সোমবার সন্ধ্যা ৭:৪০, ৬ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ. ২০শে মার্চ, ২০২৩ ইং

নেপথ্যের বাসিন্দা একজন লুৎফুর রহমান

৫২১ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

মননশীল নিভৃতচারী সাংবাদিক,কথা সাহিত্যিক লুৎফর রহমান,তিতাস বিধৌত, শিল্প সাহিত্যের উর্বরভুমি ঐতিহ্যবাহি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একজন কৃতি সন্তান। ১৯২৭ সালের ৭ জুন,ব্রাহ্মণবাড়িয়া (তৎকালীন কুমিল্লা) জেলার সরাইল উপজেলাস্থ শাহবাজপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মুনশী জহুর আলি,মাতা শেখ তোয়াজ্জন্নেসা। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত।মা বাবার প্রথম সন্তান হওয়ায় পিতার অকাল মৃত্যুতে অল্প বয়সেই পড়ালেখার পাট চুকিয়ে ভাগ্যের সন্ধানে কলকাতা পাড়ি জমান, জীবন বাঁচানোর তাগিদে কিশোর বয়সে ভিনদেশের অচেনা-অজানা পরিবেশে অতিকষ্টে নিজেকে খাপ খাওয়ান।

অভাবের তাড়নায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বন্ধ হয়ে গেলেও জ্ঞান অর্জনের অদম্য স্পৃহা তাঁকে থামিয়ে দিতে পারেনি। জীবিকা অর্জনের পাশাপাশি জ্ঞান সাধনা অব্যাহত রেখেছেন সাধ্যমতো। কলকাতার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও প্রকাশনা অফিসের লোকজনের সাথে তাঁর একটা সখ্যতা গড়ে ওঠে।পত্রিকা-ম্যাগাজিন নিয়মিত পড়তে পড়তে সাহিত্য ও সাংবাদিকতার প্রতি বিশেষ আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় একাগ্রচিত্ত অধ্যয়নের মাধ্যমে নিজেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের একজন পুরোধা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। বুকে পাষাণ বেঁধে বিদেশ-বিভুঁইয়ে দীর্ঘ ১০ বছর থাকার পর ১৯৫৩ সালে ফিরে আসেন স্বদেশে।

কলকাতার সুদীর্ঘ জীবনে অর্জিত ভাষাজ্ঞান বাংলাদেশে সম্মানজনক চাকরি লাভের পথ সুগম করে দেয়। চাকরি নেন দৈনিক ‘মিল্লাত-এ। অতঃপর দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় ৩৫ বছর সহ মোট ৪০ বছর সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৯৪ সালে চাকুরী থেকে অবসর নিয়ে নিজ গ্রাম শাহবাজপুরে ফিরে আসেন ।বাকি জীবন শাহবাজপুর মুন্সীহাটির নিয়াজমাঠ সংলগ্ন (সাহিত্যাঙ্গন) বাড়িতে নিভৃত সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে অতিবাহিত করেন। তার অবসর কালিন সময়ে,প্রকাশিত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সবচেয়ে তথ্যনির্ভর ইতিহাস গ্রন্থ ” ব্রাহ্মণবাড়িয়া :সেকাল ও একাল”। যাহা জেলা পরিষদের অর্থায়নে ও অন্তরিকতায় প্রকাশিত হয়।

বাস্তব জীবনের নানাবিধ জটিলতা থেকে তিনিও মুক্ত ছিলেন না।সামাজিক ও সাংসারিক দায়বদ্ধতা, অস্থিরতা,প্রতিকূল পারিপার্শ্বিকতা- এসবকিছু নিরবে সয়ে সয়ে গেছেন তথাপি সাহিত্য চর্চা থেকে পিছপা হননি চুল পরিমাণ। প্রাতিষ্ঠানিক মাত্র তৃতীয় শ্রেণী পাস স্বশিক্ষিত লুৎফর রহমান প্রবন্ধ নিবন্ধ ও একটি ভ্রমণ কাহিনী ছাড়াও বই লিখেছেন মোট ১২টি,এর মধ্যে ‘দীপাবলী দেদীপ্যমান (স্মৃতিচারণ মূলক গ্রন্থ ),’ব্রাহ্মণবাড়িয়া সেকাল ও একাল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস নির্ভর গ্রন্থ) ছাড়া বাকিগুলো উপন্যাস ও বিবিধ বিষয়ের উপর লেখা।

সাহিত্যের সাথে সম্পর্কহীন অনেকেই তাকে কবি লুৎফর রহমান নামে চেনেন, যা লজ্জাজনক। কলকাতায় ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তার প্রকাশিত লেখার সংখ্যা তিনশো ‘র মত হবে ।তার সর্বমোট  প্রকাশিত বইগুলো হল: ১.আবার বসন্ত এলো(১৯৬১)। ২.চেনা অতীত (১৩৭৪বঙ্গাব্দ )। ৩.বিকিকিনির হাটে (১৯৭৪)। ৪.লগ্নপুনশ্চ (১৯৭৫)। ৫.বিজনবাড়ীর বউ (১৯৭৫)। ৬.রুধিরে আল্পনা আঁকি (মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক,১৯৭৫)। ৭.ব্রাহ্মণবাড়িয়া :সেকাল ও একাল (১৯৯৮)। ৮.দীপাবলী দেদীপ্যমান(২০০২)। ৯.আয় তবে সহচরী (একুশে বইমেলা ২০০৩)। ১০.স্মৃতিময় সংলাপ (একুশে বইমেলা ২০০৫)। ১১.ইসলামী জ্ঞানকোষ (একুশে বইমেলা ২০০৫)। ১২.তিতাস নামের নায়িকা (একুশে বইমেলা ২০০৫)।  ২০০৮ সালের ২৭ জুলাই,শাহবাজপুর মুন্সী হাটিস্থ নিজ বাসভবন “সাহিত্যাঙ্গনে” তিনি পরলোকগমন করেন।

তার স্বভাবসুলভ প্রচারবিমুখতা ও নিভৃতচারীতার কারণে পাঠক সমাজে আজও তিনি ‘মেঘে ঢাকা তারা হয়ে আছেন ।খ্যাতি ও পরিচিতির পেছনে ছুটলে হয়তো দেশ ও সমাজে আজ আরো বেশি সমাদৃত হতে পারতেন -তথাপি একজন লেখক যেহেতু তাঁর লেখার ভেতরেই বেঁচে থাকেন ,আমাদের বিশ্বাস,সচেতন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাসী তাদের মাটির সন্তানকে এবং তাঁর রচিত উচ্চমানের সাহিত্যকর্মকে একদিন যথাযথ মূল্যায়ন করতে উদ্যোগী হবেন।

রফিকুল হাসান সোহাগ

সম্পাদক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কণ্ঠ

 

Some text

ক্যাটাগরি: সাহিত্য

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

Take part in the Finest…

The Fantasy About Ukraine Girls…

The Hidden Treasure Of Costa…

On the web Pokies Modern…

5 Simple Techniques For Portuguese…

The Idiot’s Guide To Sexy…

The Fundamentals Of Turkish Girls…

Short Report Reveals The Plain…

The Laotian Women Trap

The Ugly Side of Dog…