সোমবার রাত ১:৫৬, ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ. ২৮শে মে, ২০২৩ ইং

ইন্দোনেশিয়ার সাগরে ১৮ ঘণ্টা (পর্ব-২)

৬৯৬ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

প্রায় আধা ঘণ্টা পর একজনের জোরে চীৎকার শোনা গেলো। অজানা শংকায় বুকটা কেঁপে উঠলো! কেউ কি মারা গেছে! যদি মারা যায় তাহলে তার কী হবে। আগেই একজন বলেছিল, কেউ মারা গেলে সবার সামনে চাকু দিয়ে পেট কেটে সাগরে ফেলে দেওয়া হয়! তবে কি তাই হবে এখন! ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে।

কেউ একজন নৌকার পাটাতনের নিচ থেকে প্রাণপণ চেষ্টা করে চিৎকার দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। মাথার উপর থাকা ত্রিপালটা ঠেনে এক পাশ করে বড় একটা দম নিলো। মৃত্যুভয়কে জয় করে এভাবে দাঁড়িয়ে যাওয়া সহজ কথা নয়। মাঝির দুজন সহকারী কুকুরের মত চেঁচিয়ে উঠলো। যে সাহস করে দাঁড়িয়েছে সে বল্লো, এভাবে দম বন্ধ হয়ে মরার চেয়ে মেরে পানিতে ফেলে দে। ইন্দোনেশিয়ার লোকগুলো বাংলা বুঝেনি, কিন্তু চুপ হয়ে গেলো। নিশ্চয় অনুভব করতে পেরেছে যে অন্ধকার রাতে এভাবে নৌকার পাটাতনের নিচে শুয়ে থাকা, তার উপর মানুষ তার উপর থ্রিপাল দিয়ে ঢেকে রাখলে কতটা যন্ত্রণা হতে পারে!

থ্রিপাল সরিয়ে দিলো। মনে হলো জাহান্নামের দরজা খোলে দেওয়া হলো। সবাই বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো। কেউ কেউ মাথা উঁচিয়ে চারপাশটা দেখে নিলো। চাঁদের আলোয় যতদূর চোখ যায়, পানি ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। মিনিট দশেক পর আবার ত্রিপাল দিয়ে ডেকে দিলো। এভাবে সমস্ত রাত নৌকা চলল। মাঝে মাঝে ত্রিপাল সরিয়ে কিছুটা শ্বাস নেবার ব্যবস্থা করতো মাত্র।

রশিদ ভাই নামের একজন আমার হাত ধরেছিল। সেই হাতটা সম্ভবত ৫/৬ ঘন্টা ধরাছিল। মাঝে মাঝে দুএকটা কথা জিজ্ঞেস করাতাম, তিনি উত্তর দিতেন। রশিদ ভাই জেনেই এসেছেন যে নৌকায় দীর্ঘ সময় পাড়ি দিতে হবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ভাই আর কতক্ষণ! যখন বুঝেছিলাম সাগর পথেই আমাকে মালয়েশিয়া নিবে, তখন হতাশা আর ভয় নিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় যার হাতে আমাদের দায়িত্ব ছিলো তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, সাগর পার হতে কয় ঘণ্টা লাগবে? সে বলেছিল ২/৩ ঘন্টা। আর রশিদ ভাইকে জিজ্ঞেস করার পর বললো ১৮/২০ ঘন্টা!! শুনেই আঁতকে উঠলাম!

ভোরের আলো ফুটলো। রশিদ ভাই বললেন, সকাল ৮ টায় নৌকা সাগরের মধ্যে নোঙ্গর করে রাখবে, আবার বিকালে ছাড়বে। ততক্ষণ নৌকায় বসে থাকতে হবে। বাস্তবে তাই হলো। মধ্য সাগরে একটা ড্রাম ভাসতে দেখা গেলো। ড্রামে নোকা বাঁধা হলো। চারপাশে কোথাও কোন নৌকা, জাহাজ চোখে পড়লো না। এই নৌকা ডুবে গেলে মৃত্যু নিশ্চিত। বাঁচার কোনো উপায় নেই!

নৌকার সামনে এবং পেছনে ৩/৪ হাত উঁচু করে একটা বাঁশ বাঁধা হলো এবং ত্রিপালটা সেই বাঁশের টানিয়ে দেওয়া হলো। দূর থেকে দেখে বুঝার কোনো উপায় নেই যে এর ভেতরে ৪৮জন লোক আছে। মাঝির সহকারীরা রান্না করতে ব্যাস্ত। মাছ রান্না করলো, যা আমাদের দেশের বিড়ালকে দিলেও খাবে না। শুধু ভাত লবণ দিয়ে দু-মুঠ খেলাম।

দুশ্চিন্তায় নাকি অনেকের ভালো ঘুম হয়! কয়েকজন সারা দুপুর নাক ডেকে ঘুমালো। আমিও দুশ্চিন্তায় আছি। মৃত্যু ভয়ে অন্তর কাঁপছে, কিন্তু ঘুমের পাত্তাও নেই চোখে। সারা রাত এক মিনিটের জন্য চোখে ঘুম আসেনি। জোর করে ঘুমাতে চেষ্টা করেছি। রশিদ ভাই মাথার কাছে বসে আছে। কখন চোখ বন্ধ হয়ে গেলো, টের পাইনি।

আমাদের দুই দিক থেকে দুইটা পুলিশের নৌকা আসছে। অনেক পুলিশ। সবাই অস্ত্র তাক করে আছে আমাদের দিকে। সবাই যেন মৃত্যুকে চোখের সামনে ভাসতে দেখছে! মাঝি আর তার দুই সহকারী সাগরে ঝাপ দিলো। এখন আমাদের উপায়! চলবে …

 

Some text

ক্যাটাগরি: মতামত

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

The Disadvantages of totally free…

Why I Bought TWO Persian…

Syrian Girl for Dummies

The Simple Truth About Russian…

New Report Shows The Reduced…

Azerbaijan Girls – Five Popular…

5 Closely-Guarded Bangladesh Women Strategies…

The New Fuss About Panamanian…

Simply How Much You Should…

The Thing You Need To…