বৃহস্পতিবার বিকাল ৫:৪৯, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

কর্ণেল তাহেরের হঠকারিতা ও জিয়ার বীরত্ব

কিছুদিন আগে, বিশ্বের ১৫ নিকৃষ্ট স্বৈরাচারের একমাত্র জীবিত স্বৈরাচার হাসিনার নির্দেশে নিষিদ্ধ হওয়া বই- “আমি সিরাজুল আলম খাঁন” থেকে জানা যায়, খোদ সিরাজুল আলম খাঁন অল্পকয়েক বছর আগে (ইনু জাসদ থেকে বের হয়ে নতুন দল করা ইনু জাসদের সেক্রেটারী শরীফ নূরুল আম্বিয়া সাহেবের মাধ্যমে) জানতে পারেন, ৭ নভেম্বরের কিছুদিন পরেই কর্নেল তাহের মেজর জিয়াকে হঠাতে একটি সামরিক ক্যু এর সিদ্ধান্ত নেয়। এই বিষয়ে তার ভাইয়ের কলাবাগানের বাসায় বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়।

“জিয়া আমার পায়ের তলায় থাকবে”, কথাটা বলেছিলেন ক্র্যাচের কর্নেল বইয়ের হিরো মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল তাহের। ৭ নভেম্বর সিপাহী বিপ্লবের আগে কর্নেল তাহেরের ভাই মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফের বাসায় জাসদ নেতাদের এক বৈঠকে মেজর জিয়া সম্পর্কে তাহের এই উক্তি করেন। তাহেরের এই উক্তির তথ্যটা জাসদের মহিউদ্দিন আহমেদ (বুলবুল) জাসদের উত্থান-পতন অস্থির সময়ের রাজনীতি বইয়ে তিনি উল্লেখ করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় যে সেক্টর কমান্ডারের অধীনে তাহের যুদ্ধ করেছেন, পাকিস্তান আর্মির র‌্যাঙ্ক হিসেব, স্বাধীনতা যুদ্ধ ও স্বাধীনতার পরের হিসেবেও পদমর্যাদায় সিনিয়ন একজন অফিসারকে নিয়ে এমন দাম্ভিক মনোভাবের সামরিক কর্তা ও “সিপাহী সিপাহী ভাই ভাই অফিসারের কল্লা চাই” নীতির প্রবক্তা ক্ষমতার ছড়ি হাতে পেলে কি করতেন- তা নিয়ে বিস্তর আলাপচারিতার প্রয়োজন আছে। কর্নেল তাহের সফল হলে দেশে বাকশালের চেয়েও বড় স্বৈরতন্ত্র সৃষ্টি হতোনা তা জোর দিয়ে বলা মুশকিল।

বাংলাদেশ আর্মি থেকে শেখ মুজিবের নির্দেশে অবসর দেয়া কর্নেল আবু তাহের কর্মজীবনে সিরাজ সিকদারের রাজনীতি করলেও নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য জাসদকেই বেছে নেয়। ৭ নভেম্বরের সিপাহী জনতার সফল বিপ্লবের পর শেখ মুজিবের বাকশাল কতৃক গ্রেফতার হওয়া আ.স.ম রবসহ প্রায় সকল জাসদ নেতাগণ জেল থেকে মুক্ত হবার কিছুদিন পর পুনরায় গ্রেফতার ও বিচারের সম্মুখীন হন। এই গ্রেফতার ও বিচারের মুখোমুখি হওয়া নিয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে ছিলেন জাসদের জন্মদাতা সিরাজুল আলম খান।

কিছুদিন আগে, বিশ্বের ১৫ নিকৃষ্ট স্বৈরাচারের একমাত্র জীবিত স্বৈরাচার হাসিনার নির্দেশে নিষিদ্ধ হওয়া বই- “আমি সিরাজুল আলম খাঁন” থেকে জানা যায়, খোদ সিরাজুল আলম খাঁন অল্পকয়েক বছর আগে (ইনু জাসদ থেকে বের হয়ে নতুন দল করা ইনু জাসদের সেক্রেটারী শরীফ নূরুল আম্বিয়া সাহেবের মাধ্যমে) জানতে পারেন, ৭ নভেম্বরের কিছুদিন পরেই কর্নেল তাহের মেজর জিয়াকে হঠাতে একটি সামরিক ক্যু এর সিদ্ধান্ত নেয়। এই বিষয়ে তার ভাইয়ের কলাবাগানের বাসায় বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়। এমনি এক বৈঠক থেকে বেশ কজন জাসদ নেতা ও কর্নেল তাহেরকে গ্রেফতার করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় সিরাজুল আলম খাঁনও গ্রেফতার হন। জাসদের সর্বোচ্চ নেতা হয়ে সিরাজুল আলম খাঁন জানতেই পারেন নাই তাকে অন্ধকারে রেখে তার পিছনে ছুরি মারার খেলাটা কর্নেল তাহের খেলেছেন।

কর্নেল তাহের যার দলের উপর ভর করে চলেছেন, তাকে পাশ কাটিয়ে সরকার উৎখাতের ছক তৈরী করেন আর দলের সর্বোচ্চ নেতা তা জানতে পারে দুই দশক পরে। অন্যের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাওয়ার এই বাংলা প্রবাদটি কর্নেল তাহেরর জন্য সবচেয়ে মানানসই। স্বাধীনতার সংগ্রামের ইতিহাস ও বাকশালের অভিশাপ থেকে মুক্তির ইতিহাসগুলোর রন্দ্রে রন্দ্রে কত কত না বলা ইতিহাস লুকিয়ে আছে তা নিয়ে ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। আওয়ামীলীগের বাহিরেও শেখ সাহেব প্রেমী একটি চেতনলীগ দেশে আছে। এদের কথা শুনলে মাঝে মাঝে আপন মনেই হে হে করে হাসি আসে। এদের সবচেয়ে কমন বক্তব্য হলো, আজকের আওয়ামীলীগকে দেখলে শেখ সাহেব লজ্জা পেতেন।

মুজিববর্ষ পালনে শত শত কোটি টাকার অপচয় করা আওয়ামী লীগ ও হাসিনা শত চেষ্টা করেও শহীদ জিয়াকে এদেশের মানুষের হৃদয় থেকে মুছতে ব্যর্থ হওয়ার মূল কারণ শাষক মুজিবের ব্যর্থতা ও শহীদ জিয়ার রাষ্ট্র পরিচালনায় শততা ও সফলতা। কামাল, জাফরুল্লাহ্, আসিফ নজরুলসহ চেতনা লীগের লোকজনের চোখে মুজিব যতটা পুত-পবিত্র, জনতার চোখে ঠিক তারচেয়ে শত কোটিগুণ বেশি শ্রদ্ধেয় ও ভালোবাসার পাত্র শহীদ জিয়া।

আচ্ছা, আজকের হাসিনার আওয়ামী লীগ বিনাভোটে নির্বাচন করে গদি আঁকড়ে থাকার যে নীতিতে দল ও দেশ চালাচ্ছে, শেখ সাহেব কি তা ৭৩ এর নির্বাচনে করে দেখান নাই? আজকে হাসিনাবিরোধী দল ও মতের মানুষকে যেভাবে গুম, খুন, হত্যা করছে, শেখ সাহেব কি এই কাজগুলো সিরাজ সিকদার, জাসদ ও অন্যান্য বিরোধী মতের লোকজনকে হত্যার রাজনীতি আগেই করেন নাই? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে মুজিবের আওয়ামী লীগ বা মুজিব ভাল হয় কী করে? আর হাসিনা ও হাসিনার আওয়ামী লীগ খারাপ হয় কোন্ যুক্তি বা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞায়?

এই তো কদিন আগে চলে গেলো মেজর জিয়ার ৮৪ তম জন্মদিন। এই জন্মদিনকে কেন্দ্র করে বহুজনের লেখায় উঠে এসেছে ৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে তাঁর বীরত্বের কথা। জিয়ার বীরত্বে পাকিস্তানী শাষকশ্রেণি কতটা বিমোহিত হয় তার প্রমাণ দেখা যায় ইতিহাসে। পাকিস্তান সৃষ্টির ১৮ বছর পরে মেজর জিয়ার নেতৃত্বে বাঙালিদের পাক-ভারত যুদ্ধের আগে যেখানে বাঙালি সেনা রেজিমেন্ট ছিলো মাত্র দুটি; ৬৫ সালের সেই আলোড়ন সৃষ্টিকারী বীরত্বের পর অল্প ক’বছরের ভিতরে আরো ছয় ছয়টি বেঙ্গল রেজিমেন্ট সৃষ্টি করে পাকিস্তানী শাষকগণ। এই তথ্য ১৭ কোটি জনতার এই দেশে ক’জন জানেন? সংখ্যাটা অতি নগণ্য। ৭১-এ সেই রিভোল্ট বলে হানাদারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয় করে অল্প অল্প সঞ্চয় করে কেনা, সাভারের সামান্য জমিতে অবসরের পর একটা ঘর করে বাকী জীবন কাটিয়ে দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করার ব্যাপারটা উঠে এসেছে এদেশের সফল অর্থমন্ত্রী প্রয়াত সাইফুর রহমানের লেখা বইয়ে।

মুজিববর্ষ পালনে শত শত কোটি টাকার অপচয় করা আওয়ামী লীগ ও হাসিনা শত চেষ্টা করেও শহীদ জিয়াকে এদেশের মানুষের হৃদয় থেকে মুছতে ব্যর্থ হওয়ার মূল কারণ শাষক মুজিবের ব্যর্থতা ও শহীদ জিয়ার রাষ্ট্র পরিচালনায় শততা ও সফলতা। কামাল, জাফরুল্লাহ্, আসিফ নজরুলসহ চেতনা লীগের লোকজনের চোখে মুজিব যতটা পুত-পবিত্র, জনতার চোখে ঠিক তারচেয়ে শত কোটিগুণ বেশি শ্রদ্ধেয় ও ভালোবাসার পাত্র শহীদ জিয়া। একজন মানুষের জীবনে স্বপ্ন থাকে সে মরে যাবার পরেও সবাই যেন তাকে স্মরণ করে। আর সেই স্মরণটা যদি শহীদ জিয়ার মত করে হয়, তবে জন্মদিনে জনগণের শত শত কোটি টাকা অপচয় করেও তা হয়ে উঠে লেজার লাইটের সার্কাস শো তে।

অমি হাসান : অনলাইন এক্টিভিস্ট ও ব্লগার

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

One response to “কর্ণেল তাহেরের হঠকারিতা ও জিয়ার বীরত্ব”

  1. খায়রুল আকরাম খান says:

    ইতিহাসের অনেক তথ্য অাপনী গোপন করে গেছেন, যা প্রকাশ না করলে অাপনার লেখাটি পূর্নতা পাবে না।

Leave a Reply