সোমবার সকাল ৭:৩২, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

টিসিবিকর্মীদের বাজে ব্যবহার: নিচ্ছে বাড়তি টাকা

জুনায়েদ আহমেদ

টিসিবির পণ্য বিক্রি করা ট্রাকের সামনে গিয়ে দেখা যায়, একটু এদিকসেদিক হলেই ক্রেতাদের সাথে উচু গলায় কড়া ভাষায় কথা বলছেন বিক্রয়কর্মীরা। করছেন বাজে ব্যবহার। অনেকের বাসায় ছোলাবুট থাকার পরও আবারও কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। তা না হলে অন্য পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে না। এ কারণে অনেকেই দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য না কিনে ফিরে যাচ্ছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টিসিবির পণ্য কিনতে যাওয়া ক্রেতাদের সাথে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করছেন টিসিবির বিক্রয়কর্মীরা। বাধ্যতামূলভাবে ছোলাবুট না কিনলে অন্য পণ্যও বিক্রি করছেন না। ফলে পূর্বে ছোলাবুট কিনেছেন এমন অনেকেই বিপাকে পড়ছেন। বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, এটাই নাকি সরকারি নিয়ম। এছাড়া ভাংতি টাকা থাকার পরও ভাংতি না থাকার অজুহাতে প্রায় ক্রেতার কাছ থেকে বাড়তি পাঁচ-দশ টাকা করে রাখা হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিয়াজ মুহাম্মদ হাইস্কুল মাঠে গত কয়েক দিন ধরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নিয়মিত টিসিবির পণ্য বিক্রয় হচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) এগারোটার দিকে স্কুলমাঠে গিয়ে দেখা যায়, একটি ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করছেন কয়েকজন বিক্রয়কর্মী। পাশে চেয়ার নিয়ে বসে আছেন দুজন পুলিশ। এর অদূরেই  নারী-পুরুষ আলাদা আলাদা লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কেনার জন্য লাইন ধরেছেন। তবে পুরুষরা গাছের ছায়ায়, আর নারীরা তীব্র রোদের মধ্যে। বিষয়টিকে অনেকেই বৈষম্য হিসেবে দেখছেন।

এ সময় টিসিবির পণ্য বিক্রি করা ট্রাকের সামনে গিয়ে দেখা যায়, একটু এদিকসেদিক হলেই ক্রেতাদের সাথে উচু গলায় কড়া ভাষায় কথা বলছেন বিক্রয়কর্মীরা। করছেন বাজে ব্যবহার। অনেকের বাসায় ছোলাবুট থাকার পরও আবারও কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। তা না হলে অন্য পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে না। এ কারণে অনেকেই দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য না কিনে ফিরে যাচ্ছেন। তারা বলছেন, আমরা এসেছিলাম চিনি, তেল নেওয়ার জন্য। কিন্তু ছোলাবুট না কিনলে তারা এগুলো বিক্রি করছেন না। আর আমাদের কাছে টাকা কম, ছোলাবুট নিলে তেল, চিনি নিতে পারবো না। এজন্য রোদের মধ্যে অনেক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও ফিরে যাচ্ছি।

টিসিবির পণ্য কিনতে আসা এনামুল নামের একজন ক্রেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, তিনি চিনি, তেল, বুট মিলিয়ে ছয়শ বিশ টাকার পণ্য কিনেছেন। কিন্তু ভাংতি টাকা থাকার পরও ভাংতি নেই বলে দশ টাকা বেশি রেখেছে। কোনো প্রতিবাদ করলেন না? এর জবাবে তিনি বলেন, প্রতিবাদ করলে বলে নিলে নেন, না নিলে নাই। কিচ্ছু করার নাই। এ ব্যাপারে ডিউটিরত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না বলেও জানান তিনি।

টিসিবির জনপ্রতি ৬২০ টাকার পণ্য

এ বিষয়ে এ প্রতিবেদক বিক্রয়কর্মীদের সাথে কথা বলতে গেলে একজন কর্মী জোরগলায় প্রশ্ন করেন, আপনি কি সাংবাদিক, যে আপনার কাছে জবাবদিহী করতে হবে? পরে প্রতিবেদক সাংবাদিকতার কার্ড দেখালে এ কর্মী বলেন, এটা সরকারি নিয়ম, ছোলা নিতে হবে, না হলে অন্য পণ্য বিক্রি করা নিষেধ। তবে গরিব কাউকে দেখলে আমরা ছোলা ছাড়াও অন্য জিনিস বিক্রি করি। প্রতিবেদক বলেন, ছোলা না কেনায় অন্য পণ্য কিনতে না পেরে অনেকেই তো ফিরে যাচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে কই ফিরে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদকের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। তবে এ কর্মী বাড়তি টাকা নেওয়ার বিষয়ে কিছু বলেননি।

এ বিষয়ে জানতে দেশ দর্শন থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় ফোন করা হলে ডিউটি অফিসার এস আই তানিয়া ফোন ধরেন। এসব অভিযোগ শোনার পর তিনি বলেন, আপনিই প্রথম এমন অভিযোগ করেছেন। যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আমরা এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। এরপর সদর থানার অন্য একজন এস আই-কে জানালে তিনি বলেন, পুলিশের কাজ কেবল শৃঙ্খলা রক্ষা করা। টিসিবির বিক্রয়কর্মীদের অসততা ও ক্রেতাদের সাথে প্রতারণার বিষয়টি দেখা জেলা প্রশাসকের কাজ। জেলা প্রশাসককে জানালে তার মাধ্যমে কোনো মেজিস্ট্রেট অভিযান পরিচালনা করতে পারেন।

জুনায়েদ আহমেদ: স্টাফ রিপোর্টার

ক্যাটাগরি: অপরাধ-দুর্নীতি,  ব্রাহ্মণবাড়িয়া,  শীর্ষ তিন

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply