শুক্রবার রাত ১:৪২, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২রা মে, ২০২৪ ইং

ছাত্র মরলো, ছাত্রলীগ মারলো, সাংবাদিক মার খেলো

সীমান্ত খোকন

গত কয়েকদিনে নিরাপদ সড়কের দাবীতে বাংলাদেশে ছাত্রদের আন্দোলন নিয়ে যা হচ্ছে তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকার এই অবস্থা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে কি না আমার জানা নেই। তবে অবস্থা দেখে নির্দ্বিধায় এতটুকু বলা যায়, পরিস্থিতি সমাধানে সরকার বড় ও শান্তিপূর্ণ কোনো পদক্ষেপ এখনো পর্যন্ত নেয়নি। বরং পুলিশ যেখানে ব্যর্থ হচ্ছে, ছাত্রলীগ গিয়ে সেখানে পরিস্থিতি আরো অশান্ত করে তুলেছে। আন্দোলনরত কোমলমতি স্কুল শিক্ষার্থীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে ছাত্রলীগ। কয়েকশ ছাত্র-ছাত্রী মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সেই ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকদের উপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে ছাত্রলীগ। বেধড়ক পেটানো হয় তাদের। রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশের সামনেই চলে এসব। পুলিশ নির্বিকার। হামলায় আহত হয়েছেন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি ও বাংলাদেশের প্রথম আলোরসহ মোট পাঁচ জন সাংবাদিক। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের উপর যে হামলা হয়েছে তা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে বলেই মনে করি।

আন্দোলনকারী ও সাংবাদিকদের উপর একসাথে সরকার দলীয় কোনো সংগঠনের দ্বারা অতীতে কখনো এমন বর্বরোচিত হামলা দেখেছি কি না মনে পড়ছে না। দেশের মানুষ এক বর্বর সময়ের সাক্ষী হলো। কে মরলো, কারা আন্দোলন করলো, কারা গিয়ে ছবি তুললো আর কারাইবা পেটালো? তবে বড় প্রশ্ন হচ্ছে কেন পিটালো? হামলাকারীদের মধ্যে দুয়েকজন চিহ্নিত হয়েছে। তাদের বিচার হবে কি না কে জানে? এসব ঘটনা বিচার ছাড়াই শেষ হয়ে যাওয়ার নজীর এ দেশে প্রচুর। ছাত্রলীগের ছেলেরা যখন সাংবাদিক পেটাচ্ছিল, তখন অন্য সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে সতর্ক করে তারা। ‘সাংবাদিক … না’, ‘ক্যামেরা ব্যাগে ঢুকা, নয়লে তোর… দিয়ে ঢুকিয়ে দেবো’, ‘এক শালা ছবি তুললে সব শালাকে কোপাবো’ এরকম আরো অনেক অশ্রাব্য গালি দিয়ে সাংবাদিকদের শাসাচ্ছিল।

এর আগের দিন একটি টিভির সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছিল ছাত্রলীগ। তখন ওই সাংবাদিকরা মাফ চেয়ে রক্ষা পায় মারপিটের হাত থেকে। ওইদিনই সরকারের পক্ষ থেকে দেশের সব কয়টা টেলিভিশনকে সতর্ক করা হয়েছে যেন এই ধরনের সহিংসতার খবর প্রচার না করে। এসবের পরও কি বলা যায় বাংলাদেশের গণমাধ্যম স্বাধীন?

দেশের যখন ক্রান্তিকাল চলছে, ঠিক তখনই আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ‘অষ্টগ্রামের পনির খুব সু্স্বাদু।’ গত ৫ আগস্ট সাংবাদিকরা যখন প্রধানমন্ত্রীর দলের ছেলেদের হাতে মার খেয়ে হাসপাতালে, তখনই তিনি কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে শতভাগ বিদ্যুতায়ন অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে এ কথা বলেন। সূত্র স্বনামধন্য অনলাইন নিউজ পোর্টাল। দেশের এই পরিস্থিতি হওয়া স্বত্ত্বেও তিনি কতটা চিন্তামুক্ত থাকার ক্ষমতা রাখেন ও কোথাকার কোন্ খাবার সু্স্বাদু তাও মনে রাখতে পারেন- এ খবরটি না পড়লে হয়ত বুঝতেই পারতাম না। সাংবাদিকদের নির্যাতনের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। শুধু সরকার কেন, সাংবাদিকদের বিপদে সাংবাদিক নেতারাই চুপ মেরে বসে থাকেন। তাদের কোনো ভূমিকা এসব ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় না। এখনো পর্যন্ত সাংবাদিক নেতারা ৫ তারিখের ঘটনায় প্রতিবাদ করবেন দূরের কথা, টু শব্দটি পর্যন্ত করেননি। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠতেই পারে, ‘তাহলে নেতা দিয়ে হবেটা কি?’

সীমান্ত খোকন : প্রবাসী সাংবাদিক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট
send2khokon@gmail.com

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply