রবিবার সকাল ১১:৩৮, ১২ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ. ২৬শে মার্চ, ২০২৩ ইং

ভুলতে চাইলে ও ভুলতে পারিনা,শৈশব আমাকে তাড়াই মৌলিক জীবনের পথে

১১২৮ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

পৃথিবী যে কত সুন্দর তা একমাত্র শৈশবের জানালায় উঁকি দিয়ে না দেখলে বোঝা যায় না। জীবনে যা কিছু সুন্দর ও সুখকর, তা মুগ্ধ হয়ে আমি দেখেছি শৈশবে। আজ কেন যেন ফেলে আসা স্মৃতিগুলো বড় বেশি মনে পড়ছে। বড় হয়েছি অনেকটা গ্রামীণ পরিবেশেই। অনেক বড় বাড়ি পেয়েছিলাম। আমার ছোটবেলাটা কেটে গেছে খেলে-বেড়িয়েই। আমি কি এখন বলতে পারবো, রাত জেগে বাড়ির উঠোনে গরু দিয়ে ধান মাড়ার দৃশ্য দেখিনি? ছোটবেলার সেই দিনগুলি যেন একটা জীবন্ত চিত্র৷ সে চিত্র জীবনের স্মৃতির পাতায় এ্যালবাম হয়ে আমার পেছনে হেঁটে বেড়ায় সর্বক্ষণ।

আমাকে মাঝে মাঝে স্মৃতিকাতর করে, টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায় সেই মাটির আঁকা-বাঁকা মেঠো পথে, তেপান্তরের মাঠে, ভাতশালিকের সাথে, মাস-কলাইয়ের লতায়, হলুদ-সরিষা ফুলের ক্ষেতে। গ্রামের ছোট নালা-দীঘির জলে, শাপলা ফোঁটা ঝিলের ধারে, বর্ষার কদম ফুল হাতে, আম গাছের তলায়, জাম গাছের মগঢালে, শীতের সকালে কুয়াশার চাঁদরে মোড়া খেজুর গাছের তলে। মাটির কলসে ভরা সেই টাটকা স্বাদের রস আমার কাছে মহামুল্য বাণ মনে হতো। পুকুরের পাড়ে আম গাছটায় দড়ি বেঁধে দোলনা বানিয়ে টলমল পানির উপর দোলা আমাকে আজও হাতছানি দিয়ে জাগ্রত করে।

আমার প্রথম বিদ্যালয়ের প্রথম পাঠ হয়েছিল আশুগঞ্জ নানা বাড়ির সরকারি প্রাইমারি বিদ্যালয়ে। অ–ঔ উচ্চারণ করতে না পারলেও তারপর খালাদের হাত ধরে গুটি গুটি পায়ে স্কুল এ যাওয়া। সেখান থেকে স্কুল জীবন শুরু। আমি সে সময় ফিডারে করে দুধ খেতাম৷ হাফ প্যান্ট পরে স্কুলে যেতাম। কিন্তু একটু দৌড়াদৌড়ি করলেই প্যান্ট খুলে যেত। আর দুহাতে দুটা আইসক্রিম নিয়ে খাওয়ার মজাটাই ছিল আলাদা। আইসক্রিমের  দাম ছিল দশপাই ও চার আনা ৷ আমার ছেলেবেলা, দুখু মিয়া বলে ক্লাসের বন্ধুরা আমাকে ক্ষেপাতো। আমি যেখানে বসতাম সেখানে চকের গুড়ো দিয়ে রাখতো। তার ছয়-সাত মাস পর খৃষ্টান প্রাইমারি মিশনারী স্কুলে ভর্তি হলাম ৷ ভর্তি সবার শেষে বলে আমার রোল সবার পিছনে। বাড়িতে উচ্চস্বরে শব্দ করে পড়া পড়তাম ৷

শিমরাইলকান্দি তিতাস নদীর পাড়ে জামে মসজিদে দল বেঁধে সকালে গিয়ে হুজুরের কাছে আরবি পড়তাম। মসজিদটির অভ্যন্তর দেয়ালে ছিল চোখ ধাঁধানো কারুকাজ এবং নক্সা খচিত৷ স্কুলের ক্লাস শুরুর আগে এলোমেলো দৌড়ঝাপ, গোল্লাছুট, কাবাডি, দাড়িয়াবান্দা, কানামাছি, বৌচি খেলার দিন গুলি। স্কুল থেকে ফিরে খাবার খেয়েই বিকালে মাঠে ফুটবল কখনো ঠেলা জাল দিয়ে মাছ ধরে বাড়ি ফেরা, বন্ধুরা মিলে  পালিয়ে লুকোচুরি খেলার সেই সব দিন কী করে ভুলি? গাঁয়ের রেল লাইনের পাশের ছোট খালগুলিতে বাদ দিয়ে সেঁচের মাধ্যমে মাছ ধরে সেই মাছ দিয়ে পিকনিক করার সেই দিনগুলি কি ভুলা যায়? আমি ভুলতে চাইলেও ভুলতে পারি না। ছোটবেলার সেই দিনগুলি যেন একটা জীবন্ত ছবির এ্যালবাম হয়ে আমার পেছনে হেঁটে বেড়ায় অহর্নিশ। চোখের সামনে খেলা করে দিগন্ত বিস্তৃত শস্য-শ্যামল সবুজ খোলা মাঠ, নীল আকাশের মুক্ত তারা, সোনালী ধানের শীষ।

মনে পড়ে জোনাকি পোকা ধরে বোতলের ভেতর জমাতাম। রাতের বেলা বাতির আলো নিভিয়ে দেখতাম বোতলের ভেতরে কি অদ্ভূত আলো জ্বলছে আর নিভছে। মশারির ভেতর ঢুকে জোনাকি ছেড়ে দিলে সারারাত ঘুরতো মশারির ভেতর। কখনো সন্ধ্যায় অশুভ পেঁচা ডেকে ডেকে ভয়ের একটা পরিবেশ তৈরি করত। মানুষ বলত রাতে কুপক্ষি ডাকলে গ্রামে বিপদ-আপদ এবং অসুখ -বিসুখ হয়৷ বর্ষায় চারদিক থেকে শোনা যেত অনবরত ব্যাঙের ঘ্যাঙর-ঘ্যাঙর ডাক। কেমন হু হু করা নীরবতা শতবর্ষী পিত্তসূল গাছটির প্রতিটি ডালে থোকায় থোকায় উল্টো হয়ে ঝুলছে ঝাঁকে ঝাঁকে নিশাচর রক্তচোষা বাদুড়ের দল। নিশিরাতে  উড়ার সময়ে বাদুরের ডানা ঝাঁপটানি এবং বাদুড় মুখ দিয়ে এক ধরনের শব্দ বের হওয়াই বিরাজমান হতো গাঁ ছমছমে ভুতুরে পরিবেশ।

রাগ হলে নিজ বয়সী বন্ধুদের সাথে আড়ি দিতাম। জীবনের আড়ি মানে আর জীবনেও কথা বলব না। আরও মজার ব্যাপার ছিল যে, যে যত ভয়ঙ্কর আড়ি দিত তত তাড়াতাড়ি রাগ চলে যেত। বেশী রাগ হলে জীবনের আড়ি বা মরনের আড়ি। যত ভয়ঙ্কর রাগ হয় তত দ্রুতই রাগ চলে যেত! শুক্রবারে লুঙি পড়ে একটু আগে আগে মসজিদে চলে যেতাম। রমজান মাসব্যাপী আমাদের এলাকায় শেষ রাতে মাইকে সেহরির জন্য ডাকা হতো,এখনো হয়। শৈশবে আমাদের রোজার ঈদের আনন্দ শুরু হতো শবেকদর থেকেই। শবে কদর রাতে ডিজাইন করে মেহেদী হাতের আঙুল সহ তালুর লেপে দিতেন বাড়ির বড় মেয়েরা। মনে পড়ে ঈদের আগের দিন মসজিদের ছাদে উঠতাম দলবেঁধে চাঁদ দেখার জন্য।

আমার সাইকেল চালানোর হাতেখড়ি থ্রী-ফোরে  থাকার সময়। তখন ঘন্টা হিসেবে সাইকেল ভাড়া করে কলেজের পেছনের মাঠে চালানো শিখতাম ৷ সাইকেল চালানোর মজাই তখন ছিল আলাদা। সবে মাত্র সিটে বসতে শিখেছি । সবচেয়ে ভয় লাগত যদি কেউ সাইকেলের সামনে চলে আসত। সাইকেল চালিয়ে পাকা রাস্তা ধরে চলে যেতাম কাউতুলি পর্যন্ত । স্কুলের দোতলার বারান্দায় সিড়ির কোনে ঝুলানো রেলের পাতের ঘন্টায় মিশন স্কুলের দপ্তরি (মরহুম) নাছির ভাই যখন ঘন্টা বাজাতো,আমিও মাঝে-মাঝে দপ্তরি-নাছির ভাই সাথে সেইঘন্টা বাজাইতাম ৷ তবে ক্লাস ফাইভে যখন পড়তাম তখন আমি প্রায়ই প্রতিদিন মিশন স্কুলের ঘন্টা বাইড়াইতাম ৷ রোমাঞ্চকর অনুভুতি ৷ স্কুলের ছুটির ঘন্টা বাজার পরে কে কার আগে স্কুল থেকে বের হবে তারপর আধ মাইল দৌড়ে কলেজের পেছনের পুকুরে। স্কুলের ড্রেসের নিচে হাফ প্যান্ট পরে যেতাম।  কারো হাতে তখন থাকত ফুটবল, কেউ আবার আগে থেকে কলা গাছ জোগাড় করে রাখত। এরপর পুকুরের পানি ঘোলা হতে দু মিনিট ও লাগতো না তখনো ভালো করে সাঁতার শিখিনি। পাঁচ মিনিট হাঁপিয়ে উঠতাম।

বাড়ি থেকে আমাদের স্কুল খুব কাছে ছিল না। হেঁটেই স্কুলে যেতাম। কলেজের পেছনের মেঠো পথে পাট খেতের ভেতর দিয়ে আসা যাওয়ার করতে হতো ৷ বর্ষাকালে এই দিকটা আসলে খুব ভয় পেতাম। পাট খেতেগুলি একটু জংলা জংলা ছিল মানুষের আনাগোনা তেমন ছিল না এ দিকটা। পাট খেতের ভিতর থেকে চকচকে চোখ মাঝে মাঝে উকি দিত। তখন এক দৌড়ে বাড়ি ফেরা। আজ ও চোখ বুজলে দেখি আমার সেই কিশোর বেলার মাঠ। খুব মনে পড়ছে পাড়ার মাঠে বন্ধুদের সাথে ক্লান্তহীন  খেলার কথা আর শ্রাবন মাসে রিমঝিম বর্ষার মধ্যে ফুটবল খেলা। বাড়ির পাশেই ছিল ঐতিহ্যবাহী তিতাস নদী। ঝারবাতির মত কচুরিপানার বেগুনি ফুলকে মনে হত পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ফুল।

পুরো এলাকা ছিল আমার খেলার রাজ্য। তখন বিটিভিতে রাত আটটার বাংলা সংবাদের পর সংশপ্তক নাটক হত। তবে ঐ নাটকের ফেরদৌসী মজুমদার হুরমতি এবং  হুমায়ুন ফরিদী কান কাটা রমজান চরিত্রে অভিনয় করে তখন সুনাম অর্জন করে সেজন্যই তাঁদের কথা অনেকেই শ্রদ্ধার সঙ্গে মনে রেখেছেন।

মনে হয় ছুটে যাই আমাদের সেই গ্রামে, ডেকে নেই সব বন্ধুদের, আবার দল বেঁধে ফুল চুরি করে ভরে দেই সরকারি কলেজের শহীদ মিনারের বেদী। আমি যেন শৈশবের আগের মত শুনতে পাই রাখালের সেই মধুমাখা বাঁশের বাঁশির সুর, মাঝির দরদি কণ্ঠের ভাটিয়ালি গান। আমার চোখের সামনে খেলা করে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ খোলা মাঠ, নীল আকাশের মুক্ত বলাকার দল, সোনালী ধানের শীষ। আমি যেন ঠিক আগের মত শুনতে পাই রাখালের বাঁশির সুর, মাঝির কন্ঠের ভাটিয়ালি গান, মাটির সেই সোঁদা গন্ধ, কানে বাজে কিশোরীর রিনিঝিনি চুড়ির শব্দ। আমি চোখ বন্ধ করলে যে জীবন্ত জলছবি দেখি সেখানে যে কোন খাদ খোঁজে পাইনা। অবর্ননীয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিল্পকার্য। সব কয়টি ক্যানভাসে ব্যবহার করা হয়েছে প্রাকৃতির সেরা রঙ। শৈশব কে আমি আমার গ্রামেরবাড়িতে,আমার স্কুলে ফেলে এসেছি। কে আমায় ফিরিয়ে দিবে সেই দিনগুলো।।।

Some text

ক্যাটাগরি: আত্মজীবনী, চিন্তা

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

Flirt4free Review: Security, Prices, Models

The Best Chat Room Apps…

Videochat de sexo

Take part in the Finest…

The Fantasy About Ukraine Girls…

The Hidden Treasure Of Costa…

Se corre en su cara

On the web Pokies Modern…

5 Simple Techniques For Portuguese…

The Idiot’s Guide To Sexy…