রবিবার সন্ধ্যা ৬:৪৯, ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ৫ই মে, ২০২৪ ইং

এবারও ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ প্রধান সমস্যা

শরীফ উদ্দীন রনি

যারা এই সংবিধান প্রণেতা, তারাও কি তখন তা প্রণয়ন করেছিলেন নিজেদের স্বার্থ ষোলআনা ঠিক রেখে? এমন প্রশ্নের জবাব পাওয়া সহজ। কারণ এ ধরনের পরিবর্তনশীল সংবিধান পরিবর্তন করার ক্ষমতা যে কোনো সরকার তার খেয়ালখুশি ও সুবিধামতো করতে পারে। শুধু প্রয়োজন- একদল বুদ্ধিজীবী। যারা অর্থের বিনিময়ে ক্ষমতাসীন সরকারের মনমতো সংবিধান প্রণয়ন করবে।

নির্বাচনের আর মাত্র দু-তিন মাস বাকি। অথচ এখনো সরকার ‘নির্বাচনকালীন সরকার-ব্যবস্থা’ চূড়ান্ত করতে পারেনি। এ দিকে বিষয়টি নিয়ে সংবিধানে পরিষ্কারভাবে কোনো কিছু উল্লেখ না থাকায় তা সংস্কার করে নতুন যে ধারা তৈরি করা হচ্ছে- তা সরকারের দিকে যাচ্ছে বলে দাবি করছে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। যা সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টিতে যথেষ্ট।

যারা এই সংবিধান প্রণেতা, তারাও কি তখন তা প্রণয়ন করেছিলেন নিজেদের স্বার্থ ষোলআনা ঠিক রেখে? এমন প্রশ্নের জবাব পাওয়া সহজ। কারণ এ ধরনের পরিবর্তনশীল সংবিধান পরিবর্তন করার ক্ষমতা যে কোনো সরকার তার খেয়ালখুশি ও সুবিধামতো করতে পারে। শুধু প্রয়োজন- একদল বুদ্ধিজীবী। যারা অর্থের বিনিময়ে ক্ষমতাসীন সরকারের মনমতো সংবিধান প্রণয়ন করবে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বলা হয়েছিল, ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর নতুন সংসদ নির্বাচনের দিন গণনা শুরুর পর সংসদ অধিবেশন আর বসবে না। ওই সময় ‘নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার’ দায়িত্ব নেবে বলেও সরকারের তরফ থেকে বলা হয়। তবে নির্বাচন ইস্যুতে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় দুটি ঘটনাই পিছিয়ে যায়। ওই সময় অধিবেশনের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত টেনে নেওয়া হয়। এর দুদিন আগে ১৮ নভেম্বর সরকারে নতুন কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী শপথ নেন। একইসঙ্গে দায়িত্বে থাকা মন্ত্রীদের মধ্যে কয়েকজন পদত্যাগ করেন। সেটাকে ওই সময় নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার আখ্যায়িত করা হয়। ওই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ২৫ নভেম্বর দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।

এরই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সংবিধান ও ইসিকে সরকার নিজের আওতায় নিয়ে যাচ্ছেন বলে অনেকের দাবি। সরকারের চার বছর পূর্তিতে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী ২০১৮ সালের শেষদিকে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কীভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা আমাদের সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের আগে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ গঠিত হবে। সেই সরকার সর্বোতভাবে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা দিয়ে যাবে।’

তিনি নিজেও শেষ পর্যন্ত সংবিধানকে এমনভাবে ব্যবহার করলেন, যাতে তিনি যতদিন ক্ষমতায় বহাল থাকবেন, ততদিন এর সময়সীমা নির্ধারিত। তার এ বক্তব্যে বিশ্লেষকগণ ধারণা করছেন, ১০ম জাতীয় নির্বাচনের মতো একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও এ সরকারের প্রধান হাতিয়ার, ‘নির্বাচনকালীন সরকার’। তবে যেভাবে বলা হচ্ছে ‘দেশে সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে’, তা বানচাল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি দেখা যাচ্ছে। সরকার বদল হলেই আবার প্রয়োজন নতুন সংবিধান। এ খেলা আর কত দিন? অধিকাংশ নাগরিকের প্রশ্ন।

শুধু সরকার নয়, এর সুবিধা ভোগ করতে পারছেন আইন পেশায় নিয়োজিত আইন-ব্যবসায়ীরাও। তাদের মতে, বিদ্যমান সরকারই সংসদ নির্বাচনের সময় ধারাবাহিকভাবে তাদের স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে। নির্বাচনের জন্য সরকারের ধরন বা আকার পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন পড়বে না। তবে প্রধানমন্ত্রী তার এখতিয়ারের অংশ হিসেবে চাইলে সরকারের আকার পরিবর্তন করতে পারেন। এটা তার ‘সাংবিধানিক’ ক্ষমতা, যা তিনি নির্বাচনের আগেও করতে পারেন, চাইলে এখনো করতে পারেন।

 

 

ক্যাটাগরি: অপরাধ-দুর্নীতি,  প্রধান খবর

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply