শুক্রবার দুপুর ২:২৭, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

আমার দিনরাত্রী (পর্ব-২)

৮৯৩ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

ভরা বর্ষার সময় তিতাস নদীকে আমাদের নিকট সাগর মনে হত। এমন কি শীতকালে যখন পানির প্রবাহ কমে নদী সরু হয়ে যেত, তখন আমি এবং আমার সহপাঠী খালাত ভাই মুজিবুর রহমানকে নিয়ে একসঙ্গে তিতাস নদী সাতরিয়ে পার হতাম। নদী সাতরে পার হতে ভয় এবং কষ্ট উভয়ই হত। কিন্তু নদীর ওপারে পৌছার পর ওপারের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে নদী পারাপারের সাতারের ভয় এবং কষ্ট উভয়ই ভুলে যেতাম।

নদীর ওপারে বিশাল বিল, জলাশয়ে , মাছ ধরা, ফসলের ক্ষেতে সবুজের সমারোহ, শত শত গরু, মহিষের পাল। সে কী অপরুপ মনোহর দৃশ্য! সেটা বর্ণনা করার ক্ষমতা আমার নেই। নিজে হৃদয় দিয়ে কিছুটা অনুভব করতে পারি। কিন্তু সেই অনুভবটা লেখায় পুরোপুরি তোলে আনতে পারব না। যে সময়টার নদী পারাপারের গল্প বলছি, তখন সম্ভবতঃ আমি ৩য়/৪র্থ শ্রেণীতে পড়ি, মেড্ডা সরকারী প্রাইমারী স্কুলে। সেটাও একটা ইতিহাস। সেই ইতিহাস এখন কেউ বিশ্বাস করবে না। অন্যেরা বিশ্বাস করবে কি, নিজের কাছেই তো এখন অবিশ্বাস্য মনে হয়। কারণ থাকি কান্দিপাড়ায়, লেখাপড়া করি মেড্ডায়, সি.ও অফিস, বর্তমান সদর উপজেলা কার্যালয় সংলগ্ন প্রাইমারী স্কুলে। আমি আর আমার বড়বোন প্রতিদিন পায়ে হেটে সকাল আটটায় কান্দিপাড়া থেকে রওয়ানা হয়ে সদর থানার পূর্বদিকে এখন তো পুল হয়ে গেছে, তখন সেখানে বর্ষা মওসুমে নৌকা দিয়ে যাত্রী পারাপার করা হত। শুকনা মওসুমে খাল হেটেই পার হতাম। খাল পার হয়ে হুক্কাপট্টি, ছাতিপট্টি হয়ে রুপশ্রী সিনেমা হল, বর্তমানে ‘বি-বাড়ীয়া টাওয়ার’ পার হয়ে রামকানাই হাই একাডেমী হয়ে টেংকের পুর্ব পাড় দিয়ে বর্তমান ডাঃ বজলুর রহমান বাড়ী হয়ে আরও অনেক উত্তরে মেড্ডা রায় সাহেবের বাড়ীর সঙ্গে মেড্ডা সরকারী প্রাইমারী স্কুল।

সেই স্কুলে ভর্তি হওয়ার ঘটনা এখনও আমার মনে আছে। আমরা দুটি অবুঝ শিশু ভাই-বোন একা একা কোন গার্জিয়ান ছাড়া রিক্সা ছাড়া হেটে প্রতিদিন স্কুলে যেতাম। স্কুলে যেতে আমাদের কোন ক্লান্তি লাগত না বরং আনন্দই লাগত। স্কুলে যেতাম টেংকের পার দিয়ে, ফিরতাম অন্নদা স্কুলের বর্ডিংয়ের খেলার মাঠের সামনে দিয়ে টি.এ রোড ব্যবহার করে। তাই বলে বাল্যকালের সব কথা যে মনে আছে এমন নয়। আসলে লেখা শুরু করতে চাইলাম, জীবনের হিসাব মিলাতে চাইলাম। হিসাব কিন্তু কিছুতেই মিলাতে পারছি না।

মিলবে কি করে? শিশুকাল না হয় বাদই দিলাম, কৈশোর, যৌবন হেলাফেলায়, অলসতায়, অনিয়ম, অমনোযোগ শুধু দোষ আর দোষ। এখন পরীক্ষায় ফেল, পরীক্ষার সময় শেষ। এখনও আর যতদিনই দুনিয়ায় আল্লাহ জীবিত রাখেন, ততদিনও যদি সঠিকভাবে পৃথিবীতে জীবন যাপন করতে পারি, তবুওতো কিছু আশা নিয়ে মরতে পারব। পরম করুনাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নিকট আমার আকুল আবেদন, হে দয়াময়. তুমি আমাকে সঠিক রাস্তায়, কল্যাণের পথে পরিচালিত কর। মানুষ একা বাস করতে পারে না। মানুষ সামাজিক জীব বা সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি! আমি চিন্তা করলাম একটা, আর আমার চারপাশে যারা আছে তারা চিন্তা করল আরেকটা। তাইতো চিন্তার পার্থক্য হয়ে গেল । একতা নষ্ট হয়ে গেল।

Some text

ক্যাটাগরি: আত্মজীবনী, চিন্তা, স্মৃতিচারণ

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি