে এসে পা রাখতেই একটা শব্দ কানে এলো তার। দৌড়ে খাঁচার কাছে এলো সে। একটা লাল বিড়ালের ফুটফুটে বাচ্চা ছটফট্ করছে। হঠাৎ বাচ্চাটা আহনাফকে দেখে অসহায়ের মতো রইলো। -মিউ মিউ করে ডাকছে বিড়াল। -ডাক শুনে আহনাফ দৌড়ে গেল ছাদের ওপাশে।

আহনাফ -বাবা বাবা বলে ডাকতে লাগলো। ছোট একটা বিড়াল আটকা পড়েছে ঐ জালে। দেখে যাও। -নবী সাহেব তখন অনলাইনে আউটসোর্সিং এর কাজে ব্যস্ত। আহনাফ -আম্মু ,বাবাকে একটু আসতে বল না। -কী হয়েছে? একটু বিরক্ত হয়েই বললেন নবী সাহেব।

-বাবা দেখে যাও, বাবা একটু আসো না প্লিজ। আহনাফ ডেকেই যাচ্ছে।একটা ছোট্ট বিড়াল জোরে জোরে কান্না করছে।বলতে বলতে আহনাফের চোখে পানি এলো। আহনাফের আবেগ বুঝে ওর মা। মা- যাও দেখতো কি হয়েছে?ছাদে গিয়ে দেখে এসো।

নবী সাহেব কাজ রেখে ছাদে উঠে এলেন । নবী সাহেব-‘ আহনাফ ,কাঁচি আনো তাড়াতাড়ি।‘ মা কাঁচি হাতে এগিয়ে এলেন। আহনাফ -‘বাবা,এই নাও কাঁচি।‘ নবী সাহেব আহনাফের হাত থেকে কাঁচিটা নিয়ে খুব যত্ন করে জাল হতে বিড়ালের আটকে যাওয়া পা খুলতে লাগলেন।বিড়ালটা ও শান্ত হয়ে চেয়ে রইল।কৃতজ্ঞতায় নিশ্চুপ বিড়ালটা।

-অসহায় প্রাণীর প্রতি মেয়ের এমন মমতা দেখে নবী সাহেব মনে মনে খুব খুশী হলেন। নবী সাহেব আহনাফের মাকে চুপিচুপি বললেন,‘জানো এই শহুরে জীবনে বাচ্চারা এখন মোবাইল ফোন আর গেমস্ আসক্তিতে আছে, এতে রেডিয়েশান আছে যা শিশুদের চোখ ও কানের জন্য খুবই ক্ষতিকর।বন্দি ঘরে আছে শুধু টিভি আর মোবাইল।সব বাচ্চাদের অল্প পরিসরে হলে ও নিজেই পাখি পালন অথবা বাগান করা দরকার।

শখের প্রাণী বা গাছের পরিচর্যা করতে করতে ওরা জীবনানন্দ অনুভব করবে।লেখাপড়ার পাশাপাশি শখের কাজে ব্যস্ত থাকলে শরীর মন ভাল থাকে।প্রত্যেক শিশুরই ছোটবেলায় জীবনবোধে উজ্জ্বীবিত শৈশব দরকার।‘ ওদের সামনেই বিড়ালের ফুটফুটে লাল রঙের বাচ্চাটা একদৌড়ে পালালো। – নবী সাহেব স্ত্রীকে নিয়ে দূরে সরে এলেন ,দেখলেন বিড়ালটার মুক্তির আনন্দ দেখে আহনাফ ও ইনান খুশীতে কেমন আত্মহারা!

সিত্তুল মুনা সিদ্দিকা : সহকারী প্রধান শিক্ষক

বেপজা পাবলিক স্কুল ও কলেজ, চট্টগ্রাম

 

Some text

ক্যাটাগরি: গল্প

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি