শুক্রবার দুপুর ১:৩৮, ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ১৭ই মে, ২০২৪ ইং

শিক্ষায় মনুষ্যত্বের বিকাশ অপ‌রিহার্য

মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম

পাশ্চাত্য ধারার শিক্ষা যে কেবলই মুনাফাভিত্তিক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এদিকে মাদ্রাসা ধারার শিক্ষা না পারছে আধুনিক জীবনধারার সঙ্গে উপযোগী হয়ে উঠতে, আর না পারছে ভেতরের মানুষের বিকাশ সাধন করতে।

প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার অসারতা এবং এতে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নেতিবাচক প্রভাব লক্ষণীয়। জীবিকাকর্ম ও মনুষ্যত্বের বিকাশে সহায়ক শিক্ষাব্যবস্থা আবশ্যক। ‘মূলধারার শিক্ষা’ এখন পুরোদস্তুর বাণিজ্য, এতে মুনাফা অর্জনই মুখ্য। লোকসানের হতাশায় দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। তথাক‌থিত সাফল্য খুলে দেয় ‘সৌভাগ্যের’ দুয়ার। শিক্ষার প্রকৃত অর্থ- মানব শিশুকে মানুষ করে তোলা। ভিতর-বাহির মিলিয়ে মানুষ। বিদ্যমান শিক্ষা বাহ্যিক বৃদ্ধিতে প্রণোদিত করে বটে: ভিতরের মানুষকে ক্রমাগত মেরে ফেলে।

শিক্ষার এ ধারাটি প্রবর্তিত হয়েছে ১৮৩৫ সালে ব্রিটিশদের দ্বারা। এর আগে মূলধারা ছিল মধ্য এশিয়ার তুর্কি-পাঠান-মোগলদের দ্বারা ফারসি প্রধান্যের মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষা। আর টোলভিত্তিক সংস্কৃত শিক্ষা ছিল পাশাপাশি দ্বিতীয় ধারা হিসাবে। এখন আমাদের দেশে দ্বিতীয় ধারায় রয়েছে কওমি ও আলিয়া ধারার মাদ্রাসা শিক্ষা। ফলে এতে স্বাভাবিকভাবেই রয়েছে নানা রকমের টানাপোড়েন। তাই শিক্ষার জাতীয় কোনো একক লক্ষ্য নেই। এই হচ্ছে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মোটাদাগের অবস্থা।

“শিক্ষার প্রকৃত অর্থ- মানব শিশুকে মানুষ করে তোলা। ভিতর-বাহির মিলিয়ে মানুষ। বিদ্যমান শিক্ষা বাহ্যিক বৃদ্ধিতে প্রণোদিত করে বটে: ভিতরের মানুষকে ক্রমাগত মেরে ফেলে।”

পাশ্চাত্য ধারার শিক্ষা যে কেবলই মুনাফাভিত্তিক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এদিকে মাদ্রাসা ধারার শিক্ষা না পারছে আধুনিক জীবনধারার সঙ্গে উপযোগী হয়ে উঠতে, আর না পারছে ভেতরের মানুষের বিকাশ সাধন করতে। অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলায় পারিবারিক সামাজিক শিক্ষাও চরমভাবে অধঃপতিত। এই ত্রিশঙ্কু অবস্থায় জাতি দিকভ্রান্ত। লক্ষবিহীন তরীর মতো নানাঘাটে ভিড়েছে, না হয় ভেসে ভেসে ফিরছে উদভ্রান্তের মতো। বাঁচার উপায় কী? শিক্ষাকে বাঁচানোর উপায় কী?

‌শিক্ষায় ক্রমান্ব‌য়ে জাতিগত চিন্তার শৃঙ্খলা আনা দরকার। জাতি গঠনের চিন্তা থাকা আবশ্যক। মনে রাখা বাঞ্ছনীয়, পশ্চিমা ধারা এবং মধ্য প্রাচ্যের ধারার মধ্যে প্রতিযোগিতার পাশাপাশি মারাত্মক বিরোধও কিন্তু বিদ্যমান। সতর্কতার সঙ্গে সম্মিলন দরকার। দুই ভিন্ন ধারার সংশ্লেষণের মাধ্যমে জাতীয় একক ধারার শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন করে দেহ ও মনের সুসমন্বিত পূর্ণাঙ্গ মানুষ তৈরির পথে গেলেই পাশ্চাত্য ধারার ব্যবসায়িক অত্যাচার থেকে নিস্তার লাভের পথ পাওয়া যেতে পারে।

মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম

চিন্ত্যক, সাবেক সংসদ সদস্য

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply