রবিবার রাত ২:৫০, ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ৪ঠা মে, ২০২৪ ইং

ইউটিউবে ঝড় তোলা একটি ভদ্র নাস্তিক আস্তিক বিতর্ক

প্রধান প্রতিবেদক

আরিফুর রহমান ও জাকির মাহদিনের একটি আশা জাগানিয়া এবং ভদ্র নাস্তিক আস্তিক বিতর্ক। যা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। দর্শক-শ্রোতারা প্রবলভাবে এমন আরো কয়েকটি আলোচনা চাইলেও আরিফুর রহমান কেন তার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গেলেন তা জানা যায়নি।

বাংলাদেশি স্বঘোষিত নাস্তিক আরিফুর রহমান। বর্তমানে লন্ডন প্রবাসী। ২০০৮ সালের দিকে বাংলাদেশে যখন ‘বাংলা ব্লগের’ যাত্রা শুরু হয়, তখন থেকেই ব্লগে তার জামায়াতবিরোধী লেখালেখি ও প্রচার-প্রচারণা। এই জামায়াতবিরোধিতা একপর্যায়ে ইসলামবিরোধী রূপ ধারণ করে। এভাবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধীরে ধীরে সংগঠিত হতে থাকেন ইসলামবিরোধী ব্লগাররা। এদেরই অন্যতম একজন আরিফুর রহমান। তবে পরবর্তীতে তিনি এদের অনেকের কাছ থেকে চিন্তা-চেতনা ও বিচার-বিশ্লেষণে নিজেকে কিছুটা আলাদা করতে সক্ষম হন।

বলা যায় তিনি একজন তরুণ ভদ্র নাস্তিক। তার বর্তমান লেখালেখি ও বক্তব্যে অন্যদের মতো একপেশে ইসলামবিরোধিতা বা নগ্ন আক্রমণ লক্ষ্য করা যায় না। যদিও অন্যান্য উগ্র নাস্তিকদের সঙ্গে তার সম্পর্ক, সহযোগিতা, সমর্থন- সবই আছে। এমনকি জানা যায়, স্বঘোষিত নাস্তিকগণ দেশে-বিদেশে নিজেদের মধ্যে একটা শক্ত কমিউনিটি বা সিন্ডিকেট মেনে চলেন। এর বাইরে যাবার ক্ষমতা কারো নেই।

তার নিজের কথা থেকে জানা যায়, প্রথমদিকে জামায়াতকে ঠেকাতে তিনিও ইসলাম এবং আল্লাহ-রাসুলকে প্রচুর গালমন্দ করলেও পরে সে ধারা থেকে কিছুটা সরে আসেন। চিন্তা করে দেখেন যে এভাবে আসলে একটি বিচার-বিশ্লেষণসম্পন্ন প্রজন্ম গড়ে তোলা সম্ভবপর নয়।

এই যখন ভাবছিলেন, তখন তার পরিচয় হয় জাকির মাহদিন নামে একজন স্বশিক্ষিত আস্তিক ও নম্রভাষী লেখক-ব্লগারের সঙ্গে। যিনি আবার আস্তিক হওয়া সত্ত্বেও অন্য কথিত আস্তিক বা ধর্মীয় দল-গোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো লিয়াঁজো রক্ষা করে চলেন না। তিনি কওমি মাদরাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের হওয়া সত্ত্বেও স্বাধীনভাবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং পত্রপত্রিকায় তার মত প্রকাশ করেন। ধর্মীয় উগ্রবাদীদের সমালোচনাও করেন কড়াভাবে। এক্ষেত্রে তাকে কোনো কমিউনিটি বা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে বলে জানা যায়নি।

দর্শক-শ্রোতারা প্রবলভাবে এমন আরো কয়েকটি আলোচনা চাইলেও আরিফুর রহমান কেন তার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গেলেন তা জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি লন্ডনে অন্যান্য নাস্তিকদের চাপে পড়েই তার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসেন। অবশ্য জাকির মাহদিনের কিছু কাচা বক্তব্যও এক্ষেত্রে দায়ী।

২০১৬ সালে আরিফুর রহমান লন্ডন থেকে বাংলাদেশে থাকা জাকির মাহদিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মাসখানেক তারা ব্যক্তিগত আলাপ-আলোচনার পর একটি ‘লাইভ প্রশ্নোত্তর’ বা বিতর্কে সম্মত হন এবং ২০১৬ এর সেপ্টেম্বরে সে বিতর্কটি দুজনেরই ফেসবুকে লাইভ হয়। বিতর্কটিতে দেখা যায়, দীঘদিন ধরে নাস্তিক-আস্তিকদের মধ্যে যে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিল, সেসব ধুমধারাক্কা এবং মারমার কাটকাট মনোভাব এড়িয়ে তারা একটি ব্যাপক আশা জাগানিয়া ও ভদ্র প্রশ্নোত্তর করতে সক্ষম হন, যা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। কেউ কেউ এটাকে দৃষ্টান্ত হিসেবেও দেখেছেন।

দর্শক-শ্রোতারা প্রবলভাবে এমন আরো কয়েকটি আলোচনা চাইলেও আরিফুর রহমান কেন তার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গেলেন তা জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি লন্ডনে অন্যান্য নাস্তিকদের চাপে পড়েই তার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসেন। অবশ্য জাকির মাহদিনের কিছু কাচা বক্তব্যও এক্ষেত্রে দায়ী। পর্যবেক্ষকগণ মনে করছেন, কিছু বিষয়ে তখন তার চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিপক্কতা লাভ করেনি। এক পর্যায়ে তিনি কওমিদের পক্ষপাতিত্বও করেছেন।

তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি তার অনভিজ্ঞতা এবং কিছু অদূরদর্শিতার কথা স্বীকার করে বলেন, “প্রাথমিকভাবে এমন সীমাবদ্ধতা থাকা স্বাভাবিক। তাছাড়া এটি কোনো পূর্ণাঙ্গ আলোচনা নয় বরং একটি সিরিজ আলোচনার অংশবিশেষ। পরের আলোচনাগুলোয় বক্তব্য আরো পরিষ্কার এবং সম্পর্ক আরো এগিয়ে নেয়ার একটা প্রত্যয় নিজের মধ্যে ছিল।”

আরিফুর রহমানের নিজের ইউটিউবে আপলোড করা এ ভিডিওটি তার চ্যানেল থেকে প্রায় একলক্ষ ভিউ হয়েছে। কমেন্ট প্রায় সাড়ে চারশত। তবে এটি সম্পর্কে দেশ বিদেশ থেকে এ পর্যন্ত কয়েকশত ফোন আসে জাকির মাহদিনের কাছে। অন্যান্য মাধ্যমেও অনেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং এখনো করছে বলে জানা যায়। পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন তিনি হন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেন পরে আর এমন বিতর্ক তিনি করেননি বা করছেন না। এক্ষেত্রে তিনি আগ্রহী এবং পরবর্তীতে আরিফুর রহমানকে স্মরণও করিয়ে দিয়েছেন বললেও সেই দর্শক-শ্রোতারা মানতে চান না।

“ধর্ম নিয়ে নাস্তিক এবং আস্তিকের মাঝে আলাপ। আরিফুর রহমান এবং জাকির মাহদিন”

শিরোনামের এই বিতর্কে আরো দেখা যায়, ধর্মের দৃষ্টিতে নারীর সম্মান, সমাজতন্ত্র এবং বিবর্তনবাদের বিষয়ে সামান্য কথার পর আরিফুর রহমানের অসম্মতিতে তিনি সরে এসছেন। অন্যদিকে কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতেই হবে এবং বলার জন্য একরকম উত্তেজনা ও বাক-বিতণ্ডা- এমনটা এ বিতর্কে দেখা যায়নি। বরং আরিফুর রহমান নিজের পছন্দমতো টপিক আলোচনার পর প্রশ্ন করলে জাকির মাহদিন কথা বলেছেন এবং একাধিকবার আরিফুর রহমান নিজেই প্রতিপক্ষকে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন। আবার যখন থামিয়ে দিতে চেয়েছেন, তখন প্রতিপক্ষ বিনা প্রতিবাদেই থেমে গিয়েছেন। পর্যবেক্ষকগণ তাই প্রশ্ন করছেন, কেন এমন ভদ্র ও আদর্শ বিতর্ক আরো হচ্ছে না? অথবা অন্যরাও কেন এমন বিতর্ক আমাদের উপহার দিচ্ছেন না?

উল্লেখ্য যে, বিতর্ক চলাকালীন (ফেসবুক লাইভ) ফেসবুকে প্রচুর আক্রমণাত্মক কমেন্ট এসেছে। তবে সেসব থেকে দুজনেই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হন। অবশ্য এমন বিতর্ক আর না হওয়ার আরেকটি কারণ পর্যবেক্ষকগণ বলছেন। তাহল, আসলে আমাদের বর্তমন সমাজ-সভ্যতা সুসম্পর্ক এবং সুবিতর্ক চায় না। তারা সত্যিকার সমাধানমুখী কোনো কিছু এগিয়ে নিতে চায় না। চাইলে এমনটা অবশ্যই সম্ভব।

 

ক্যাটাগরি: ধর্ম-দর্শন-বিজ্ঞান,  প্রধান খবর,  ভিডিও নিউজ,  শীর্ষ তিন

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply