শুক্রবার বিকাল ৫:৪০, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ৩রা মে, ২০২৪ ইং

সারাদেশের দেশ দর্শন প্রতিনিধিদের প্রাথমিক নীতিমালা

দেশ দর্শন ডেস্ক

বর্তমান কপিপেস্ট ও চটি সাংবাদিকতার যুগে অনলাইন পোর্টাল বা গণমাধ্যম গড়ে ওঠছে ব্যঙের ছাতার চেয়েও বেশি। এতে করে সাংবাদিকতায় নতুন ও আগ্রহীগণ শুধু এ সাইট থেকে ওই সাইটে লাফান। অধিকাংশই এসব পোর্টাল বা গণমাধ্যমের মৌলিকত্ব ও মান যাচাইয়ে পারদর্শী নন অথবা আগ্রহী নন।

দেশ দর্শন খুবই ছোট্ট একটি পত্রিকা। ২০১৫ সালে এটি পাক্ষিক প্রিন্ট পত্রিকা হিসাবে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এটি অনলাইন পোর্টাল, যা শীঘ্রই ‘সাপ্তাহিক’ হিসেবে প্রিন্ট হওয়ার অপেক্ষায়। সে অনুযায়ী ডিক্লারেশনের কাগজপত্র অনেকটা এগিয়ে রয়েছে।

এর (অনলাইন) কয়েকটি বিশেষত্ব আছে। এটি প্রথম পৃষ্ঠায় ব্লগ ও নাগরিক সাংবাদিকতার সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত। এ বিভাগে যে কেউ যে কোনো জায়গা থেকে মাত্র একটি মেইল এড্রেস দিয়ে দেশ দর্শনে একটি আইডি খোলে খুব সহজেই যে কোনো লেখা বা সংবাদ প্রকাশ করতে পারবেন।

দ্বিতীয়ত, এটি ভিন্নমাত্রিক কিছু নিউজ ও প্রতিবেদন নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে। তৃতীয়ত, এটি কলামমিনি কলামের মাধ্যমে গণমানুষের চিন্তা ও জ্ঞানের বিকাশের জায়গাটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। তাই অন্যান্য নিউজ পোর্টাল বা প্রিন্ট পত্রিকার মতো সবার উপরে সংবাদ না দিয়ে বরং কলাম ও মিনি কলামকে জায়গা দেয়া হয়েছে।

সীমাহীন সীমাবদ্ধতা নিয়ে দেশ দর্শন কাজ করছে। আমাদের লক্ষ্য অনেকদূর, তাই গতি অনেকটা ধীর। সুতরাং দেশ দর্শনে কোনো ‘ধুম-ধারাক্কা মাইর’ বা ‘হৈ চৈ ফেলে দেয়া’ নিউজ আশা করা বোকামি। আমাদের সঙ্গে থাকতে হলে, দেশ দর্শনের প্রতিনিধিত্ব করতে হলে ধৈর্যের সঙ্গে লেগে থাকতে হবে। তিন থেকে ছয়মাস পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ ছাড়া কোনো প্রতিনিধিকে অফিসিয়াল স্বীকৃতি বা আইডি কার্ড দেয়ার নিয়ম নেই। নীচে “প্রতিনিধিদের প্রাথমিক নীতিমালা” দেয়া হল, যা আপনাদের সুচিন্তিত মতামত ও আলোচনাসাপেক্ষে সংশোধনীও আনা যেতে পারে।

প্রতিনিধিদের প্রাথমিক নীতিমালা

এক. প্রতিনিধিগণ দেশ দর্শনসহ সর্বোচ্চ দুটো পত্রিকা বা গণমাধ্যমের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন। অর্থাৎ দেশ দর্শনে প্রতিনিধিত্বের পাশাপাশি অন্য যে কোনো মাত্র একটি অনলাইন, প্রিন্ট, স্যাটেলাইট টিভি অথবা আইপি চ্যানেলে নিউজ পাঠানো যাবে। এর বেশি নয়। কারণ বর্তমান কপিপেস্ট ও চটি সাংবাদিকতার যুগে অনলাইন পোর্টাল বা গণমাধ্যম গড়ে ওঠছে ব্যঙের ছাতার চেয়েও বেশি। এতে করে সাংবাদিকতায় নতুন ও আগ্রহীগণ শুধু এ সাইট থেকে ওই সাইটে লাফান। অধিকাংশই এসব পোর্টাল বা গণমাধ্যমের মৌলিকত্ব ও মান যাচাইয়ে পারদর্শী নন, অথবা আগ্রহী নন।

দুই. মাসে অন্তত দুটো কপিপেস্টমুক্ত জনকল্যাণমূলক প্রতিবেদন, বিশেষ প্রতিবেদন বা নিউজ মেইলে পাঠাতে হবে।

তিন. বিশেষ ব্যক্তিগোষ্ঠী বা সরকারি দলের গুণগানধর্মী নিউজ বেশি করলে প্রতিনিধিত্ব বাতিল হতে পারে। মনে রাখতে হবে, সাংবাদিকতা হচ্ছে জনসাধারণের বিভিন্নমুখী সমস্যা তুলে ধরার জন্য। বিশেষ ব্যক্তিগোষ্ঠী, মন্ত্রী-এম্পি, ডিসি-এসপি-ওসি, মেম্বার-চেয়ারম্যান বা তথাকথিত রাজনীতির ‘বড় ভাইদের’ বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য নয়। দেশ দর্শন এর কঠোর বিরোধিতা করে।

চার. দেশ দর্শন প্রতিনিধিগণ যথাসম্ভব রাজনীতিমুক্ত হবেন। রাজনীতি করলে সাংবাদিকতা করার প্রয়োজন নেই। বরং রাজনীতি দিয়েই আপনি ‘দেশ উদ্ধার’ করুন। তবে রাজনীতিতে যুক্ত থেকে সেই রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি বা ‘মুখপত্র’ হিসেবে দেশ দর্শনে কাজ করার সুযোগ আছে।

পাঁচ. বিশেষ কারণে সাময়িকভাবে কোনো রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও সাংবাদিকতার জায়গাটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ রাখতে হবে। এর বিকল্প নেই।

ছয়. কোনো প্রতিনিধি দেশ দর্শন ছাড়া আরো দুটো পত্রিকা, পোর্টাল বা টিভি চ্যানেলে নিউজ পাঠালে বা আগ্রহী হলে খুব দ্রুত আমাদের অবহিত করতে হবে এবং আইডি কার্ড ফিরিয়ে দিতে হবে। সম্ভব হলে বা প্রয়োজন হলে অনলাইনেও জানানো যেতে পারে যে “আমি আর দেশ দর্শনে কাজ করছি না”।

সাত. প্রতিনিধিত্ব অঞ্চল, থানা বা জেলার সর্বাধিক সম্ভাব্য আলোচিত এবং গুরুত্বপূর্ণ নিউজগুলো অবশ্যই দিতে হবে।

আট. বিজ্ঞাপনের চেষ্টাও করতে হবে। বিজ্ঞাপন ছাড়া অফিস থেকে বেতন দেয়ার সামর্থ্য দেশ দর্শনের এখনো হয়ে উঠেনি।

নয়. দেশ দর্শনে প্রকাশিত প্রায় প্রতিটি মিনি কলাম, কলামপ্রতিবেদন বা ‘বিশেষ প্রতিবেদন’ আমাদের প্রতিনিধিদের অবশ্যই পড়তে হবে। কারণ এই পত্রিকাটি অনেকটাই ভিন্নমাত্রিক এবং “থিঙ্কট্যাঙ্কধর্মী” হওয়ায় প্রতিনিধিগণ এটি ভালোভাবে পঠন ও পর্যবেক্ষণ না করলে কাজ করা এবং এতে লেগে থাকা কঠিন হবে। অন্যদিকে এর দ্বারা আমরা প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ ও হাতে-কলমে যোগ্য করে গড়ে তোলার কাজটাও সারতে চাই। তাই এই জায়গাটিতে প্রতিনিধিদের কোনো ছাড় নেই। এসব পড়ে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে বা চ্যাটে কিছু আলোচনাও করতে হবে।

দশ. প্রতিনিধিগণ দেশ দর্শনের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করার পাশাপাশি এর দুটো অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে লাইক, অন্তত নিজেদের নিউজগুলো নিজেদের টাইমলাইনে শেয়ার, দেশ দর্শনের ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হওয়া এবং এতে নিজেদের নিউজগুলো নিজ নিজ আইডি থেকে শেয়ার এবং পর্যালোচনা, পাঠকদের অভিযোগ গ্রহণ, প্রয়োজনে যৌক্তিক ও শান্ত জবাব দেয়া ইত্যাদি কাজগুলোও করতে হবে। কারণ আমরা আগেই বলেছি, এর দ্বারা আমরা নিজেরা গড়ে উঠব এবং অন্যদের গড়ে তুলব। শুধু কিছু কপিপেস্ট নিউজ করেই প্রতিনিধিগণ দায়িত্ব শেষ করতে পারবেন না।

এগারো. সাংবাদিকতাকে একমাত্র পেশা বা বিকল্প পেশা হিসেবে না নিয়ে বরং একটি মানবিক দায়িত্ব হিসেবে নিতে হবে। কারণ দেশ দর্শন মনে করে উন্নত বুদ্ধিচর্চা ও চারপাশকে সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করার বিকশিত ক্ষমতা ছাড়া সাংবাদিকতা মানে রাজনৈতিক-প্রশাসনিক ক্ষমতাবানদের ‘প্রহরী’ ও পুঁজিবাদের গোলামী ছাড়া কিছুই নয়। তাই আমরা প্রতিনিধিদের একইসঙ্গে সাংবাদিকতা এবং চিন্তার বিকাশের জায়গাটা নিয়ে কাজ করছি।

এ নীতিমালার ওপর আপনাদের সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শ আশা করছি।

বিনীত-

জাকির মাহদিন: সম্পাদক, দেশ দর্শন

ক্যাটাগরি: নীতিমালা,  প্রধান কলাম,  শীর্ষ তিন

ট্যাগ: নীতিমালা

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply