শুক্রবার বিকাল ৩:৪৩, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ৩রা মে, ২০২৪ ইং

শোকাবহ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট

খায়রুল আকরাম খান

১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সা‌লে বৃ‌ষ্টিঝরা শ্রাবণ মা‌সের এই দি‌নে বৃ‌ষ্টির বদ‌লে ঝ‌রে‌ছিল রক্ত। বাংলার ৫৬ হাজার বর্গমাই‌লের ম‌তো বিশাল জ‌াতির পিতার বু‌ক থে‌কে সাম‌রিক বা‌হিনীর কিছু পথভ্রষ্ট ঘাত‌কের বু‌লে‌টের আঘা‌তে রক্ত‌গোলাপের ম‌তো ঝর‌ছিল লাল রক্ত। কিন্তু তার অ‌বিচল চেতনা ও আদর্শ ছিল মৃত্যুঞ্জয়ী। ঘাতক‌দের সাধ্য ছিল না ই‌তিহা‌সের সেই মহানায়‌কের অ‌স্তিত্ব‌কে বিনাশ ক‌রার।

বঙ্গবন্ধু মৃত্যুঞ্জয়ী। রাষ্ট্রীভা‌বে যথা‌যোগ্য মর্যাদায় ও ভাবগম্ভীর প‌রি‌বে‌শে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্র‌ণীত স্বাস্থ্য‌বি‌ধি মে‌নে সামা‌জিক দূরত্ব অটুট রে‌খে পা‌লিত হ‌য়েছে জা‌তির পিতা শেখ মুজিবুর রহমা‌নের ৪৫ তম শাহাদত বা‌র্ষিকী। এম‌নিতেই এ মাসে বাঙালির হৃদয়ে গভীর রক্তক্ষরণ ঘ‌টে বঙ্গবন্ধু‌কে হারা‌নোর ব্যথায়। তার ওপর এ বছর যুক্ত হ‌য়ে‌ছে অভূতপূর্ব ক‌রোনা সংকট। পাশাপা‌শি এ‌সে‌ছে অ‌পেক্ষাকৃত প্রল‌ম্বিত বন্যা। বন্যার্ত মানু‌ষের কতই না কষ্ট। ক‌ভিড-১৯ এর আক্রম‌ণে অ‌নেক মানু‌ষেরই আয়-‌রোজগার ক‌মে গে‌ছে।

ই‌তিহাস আমা‌দের‌কে শিক্ষা দেয়, এক‌টি হত্যা অআরেক‌টি হত্যার জন্ম দেয় এবং প্র‌তি‌হিংসার সৃ‌ষ্টি ক‌রে। সুতরাং আর হত্যা নয়, ক্ষমতার পালা বদল হোক গণতা‌ন্ত্রিক প্র‌ক্রিয়ার মাধ্য‌মে।

ই‌তিহা‌সের সেই মর্মা‌ন্তিক ঘটনা এক দি‌নেই ঘ‌টে‌নি। এ বর্বর হত্যাকা‌ণ্ডের ষঢ়যন্ত্র শুরু হয় বাংলা‌দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই। বাংলা‌দে‌শের মু‌ক্তিযু‌দ্ধের ই‌তিহাস অধ্যয়ন ক‌রে অবগত হওয়া যায়, পাকিস্তান রা‌ষ্ট্রের প্রধান সহ‌যোগী বিশ্ব সাম্রাজ্যবা‌দের মোড়ল মা‌র্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমা‌দের ভয়াবহ মু‌ক্তিযু‌দ্ধের মহান বিজ‌য়ের মধ্য দি‌য়ে শোচনীয়ভা‌বে পরা‌জিত হয়। কিন্ত‌ু তারা ও তা‌দের মিত্ররা এই পরাজ‌য়ের প্র‌তি‌শোধ গ্রহ‌ণের সু‌যোগ খুঁজ‌তে থা‌কে। ফ‌লে শুর‌ু হয় বঙ্গবন্ধু‌কে উৎখাত, বাংলা‌দে‌শের স্বাধীনতা‌কে ভুল প্রমা‌ণিত করা, বাংলা‌দেশ‌কে অকার্যকর ও ব্যর্থ রা‌ষ্ট্রে প‌রিণত করা, স‌র্বোপ‌রি যুদ্ধ‌বিধ্বস্ত বাংলা‌দে‌শের অগ্রযাত্রা‌কে থা‌মি‌য়ে দেওয়ার ঘৃণ্য প্র‌চেষ্টা।

লেখকের সব লেখা

তারা কখ‌নো চায়নি আমা‌দের দে‌শে স‌ত্যিকারভা‌বে গণতা‌ন্ত্রিক ব্যবস্থা কা‌য়েম হোক, জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটুক এবং বাঙালি মাথা উচু ক‌রে দাঁড়াক। অতঃপর এ অপশ‌ক্তি মু‌ক্তিযু‌দ্ধের পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত দে‌শে অর্থ‌নৈ‌তিক সংকট, রাজ‌নৈ‌তিক ও সামা‌জিক অ‌স্থিরতা এবং অনান্য অব্যবস্থার সু‌যোগ গ্রহণ ক‌রে। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দ‌লের দলীয় কোন্দল, কিছু সু‌বিধাবাদী নেতা‌দের লুটপাট, রক্ষিবা‌হিনী, লালবা‌হিনীর নির্মম অত্যাচার, সাম‌রিক ও আধা সাম‌রিক বা‌হিনী‌তে বিভ‌ক্তি, সাধারণ মানু‌ষের আশাভঙ্গ ও হতাশা এবং ১৯৭৪ সা‌লের মহাদু‌ভিক্ষের প‌রিপ্রেক্ষি‌তে দে‌শের সামা‌জিক, রাজ‌নৈ‌তিক ও অর্থনৈ‌তিক অবস্থা অ‌স্থির হ‌য়ে উ‌ঠে। আর এ সময় তৎকালীন সরকার সা‌র্বিক দিক বি‌বেচনা ক‌রে আওয়ামী লী‌গ বিলুপ্ত ক‌রে গঠন ক‌রেন “বাংলা‌দেশ কৃষক-শ্র‌মিক দল”। এদি‌কে দে‌শের রাজ‌নৈ‌তিক ও সামা‌জিক অ‌স্থিরতার সু‌যো‌গে কিছু বি‌দেশি রা‌ষ্ট্রের প‌রোক্ষ মদ‌দে বাংলা‌দেশ সেনাবা‌হিনীর কিছু উচ্চাভিলাসী অ‌ফিসার সাম‌রিক অভ্যুত্থা‌নের ল‌ক্ষ্যে‌ গোপ‌নে ষড়যন্ত্র কর‌তে থা‌কে।

লেখকের ব্লগ ও নাগরিক সংবাদ

অতঃপর সু‌যোগ বু‌ঝে ১৯৭৫ সা‌লের ১৫ আগস্ট গভীর রা‌তে সাম‌রিক অভ্যুত্থা‌নের মাধ্য‌মে ক্ষমতার পটপ‌রিবর্তন ঘটায়। ই‌তিহাস আমা‌দের‌কে শিক্ষা দেয়, এক‌টি হত্যা অআরেক‌টি হত্যার জন্ম দেয় এবং প্র‌তি‌হিংসার সৃ‌ষ্টি ক‌রে। সুতরাং আর হত্যা নয়, ক্ষমতার পালা বদল হোক গণতা‌ন্ত্রিক প্র‌ক্রিয়ার মাধ্য‌মে। ১৯৭৫ এর ১৫ আগ‌স্টের ম‌তো এমন নির্মম ও ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড আমা‌দের দে‌শে যেন আর না ঘ‌টে সেদিকে সবাই‌কে খেয়াল রাখ‌তে হ‌বে। জয় হোক গণত‌ন্ত্র ও মানবতার।

খায়রুল আকরাম খান: ব্যুরো চীফ, দেশ দর্শন

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ: খায়রুল আকরাম খান

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply