মঙ্গলবার সকাল ৯:০৬, ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

অজানাকে জানার আগ্রহ

শাকের ইহতিশাম

তাড়াহুড়োটা আমাদের মজ্জায় জমে গেছে। এটা ভালো লক্ষণ না। মানের দাম আছে সব জায়গাতেই। কিছু আগ্রহ কেবলই কৌতুহল এবং শেষফল ভালো নয়।

মসজিদে কাদীমের কোণায় একটা চায়ের দোকান। আকৃতিতে ভাঙ্গাচোরা, কিন্তু চায়ের মান ভালো। লিকার কড়া হয় বলে মূলত এ মূল্যায়ন। মহিষের দুধ দিয়ে তৈরি চা। এমনিতে ঘ্রাণটা নাকে বড় লাগে। এর উপর একটু সর বিছিয়ে দেয় শেষে। আমার কাছে ভালো লাগে, দুধের প্রকৃত ঘ্রাণ পাই বলে। অনেকের কাছে বোঁটকা গন্ধই মনে হয়। এটা দুধের স্বাদ ও গন্ধ না পেতে পেতে, অথবা অভ্যাস নাই বলেও হতে পারে। চিনি এখানে কম বা বাড়িয়ে দেয় না, তাদের পরিমাণ মতোই দেয়। সম্ভবত চায়ের আসল স্বাদ টিকিয়ে রাখার জন্য। চায়ের স্বাদ ঠিক থাকলে তাদের ব্যবসাও চাঙ্গা। এজন্যই তারা এ পলিসি মেনে চলে।

পেয়ালা মে য়া কাপ মে? এটা আমাদের কাছে বাড়তি সময়ক্ষেপন। চা খেতে এলে, দুকাপ চা- বললেই হয় আমাদের দেশে। সাথে সাথে দু’জনের চা হাজির। কিন্তু এখানে অর্ডারের পর আবার স্পষ্ট করে দিতে হয়। অবশ্য কাপ আর পেয়ালায় দামের ফারাক আছে। মূল্যের ফারাক, স্বাদের না। দশ-বারো কাপ একসাথে বানিয়ে তবে পরিবেশন করা হবে। এর আগে না। ততোক্ষণ বসে থাকো। তোমার দেরি হলে, হোকগে। সবার সামনে ট্রে ধরা হবে। যার যারটা সে উঠিয়ে নেবে। আমাদের ছেলেদেরকে দেখেছি বেশ অস্থির হয়ে পড়ে তখন। এতো দেরি সয় না। আমি একদিন বের হয়ে আসার উপক্রম হয়েছি। মনে হয় তাড়াহুড়োটা আমাদের মজ্জায় জমে গেছে। এটা ভালো লক্ষণ না।

আশপাশে দুটা দোকানেই শুধু চা ভালো হয়। অন্যগুলো তাদের অনুপস্থিতিতে কেবল বিজনেস করতে পারে। আসলে কাস্টমারই পায় না। মানের দাম আছে সব জায়গাতেই। স্রেফ চায়ের ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা এমন না।

সেই চা দোকানের সলীম। এখানকার লোকেরা শুধু নাম ধরে ডাকবে না। বলবে, ভাই সলী-ম। একটু লম্বা টানে, সুর রেখে। ভাই সলীম আজকে সফেদ পাজামা-কোর্তা লাগিয়ে চা সার্ভ করছে । এ নিয়ে মশকরার একটা ঢেউ দেখা গেলো।

ভাই সলীম কি নতুন শাদি করেছ নাকি?

আরেকজন পাশ থেকে বললো, দেখো পাজামা বেশ সুন্নতি তরিকায় বানানো হয়েছে।

আধ-বয়সি একজন বললেন, আরেব্বাহ,,, দেখো কোর্তায় সেলাইও আছে। এমনটা বাংলাদেশি ছেলেদের জামায় পাবে।

আমি আমার পাঞ্জাবির দিকে তাঁকালাম। দেখি সেলাই নাই। মানে একছাটা জামা যাকে বলে আমাদের ওখানে। মুচকি মুচকি হাসছি আর চা খাচ্ছি। আরেকটা ছেলে আমার দিকে তাঁকিয়ে হাসছে। সম্ভবত নিজ দেশেরই মনে করছে। ভাব করলাম, আমি কে হে তোমার? দেখো আমার জামায় সেলাই নাই।

সলীমকে একদিন দেখলাম, এক বৃদ্ধের কাছে গুগলের তালিম নিচ্ছে । এতো মনোযোগী যে, চা পরিবেশনের কথা বেমালুম ভুলে গেছে। কাপগুলো চায়ে ভরপুর হয়ে জমছে,অথচ তার কোন ভ্রুক্ষেপ নাই। মালিকেরও নাই। জানে, কাস্টমাররা লম্বা সময় নিয়েই দোকানে আসে। এখন তারা সলীম ড্রামা দেখছে। এ তালিমের আখেরি নতিজা বলে দেয়া যায়। তা কেবলি কৌতুহল। কারণ তার কাছে গুগল এ্যাপস ব্যবহার করার মতো ডিভাইস নাই। আমি আর ফারুক হাসছি। পরে মনে হলো, এটা একটু অমানবিকই হয়ে গেল। অজানাকে জানার আগ্রহটা প্রশংসনীয়। আমি হাসবো, সে এগিয়ে যাবে!

শাকের ইহতিশাম : শিক্ষক ও লিখিয়ে

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম,  সাহিত্য,  স্মৃতিচারণ

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply