শুক্রবার দুপুর ১:২৫, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ৩রা মে, ২০২৪ ইং

নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে সাহিত্যের ভূমিকা শীর্ষক দেশ দর্শন গোলটেবিল বৈঠক

বিশেষ প্রতিবেদক

গত শনিবার ২৭ এপ্রিল বিকাল ৪টায় “যুবসমাজের নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে সাহিত্যের ভূমিকা কী?” শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় দেশ দর্শন এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ে। এতে অংশ নেন নেতৃস্থানীয় ক’জন সিনিয়র কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও লেখক-চিন্ত্যক। তাদের মধ্যে ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশিষ্ট লেখক, কবি ও প্রাবন্ধিক, চিনাইর বঙ্গবন্ধু কলেজের প্রফেসর মহিবুর রহিম, সাপ্তাহিক তিতাস সম্পাদক রেজাউল করিম, সাপ্তাহিক সাকিয়াতের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রুহুল আমীন সজল, সরাইল থেকে প্রকাশিত মাসিক সূর্য শপথের সম্পাদক আবুল কাসেম তালুকদার, শিক্ষক, লেখক ও মাসিক গ্লোবাল ক্যাম্পাস সম্পাদক আব্দুল হান্নান, ঢাকার আলেম, ব্যাকরণবিদ ও ভাষা প্রশিক্ষক মুফতি হানিফ আল হাদী, চিন্ত্যক, পাঠক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, মক্কা ইলেকট্রিক এর কর্ণধার উবায়দুল হক কাজল, সাপ্তাহিক আমাদের কথার সম্পাদক প্রবীর চৌধুরী রিপন, তরুণ কলামিস্ট ও দেশ দর্শন সম্পাদক জাকির মাহদিন প্রমুখ।

মহিবুর রহিম বলেন, মূলত সাহিত্য একটা শিল্প। তাই এতে নৈতিকতা খোঁজার প্রয়োজন নেই। তবুও সাহিত্য অনেককেই ক্রমাগত নৈতিক ও মানবিক করে তোলে। তিনি নিজের জীবনের উদাহরণ টেনে বলেন, তিনি কলেজ জীবন থেকেই সাহিত্য চর্চা করতেন। সাহিত্যের বই পড়ার ক্ষেত্রে তার ব্যাপক নাম ও পরিচিতিও একসময় গড়ে ওঠে। সাহিত্য চর্চা করার কারণেই তাকে মদ, জোয়া ইত্যাদি স্পর্শ করতে পারেনি। যদিও তার সহপাঠীদের অনেকেই এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বয়ং তার রুমেই তাস খেলার আসর বসত। কিন্তু কেউ কোনোদিন তাকে এতে অংশ নেয়ার কথা বলার সাহস পায়নি।

আব্দুল হান্নান বলেন, ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি, মনুষ্যত্বের চরমতম অন্ধকার যুগেও সাহিত্যের সোনালী যুগ ছিল। কিন্তু সাহিত্য তখন মানুষের মনুষ্যত্ব বিকশিত করতে পারেনি। কারণ শুধু সাহিত্য হলে হবে না, বরং সুসাহিত্য হতে হবে এবং সাহিত্যিককেও সুমানুষ হতে হবে। তাহলেই তার কাছ থেকে সুসাহিত্য বেরিয়ে আসবে। কুসাহিত্য কখনো মানুষকে আলোর পথ দেখাতে পারে না।

আবুল কাসেম তালুকদার বলেন, যুবকদের নৈতিক চরিত্র ঠিক রাখতে বিয়ে একটি উত্তম ব্যবস্থা। এর বিকল্প নেই। তবে এর পাশাপাশি পারিবারিক শিক্ষাটাও জরুরি। মা-বাবা, কাকা-মামারা এ সময়টায় তাকে গাইড করতে হবে। তিনি এমন একটি আয়োজনের জন্য আয়োজককেও অশেষ ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, তার পয়ষট্টি বছরের জীবনে এমন সুন্দর ও পর্যালোচনামূলক জ্ঞানগত আলোচনা আর হতে দেখেননি। তিনি এর ধারাবাহিকতা কামনা করেন। তার সঙ্গে আরো অনেকেই সহমত পোষণ করেন।

হানিফ আল হাদী বলেন, শৈশব-কৈশরে পারিবারিক একটা শিক্ষা এবং মূল্যবোধ কাজ করে। চল্লিশের পরও আবার সেই মূল্যবোধ ধীরে ধীরে ফিরে আসে কিংবা নতুনভাবে সৃষ্টি হয়। কিন্তু মাঝখানের সময়টি খুবই ভয়াবহ। আর এ সময়টাতে যুবসমাজের মধ্যে কিভাবে মূল্যবোধ সৃষ্টি করা যায় তা নিয়েই আজ আমাদের বসা এবং আলোচনা। এর জন্য তিনি দেশ দর্শনকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের পাঠে আগ্রহী করে তুলতে হবে। নইলে ‘ডিজিটাল-ইন্টারনেটের’ এই সময়ে অবক্ষয় রোধ করা সাহিত্যের পক্ষে সম্ভব হবে না।

উবায়দুল হক কাজল হানিফ আল হাদীর বক্তব্য সমর্থন করে নিজের সংক্ষিপ্ত মতামত পেশ করেন। তিনি বলেন, সাহিত্যে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টির প্রশ্নটি খুবই জরুরি। পাঁচটি ছেলে িএকত্রিত হলে প্রত্যেকেই এখন মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কারো কথা কেউ শুনে না। এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে হবে।

রুহুল আমীন সজল বলেন, ভাব এবং ভাষার সুস্থ্য ও সুন্দর প্রকাশই সাহিত্য। এমনকি সাহিত্য শুধু লেখাই নয়, ভালো কথাগুলোও সাহিত্য। ভালো যে কোনো কিছুই সাহিত্য। সাহিত্যের সংজ্ঞা অনেক ব্যাপক। তিনি এমন একটি পরিবেশে বসতে পারা এবং কথা বলতে পারায় বিশেষ আত্মতৃপ্তিবোধ করেন বলে জানান এবং এর ধারাবাহিকতা কামনা করেন।

প্রবীর চৌধুরী রিপন বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে একসময় সাহিত্য ও সংস্কৃতির রাজধানী বলা হত। প্রচুর যুবক এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। কিন্তু বড়রা ঠিকমতো গাইড না করায়, কথা বলা ও কাজের সুযোগ না দেয়ায় সেসব ছেলের প্রায় সবাই আজ ভিন্ন জগতে এমনকি নেশার জগতেও চলে গিয়েছে। সাহিত্য কিছুমাত্রায় হলেও সেসব থেকে ফেরাতে পারে। যদি সংগঠিতভাবে সাহিত্যচর্চা করা হয়। সুতরাং তিনি এক্ষেত্রে সর্বাত্মকভাবে পাশে থাকবেন এবং উপস্থিত বড়দের পাশে থাকার আহ্বান জানান।

জাকির মাহদিন বলেন, সাহিত্য কেবল কিছু মিথ্যা ও কাল্পনিক গল্প-উপন্যাস-কবিতার নামই নয়, বরং জীবনের কঠিন বাস্তবতাগুলো, এসবের গভীর উপলব্ধি, চিন্তা-দর্শনও সাহিত্য। এমনকি আত্মজীবনী, সাংবাদিকতাও সাহিত্য। বিশেষ করে যেসব লেখা জীবন নিয়ে সঠিক চিন্তার খোরাক যোগায়, জীবনের সঠিক বোধ জাগিয়ে তোলে, মৌলিক প্রশ্নগুলো করতে শেখায় এবং এর উত্তর অনুসন্ধান করে ও খুঁজে পায়, তাই মূলত সাহিত্য। সেটা ধর্ম বা দর্শন হলেও সেটাকে উচ্চতর সাহিত্য বলতে কোনো বাধা নেই।

এছাড়া দেশ দর্শনের এ গোলটেবিল আলোচনায় স্থানীয় এবং সামগ্রিক অনেক সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা উঠে আসে। যা নিয়ে আরো বিস্তৃতভাবে আলোচনা প্রয়োজন। সবশেষে এ বিষয়ের উপর আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর অসমাপ্ত রেখে উপস্থিত সবাই পনেরো দিন পর বসার আরেকটি তারিখ নির্ধারণ করে অনুষ্ঠান সমাপ্ত করা হয়।

ক্যাটাগরি: প্রধান খবর,  শীর্ষ তিন

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply