রবিবার রাত ৮:৪৭, ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ৫ই মে, ২০২৪ ইং

সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ব্যাংকিং খাত

খায়রুল আকরাম খান

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার হ্যাক করে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা সমমূল্যোর বৈদেশিক মুদ্রা চুরি করে নিয়ে যায়; যার বেশির ভাগ টাকা আপ্রাণ চেষ্টা করে আজ পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমানসহ দু’জন ডেপুটি গর্ভনরকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, দাতা সংস্থার সফটওয়ার ডেপলাপাররা খুব দৃঢ়তার সাথে বলছেন, চীন, জাপান, কাজাখাস্তান ও রুমানিয়ার হ্যাকাররা বাংলাদেশ, ভারত, চীন, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কম্পিউটারগুলোতে ম্যালওয়্যার স্থাপন করে অনবরত তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। এমতাবস্থায় উক্ত দেশগুলোর আর্থিক খাত সাইবার ঝুঁকির মুখে রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘদিন ধরে সুইফট সিস্টেম চালু ছিল। কিন্তু বিপত্তির সৃস্টি হয় উক্ত সূক্ষ্ম সিস্টেমের সাথে আরটিজিএস স্থাপনের পর থেকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু অতি উৎসাহী কর্মকর্তার কারণে ২০১৫ সালে উক্ত সফটওয়ার স্থাপন করা হয়। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সফটওয়ার ডেভেলাপারদের অভিমত, আমাদের দেশের ২৮ শতাংশ ব্যাংক সাইবার ঝুঁকি মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নেই।

এখানে উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার হ্যাক করে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা সমমূল্যোর বৈদেশিক মুদ্রা চুরি করে নিয়ে যায়; যার বেশির ভাগ টাকা আপ্রাণ চেষ্টা করে আজ পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমানসহ দু’জন ডেপুটি গর্ভনরকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি রোধে সতর্ক হতে থাকে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রয়োজনীয় সাইবার সিকিউরিটি টিম না থাকার কারণে তথ্য চুরির বন্ধ করার যথার্থ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আবারও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ইদানিংকালে সাইবার অপরাধীরা পেমেন্ট সিস্টেমস হ্যাক করে দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে নিয়মিতভাবে। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশও এধরনের সাইবার সিকিউরিটি এবং হ্যাকিং সংক্রান্ত নিরাপত্তা হুমকিতে রয়েছে।

একদিকে যেমন আর্থিক ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়, আধুনিক এবং  ডিজিটাল হচ্ছে, অন্যদিকে সংগঠিত অপরাধী গোষ্ঠি অবিরত এই আর্থিক ব্যবস্থাকে উদ্দেশ্য করে অধিকতর সাইবার আক্রমণ করছে। নতুন নতুন তথ্যপ্রযুক্তিগত আক্রমণের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রস্তুতি না থাকলে সাইবার আক্রমণ বাংলদেশের জন্য আর্থিক ক্ষতির কারণ এবং মর্যাদা হানিকর হতে পারে। তাই ব্যাংকগুলোকে গ্রাহকের আমানতের টাকা অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবস্থাটি জরুরি ভিত্তিতে নিতে হবে।

বর্তমান বিশ্বে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সাইবার হামলা সাক্ষাৎ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে প্রতি বছর ৪৫০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হচ্ছে। শুধুমাত্র গত পাচঁ বছরেই সাইবার হামলার সংখ্যা বেড়েছে ২০০ গুণ। বাংলাশের বিপুল পরিমাণ অর্থ লুট হওয়ার পরও যথার্থ ব্যবস্থার অভাবে আবারও বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

ক্যাটাগরি: বিশেষ প্রতিবেদন

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply