শনিবার ভোর ৫:৫১, ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ৩রা মে, ২০২৪ ইং

সম্পর্ক শেষ হয় না, কেবল রূপ বদলায়

রাবেয়া জাহান তিন্নি

ভালোবাসা এমন এক শক্তি, যার প্রভাবে মনের মানুষটির খুব খারাপ বৈশিষ্ট্যগুলোকেও সংশোধন করার এক আশ্চর্য ক্ষমতা মনে জাগ্রত হয়। কিন্তু যেখানে ভালোবাসায় থাকে চরম থেকে চরমতর অবহেলা, সেখানে কারো খারাপ বৈশিষ্ট্যগলো সহ্য করার ক্ষমতা ধীরে ধীরে শেষ হযে যায়। তখনই সম্পর্কে চলে আসে বিচ্ছেদ।

মিলনের মাধুর্যতা আর বিচ্ছেদের তিক্ততা প্রতিটি মানবমনেই জমা থাকে। ভালোবাসার তীব্রতা সীমাহীন হলে কোনো ক্ষতি নেই। তবে বিচ্ছেদের তিক্ততা যখন সীমাহীন হয়, তখন তা শুধু নিজের মনকেই বিষাক্ত করে না; বিষিয়ে তুলে তার আশপাশের প্রতিটি মানুষকে। প্রতিটি সম্পর্কের মাঝে দুটি মৌলিক জিনিস থাকে। একটি বিশ্বাস, অন্যটি স্বচ্ছতা। কোনো সম্পর্কের মাঝে এ দুটো জিনিস থাকলে জগতের সকল ত্যাগ স্বীকার করা যায়। আর যে সম্পর্কের মাঝে এ দুটো জিনিস থাকে না সেখানে যতো ত্যাগই স্বীকার করা হোক না কেন, সবই নিরর্থক। যদিও বর্তমানে সম্পর্কের ভিত্তি অর্থ, ক্ষমতা এবং তথাকথিত সম্মান।

যখন দুজন মানুষের ভালোবাসায় একাত্মতা থাকে, তখন লড়াই করা যায় অভাবের সাথে। লড়াই করা যায় জীবনের যে কোনো প্রতিকূলতার সাথে। কিন্তু যেখানে ভালবাসার বিন্দু পরিমাণ অস্তিত্ব থাকে না, যেখানে শুধু থাকে ছলনা আর লাঞ্ছনা, সেখানে মানুষ কীসের তরে ত্যাগ স্বীকার করবে? কিছু ভালোবাসা যত দিন যায়, তত গভীর হয়। আর কিছু ভালোবাসা যত দিন যায় তত তিক্ত হয়। সেই তিক্ততায় অতিষ্ঠ হয়ে মানুষ সংসার করে ঠিকই, তবে সেখানে থাকে না কোনো প্রাণের স্পন্দন। থাকে না কোনো আত্মার খোরাক। আর অশান্ত মন নিয়ে মানুষ কাউকে ভালো রাখতে পারে না।

প্রতিটি সম্পর্কের মাঝে দুটি মৌলিক জিনিস থাকে। একটি বিশ্বাস, অন্যটি স্বচ্ছতা। কোনো সম্পর্কের মাঝে এ দুটো জিনিস থাকলে জগতের সকল ত্যাগ স্বীকার করা যায়। আর যে সম্পর্কের মাঝে এ দুটো জিনিস থাকে না সেখানে যতো ত্যাগই স্বীকার করা হোক না কেন, সবই নিরর্থক।

কিছু সম্পর্কের প্রাণ শুধু কাগজে-কলমেই আজীবন থেকে যায়। এই প্রাণহীন এবং বিশ্বাসহীন সম্পর্কগুলোকে আজীবন টিকিয়ে রাখার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, সমাজে নিজেদের সম্মানকে অক্ষুণ্ন রাখা। অথচ এমনও অনেক পরিবার দেখা যায়, যেখানে দুজন মানুষ একজন আরেকজনের চেহারা পর্যন্ত সহ্য করতে পারে না। এ কোন্ ধরনের সম্মান, যেখানে আড়ালে সব ধরনের নোংরামী আর ভণ্ডামি চলে? অন্যদিকে প্রকাশ্যে ভদ্রতার মুখোশ পরে চালিয়ে যায় এক নাটকীয় সংসার?

ভালোবাসার রং মলিন হয় কখনো একজনের কারণে, আবার কখনো দুজনের অক্ষমতায়। ভালোবাসা এমন এক শক্তি, যার প্রভাবে মনের মানুষটির খুব খারাপ বৈশিষ্ট্যগুলোকেও সংশোধন করার এক আশ্চর্য ক্ষমতা মনে জাগ্রত হয়। কিন্তু যেখানে ভালোবাসায় থাকে চরম থেকে চরমতর অবহেলা, সেখানে কারো খারাপ বৈশিষ্ট্যগলো সহ্য করার ক্ষমতা ধীরে ধীরে শেষ হযে যায়। তখনই সম্পর্কে চলে আসে বিচ্ছেদ। যে সম্পর্ক মানুষের মাঝে অপূর্ণতা ও বিষাদ সৃষ্টি করে, যে সম্পর্ক মানুষের উচ্ছ্বলতাকে চিরতরে মলিন করে দেয়, যে সম্পর্ক মানুষের নিজের স্বকীয়তাকে নষ্ট করে আত্মার মৃত্যু ঘটায়, সেই সম্পর্ককে শুধুমাত্র সামাজিক সম্মানের জন্য বাঁচিয়ে রাখার কোনো যথার্থতা নেই।

যখন দুজন মানুষের ভালোবাসায় একাত্মতা থাকে, তখন লড়াই করা যায় অভাবের সাথে। লড়াই করা যায় জীবনের যে কোনো প্রতিকূলতার সাথে। কিন্তু যেখানে ভালবাসার বিন্দু পরিমাণ অস্তিত্ব থাকে না, যেখানে শুধু থাকে ছলনা আর লাঞ্ছনা

তবে বিচ্ছেদের মানে এই নয় যে তাকে অভিশাপ দিতে হবে। বিচ্ছেদের মানে এই নয় যে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করতে হবে। কারো বিরুদ্ধে তিক্ততা কখনো মানুষকে শান্তি দেয় না। বিচ্ছেদ শুধু একটি সম্পর্কের সমাপ্তি ঘটায়। সমাজের অধিকাংশ নিয়ম-কানুন মানুষেরই তৈরি। মানুষের মধ্যে যদি স্বচ্ছতা আর দৃঢ়তা থাকে তবে যেকোনো রীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব। তবে অভিসপ্ত তারা, যারা একটি বন্ধনের পবিত্রতা নষ্ট করে। যারা মিষ্টি ভাষায় বন্ধন রক্ষা করে সব ধরনের নোংরামী চালিয়ে যায়। যারা বন্ধনকে শুধু একটি ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।

রাবেয়া জাহান তিন্নি : শিক্ষিকা ও সাংবাদিক

ক্যাটাগরি: নারী,  প্রধান কলাম

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

One response to “সম্পর্ক শেষ হয় না, কেবল রূপ বদলায়”

  1. Taklima Hoque says:

    Pore shanti pelam. monta valo hoye gelo… thanks apu..

Leave a Reply