শুক্রবার বিকাল ৫:২৩, ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ১৭ই মে, ২০২৪ ইং

সর্বত্র কিশোর গ্যাংদের তাণ্ডব

রাহাত খান

শহুরে পুলিশ বাহিনী কিশোর গ্যাংয়ের কথায় ওঠে আর বসে! শহুরে আইনী আদালত এমপি মন্ত্রী আর টাকার কুমির উকিলদের হাতে!

বাংলাদেশের আনাচেকানাচে মানবসভ্যতা না পৌঁছালেও রাজনৈতিক তৃণমূল ‘বড় ভাই’ ঠিকই পৌঁছে গিয়েছে। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নামে এলাকায় খুন, লুণ্ঠন, ধর্ষণ রাহাজানি ক্রমশ বাড়ছে। কোনো এলাকার লোক শান্তিতে নেই। নেই কারো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার মত আবাসস্থল। একেক এলাকায় কয়েক চুনোপুঁটির নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং আস্তানা।

এ ধরনের কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান কাজ হলো, কোনো এমপি, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলরের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করে প্রত্যেক এলাকায় চাঁদাবাজি ইভটিজিং ইত্যাদী পরিচালনা করা! অথবা কোনো পরিবারের দূর্বল পয়েন্টগুলো যাচাই করে ব্লাকমেইল করে পয়সা উসুল করা! শহরাঞ্চলে কোনো মানুষ বেড়াতে এলে কিংবা নতুন ফ্ল্যাট ক্রয়/ভাড়া করলে তাদেরকে বখশিশ দিতে হবে। আর যদি কারো ঘরে সুন্দরী মেয়ে থাকে তাহলে তো কথায় নেই! হুমকি ধামকি দিয়ে বারবার তার ফ্লাটে কারণে অকারণে হানা দিবে। মেয়েরা প্রয়োজনে স্কুল, কোচিং ইত্যাদীতে গেলে অশ্রাব্য ভাষা প্রয়োগের শেষ নেই! অনেক সময় ঢিল ছোড়া, গায়ে হাত দেওয়া; মুঠোফোন নাম্বারে অশ্লীল প্রস্তাব ভিডিও, ছবি প্রদানের শেষ নেই।

আর গ্ৰামাঞ্চলে তো কিশোর গ্যাংয়ের রূপ দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। গ্ৰামে কেউ নতুন ভিটেবাড়ি গড়লে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি করলে, কিশোর গ্যাংয়ের কবলে পড়তে হবে সন্দেহ নেই। যদি তাদেরকে কেউ প্রতিহত করার চেষ্টা করে তাহলে ভিটেমাটি উপড়ে ফেলে গ্ৰাম ছাড়তে বাধ্য করে। ছোট ছোট বাচ্চা মেয়েরাও স্কুলে যেতে ভয় পায়; গাঁয়ের নতুন বধূটাও তাদের খেলনার পুতুলে পরিণত হয়।

এই রাষ্ট্রে আমি কোনো উঁচু ইমারাত, চকচকে শহর, নান্দনিক স্থাপনা কিছুই চাই না! আমি চাই, আমার মা বাবা, ভাইবোন, স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে নিরাপদে বসবাস করতে!

গ্ৰাম্য শালিসের কথা কী আর বলবো! জোর যার মুল্লুক তার; ধর্ষনের দায়ে ছেলেকে দুই হাজার টাকা জরিমানা আর মেয়েকে আশি বেত্রাঘাত! যেন ধর্ষিতা হওয়াটাই মেয়েটার জন্য বড় অপরাধের। অপরদিকে শহুরে পুলিশ বাহিনী কিশোর গ্যাংয়ের কথায় ওঠে আর বসে! শহুরে আইনী আদালত এমপি মন্ত্রী আর টাকার কুমির উকিলদের হাতে!

কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডবে পাঁচ বছর বয়সী মেয়েটাও সবসময়ই মায়ের আঁচলে লুকিয়ে থাকে। আমাদের মায়েরাও নিজের সম্ভ্রম হাতে নিয়ে দৈনন্দিন কাজকর্ম করে; কখন জানি মানুষখেকো নরপিশাচদের হাতে নিজেকে বিলিয়ে দিতে হয়! আমাদের বাবারাও জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হতে ভয় পান; এই বুঝি জীবন নিয়ে আর ঘরে ফেরা হবে না। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন ছাত্র-ছাত্রীরা ছাত্রনেতার কবলে পড়ে নিজেদের মান সম্মান বিসর্জন দিচ্ছে প্রতিনিয়ত!

এই রাষ্ট্রে আমি কোনো উঁচু ইমারাত, চকচকে শহর, নান্দনিক স্থাপনা কিছুই চাই না! আমি চাই, আমার মা বাবা, ভাইবোন, স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে নিরাপদে বসবাস করতে! বাংলার আনাচেকানাচে ছড়িয়ে পড়া কিশোর গ্যাংদের শেষ দেখতে চাই। আমি এ জঞ্জাল নিয়ে বাঁচতে চাই না! আমি একটু শান্তিতে মরতে চাই।

রাহাত খান: শিক্ষার্থী

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply