মঙ্গলবার সকাল ৮:১৯, ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

তিতাস নদীর নানা কথা :: লিটন চৌধুরী

লিটন চৌধুরী

সেই তিতাস এখন আর নেই। আগের মত চঞ্চলা আর অবাধ গতি নয়। জায়গায় জায়গায় তার পায়ে বেড়ি পড়েছে, বাধার প্রাচীর খাড়া হয়েছে চলার পথে। আখাউড়া রেলসেতু থেকে শুরু করে উজানিসার সিএনডবি সেতু পর্যন্ত প্রায় ৫ মাইল এলাকা তিতাসের মর্মজ্বালার স্থান। সুদিনে গেলে সেখানে ইরি-বোরোর মাঠ। নদীর নাম নিশানা নেই, চিহ্নও নেই।

কালিদাসের কলম্বনা রেবা নয়, রবি ঠাকুরের ঝিলিমিলি ঝিলমও নয়, নয় সে পাহাড়ী কন্যার কানফুল চোর কর্ণফুলী। পাহাড়ের বুক চিরে, পাথরের মাথায় মাথায় নেচে নেচে বনহরিণীর চলার ছন্দে সে নীচে নামছে না। জলরাশি তার উন্মত্ত উল্লাসে খলবল করে না, পাক খেয়ে খেয়ে মত্ত মহিষের মত অন্ধ বেগে ছোটে না কিংবা পাড়ের পদতলে হাঙ্গরে কামড় বসায় না ক্ষুধার্ত রাক্ষুসীর মত। ঝুপঝাপ অবিরাম পাড় ভেঙে নদীর বুকে হারিয়ে যায় না ফসলের মাঠ, বটতলার বিকিকিনির হাট এবং মানুষের ঘর-বাড়ী-দোকানপাট। আচমকা বানেও ভাসিয়ে লন্ডভন্ড করে দেয় না দু’কূলের জনজীবন। পাড়বাসীদের উদ্বেগকুল ও উৎকন্ঠিত চিত্তে কোন দিন বলতে হয় না-নদীর ধারে বাস, ভাবনা বার মাস। বরং সব দিক দিয়েই সে এক শান্ত, সৌম্য ও মাতৃময়ী নদী। তার নাম তিতাস নদী।

বর্তমান তিতাস নদী নাসিরনগরের চাতলপারের নিকট মেঘনা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে পূর্ব-দক্ষিণ মুখে প্রবাহিত হয়ে চান্দুরা গ্রাম হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ঘেষে আখাউড়া রেল-জংশনের দক্ষিণ-পশ্চিম-উত্তর মুখে নবীনগরের পশ্চিমে আশুগঞ্জের লালপুরের নিকট মেঘনা নদীতে এবং মানিকনগর আর কৃষ্ণনগরের মধ্যবর্তী এলাকা চিত্রি হয়ে মেঘনার সাথে মিলিত হয়েছে। নদীটি একটি ইংরেজী বর্ণ ’এম‘ অকারে বর্তমানে প্রবাহিত হচ্ছে। চাতলপাড় থেকে লালপুরের দূরত্ব ১৫ মাইল হলেও এর প্রবাহ অত্যন্ত আঁকাবাঁকা এবং দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫০ মাইলেরও বেশী। নদীটি বর্তমানে হাওরা নদীর সঙ্গমস্থলে এবং কৃষ্ণনগরের অদূরে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। জেলার নাসিরনগর, সরাইল, ব্রাহ্মণবড়িয়া সদর, আখাউড়া, নবীনগর, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে তিতাস প্রবাহিত। অসংখ্য শাখা-প্রশাখার সাহায্যে এ নদী দ্বারা জেলার উল্লেখ্যযোগ্য অংশ প্লাবিত হয়। এর তীরবর্তী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এন্ডারসন (কুরলিয়া) নামক একটি ক্ষুদ্র খাল দ্বারা তিতাসের দুই বাঁকের মধে সংযোগ স্থাপিত হওয়ায় বর্ষাকালে নৌযান গুলোর জন্যে ৩০ মাইল পথ সংক্ষেপ হয়েছে।

বর্তমান তিতাস নদী নাসিরনগরের চাতলপারের নিকট মেঘনা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে পূর্ব-দক্ষিণ মুখে প্রবাহিত হয়ে চান্দুরা গ্রাম হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ঘেষে আখাউড়া রেল-জংশনের দক্ষিণ-পশ্চিম-উত্তর মুখে নবীনগরের পশ্চিমে আশুগঞ্জের লালপুরের নিকট মেঘনা নদীতে এবং মানিকনগর আর কৃষ্ণনগরের মধ্যবর্তী এলাকা চিত্রি হয়ে মেঘনার সাথে মিলিত হয়েছে।

কিন্ত এটি ছাড়াও আরো কতেক নদী বর্তমানে তিতাস নদী নামে পরিচিত। এগুলো হলো- নবীনগরের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত সলিমগঞ্জ বাজারের উত্তরে মেঘনা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে একটি ছোট নদী জীবনগঞ্জ বাজার ও দরিকান্দি গ্রামের উত্তর পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কালাইনগর ও বাঞ্ছারামপুর থানাকে ডান পাশে রেখে ঘাঘুটিয়ার নিকট তিতাসের আরো একটি গতিধারার সাথে মিশে উজানচর ও হোমনা থানার ডান ও বাম পাশ দিয়ে শ্রীমদ্দির নিকট মেঘনা নদীতে পড়েছে। এটি তিতাস নদী নামেই পরিচিত হলেও হোমনা থানার নিকট এ নদীর স্থানীয় নাম ‘চিতিগঙ্গা’। আবার দড়িকান্দি গ্রামের উত্তর-পূর্ব দিক থেকে অনুরূপ আকারের আরো একটি নদী দক্ষিণ মুখে প্রবাহিত হয়ে রামকৃষ্ণপুরের নিকট আরো একটি তিতাস নদীর সাথে মিলিত হয়ে ঘাঘুটিয়ার নিকট তিতাসের সাথে মিশেছে। এটিও তিতাস নদী নামে পরিচিত। দড়িকান্দি গ্রামেই এর উৎপত্তি।

কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়কের মধ্যবর্তী পূর্বদিকে অবস্থিত পান্ডুগড় গ্রামের নিকট উৎপত্তি হয়ে পশ্চিম মুখে ধনপতিখোলা ও দীঘিরপাড় গ্রামের পাশ দয়ে প্রবাহিত। অতঃপর পশ্চিম মুখে প্রবাহিত হয়ে কামাল্লা গ্রাম ও রামচন্দ্রপুর বাজারের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে পশ্চিম মুখী হয়ে প্রবাহিত হয়ে চর-লহনিয়ার নিকট ‘চিতিগঙ্গা’ নামে তিতাসের সহিত মিশেছে। কামাল্লা পর্যন্ত এ নদীর নাম ‘আচ্নি গঙ্গা’ এর পরে এর নাম ‘নলিয়া’ নদী। কিন্ত রামচন্দ্রপুরের অনেক দক্ষিণে এ নদী তিতাস নদী নামেই পরিচিত।

মেঘনা থেকে উৎপত্তি হয়ে মেঘনাতেই বিলীন তিতাস নদীর যে অস্তিত্ব এখন দেখা যাচ্ছে, অনেক কাল আগে তিতাসের এ রূপটি ছিল না। তখন তিতাস ছিল একটি বিরাট নদী এবং উৎপত্তিস্থল কোথায় ছিল, তা সঠিকভাবে জানা না গেলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা এই বিরাট নদী দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। বর্তমান অবস্থায় আসার আগে এ নদী আরো কয়েকবার তার গতিপথ পরিবর্তন করেছিল। তিতাস একটি প্রচীন নদী। মানুষের জীবন যাত্রা ও ভূমি গঠনে এ নদীর বিশেষ প্রভাব রয়েছে। তিতাস নদীর ধারা যদিও পরিবর্তিত হয়েছে একাধিকবার, তথাপিও এর উপ ও শাখা নদী চোখে পড়ে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-

বুড়িগঙ্গা নদী : গোমতী নদীর শাখা হলেও বর্তমানে এটি বুড়ি নদী নামে পরিচিত। কুমিল্লার কোম্পানীগঞ্জ এর নিকট গোমতী থেকে উৎপত্তি হয়ে কসবা উপজেলার কুটি বাজারের অদূরে শালদা নদীর সাথে মিলিত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে বরদাখাতের পূর্ব সীমানা ও নূরনগর পরগণার পশ্চিম সীমানা নির্দিষ্ট করে নবীনগরের নিকট তিতাস নদীতে পতিত হয়েছে। শাখা নদী হলেও এটি একটি প্রাচীন নদী। দশম শতাব্দীর সমতটে চন্দ্রবংশীয় রাজাদের তাম্রশাসনে ‘বুড়ি গাঙ্গিন’ নামে এ নদীর উল্লেখ আছে। সেকালে এটি একটি উল্লেখযোগ্য নদী ছিল বলে অনুমান করা হয়।

বিজনা নদী : ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ী অঞ্চল থেকে নির্গত হয়ে এটি শালদা নদীতেই পড়েছে কিন্ত এর অস্তিত্ব না হারিয়ে উত্তরমূখী প্রবাহিত হয়ে কসবা থানাকে ডান পাশে রেখে উজানীসারের দক্ষিণে বর্তমান তিতাস নদীতে মিশেছে। এটি তিতাসের একটি উপনদী। শীতকালে এটি মৃতপ্রায় থাকে এবং বর্ষকালে এর কলেবর স্ফীত হয়ে উঠে।

বড় সোনাই নদী : ত্রিপুরা থেকে উৎপত্তি হয়ে হরষপুরের কয়েক কিলোমিটার পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় প্রবেশ করে উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানা সদরের উত্তর-পশ্চিম দিকে মোড় নিয়ে পরে পশ্চিম-দক্ষিণ মুখী গতি ধারণ করে সরাইল থানার শাহবাজপুর গ্রামের উত্তর-পূর্বে তিতাস নদীর সাথে মিশেছে।

ছোট সোনাই নদী : ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ী অঞ্চল থেকে উৎপত্তি হয়ে এ নদী কসবা শহরের প্রায় ৮ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় প্রবেশ করে কসবার ৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে বিজনা নদীতে গিয়ে পড়েছে।

হাওরা নদী : ত্রিপুরায় উৎপত্তি হয়ে এ নদী গঙ্গাসাগর থেকে ৫ মাইল পূর্ব দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় প্রবেশ করে পশ্চিম-উত্তর মুখী গতি ধারণ করে আখাউড়ার কিছু দক্ষিণে তিতাস নদীর সঙ্গে মিশেছে।

জেলার জমি জরিপ সম্পর্কিত বিতরণীতে (১৯১৫-১৯১৯ খ্রিঃ) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিলগুলোর উল্লেখ রয়েছে। তেলিকান্দি ও জয়ধরকান্দি থেকে চুন্টা, কালীকচ্ছ ও নোয়াগাঁও গ্রামের উত্তরে এবং মহিষবেড়, কুন্ডা, গোকর্ন, জেঠাগ্রাম, বিল শাপলা, শাহবাজপুর, ফুলঝুরি, হরিপুর, ধাউরিয়া ও বুধন্তি গ্রামে বড় বড় বিরের মালা রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ঠিক উত্তরে অনেকগুলো বিলের একটি বৃত্ত বিদ্যমান।

লোহুর নদী : ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ী অঞ্চলে উৎপত্তি হয়ে এ নদী মুকুন্দপুরের পাহাড়ী অঞ্চলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় প্রবেশ করে উত্তর উত্তর-পশ্চিম মুখী গতি ধারণ করে হরষপুরের কিছু দক্ষিণে প্রায় পশ্চিম মুখী গতি ধারণ করে শাহবাজপুরের দক্ষিণে তিতাস নদীতে মিলিত হয়েছে।

শালদা নদী : ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ী অঞ্চল থেকে নির্গত হয়ে এ নদী শালদা নদী রেলস্টেশনের নিকট কুমিল্লা জেলায় প্রবেশ করেছে এবং পশ্চিম দিকে কিছুদূর অগ্রসর হয়ে উত্তর-পশ্চিমমুখী গতি ধারণ করে কুটি বাজারের নিকট বুড়িগঙ্গা নদীর সঙ্গে মিশেছে। এই নদীকে বুড়িগঙ্গা বা তিতাসের উপনদী বলা যেতে পারে। বর্ষাকালে এর মূলধারা বেশ প্রবল থাকলেও শীতকালে নদীটি মৃতপ্রায় হয়ে যায়।

সালিয়া জুড়ি : এটি তিতাসের একটি শাখা নদী। উত্তরের তিতাস থেকে উৎপত্তি হয়ে সিঙ্গারবিলের নিকট তিতাসেই পড়েছে। এছাড়া আওলিয়াজুড়ি, মালিয়াজুড়ি, পাগলি, লংঘন, লাওয়াই প্রভৃতি নদ-নদী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। জেলার প্রধান প্রধান খালের মধ্যে কুরুলিয়া, গোকর্ণ খাল, আড়াইল জোড়, কাডাঙ্গি, কাটাখলা, খাল্লা, গোয়ালখলা, ডিংজুড়ি, জাফরখাল, ডাঙ্গি, পনার খাল, ফারেঙ্গা, মহাখালি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

কিন্ত সেই তিতাস এখন আর নেই। আগের মত চঞ্চলা আর অবাধ গতি নয়। জায়গায় জায়গায় তার পায়ে বেড়ি পড়েছে, বাধার প্রাচীর খাড়া হয়েছে চলার পথে। আখাউড়া রেলসেতু থেকে শুরু করে উজানিসার সিএনডবি সেতু পর্যন্ত প্রায় ৫ মাইল এলাকা তিতাসের মর্মজ্বালার স্থান। সুদিনে গেলে সেখানে ইরি-বোরোর মাঠ। নদীর নাম নিশানা নেই, চিহ্নও নেই। নদীর স্বাভাবিক গতিধারা বন্ধ হওয়ায় কৃষি জমিতে সেচের পানির অভাব পড়েছে, বন্যার আশংকা বেড়েছে, বিঘ্নিত হচ্ছে নৌ চলাচল এবং মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নৌ-বাণিজ্য।

পলি জমে জমে ভরে গেছে তিতাসের বুক। নদী ভরাট হবার ফলে স্রোতধারা সংকুচিত হবার কারণে ষ্টীমার চলেনা, লঞ্চ চলে না, এমনকি বড় বড় মালবাহী নৌকার চলাচলও কঠিন হয়ে উঠেছে। গোকর্ণঘাটের কাছ থেকে দক্ষিণে চারগাছ বাজার পর্যন্ত ৪ মাইল এলাকায় নদীর মাঝে চর পড়েছে। এভাবে চর জাগতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নদী মজে যাবে-এমন আশংকার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

নাব্যতা কমতে থাকায় ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-চান্দুরা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-চাইরকুড়ি ও গোকর্ণ-চারগাছ সার্ভিস। এসব নৌপথে এক বা একাধিক লঞ্চ নিয়মিত চলাচল করতো মজলিশপুর-শাহবাজপুর, মজলিশপুর-শাহবাজপুর-চান্দুরা- হরিণবাড়ী এবং নাটঘর ও ময়দাগঞ্জ দিয়ে। এছাড়া আখাউড়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মধ্যে একটি স্টীমার চলাচল করত এবং সপ্তাহে একবার চান্দিনা বাজার পর্যন্ত যেত। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে এপ্রিলের ১২ তারিখ থেকে স্টীমার রুটটি রন্ধ করে দেয়া হয়।

হাওর ও বিল : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় অংসখ্য বিল ছিল। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে মিঃ হান্টার যে সব বিলের উল্লেখ করে ছিলেন, সে গুলোর সব আর নেই। কালের প্রবাহে তার অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে। এখন যে সকল বিল দেখা যায় সে গুলো হলো-সরাইলের আট কোপা বিল, বইগ্যা বিল, বাঁশখাল বিল, ছয়ফুল্লাকান্দি বিল, ধুপঝুড়ির বিল, আখাউড়া বিল, মরিচাকান্দি ও সলিমগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের বিল এবং নাসিনগরের মেদির ও আকাশী হাওর উল্লেখযোগ্য।

জেলার জমি জরিপ সম্পর্কিত বিতরণীতে (১৯১৫-১৯১৯ খ্রিঃ) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিলগুলোর উল্লেখ রয়েছে। তেলিকান্দি ও জয়ধরকান্দি থেকে চুন্টা, কালীকচ্ছ ও নোয়াগাঁও গ্রামের উত্তরে এবং মহিষবেড়, কুন্ডা, গোকর্ন, জেঠাগ্রাম, বিল শাপলা, শাহবাজপুর, ফুলঝুরি, হরিপুর, ধাউরিয়া ও বুধন্তি গ্রামে বড় বড় বিরের মালা রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ঠিক উত্তরে অনেকগুলো বিলের একটি বৃত্ত বিদ্যমান। সেসব বিল নাসিনগর, নাসিরপুর, আশুরাইল গ্রামের উত্তরাংশ এবং শ্রীধর ও বুড়িশ্বর গ্রামের পশ্চিমাংশ জুড়ে রয়েছে। এই এলাকার পরিমান প্রায় ১০ বর্গমাইল এবং শীতকালে এর প্রায় সবটাই শস্যক্ষেত ও গোচারনভূমি। বর্ষাকালে এলাকাটি একটি বিস্তৃত জলাশয়ের রূপ নেয়, তখন তাকে বলা হয় মেদির হাওর। ‘হাওর’ শব্দ ‘সাগর’ শব্দের বিকৃত রূপ। লহুর নদীর উত্তর তীর বরাবর অনেক বিল রয়েছে। চান্দুরা থেকে তিতাসের বাম তীর বরাবর রয়েছে এক বিস্তৃত নিম্নভূমি।

লিটন চৌধুরী : সাংবাদিক ও ইতিহাস লেখক

ক্যাটাগরি: ইতিহাস-ঐতিহ্য,  ব্রাহ্মণবাড়িয়া,  সাহিত্য

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply