মঙ্গলবার সকাল ৯:৪৭, ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

আবার বিতর্কে জড়ালেন সেই অর্থমন্ত্রী

মন্তব্যেদন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো প্রায় চার মাস বাকি। অথচ এখনই গায়ে পড়ে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ জানিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আর এতেই অনেকটা ‘বেকায়দায়’ পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিরোধী দলগুলো তো বটেই, ক্ষমতাসীন দলটির নেতারাও বক্তব্যের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে বিব্রতবোধ করছে নানা কারণে বিতর্ক সৃষ্টি করা নির্বাচন কমিশনও।

আবুল মাল আব্দুল মুহিত নামের একজন ব্যক্তি, সিলেট তার বাড়ি। কোনো না কোনোভাবে তিনি বাংলাদেশের ‘অর্থমন্ত্রী’। তাও বিগত দুই টার্মেই! রাষ্ট্রীয় কোষাগারের তেরোটা বাজিয়েছেন বহু আগেই। সরকারি ব্যাংক সব খালি। বেসরকারি ব্যাংকও সরকারকে ঋণ দিতে দিতে দেউলিয়া। বিদেশি ঋণের পরিমাণ এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। বিশ বছর পর সেসব ঋণের আসল বাদ দিয়ে শুধু সুদ দিতে বাংলাদেশকে তিনবার বেঁচতে হবে। এদিকে দেশের ভেতর মুদ্রাস্ফীতি, জনগণের উপর অতিরিক্ত ভ্যাট, ট্রেনভাড়া, মোবাইল কলরেট, গ্যাস-বিদ্যুত বিল বছর বছর বাড়ানোসহ নানাখাতে বিগত দুই মেয়াদের আওয়ামী শাসনকালে জনগণকে শোষণের ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে তার হাত ধরেই। বিভিন্ন সময়ের বড় বড় দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারি তার কাছে মামুলি বিষয়। তবুও তিনি কীভাবে রাষ্ট্রের একটি সর্বোচ্চ পদে প্রায় এক যুগ ধরে বহাল তবিয়তে, তা এক রহস্য বটে!

অবশ্য বাংলাদেশে কোনো মন্ত্রী ব্যর্থতার দায়ে পদত্যাগের ইতিহাস নেই। দেশ গোল্লায় যেতে পারে, তাতে সরকারের ‘বদনামের’ ভয় নেই। কিন্তু কোনো মন্ত্রী ব্যর্থতার দায়ে পদত্যাগ করবেন, এটা যেন সরকারের আত্মহত্যা। অবশ্য সরকার প্রধান এসব চরম দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী-এমপিদের হাতে জিম্মি বলেই অনেকে মনে করছেন। কেউ কেউ প্রকাশ্যেও বলাবলি করছেন। কিন্তু জনগণ দূরের কথা, কোনো লেখক-সাংবাদিক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব পর্যন্ত টু-শব্দটি করতে পারছে না। কারণ এরা দুপয়সার গোলাম। যুগ যুগ ধরে নিজেকে ফেরি করে বিক্রি করাই তাদের কাজ। তাই মন্ত্রীরা একের পর এক পাগলের মতো কথাবার্তা ও আচার-আচরণ করতে সমস্যা নেই।

চারদিকে নির্বাচন নিয়ে মাতামাতি। সময়টা সব রাজনৈতিক দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি দল, বিরোধীদল, ধর্মীয় দল, বিভিন্ন বাম ও ভুঁইফোঁর দল- সবাই এই সময়টাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাই প্রধানমন্ত্রীসহ তার পুরো কার্যনির্বাহী পরিষদকে এ সময় বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হয়। তা না হলে পরাজয়ের আশঙ্কা বেড়ে যায়। অথচ অর্থমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল থাকা আবুল মাল আবদুল মুহিত কিছুদিন পরপরই বিভিন্ন ‘রাবিশ’ মন্তব্য করে বিতর্কের ঝড় তুলেন। চার হাজার কোটি টাকার ব্যাংক-ডাকাতি তার কাছে কিছুই না।  সোনা-দুর্নীতি, কয়লা-দুর্নীতির আলোচনা তার কাছে অনর্থক।

গত বুধবারও (৫ সেপ্টেম্বর) নির্বাচনের তারিখ নিয়ে তিনি নতুন বির্তকে জড়ালেন। একের পর এক তার কাণ্ডজ্ঞানহীন মন্তব্যে নানামহলে দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন ঘুরছে, তিনি কীভাবে অর্থমন্ত্রী? তিনি কি আসলেই রাষ্ট্রের কোষাগার রক্ষা করার যোগ্যতা রাখেন? সংবিধানোর কোনো আইন-কানুন বুঝেন?

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো প্রায় চার মাস বাকি। অথচ এখনই গায়ে পড়ে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ জানিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আর এতেই অনেকটা ‘বেকায়দায়’ পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিরোধী দলগুলো তো বটেই, ক্ষমতাসীন দলটির নেতারাও বক্তব্যের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে বিব্রতবোধ করছে নানা কারণে বিতর্ক সৃষ্টি করা নির্বাচন কমিশনও।

যখন রাজনৈতিক অঙ্গনে সবকিছু হচ্ছে নির্বাচনকেন্দ্রিক, তখন হঠাৎ করেই শুরু হয়েছে ভোটের তারিখ নিয়ে বিতর্ক। ভোটের তারিখ কে ঘোষণা করবেন, তাও যুক্ত হয়েছে এই বিতর্কে। বিরোধীদলীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন, ইসির পূর্বেই কী ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে ফেলেছে?

তার এ ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন বক্তব্যে শুধু বিরোধীদলই সমালোচনা করছে না, অর্থমন্ত্রীর নিজ দল আওয়ামী লীগের নেতাদের সমালোচনার মুখেও পড়ছেন তিনি। নিজ দলের মন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘২৭ ডিসেম্বর নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ, এটি নিশ্চিত হলেও তা বলার দায়িত্ব আমাদের না, এটি নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশনকে বিব্রত করা আমাদের কাজ নয়।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনই বলবে কবে নির্বাচন হবে। এটি বলার দায়িত্ব সরকার কিংবা সরকারের কোনো মন্ত্রীর নয় কিংবা দলের কোনো নেতার নয়’। তাদের এ ধরণের বক্তব্যগুলোর দ্বারা নিজেরাই তাদের মাঠ ও ইমেজ নষ্ট করছেন বলে বিশ্লেষকগণ মনে করছেন।

মন্তব্যেদন- মন্তব্য ও প্রতিবেদন এক সাথে

ক্যাটাগরি: প্রধান কলাম,  বিশেষ প্রতিবেদন,  মন্তব্য প্রতিবেদন,  মন্তব্যেদন

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply