রবিবার ভোর ৫:৫৪, ২৮শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ. ১০ই জুন, ২০২৩ ইং

ভর্তি পরীক্ষা নয় যেন যুদ্ধক্ষেত্র

৭২৬ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

বিশ্বব্যাপী শিক্ষাকে মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে মনে করা হয়। প্রত্যেক কল্যাণ রাষ্ট্র তাই তার নাগরিকের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার প্রতি তৎপর থাকে। যেসব রাষ্ট্র তার নাগরিকের যুগোপযোগী সুশিক্ষা প্রদান করতে পারে, সেসব রাষ্ট্র সার্বিক অগ্রগতি লাভ করে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রতি অধিকাংশ রাষ্ট্র গুরুত্ব প্রদান করছে। কিন্তু আমাদের দেশে শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে পন্য বানিয়ে ফেলা হচ্ছে।

বর্তমান আধুনিক যুগে শিক্ষা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার হওয়ার পরও আমাদের দেশের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক শ্রেণীতে লেখা পড়া করার জন্য প্রতিটি স্তরে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে হয়। উল্লেখ্য যে, ভর্তি ইচ্ছুক প্রতিটি প্রতিভাশালী ছাত্র-ছাত্রীদের তুলনায় আসন সংখ্যা থাকে অতি সীমিত। তাই এই ভর্তির প্রক্রিয়াটি হয়ে উঠে রীতি মতো এক ধরনের যুদ্ধ ক্ষেত্র। এই সময় অনেক অবাঞ্ছিত, অমানবিক ও হয়রানী মূলক ঘটনা ঘটে। এই তীব্র প্রতিদ্বন্ধিতা মূলক যুদ্ধে যারা জয়ী হয় তারা তাদের কাংখিত শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারে আর যারা ব্যর্থ হয় তারা কাংখিত শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারে না, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে অকালে ঝড়ে পড়ে। এভাবে প্রতি বছর অগণিত প্রতিভার মৃত্যু ঘটে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে অবস্থাপন্ন পরিবারের সন্তানেরা বেসরকারী অভিজাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির পূর্ণ সুযোগ সুবিধা পায়। তবে নিম্নও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা এই ধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হয়। ভর্তির ক্ষেত্রে এ ধরনের বৈষম্য মূলক ব্যবস্থা একটি জাতির জন্য অনভিপ্রেত ও অনাকাংখিত।

বর্তমানে আমাদের দেশে প্রচলিত শিক্ষানীতি অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণী পাসের পর হাইস্কুলে, এসএসসি পাসের পর কলেজে এবং এইচ এসসি পাসের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ন হতে হয়। তবে ভর্তি যুদ্ধে সবচেয়ে ভয়াবহ ও কষ্টদায়ক হলো বিশ্ব বিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা। এখানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তাগ্রস্থ থাকে। সময় ও অর্থ দু’টোই ব্যয় হয় প্রচুর। জমকালো এই ভর্তি যুদ্ধে কোনো শিক্ষার্থী তার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় ভর্তির জন্য দীর্ঘ এক বছর তাকে অপেক্ষা করতে হয়। এতে তার সময়, অর্থ ও মানসিক চাপ প্রচুর পরিমানে ব্যয় হয়। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অমানবিক ও নিষ্ঠুর ভাবে দ্বিতীয়বার পুনঃ ভর্তির সুযোগও বন্ধ করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে উদাহরণ স্বরূপ ভোক্তভোগী রিয়াজুর রহমান ভূঁইয়ার নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। সে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলাধীন বিষ্ণুপুর গ্রামের আলী আহম্মদ ভূঁইয়ার দৌহিত্র। রিয়াজ বিগত ২০১৬ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচ এস সি পাস করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশতঃ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান রিয়াজ প্রথম বার তার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ব্যর্থ হন। এতে জীবন থেকে তার এক বছর ঝড়ে পরে। তবুও সে হাল ছাড়েনি, এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ভাঙ্গাঁ কপাল জোড়া লাগানোর মানসে সে দ্বিতীয় বারের মতো তার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বুক ভরা আশা নিয়ে ২০১৭ সালের জানুয়ারীর প্রথম দিকে ঢাকার “উন্মেস” নামক একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়। ভর্তি বাবদ মোট খরচ হয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা আর থাকা-খাওয়ার জন্য প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকায় “হলিমা মঞ্জীল” নামক একটি ম্যাচ বাড়িতে রোম ভাড়া নেন। কোচিং থাকা-খাওয়া ও হাত খরচ বাবদ প্রতি মাসে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় দশ হাজার টাকা। বর্তমানে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহনের জন্য ফরম তুলেছেন। এ জন্য তার খরচ হয়েছে প্রায় ২২ শত টাকা। অনলাইনে ফরম পূরণের সময় কম্পিউটারের দোকানে প্রতিটি ফরমের পিছনে গুণতে হয়েছে ১০০ টাকা করে। রিয়াজের হিসাব মতে, শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতেই তার ছয় হাজারের বেশি টাকা খরচ হবে। এর বাইরে আরও পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে তাকে।

প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এলেই এভাবে অর্থ খরচ করতে হয় রিয়াজের মতো অগণিত ভর্তি ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীকে। এর সঙ্গে থাকে ভোগান্তি আর মানসিক চাপ। সরকারি মেডিকেল কলেজের মতো গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনও এই পদ্ধতির পক্ষেই সুপারিশ করে আসছে। বিগত ২০১৬ সালের নভেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অষ্টম পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের প্রতি আহবান জানিয়ে ছিলেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদও। তারপরও চালু হচ্ছে না গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি বছর ছুটে বেড়াতে হচ্ছে দেশের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। । তাদের সঙ্গে ছুটছেন তাদের অভিভাবকরাও। এমতাবস্থায় অনেক সময় অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক চাপে অভিভাবক ও শিক্ষার্থী উভয়ই গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিগত ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ফুলবাড়িয়া মহল্লার মো: এমরান খান সাহেবের পুত্র মো: ইরফান খান অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে জগন্নাথ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক, খ এবং চ ইউনিটের পরীক্ষা সম্পন্ন করে ২৮ তারিখ বিকাল দিকে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বাসে উঠে। বাসটি যথারীতি মহাখালী পার হয়ে আব্দুল্লাহপুর বাস ষ্ট্যান্ডে পৌছে। কিন্তু ইরফান দুর্ভাগ্য উক্ত বাসটি এক বিশাল যানজটে আটকে পড়ে। আব্দুল্লাহপুরের দীর্ঘ যানজটের কারণে বাসটি প্রায় তিন ঘন্টা আটকে থাকে। এই প্রতিকূল অবস্থায় ইরফান ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। অবশেষে সে দ্রুত চিকিৎসা নিতে বাস থেকে নেমে সরাসরি নিকটস্থ একটি হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হন ও বেশ কিছুদিন চিকিৎসা নেন। ভর্তি পরীক্ষায় একান্ত ইচ্ছা থাকার পরও সে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন নি। একজন শিক্ষার্থী প্রচুর লেখাপড়া করে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে যখন কাংখিত পরীক্ষাটি দিতে পারে না, তখন তাদের কাছে পুরো জীবনটাই অর্থহীন বলে মনে হয়।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অতি মুনাফালোভী মানসিকতার কারণে অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীর প্রচুর টাকা ও সময় অপচয় হচ্ছে। আবার পদে পদে ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে। বিগত ২০১৭ সালের ২২ শে অক্টোবর ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মধ্যপাড়া মহল্লার তাপস পালের পুত্র বিনয় পালসহ প্রায় তিন শত পরীক্ষার্থী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ই’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারে নি। তারা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে পৌছে তখন তাদের পরীক্ষা প্রায় আধ ঘণ্টা পার হয়ে যায়। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হয়ে তারা তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পরেন এবং সমবেত ভাবে শিশুর মতো অঝুরে কান্না করতে থাকেন। তাদের এ কান্নায় এলাকার পরিবেশ বেশ ভারী হয়ে উঠে। ছাত্রদের এহেন পরিস্থিতির জন্য দায়ী কারা?

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার সময় আশপাস এলাকার অতিমুনাফালোভী পরিবহন, খাবার রেস্তোরা ও আবাসিক হোটেল ব্যবসায়িরা প্রতারনার ফাঁদ ফেঁদে অসহায় পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২/৩ গুণ বেশি টাকা আদায় করে নেন। তাদের এ ধরনের অমানবিক রমরমা ব্যবসা চলে প্রায় সপ্তাহ খানেক পর্যন্ত। বিগত ২০১৭ সালের ৭ই ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার শেরপুর মহল্লার মো: ইকবাল সরকারের পুত্র মো: তুহিন সরকার টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ট্রেনে করে বিমানবন্দর রেলওয়ে ষ্টেশনে আসেন এবং টিকেট কাউন্টারে যান। কিন্তু টাঙ্গাইলে যাওয়ার টিকেট পেতে বিফল হন। অবশেষে বাধ্য হয়ে আব্দুল্লাহপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে বাড়তি ১০০ টাকা দিয়ে ১৫০ টাকার টিকেট ২৫০ টাকায় কিনতে হয়েছে তাকে। অতঃপর তুহিন সরকার টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে বাসে উঠে। বাসে চড়ে আসার পথে বাইপাল ও মির্যাপুর মড়াসড়কে দীর্ঘ যানজটে পড়ে। উক্ত যানজটের কারণে প্রায় চার ঘন্টা বিলম্বে পৌছে টাঙ্গাইল শহরে। এই অজ্ঞাত শহরে পরিচিত কোন লোক না থাকায় অতিরিক্ত ২/৩ গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে একটি আবাসিক হোটেলে উঠেন। আর পাশের মার্কেটের একটি খাবার হোটেল থেকে দেড় প্লেট ভাত, এক টুকরো তেলাপিয়া মাছ ও এক পেয়ালা ডালের জন্য হোটেল মালিক তার কাছ থেকে নেন ২০০ টাকা, যা অন্য সময়ের দামের চেয়ে ২/৩ গুণ বেশি। পরীক্ষা শেষ করে ফেরার পথে তার খরচ হবে পাঁচশত টাকা। তুহিন সরকারের প্রথম পরীক্ষা ৮ তারিখে, শেষ পরীক্ষা ৯ তারিখে। এ জন্য তাকে তিন দিন টাঙ্গাইল থাকতে হবে। এতে তার খাওয়া দাওয়া মিলিয়ে কমপক্ষে আরও এক হাজার টাকা খরচ করতে হবে। হিসাব করে দেখা গেল, তাকে শুধু টাঙ্গাইল মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রায় পাঁচ হাজার টাকা খরচ করতে হবে।

ভর্তি পরীক্ষার সময় আবাসন সংকট তীব্র আকার ধারন করে। এ সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত পরীক্ষার্থীরা আবাসিক হল গুলোতে এসে আশ্রয় নেয়। তখন ছাত্রাবাসের প্রতিটি কক্ষে তারা গাদাগাদি করে থাকেন। কেউ কেউ জায়গা না পেয়ে হলের টিভি রুম, ডাইনিং রুম ও মসজিদে পর্যন্ত থাকেন। অনেকে নিরুপায় হয়ে নিদ্রাহীন অবস্থায় ফুটপাতে সারা রাত পার করে থাকেন। আবার অনেক সময় পরীক্ষার্থীর সঙ্গে বিশেষ করে মেয়েদের সঙ্গে এক থেকে তিন জন অভিভাবককে আসতে হয়। এতে খরচের পরিমানও আরও বেড়ে যায়। ফলে গড়ে একজন শিক্ষার্থীকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়।

ভর্তি পরীক্ষার সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব হীনতার সঙ্গে এমনভাবে রুটিন প্রনয়ন করে থাকেন যা এক পর্যায়ে জটিল আকার ধারণ করে। রুটিনগুলো এমন অদ্ভুদভাবে প্রণীত হয় যে, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা চলা অবস্থায় একই সময় অন্য আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। এই জটিল অবস্থায় পরীক্ষার্থী যে কোনো একটিতে অংশ গ্রহণ করতে পারেন। ফরম কাটার প্রায় ২০/২৫ দিন পর তারা এ ধরনের জটিল ও সংকটাপন্ন অবস্থার মুখোমুখি হন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের কারণে প্রতি বছরই কোন না কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনিদির্ষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। এতে শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের সেশনজটে পড়তে হয়। উদাহরণস্বরূপ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলা যেতে পারে। উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত ২০১৭ সালের ১৭ ও ১৮ ই নভেম্বর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে আটকে যায় পরীক্ষা। এর কিছু দিন পর ভিসি অবসরে যান। কিন্তু তার অবসর যাওয়ার পর সেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি আজও। ফলে ঝুলে আছে ভর্তি ইচ্ছুক ৫৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভাগ্য। অবশেষে শিক্ষকদের এই স্বার্থান্বেষী কলহের অবসান হলে ২০১৮ সালের ২৩ ও ২৪ শে ফেব্রুয়ারী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু দীর্ঘ এই সেশনজট থেকে বাঁচার জন্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আশা ত্যাগ করে বেশির ভাগ ছাত্র-ছাত্রীই ইতিমধ্যে বিভিন্ন বেসরকারী ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এ ধরনের বিরোধ উচ্চ শিক্ষার জন্য অনভিপ্রেত ও অনাকাংখিত।

আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার চেয়ে অমানবিক বিষয় আর কিছুই হতে পারে না। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ছাত্র ছাত্রীরা সারা রাত বাসে বসে অন্য আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসে, তাদের একটা বাথরুমে পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ থাকে না। না ঘুমিয়ে, না খেয়ে, বিশ্রাম না নিয়ে তারা ভর্তি পরীক্ষা দিতে বাংলাদেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত ছুটে চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা সিটের জন্য ছাত্র-ছাত্রীরা পাগলের মতো চেষ্টা করে। যে ছাত্র বা ছাত্রী যত বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে পারে, কোনো একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ তার ততবেশি বেড়ে যায়। তবে এ ক্ষেত্রে বড় লোকের ছেলে মেয়েরা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারে। গরীবের ছেলে মেয়েরা শুধু বাড়ির কাছের একটি দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে পারলেই নিজেদের ভাগ্যবান মনে করে। কাজেই ভর্তি পরীক্ষা শেষে দেখা যায়, বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে বড়লোকের ছেলেমেয়েরা ভর্তি হয়েছে আর এই কুলষিত সিস্টেমের কারণে গরীবের ছেলে মেয়েরা ছিটকে পড়েছে।

বেশ কয়েক বছর ধরে সরকারী মেডিকেল কলেজ সমূহের ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম একই দিনে একই প্রশ্ন পত্রের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। সেখানে তো কোনো সমস্যা হচ্ছে না। মেডিকেল কলেজে সম্ভব হলে বিশ্ব বিদ্যালয়ে সম্ভব না হওয়ার কি কারণ থাকতে পারে? অভিভাবক, শিক্ষার্থী, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশ সরকার গুচ্ছ প্রক্রিয়ায় ভর্তি কার্যক্রম প্রবর্তনের পক্ষে। গুচ্ছ পরীক্ষা হচ্ছে অনেক বিষয়ের সমাহার মূলক একটি প্রক্রিয়া। ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সময় সব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একটি গুচ্ছ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় একটি গুচ্ছ, সব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে বেশ কয়েকটি গুচ্ছে ভাগ করা যেতে পারে। তারপর একটি গুচ্ছের জন্যে একেকটা ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। আর পরীক্ষার কেন্দ্র হবে বিভাগীয় বা জেলা ভিত্তিক শহরে। পরীক্ষার রুটিন এমনভাবে প্রনয়ন করা হবে যাতে প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী প্রতিটি গুচ্ছ পরীক্ষায় স্বেচ্ছায় অংশ গ্রহণ করতে পারে। গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হলে আমাদের দেশ থেকে চির দিনের মতো দূর হবে- অভিশপ্ত কোচিং বানিজ্য, অবৈধ হোস্টেল এবং গাইড বানিজ্য। এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পরই অতিদ্রুত গুচ্ছ পরীক্ষা শুরু হলে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা জীবনের সময়ের অপচয় কম হবে। কিন্তু অধিকাংশ বিশ্ব বিদ্যালয় স্বায়ত্ব শাসনের ধুয়া তুলে তা মানছে না। গুচ্ছ প্রক্রিয়া চালুর ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর অন্তরনিহিত সমস্যা কি এবং বর্তমানে চালু ভর্তি প্রক্রিয়ার সুুবিধাগুলো কি তা জাতিকে জানানো প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে স্বায়ত্বশাসনের ক্ষমতা দিয়েছে জাতীয় সংসদ। জাতীর বৃহত্তর স্বার্থে প্রয়োজনে জাতীয় সংসদে বিল পাসের মাধ্যমে গুচ্ছ প্রক্রিয়ায় ভর্তি ব্যবস্থা চালু করার পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। প্রশ্ন উঠতে পারে কোন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়া পরিচালনা করবে? এ ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে এক এক করে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে এ দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। অথবা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুী কমিশনকেও এ দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।

সুতরাং, শিক্ষার্থীর সার্বিক কল্যানার্থে বর্তমান পদ্ধতি বাতিল করে গুচ্ছ পদ্ধতির মাধ্যমে ভর্তির ব্যবস্থা চালু করতে হবে। তা হলেই ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের উপর আর্থিক, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চিরতরে বন্ধ হবে। যদি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অতি মুনাফার কারণে গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতি কার্যকর করার ক্ষেত্রে টালবাহানা শুরু করে, তা হলে জাতীয় সংসদের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কাংখিত গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতি কার্যকর করতে হবে।

 

Some text

ক্যাটাগরি: নাগরিক সাংবাদিকতা

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

Choosing Virtual Data Rooms

Work Search Strategies – How…

THAT World and Business

Program For Modern Business

Why Every one Is Speaing…

Using Your Hot Filipino Girls…

Hot Brazilian Girls Some ideas

What To Expect From Bark…

GRATUITO ROM: Download Oppo Stock…