শুক্রবার দুপুর ২:২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ১৭ই মে, ২০২৪ ইং

খেলন রানীর বাল্যবিয়ে হচ্ছে, কিছু করার নেই

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

এই বয়সেই বিয়ে দেবার কারণ জানতে চাইলে তিনি যা বললেন, তাতে আমাদের আর কিছু বলার থাকে না। অভিভাবকত্ব ও পয়সার অভাবে সে স্কুলে পড়তে পারেনি। নানী-মাসীর কাছে বড় হয়েছে, যাদের নিজেদেরই কোনো ঠাঁই নেই। এমতাবস্থায় তারা এছাড়া আর কী-বা করতে পারেন?

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মেয়ে এতিম খেলন রানী দাস। বয়স এখন চৌদ্দো-পনেরো হবে। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা-সদরের শিমরাইলকান্দি গ্রামের দাস পাড়ায়। বাবা মারা যায় খুব ছোটবেলায় নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে। তারপর একদিন মা-ও। দেখাশোনা করেছেন তার মাসী এবং নানী। নানীর বয়স আনুমানিক একশত বিশের উপর। যে কোনো মুহূর্তে পরপারে চলে যেতে পারেন। খেলনের মাসিও হার্টের রোগী। এদিকে এই চূড়ান্ত বৃদ্ধ বয়সেও খেলনের নানী প্রতিদিন সকালে লাঠি ভর করে হেঁটে হেঁটে মুড়ি বিক্রি করেন। শীতের সকালেও। এসব বিবেচনা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর এমপি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী প্রতিমাসে সামান্য একটা অনুদান দেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বৃদ্ধা তার নাতনীকে নিয়ে এতটা চিন্তিত তা আমরা জানতাম না। হঠাৎ তিনি জানালেন খেলনের বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে, আর মাত্র পাঁচ-সাতদিন বাকি।

এই বয়সেই বিয়ে দেবার কারণ জানতে চাইলে তিনি যা বললেন, তাতে আমাদের আর কিছু বলার থাকে না। অভিভাবকত্ব ও পয়সার অভাবে সে স্কুলে পড়তে পারেনি। নানী-মাসীর কাছে বড় হয়েছে, যাদের নিজেদেরই কোনো ঠাঁই নেই। এমতাবস্থায় তারা এছাড়া আর কী-বা করতে পারেন? এমপি সাহেব বলেছিলেন ওকে স্কুলে ভর্তি করার ব্যবস্থা করবেন। তার নিজের প্রতিষ্ঠিত একটি স্কুলে আমরা ওকে নিয়েও গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে অধ্যক্ষা জানালেন, এখানে সব ভিআইপি, সে এদের সঙ্গে মানাবে না।

পরে এমপি বললেন, ওর নামে একটা দরখাস্ত দিতে। আর্থিক অনুদান বা একটা চাকরির ব্যবস্থা করবেন। দরখাস্ত দিয়েছিলাম, কিন্তু কোনো কারণে হয়তো ওর চাকরি বা অন্যকিছুর ব্যবস্থা হয়নি। অবশ্য প্রতিদিনই তো কত খেলন রানী বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে, কার খবর কে রাখে? অনেক বাল্যবিয়ে আটকানো যায় বা আটকানোর যৌক্তিকতা দেখানো যায় যারা স্কুলে পড়ছে, যাদের খাওয়া-পড়ার খরচ আছে। কিন্তু খেলন রানী এর কোনোটাতেই নেই।

দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। সেই জোয়ারে প্রতিদিন অসংখ্য খেলন রানীও স্বপ্নভঙ্গ, বাল্যবিয়ে, ধর্ষণ ইত্যাদির শিকার হচ্ছে। আর এদিকে এলাকার ছেঁচরা মেম্বার-চেয়ারম্যান-ছাত্রনেতা থেকে শুরু করে সরকারিদল-বিরোধীদল সবাই ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। সুতরাং খেলন রানীদের খবর রাখার সময় কারো নেই। তাছাড়া খেলন রানী তো একেকটা সমাজে একজন-দুজন নয়, শত শত, হাজার হাজার। সুতরাং ‘এতদের’ খবর রাখা কি সম্ভব?

কিন্তু এই বাল্যবিয়ের ভবিষ্যৎ ফলটা কী? অবহেলাগ্রস্ত, অশিক্ষিত, অযোগ্য নিম্নমানের জনসংখ্যা বিস্ফোরণ, ধর্ষন, তালাক, নারী নির্যাতনসহ অসংখ্য সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ কথিত উন্নয়নের হিসাবে অসংখ্য খেলন রানীর অবনমনের হিসাবগুলো অন্তর্ভুক্ত হয় না।

ক্যাটাগরি: প্রধান খবর,  ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply