শুক্রবার বিকাল ৪:৫৫, ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ১৭ই মে, ২০২৪ ইং

মুখোশ যাই হোক স্বভাবে বাঙালি

আরিফ খন্দকার

অর্থনীতি, তথ্য-প্রযুক্তির যুগে আপনি যদি তথ্য গিলতে না-ও চান, তবুও স্যাটেলাইট প্রযুক্তি আপনাকে কিলিয়ে-কুলিয়ে হলেও তথ্য গেলাবে। আপনার মনে পড়বে মা’র হাতে ছোট্ট বেলার জোর-জবরদস্তিমূলক খাবারের কথা। একদল নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিক দায়িত্বপ্রাপ্ত দেবতারা বলে বেড়াবেন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে দেশ।

পৃথিবীতে চরিত্রের যত হীনতা নীচুতা আছে, তার সমন্বিত রূপ একমাত্র বাঙালি চরিত্রে দেখতে পাবেন। এর ফলে মানব মনের রহস্য আবিষ্কারে আপনাকে বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড ফ্রয়েডের মতো হাজার হাজার মানুষের মাঝে মনোসমীক্ষা করার মতো পরিশ্রম করতে হবে না।

যেমন ধরুন, (ধরুন লেখার কারণটা শেষে জানতে পারবেন আশা করছি) রোহিঙ্গাদের নিকট ১ কেজি চাল বিক্রি হয় ৫০০ টাকার নোটের বিনিময়ে। ১০ টাকার মুদিমাল বিক্রি হয় ১০০ টাকায়। তারওপর সক্রিয় আছে যুবতী রোহিঙ্গাদের যৌন ব্যবসায় লিপ্ত করতে কিছু ‘আদর্শ বাঙালি’ গোষ্ঠী। ওখানে তাদের নিরলস, আন্তরিক প্রচেষ্টা চোখে পড়ার মতো। খালে পড়ে থাকা মানুষদের লাথি মারা বাঙালির আদি স্বভাব। কেউ কোট-টাই পড়ে কলম দিয়ে লাথি মারছে, কেউবা শার্ট-প্যান্ট পড়ে। বাদ যাবে না ঐতিহ্যবাহী লুঙ্গি পড়–য়া চেয়ারম্যান, মেম্বার-মাতব্বরেরাও।

আরো ধরুন, একদল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক উচ্চপদস্থ সম্প্রদায় সর্বদা দেশের উন্নয়নের মন্ত্র শুনাবে তাদের প্রতি হা করে চেয়ে থাকা অজ্ঞ দলীয় কর্মী ও নির্দলীয় গোবেচারাদের। এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে কর্মীরা নেমে পড়বে মাঠে-ঘাটে, হাটে-বাজারে। বাদ যাবে না চামচামি আর চাঁদার টাকায় কেনা ইন্টারনেট এমবি দিয়ে আধুনিক প্রচারণা।

বাঙালির চরিত্র বিশ্লেষণ এতো অল্পে শেষ হওয়ার নয়। তাই আমরা চরিত্র আপাতত স্থগিত রেখে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ধরাধরির হিসেবটা আগে শেষ করি। দেশের সমস্ত দায়িত্বপ্রাপ্তরা (যে বিভাগের দায়িত্বই হোক) আপনাকে বোঝাতে চাইবে- ‘দাদা, এই ধরুন, ঐ ধরুন, আরো ধরুন’ ইত্যাদি ইত্যাদি। দিনশেষে টাকার অভাবে খালি পকেটে বাকীতে চা খেতে গিয়ে বন্ধুদের সাথে সারা জীবনের হিসেব কষতে গিয়ে দেখবেন, জীবনে সবকিছু ‘ধরে’ গেছেন আপনি, আর পকেট ভারী হয়েছে তাদের।

তারপর ধরুন অর্থনীতি, তথ্য-প্রযুক্তির যুগে আপনি যদি তথ্য গিলতে না-ও চান, তবুও স্যাটেলাইট প্রযুক্তি আপনাকে কিলিয়ে-কুলিয়ে হলেও তথ্য গেলাবে। আপনার মনে পড়বে মা’র হাতে ছোট্ট বেলার জোর-জবরদস্তিমূলক খাবারের কথা। একদল নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিক দায়িত্বপ্রাপ্ত দেবতারা বলে বেড়াবেন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে দেশ। মজার তথ্য হল, এই তথ্য গিলবেন একদিক দিয়ে। অন্যদিকে আপনার সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তান তলিয়ে যাবে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের জোয়ারে। খবরের পাতায় পড়বেন দেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় ১৬০২ ডলার। বছরের শেষে দেখবেন আপনার আয় আছে আগের জায়গায়, ঋণ আর ঋণের সুদ আদরের বউয়ের মতো লেপ্টে আছে আপনার সাথে। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা বুঝতে পেরে কবি বলছেন- “কোটিকের ধন গুটিকের ঘরে।”

বাঙালির চরিত্র বিশ্লেষণ এতো অল্পে শেষ হওয়ার নয়। তাই আমরা চরিত্র আপাতত স্থগিত রেখে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ধরাধরির হিসেবটা আগে শেষ করি। দেশের সমস্ত দায়িত্বপ্রাপ্তরা (যে বিভাগের দায়িত্বই হোক) আপনাকে বোঝাতে চাইবে- ‘দাদা, এই ধরুন, ঐ ধরুন, আরো ধরুন’ ইত্যাদি ইত্যাদি। দিনশেষে টাকার অভাবে খালি পকেটে বাকীতে চা খেতে গিয়ে বন্ধুদের সাথে সারা জীবনের হিসেব কষতে গিয়ে দেখবেন, জীবনে সবকিছু ‘ধরে’ গেছেন আপনি, আর পকেট ভারী হয়েছে তাদের।

একদল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক উচ্চপদস্থ সম্প্রদায় সর্বদা দেশের উন্নয়নের মন্ত্র শুনাবে তাদের প্রতি হা করে চেয়ে থাকা অজ্ঞ দলীয় কর্মী ও নির্দলীয় গোবেচারাদের। এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে কর্মীরা নেমে পড়বে মাঠে-ঘাটে, হাটে-বাজারে। বাদ যাবে না চামচামি আর চাঁদার টাকায় কেনা ইন্টারনেট এমবি দিয়ে আধুনিক প্রচারণা।

আপনাকে এটা-সেটা ধরিয়ে, মনে করিয়ে আত্মস্বার্থ হাসিলের প্রতিযোগিতায় যে শুধু শিক্ষিত-মার্জিতরাই এগিয়ে- এমন ভাবার কারণ নেই। কেননা আত্মবিক্রয় করে অর্থবিত্তের পাহাড় গড়ার প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণি থেকে শুরু করে ছোট-বড় ব্যবসায়ী, আড়তদার-মজুতদার, নারী-দালাল, অফিস-দালাল, টেন্ডার-দালাল- সবর্ত্রই তাদের দৌরাত্ব। বাঙালি মনের সবটা জুড়ে জঘন্য কুষ্ঠ বিরাজমান।

আপনার হাতে মুলা ধরিয়ে দেবার বাঙালি স্বভাবটা যদি আপনি মূল সূত্র হিসেবে ধরে নিতে পারেন, তবে আপনি একজন বাঙালি হিসেবে বঞ্চিত হতে পারেন অনেক দিক দিয়ে। কিন্তু যারা আপনাকে এটা-সেটা ‘ধরতে’ বলবে, তাদের মার্জিত ভাষা ও ব্যবহারের প্রতারণা থেকে নিরাপদ থাকবেন।

আরিফ খন্দকার : কমিউটার প্রশিক্ষক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট

ক্যাটাগরি: প্রধান কলাম

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply