সোমবার সন্ধ্যা ৬:৩৪, ৬ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ. ২০শে মার্চ, ২০২৩ ইং

আমার বাবা-মা ও আমি (পর্ব-৬)

৬৬৬ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

আমার দাদা নবীনগরে বেশ প্রভাবশালী একজন ঠিকাদার ছিলেন। আব্দুল করিম ডিলার নামে পরিচিত ছিলেন। এছাড়াও রাজনীতি করতেন। কট্টর আওয়ামী লীগ করতেন। আম্মার কাছে জানতে পারি, আমার জন্মের সাত দিনের সময় আমার নাম রাখার সময় তিনি নাকি মুজিব সাহেবের শাহাদৎ বার্ষিকি পালন করতে চলে যান। তার বড় ছেলের নাতির নাম রাখা উপলক্ষ্যে অনেককে দাওয়াত করেন ঠিকই। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানে তিনি নিজেই অনুপস্থিত। অথচ রাজনীতি করে তিনি কিছুই করতে পারেন নি। উনার সাথের নেতারা আজ সবাই প্রতিষ্ঠিত। উনাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমি দলের স্বার্থে রাজনীতি করি নিজের স্বার্থে নয়। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহে একটি কয়েল ফ্যাক্টরিতে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন।

আব্বারা আট ভাই। দাদার অবস্থা ভাল থাকা সত্ত্বেও কেউ উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী ছিলেন না। তারা সবাই খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকত খুব বেশি। পড়ালেখায় মনযোগ দিতে পারেন নি। অথচ কারোরই মেধার ঘাটতি ছিল না। দাদা তাদের এ অবস্থা দেখে তাদের প্রত্যেককেই কোন না কোনো হাতের কাজে লাগিয়ে দেন। আব্বা তার জীবনে কোনো কাজই পরিপূর্ণভাবে আয়ত্ব করেনি। তিনি যে কত ধরনের কাজ জানেন তা তিনি নিজেও বলতে পারবেন না। তার হাতের কাজের আগ্রহটি আমিও পেয়ে বসেছি। যেকোনো কাজ আয়ত্ব করতে আমার বেশি সময় লাগে না। আব্বা তবে ওয়ার্কসপের কাজ ও নৌকার ইঞ্জিনের কাজে বেশ দক্ষ। মালেশিয়ায় ছিলেন প্রায় সাত বছর। সেখানে তিনি ওয়ার্কসপের লেদ মেশিনের কাজ করতেন।

রফিক মাদ্রাসের বাড়িতে বিদেশের জীবনের ইতি ঘটিয়ে আমাদের কাছে আসেন। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না তিনি। তবুও মাঝির ঘাটে একটি ইঞ্জিন মেরামতের কাজ জোগাড় করেন। অল্প বেতন ছিল মাত্র আড়াই হাজার টাকা। যা আমাদের পরিবারের জন্য যথেষ্ট ছিল না। বিদেশের টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করার কারণে শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসে তিনি। তবুও লোকটি সহজে সবকিছু মেনে নেয় বলে খুব সরল জীবনযাপন করা শুরু করলেন। আব্বা সারাদিন কাজ শেষ করে বাসায় ফিরলে তিনি প্রথমে আমার নামাজের হিসাব নিতেন আমার কাছ থেকে। তারপর অন্যান্য কাজে হিসেব নিতেন। আমি ছোটবেলা থেকে খুব বেশি ফাঁকিবাজ ছিলাম ঠিকই। কিন্তু যেকোনো কাজ খুব সহজে করে ফেলতে চাইতাম। যার কারণে আব্বা-আন্টির কাছে আমাকে বকা শুনতে হতো। তবুও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে তিনি আমার ছোটবেলাটা আমার পরিবারের তত্ত্বাবধানে রেখেছেন।
আব্বা-আম্মা বলে কথা! তাই তারা আমাকে নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করতে চেয়েছিলেন। আমি তাদের একমাত্র ভরসা।

তারা আমাকে যেভাবে বলত আমি অনেকটা সেরকম চলার চেষ্ট করতাম। তবুও কি আর বয়সকে অতিক্রম করা যায়। তাই অন্য আট-দশটা ছেলেমেয়েদের মতো আমিও প্রচুর সময় অযথা নষ্ট করতাম। তবে খুব অল্প পড়েই ভাল ফলাফল করতে পারতাম ছোটবেলা থেকে। তাই বাসায় কোনো স্যার রাখলে আমি তাদের পড়ালেখায় ফাঁকিবাজি করতাম। পরীক্ষার আগে ভালোভাবে পড়তাম। তারা অন্য আট-দশটা বাবার মতই চাইতো বরাবরই আমি পরীক্ষায় ফার্স্ট হই। কিন্তু আমার কথা হলো ১ থেকে ৫ ভেতর থাকলেইতো হয়। এদেরকে সাবই ভালো ছাত্র বলে। আসলে সেদিনের সে ধারণা যে ভুল ছিল আজ তা আমি বুঝতে পারছি। যদি সেদিন আমি আমার পূর্ণ মেধাকে কাজে লাগাতাম তবে আমি কি আজ এমন থাকতাম?

আব্বার কারণে আমি জীবনকে সহজভাবে ভাবতে শিখেছি। তবে আম্মাও পিছিয়ে নেই। তিনি আব্বার চেয়ে আরো বেশি সহজ সরল। নিজের কী আছে না আছে তা তার দেখার বিষয় নয়। তিনি শুধু দেখেন তার দায়িত্ব পালনে যেন তার অবহেলা না হয়। তাকে কোনো রকমে কেউ বুঝাতে পারে নি যে তোমার থাকলে তুমি অপরকে খবু ভালোভাবে দেখাশুনা করতে পারে। তার একটাই কথা আমার থাক বা না থাক তাতে কী আসে যায়? চেষ্টা করলে সবই পারা যায়। প্রয়োজনে না খেয়ে থাকব তবুও মানুষের ক্ষতি আমি করতে পারব না। এমনি ছিল আম্মার মন-মানসিকতা। তবে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে আজ উপলব্ধি করতে পারছি অতীতে আমি যদি অন্যভাবে ভাবতাম তবে আমার জীবন আট-দশটা ছেলেমেয়েদের মতই হতো। প্রকৃতপক্ষে যদি তেমন না হতো তবে কী আজকের এই আমি এমন হতাম?

Some text

ক্যাটাগরি: আত্মজীবনী, মতামত

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

Take part in the Finest…

The Fantasy About Ukraine Girls…

The Hidden Treasure Of Costa…

On the web Pokies Modern…

5 Simple Techniques For Portuguese…

The Idiot’s Guide To Sexy…

The Fundamentals Of Turkish Girls…

Short Report Reveals The Plain…

The Laotian Women Trap

The Ugly Side of Dog…