শুক্রবার সকাল ৯:৪৬, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ৩রা মে, ২০২৪ ইং

ধর্ম, মুক্তমনা ও আস্তিক নাস্তিক বিতর্ক

মুঈদ উর রহমান জনি

অমান্যকারীদের ‘মুক্তমনা’ নাম দেয়টা উচিৎ নয়। তাদের ভিন্নমতাবলম্বী বা বিকৃতমনা নাম দেয়াটাই বেশি যুক্তিযুক্ত। তাই প্লিজ, আপনারা তাদের ‘মুক্তমনা’ নামে পরিচিতি দিয়েন না। তাহলে প্রকৃত মুক্তমনারা ঐ দলে শামিল হয়ে যায়, যা সম্পূর্ণই অমানবিক।

‘মুক্তমনা’ কথাটির অর্থ কী? ১. যে মন সবকিছু থেকে মুক্ত থাকে? নাকি ২. যে মন উন্মুক্তভাবে সবকিছু গ্রহণ করার মানসিকতা রাখে? আপনি যদি প্রথমটি ঠিক মনে করেন, তাহলে আমার মতে আপনি চরমতম ভুল পথে হাঁটছেন। এখন কথা হল, আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যক্তিস্বার্থে এই পথ বেছে নিয়েছেন, নাকি ভুল বুঝে ভুল পথে হাঁটছেন? যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ও জেনেশুনে এ পথ বেছে নিয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে বলার কিছুই নেই, শুধুমাত্র একটি কথা ছাড়া। তা হল, আপনি মানবতার শত্রু। আর যদি আপনি ব্যাক্তিস্বার্থে তা না করে থাকেন তাহলে আপনাকে কিছু কথা বলব। আশা করি শুনবেন এবং ভেবে দেখবেন। আমার কথা বিশ্বাস করার দরকার নেই, নিজে ভেবে দেখুন। এরপর মন যেটা সঠিক বলে সায় দেয় সেটাই গ্রহণ করুন।

মন কখনোই সবকিছু থেকে মুক্ত হতে পারে না। হাজার হাজার বিষয়ের উপরে মনের আবদ্ধতা আছে। আমাদের সাথে যা কিছু ঘটে, ভাল বা মন্দ, তাতে আমাদের মনের উপরে প্রভাব পড়ে। ভাল কিছু ঘটলে মন প্রফুল্ল হয়, খারাপ কিছু ঘটলে দুঃখ পায়। এই অনুভূতি থেকে কি মনকে মুক্ত করতে পারবেন? মন চাইলেই আমরা অনেক কিছু করতে পারি না। এই বাধ্যবাধকতা থেকে কি মনকে মুক্ত করতে পারবেন? অনেক সময় সুন্দর মেঘ দেখে মন চায় তাকে ছুয়ে দেখতে, কিন্তু পারা যায় না। এই না পারা থেকে কি মুক্ত হতে পারবেন ? এমন হাজারো জিনিস আছে যা ইচ্ছে হলেই সম্ভব হয় না। তাহলে সবকিছু থেকে মুক্ত থাকলেন কিভাবে? আর আপনার কাঙ্ক্ষিত মুক্তমনাই বা হলেন কীভাবে?

আর যদি আপনি দ্বিতীয়টিকে সঠিক ব্যাখ্যা মনে করেন, তাহলে আমার মতে আপনি ঠিক পথেই হাঁটছেন। সকল মত ও সকল পথের বিষয়ে জানার আকাঙ্ক্ষাই হল মুক্তমনা। কোনো বিষয়কে সরাসরি অস্বীকার নয় বরং সকল বিষয়েই সত্যের সন্ধান করা হল মুক্তচিন্তা বা মুক্তমনা।

এবার আসি আস্তিক প্রসঙ্গে। সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাসকারীদের বলা হয় আস্তিক। তাহলে আস্তিক হিসাবে আমার প্রধান কাজ বা দায়িত্ত্ব কী? আস্তিক হিসাবে আমার প্রধান দায়িত্ব, সৃষ্টিকর্তা যে উদ্যেশ্যে সব কিছু সৃষ্টি করেছেন তা অনুসরণ করা। সৃষ্টিকর্তার উদ্যেশ্য প্রতিষ্ঠিত করা, আমার নিজস্ব মতামত প্রতিষ্ঠিত করা নয়। আর সৃষ্টিকর্তাকে স্বীকার করা মানেই তার প্রেরিত ধর্মকেও স্বীকার করা। ধর্ম প্রেরণের উদ্যেশ্যকেও স্বীকার করা। ধর্ম অবতরণের উদ্যেশ্য কী তা সৃষ্টিকর্তার দ্বারা প্রেরিত ধর্মগ্রন্থ আর তার মনোনীত ব্যক্তির মাধ্যমেই তিনি তা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন।

আমি কোনো বিশেষ ধর্মের কথা বলছি না। তাই কোনো বিশেষ ধর্মগ্রন্থের রেফারেন্সও দিচ্ছি না। তবে আমার পাঠ্য সকল ধর্মীয় গ্রন্থলব্ধ ধারণা থেকে আমি এতটুকু পরিষ্কারভাবে অনুধাবন করেছি যে, সৃষ্টিকর্তা তার সৃষ্ট সকল সৃষ্টিকে নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে আবদ্ধ রাখার লক্ষ্যেই যে নিয়মের সৃষ্টি করেছেন, তাই হল ধর্ম। তিনি কি শুধু মানুষের জন্যে ধর্মকে সৃষ্টি করেছেন? না, তার সকল সৃষ্টিরই আলাদা আলাদা ধর্ম আছে। প্রত্যেকের জন্য একক ও স্বতন্ত্র ধর্ম আছে। যেমন হিংস্র জন্তুর ধর্ম হল ক্ষুধার্ত হলে শিকার করা, ক্ষুধা নিবারণের পরে তারা কেন শিকার করে না? কারণ কি? তখন কি তাদের শিকারের স্বক্ষমতা কমে যায়? না, তাদের শিকারের সামর্থ ঠিকই থাকে। তারা শুধু সৃষ্টিকর্তাপ্রদত্ত্ব ধর্মের পালন করে মাত্র।

মন কখনোই সবকিছু থেকে মুক্ত হতে পারে না। হাজার হাজার বিষয়ের উপরে মনের আবদ্ধতা আছে। আমাদের সাথে যা কিছু ঘটে, ভাল বা মন্দ, তাতে আমাদের মনের উপরে প্রভাব পড়ে। ভাল কিছু ঘটলে মন প্রফুল্ল হয়, খারাপ কিছু ঘটলে দুঃখ পায়। এই অনুভূতি থেকে কি মনকে মুক্ত করতে পারবেন? মন চাইলেই আমরা অনেক কিছু করতে পারি না। এই বাধ্যবাধকতা থেকে কি মনকে মুক্ত করতে পারবেন?

তাহলে মানুষ হিসাবে আমাদের ধর্ম কী? মানুষ হিসাবে আমাদের ধর্ম হল, নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে আবদ্ধ থাকা। আর যদি তা অনুসরণ না করে আমরা নিজস্ব মতামত প্রতিষ্ঠা করতেই বেশি আগ্রহী বা ব্যাকুল হই, তবে পক্ষান্তরে আমরা সৃষ্টিকর্তার প্রেরিত নিয়মকেই অমান্য করছি। যার মানে দাঁড়ায়, আমরা নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের জন্যে আস্তিকতার মুখোশ পরা ও অমান্য করার মানসিকতাপুর্ণ ব্যাক্তি বিশেষ। এর বেশি কিছু নয়।

এখন বলব নাস্তিক নিয়ে। সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে অস্বীকারকারীকে নাস্তিক বলে। আর সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করতে গিয়ে তথাকথিত নাস্তিকেরা সর্বপ্রথম অস্বীকার করে ধর্মকে বা সৃষ্টিকর্তার দ্বারা নির্ধারিত জীবনব্যবস্থাকে। কারণ হিসাবে তারা বলে, তারা যে সৃষ্টিকর্তাকে মানে না, তার প্রদত্ত ধর্মকেও মানে না। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, তথাকথিত নাস্তিকেরা যদি সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করেই, তাহলে যে ধর্ম বা জীবনব্যবস্থা আছে তা সৃষ্টিকর্তার নয় বরং মানুষের সৃষ্ট হিসাবে প্রমাণ করা উচিৎ। কোনো কিছুকে না মানা একটি আলাদা রোগ। যেমন শত শত নিয়মকে আমাদের দেশে আইন করে নিষিদ্ধ করে দেবার পরও আমরা অনেকে আইন অমান্য করে কাজগুলি করি। এটাকে অস্বীকার করা নয় বরং অমান্য করা বলে।

ধর্ম : ধর্ম আসলে কী? আমরা ধর্ম বলতে কী বুঝি বা ধর্মের সংজ্ঞা কী? ধর্ম কি শুধু পুস্তকে লিপিবদ্ধ নিয়ম-কানুন, নাকি এর বাইরেও কিছু আছে? কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর সকলেই যে নিয়মে আবদ্ধ তাকেই ধর্ম বলে। উদাহরণত, পানির ধর্ম হল সাধারণ অবস্থায় উপর থেকে নিচে প্রবাহিত হওয়া, +৪ ডিগ্রী সেঃ পর্যন্ত তরল অবস্থায় থাকা। তাপমাত্রা +৪ ডিগ্রী সেঃ এর নিচে গেলে তরল থেকে বরফে রূপান্তরিত হওয়া। এখন আমরা এমন কোনো পানি কি পাবো, যেটা এই নিয়মের বাইরে যেতে পারবে? পাবো না। আর পাবো না বলেই এটা পানির ধর্ম। তেমনি চুম্বকের ধর্ম হল উত্তর-দক্ষিণ মেরুতে নির্দিষ্ট থাকা, সুমেরুকে বিকর্ষণ আর বিপরীত মেরুকে আকর্ষণ করা। এমন কোনো চুম্বক পাওয়া যাবে না, যেটি এই নিয়মের বাইরে যেতে পারে। আর তাই এটি চুম্বকের ধর্ম।  এমনিভাবে প্রতিটি বস্তুর একক স্বতন্ত্র ধর্ম আছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করা যায়, মানুষের বেলায় এসে আমরা ধর্ম বলতে শুধুমাত্র কিছু পুস্তকলব্ধ আচার আচরণকেই বুঝি।

আসলে মানুষের ধর্ম কী? আমার মতে, মানুষের একক স্বতন্ত্র নিয়ম/ধর্মের মধ্যে প্রথম নিয়ম/ধর্ম হল মায়ের গর্ভে পিতার দ্বারা জন্মগ্রহণ করা। এই নিয়ম বা ধর্মের বাইরে মাত্র ৭-৮ জন মানুষ পৃথিবীতে আসতে পেরেছে। প্রথমজন হল আদম(আঃ), দ্বতীয়জন হল ঈসা(আঃ) আর ৫-৬ জনের কথা পাওয়া গেছে তবে নিদ্দিষ্ট সংখ্যা বা পরিচয় পাওয়া যায়নি। বিবরণে এরূপ পাওয়া যায়, “মুসা (আঃ) সৃষ্টিকর্তার সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে সৃষ্টি কর্তা মুসা(আঃ) কে বললেন, “মুসা, তুমি তোমার হাতের লাঠি দিয়ে গাছের ডালে আঘাত কর।” মুসা(আঃ) তাই করলেন, আর সাথে সাথে কয়েকটি পাতা ঝরে পরতে লাগল আর মাটিতে পরার আগেই মানুষে রূপান্তরিত হয়ে একেক জন একেক দিকে হেঁটে চলে গেল।

প্রথম জনের কথা আমরা কোরআনের মধ্যে পাই। দ্বিতীয় জনের কথা জানতে পারি বাইবেল এবং কোরআন থেকে। আর তৃতীয় ঘটনাটি জানি ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থ এবং কোরআন থেকে। এখন যুক্তি বলে মানুষের জন্যে অবশ্য পালনীয় প্রথম যে নিয়ম/ধর্ম যাদের বেলায় প্রযোজ্য ছিল না, তারাই কেবল নিয়ম বা ধর্মকে অস্বীকার করতে পারে। অন্য কেউ করে কোন্ যুক্তিতে? তারা কি কেউ সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করেছেন? যদি নাই করে থাকেন তাহলে আপনি করেন কোন্ যুক্তিতে?

এখন আপনি যুক্তি দিতে পারেন, ক্লোন করে মানুষ বানানো সম্ভব। আমার প্রশ্ন, ক্লোনটা কার করছেন? সে কোথা থেকে এলো? চোখ বুজে নিজের কাছে প্রশ্ন করেন উত্তর পেয়ে যাবেন। আর যদি রোবটের কথা বলেন তাহলে বলব, হাজার প্রকার যন্ত্র মানুষ আবিস্কার ও তৈরি করেছে নিজের কাজকে সহজ করার জন্যে। রোবট তার মধ্যে একটি যন্ত্র মাত্র।

দ্বিতীয় যে অবশ্য পালনীয় নিয়ম/ধর্ম আছে মানুষের জন্যে তা হলো, মায়ের গর্ভে বৃদ্ধি পেয়ে মায়ের জননেন্দ্রিয় থেকে পৃথিবীর আলোতে আসা। তথাকথিত নাস্তিক দাবীদার এমন কেউ কি আছেন যে এই নিয়ম/ধর্মের ব্যাত্যয় ঘটিয়ে পৃথিবীতে আসতে পেরেছেন? তথাকথিত নাস্তিকেরা বলতে পারেন, সার্জারী করেও পৃথিবীতে আসা যায়। ভাইলোগ, স্বয়ং মেডিকেল সাইন্সই সার্জারীকে এবনর্মাল পদ্ধতি হিসাবে নাম দিয়েছে। দুই ধরনের ডেলিভারি পদ্ধতির একটির নাম নরমাল ডেলিভারি, আর অপরটির নাম সার্জারী।

তৃতীয় অবশ্য পালনীয় নিয়ম/ধর্ম হচ্ছে, পৃথিবীতে পা দেবার সাথে সাথে মানুষের বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে নিশ্বাস নিতে হয়। আর প্রশ্বাসের মাধ্যমে কার্বন-ডাই অক্সাইড ত্যাগ করতে হয়। কোনো তথাকথিত নাস্তিককে আজও পর্যন্ত এই নিয়ম/ধর্ম পালনে অবজ্ঞা করে থাকতে দেখি না।

চতুর্থত যে নিয়ম/ধর্মটি অবশ্য পালনীয় তা হল, খাদ্যগ্রহণ আর উচ্ছিষ্ট বর্জন। কোনো তথাকথিত নাস্তিক এই নিয়ম/ধর্মটির বাইরে গিয়ে খাদ্য গ্রহণ বা মলমূত্র ত্যাগ না করে থাকতে দেখা যায় না। পঞ্চমত নিয়ম/ধর্মটি হল, একতাবদ্ধ থাকা। মানুষ নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় আদিকাল থেকেই একতাবদ্ধ হয়ে থাকে। তথাকথিত নাস্তিকেরাও নিজেদের মতাবলম্বীদের সাথে একতাবদ্ধ হয়ে থাকে। আর মানব ধর্মের এই নিয়ম/ধর্মটিও পালন করে।

মানুষ হিসাবে আমাদের ধর্ম কী? মানুষ হিসাবে আমাদের ধর্ম হল, নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে আবদ্ধ থাকা। আর যদি তা অনুসরণ না করে আমরা নিজস্ব মতামত প্রতিষ্ঠা করতেই বেশি আগ্রহী বা ব্যাকুল হই, তবে পক্ষান্তরে আমরা সৃষ্টিকর্তার প্রেরিত নিয়মকেই অমান্য করছি। যার মানে দাঁড়ায়, আমরা নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের জন্যে আস্তিকতার মুখোশ পরা ও অমান্য করার মানসিকতাপুর্ণ ব্যাক্তি বিশেষ। এর বেশি কিছু নয়।

এমন হাজারো নিয়ম/ধর্ম আছে যা তথাকথি নাস্তিকেরাও মেনে চলে বা অবজ্ঞা করতে পারে না। একতাবদ্ধ হয়ে থাকার সময়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষের একে অপরের সাথে মতের অমিল হয়। একেক জনের চিন্তাধারা অন্যের সাথে সাংঘর্ষিক হয়। আর তখনই একতাবদ্ধাতা প্রশ্নের মুখে পড়ে এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এই বিশৃঙ্খলা দুর করার লক্ষ্যে সৃষ্টিকর্তা মানুষের জীবন চলার পাথেয় হিসাবে কিছু নিয়ম/ধর্ম করে দিয়েছেন। আর এই নিয়ম দেবার কারণ হিসাবে এটাও বলেছেন যে, মানুষ হল তার সৃষ্ট জীবের মধ্যে সর্বপ্রিয় আর বুদ্ধিমানও বটে। তার এই প্রিয় সৃষ্টি যেন উচ্ছৃঙ্খল এবং বিশৃঙ্খল হয়ে একে অপরকে আঘাত করে ধ্বংস হয়ে না যায় এই কারণেই জীবনে চলার পথে নিয়ম কানুনের ব্যাবস্থা করে দিয়েছেন। আর তাকেই আমরা ধর্ম বলে জানি।

এখন প্রশ্ন হল, যারা উপরোল্লেখিত এবং অনুল্লেখিত হাজার নিয়ম/ধর্মকে পালন করে, তারা কেন এই নিয়ম/ধর্মটি পালনে অনাগ্রহী? এর কারণ হিসাবে আমরা কোনটি মনে করতে পারি? তারা উচ্ছৃঙ্খলা ও বিচ্ছৃংখলা পছন্দ করে? বিশৃঙ্খল হয়ে চলতে ভালবাসে? সেটা বাসতেই পারে, সবার রুচি তো সমান নয়। কেউ মিষ্টি পছন্দ করে আবার কেউ তেঁতুলকে মিষ্টির চেয়েও বেশি পছন্দ করে। খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। তাই বলে একপক্ষ অপরপক্ষকে বুদ্ধিহীন বলাটা কতটা যুক্তিসংগত? তুমি বিশৃঙ্খলা পছন্দ কর, তাই বলে যারা শৃঙ্খলা পছন্দ করে তাদের গালাগাল করতে হবে? আবার শৃঙ্খলা পছন্দ করি বলে যারা বিশৃংখলার উদ্দ্যেশ্যে উসকানিমূলক সুড়সুড়ি দেয়, তাদের সাথে যুদ্ধে যেতে হবে? তাদের আঘাত করতে হবে ?

সারাংশে এটুকু অবশ্যই বলতে পারি যে, প্রকৃতপক্ষে নাস্তিক হওয়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়, প্রকৃত নাস্তিক হতে হলে তাকে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত্ব প্রতিটি নিয়ম/ধর্মের বাইরে থেকে প্রমাণ করতে হবে যে, সে নিয়ম/ধর্মের বন্ধনমুক্ত বা নিয়ম/ধর্মহীন। আর তা না করতে পারা মানেই সে নাস্তিক/অস্বীকারকারী নয় বরং সে প্রকৃতপক্ষে একজন অমান্যকারী। যে নিজের সুবিধার্থে নাস্তিক/অস্বীকারকারী সাজতে চায়। আসলে প্রকৃত নাস্তিক/অস্বীকারকারী হওয়া যায় না, অমান্যকারী হওয়া যায়। আর এই দুইটির মধ্যে পার্থক্য সকলেরই জানা আছে বলেই আমি মনে করি। আস্তিকতার আড়ালেও শত সহস্র অমান্যকারী বিদ্যমান। তাই ভণ্ডামি বাদ দেয়া সকলের জন্যেই উত্তম।
মতামত এবং প্রশ্ন আকাঙ্ক্ষিত (অবশ্যই যুক্তি সঙ্গত)।

সবশেষে মিডিয়ার উদ্যেশ্যে দুটি কথা বলতে চাই। অমান্যকারীদের ‘মুক্তমনা’ নাম দেয়টা উচিৎ নয়। তাদের ভিন্নমতাবলম্বী বা বিকৃতমনা নাম দেয়াটাই বেশি যুক্তিযুক্ত। তাই প্লিজ, আপনারা তাদের ‘মুক্তমনা’ নামে পরিচিতি দিয়েন না। তাহলে প্রকৃত মুক্তমনারা ঐ দলে শামিল হয়ে যায়, যা সম্পূর্ণই অমানবিক। কারণ প্রকৃত মুক্তমনারা অবিশ্বাসী নয়, সত্যের সন্ধানী। হ্যাঁ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন মতাবলম্বী বটে, তবে কোনোভাবেই বিকৃতমনা নয়।

মুঈদ উর রহমান জনি : অনলাইন এক্টিভিস্ট

ক্যাটাগরি: প্রধান কলাম

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply