শুক্রবার দুপুর ২:২৭, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ৩রা মে, ২০২৪ ইং

আবরার হত্যা: অনিরাপদ শিক্ষাঙ্গন

খায়রুল আকরাম খান

এক. গত ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদ একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ছাত্রদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন; এ ঘটনাটি খুবই ভয়াবহ ও দুখঃজনক। তবে এ কথা সত্যি, ঘটনার শিকার ও ঘটনায় দায়ী দুই পক্ষের জন্যই সার্বিকভাবে ঘটনাটি দুখঃজনক। তারা কেউই দুবৃৃত্ত বা সন্ত্রাসী হয়ে জন্ম নেয়নি। পরিবেশ তাদেরকে ওই পথে ঠেলে দিয়েছে।

ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের বেশির ভাগই অসচ্ছল পরিবারের সন্তান। অনেক কষ্ট করে পরিবার তাদেরকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছিল। ওইসব ছাত্রের কার্যকলাপে তাদের পরিবারের স্বপ্নসৌধ ভেঙ্গে চুড়মার হয়ে গেছে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে তারা অনেক কিছু দিতে পারতো। সেই সম্ভাবনা ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে সমাজ ও রাষ্ট্র কোনোভাবেই এ দায় এড়াতে পারে না।

দুই. বিভিন্ন পত্রিকা ও প্রচারমাধ্যম থেকে সংগৃহীত তথ্য ও উপাত্ত্বের ভিত্তিতে জানা যায়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন প্রায় ১৫১জন ছাত্র-ছাত্রী। সর্বশেষ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের নিহতের ঘটনা ঘটে। আরো জানা যায়, সবচেয়ে বেশি খুনের ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই। সেখানে খুন হয়েছে ৭৪ জন, রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ে ২৯, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে১৯, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ব বিদ্যালয়ে৭ জন, খুলনা ইসলামী বিশ্ব বিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ব বিদ্যালয়ে ২জন করে, মওলানা ভাসানী ও হযরত শাহজালাল বিশ্ব বিদ্যালয়ে ১ জন করে ছাত্র-ছাত্রী নিহতের ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের বেশির ভাগই অসচ্ছল পরিবারের সন্তান। অনেক কষ্ট করে পরিবার তাদেরকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছিল। ওইসব ছাত্রের কার্যকলাপে তাদের পরিবারের স্বপ্নসৌধ ভেঙ্গে চুড়মার হয়ে গেছে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে তারা অনেক কিছু দিতে পারতো। সেই সম্ভাবনা ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে সমাজ ও রাষ্ট্র কোনোভাবেই এ দায় এড়াতে পারে না।

কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এসব খুনের ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত কোনো অপরাধীরই শাস্তি হয়নি আজও। তবে এক্ষেত্রে যে কটি মামলার রায় হয়েছে, সেই সব মামলার বেশিরভাগ আসামীই লাপাত্তা! এছাড়াও অনেক প্রচেষ্টার পর যারা আটক হন, কিছুদিন পর আইনের ফাঁক-ফোঁকড়ে তারাও জামিনে ছাড়া পেয়ে যান।

এমতাবস্থায় বেশ কিছুদিন পর সবকিছু ধামাচাপা পড়ে যায়। মামলা ঝুলে বছরের পর বছর, একসময় সবাই সব কিছু ভুলে যায়। এ ব্যাপারে পর্যালোচনা করে জানা যায়, সরকারের প্রতি শিক্ষকদের অতি চাটুকারিতা ও ছাত্রদের পথভ্রষ্ট রাজনীতি শিক্ষাঙ্গনে খুনখারাপির মূল কারণ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশবাহিনী যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা সব সময় রাখতো, তাহলে বিশ্ব বিদ্যালয়ে কখনো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটত না।

খায়রুল আকরাম খান : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ: খায়রুল আকরাম খান

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply